নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গান ভালোবাসি, ভালোবাসি উপন্যাস পড়তে, রাতের আকাশে নক্ষত্রদের সরে যাওয়া দেখতে আর টুকটাক লেখালেখি

সজীব ঘোষ শুভ্র

মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা

সজীব ঘোষ শুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোমল সূর্যয্য

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:২১


কেমন আছিস তুই? আমার অবস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। বেকার হয়ে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে মরছি সমস্ত শহর জুড়ে। এতো বড় হয়েও এখনো বাবা মায়ের ঘাড়ের উপর বসে বসে খাচ্ছি। নিজেকে অনেক বেশি যোগ্য মনে করতাম এক সময়। কিন্তু এখন অস্তিত্ব বিপর্যয় এর মুখে পড়েছি। নানা দিকের টানাপোড়নে জীবন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে চলার পথে। জানি নিজের ভালো লাগা খারাপ লাগা অথবা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে আলাপচারিতা করাটাও আমার সাজে না। আমি কিইবা করতে পারি। মনের ইচ্ছা মতো চললাম যেদিকে যেতে মন চায় সেইদিকে কিন্তু পরিশেষ এ ফিরে আসতে হলো সেই চৌরাস্তার মোড়ে। এখন কি ঘটে ছিল অথবা কারা ঘটিয়ে ছিল, কেন কিছু বলিনি, কেন কিছু লিখিনি এ সমস্ত হাজার অযুত প্রশ্ন উঠবে যার উওর না পারবো আমি দিতে আর না পারছি কিছু না বলে থাকতে। রাজনীতি যারা করেছিল তারা আজো করে যাচ্ছে। গলার জোড়ে তিলকে তাল করে ঘটনার রটনা করাটা যাদের রক্তে মিশে আছে তাদের ক্ষেত্রে নিরব থাকা ছাড়া আর কিছুই করা হয়ে উঠছেনা। এভাবেই হয়তো বাকি জীবন পার করতে হবে আমার। শুরু না হতেই শেষ হয়ে গেলো। ভালো থাকিস।
ইতি
শুভ্র

চিঠি লেখা শেষ হতেই শুভ্র বাচ্চা ছেলের মতো অঝোর ধারায় কেঁদে ফেললো। সে তার ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত। কিন্তু জীবন থেকে সময় মহামূল্যবান কিছু বছর কেড়ে নিয়েছে। সব বুঝেও এখন অবুঝের মতো চলা ফেরা করতে হবে। এটা যে কতো বড় একটা বোঝা নিজের অস্তিত্বের উপরে তা শুধু সে বুঝতে পারছে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু পিছনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা সামনের আবহমান কালকে গিলে ফেলতে চাচ্ছে। কি করে বোঝাবে সে মানুষকে যে তোমরা আমাকে যা ভাবো আমি তা না।
আর সেও আছে কে কি ভাবছে না ভাবছে তা নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছে।নিজস্ব চিন্তা ভাবনার জগত থেকে শুভ্র বের হয়ে বাইরের জগত নিয়ে চিন্তা করা শুরু করে দিলো।
কিছুদিন হলো তার পাশের বাসার পিচ্চি ছেলে হাসান আর আসছে না। কোথাও হয়তো বেড়াতে গিয়েছে। এই গোটা ঢাকা শহরে বন্ধু বলে কেউ নেই সবাই স্বার্থন্বেষী হয়ে বসে আছে। বন্ধু বলতে অই ছোট বাচ্চাটা। ওর সাথে কথা বলাটাও অনেক মজার। সে নরসিংদী এর ভাষায় কথা বলে। তাকে যদি বলা হয় বলতো হাসান
আমি জামা পড়েছি।
সে বলে, আমি জামা ফিনছি।
এই ছেলের চলাফেরাটাও অদ্ভূত। সে স্যান্ডেল পড়ে পায়ে আর গায়ে গেঞ্জি অথবা টিশার্ট পড়ে। কিন্তু থাকে ন্যাংটা। তাকে যদি বলা হয় তোমার প্যান কই। সে বলে পেন্ট নাই।
ও খুব চকলেট খেতে পছন্দ করে। তাই আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসার সময় তার জন্য কিট কেট নিয়ে আসতো শুভ্র অথবা আইস্ক্রিম
কিন্তু জীবনের চাহিদা বাড়া শুরু হলো আর হাতে অর্থ এর পরিমান কমা শুরু হলো। তাই আর চকলেট আনা হয় না। তার খারাপ লাগে খুব। কিন্তু বেকার অবস্থায় এসব সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার মাথায় আনা উচিতই না। সে থাকে ঢাকার শান্তিবাগ এলাকায়। বাজারের পাশেই শেখ সাহেব মসজিদের পাশে একটা পাচ তলা বিল্ডিং আছে। তার টপ ফ্লোরের একটা ফ্ল্যাটে তার বাবা মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে থাকে। তাদের একটা ছোট্ট দোকান আছে খিলগাও মোড়ে।শুভ্রর মা আর মামা সেই হোটেলের সমান সমান অংশীদার। যে টাকা মাস শেষে লাভ হয় তা দিয়ে দুইটা পরিবারের কোন রকমে চলে যায়। শুভ্র অনেক দিন ধরে চেষ্টায় আছে কোন কাজ খোজার জন্য। বিশেষ করে টিউশানি পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। সে তার শিক্ষক বন্ধু বান্ধবদের বলে রেখেছে যে কোন টিউশানি পেলে দিতে। যদিও খুব ভালো ভাবেই সে জানে তারা কেউ তাকে সাহায্য করবে না। প্রত্যেকেই প্রতিযোগী। নিজের বোকামি গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো শুভ্রর প্রথমে সে মৃদু হাসলো তারপর ধীরে ধীরে নিজের উপর রাগ বাড়তে লাগলো তার।
তাকে নিয়ে যে খেলাটা চলেছিল তা সে বুঝেও ঘটতে দিয়েছিলো। ঘটনা শেষ পর্যন্ত তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায় আর সে বিপাকে পড়ে যায়। অতি চালাকের গলায় দড়ি কথাটা কি রকম সত্য তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে। বোঝা ভালো জিনিস কিন্তু অতিরিক্ত বোঝা যে কতোটা খতরনাক হতে পারে তা এক শুভ্রকে দেখলে বোঝা যায়। গুরুর উপরেও গুরু থাকে এ কথাটা সে ভুলে যায় মাঝে মাঝে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে তাকে ভীষণভাবে। এখন হা হুতাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার পক্ষে। সবার রাস্তা মাড়িয়ে সে এখন ঘরে বসে থীতু হয়েছে। এখন আর গীটার বাজায় না সে। যে গীটার নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো তা ভেংে চুরমার হয়ে গিয়েছে। কোথায় তার মহাশূন্য ব্যান্ড আর কোথায় কি! ইচ্ছা ছিলো বিদেশে যাওয়ার। কিন্তু সমাজের ফাদে আটকে গিয়েছে তার জীবন।
এই পোড়া দিনে ভাগ্যের আকাশে চাঁদ হয়ে উদয় হলো দুইটা টিউশানি। তার বান্ধবী ফেরদৌসি অপি ম্যানেজ করে দিয়েছে টিউশানি দুইটা। রাস্তাঘাটে এখন আর জম্বি হয়ে চলাফেরা করা লাগবে না তার। একটা আত্নসম্মানবোধ কাজ শুরু করে দিয়েছে তার মধ্যে। সে চিন্তা করছে এমন কোন প্রকার ঘটনা ঘটানো যাবে না যাতে নিজের ভাবমূর্তি খারাপ হয়। চার হাজার টাকায় ঢাকা শহরে কিছুই হয় না। সেখানে গোটা মাস চালাতে হবে এই টাকা দিয়ে। দুই হাজার বই পত্র নোট ফটোকপি ইত্যাদি পড়াশোনার যাবতীয় জিনিস আর এক হাজার বিপদের সম্বল,আর পথের পাথেয়। জীবনে যদি কোন দিন নিজের পায়ে দাড়াতে পারে তবে সে যে কয় জন মানুষকে সাহায্য করবে তার মধ্যে অপি অবশ্যই থাকবে। এরকম আরো কয়েকটা টিউশানি জোগাড় করতে পারলে ভালো হয়। সে চিন্তা করলো নোটিশ ছাপাবে তারপর পত্রিকাওয়ালাদের ম্যানেজ করে প্রত্যেকটা পত্রিকার ভিতরে লিফলেটটা দিয়ে দিবে। কি লিখবে তার একটা খসড়া করা শুরু করলো সে
“ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াতে ইচ্ছুক। বাসায় গিয়ে অত্যন্ত যত্নের সাথে ছাত্র ছাত্রীকে পড়ানো হবে।“
যোগাযোগে: নিজের মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে দিলো সে।
পছন্দসই একটা খসড়া প্রস্তুত হয়ে গেলো। কিন্তু ছাপানোর জন্য যে টাকার দরকার তা এই মুহুর্তে তার কাছে নেই। সাথে সাথে প্ল্যান বাতিল করে সে অপিকে ফোন দিলো। তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে কোথায় কবে কখন পড়াতে যেতে হবে তাকে। অনেকক্ষন রিং হওয়ার পরও কেউ ধরলো না দেখে সে মোবাইলের জিরো ফেইসবুক থেকে মেসেজ পাঠালো অপিকে
জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ কর। কথা আছে।।
শুভ্র এলোপাথাড়ি হাটা বন্ধ করে বাটা সিগনালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে যেতে হবে মোহাম্মদপুর জাপান গার ্ডেন সিটিতে। সেখানে তার এক গিটারিস্ট বন্ধু থাকে।নাম জয়। খুবই হ্যান্ডসাম ডার্ক হার্টথ্রব টাইপের ছেলে। কিন্তু তার সবচাইতে বড় পরিচয় তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। এখনও বহাল তবিয়তে বেচে আছেন। জয়ের বাসায় ডুকলেই অনেক গুলো চমক অপেক্ষা করে একজন অপরিচিত আগন্তুকের জন্য। শুভ্রর খুব ভালো মতো মনে আছে সে যখন প্রথম জয়ের বাসায় যায় তখন তার গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিলো। প্রথমেই মনে হলো কোন এক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে সে। যেখানকার কমান্ডার মাত্র সন্ধ্যার নাশতা সেরে নিজের বেডে বসে চিন্তা করছেন কিভাবে প্রতিপক্ষকে ট্যাকল দেওয়া যায়। আর জয়ের রুমে ডুকে জানালার দিকে তাকাতেই শুভ্রর মনে হচ্ছিলো প্রকৃতি যুদ্ধবিরতির ঘোষনা জানান দিচ্ছে বাইরের আকাশ থেকে। এতো সুন্দর দৃশ্য সে খুব কমই দেখেছে। সেদিন ছিলো পূর্ণিমা। পূর্ণ চাঁদ উঠি উঠি করছে। যেনো যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে স্বাধীনতার প্রথম কোমল সূর্য্য উঠতে শুরু করেছে পশ্চিমাকাশে। সে মোবাইল বের করে ফোন দিলো জয়কে। এখন বাজছে বেলা একটা। সে নির্ঘাত ঘুমাচ্ছে। পরে মনে পড়লো আরে সে তো এখন ইউ ল্যাবে ক্লাস করে নিয়মিত। আর তার ক্লাস শেষ হবে আড়াইটার দিকে। শুভ্র দ্বিতীয়বার ফোন না দিয়ে সামনের জ্যামে আটকে থাকা সিটি বাসে উঠে পড়লো। প্রচন্ড ভীড়ে কনুই দিয়ে গুতিয়ে সে বাসের মাঝখানের একটা জায়গায় রড ধরে অন্যদের মতো ঝুলে থাকলো। আধা ঘন্টা পর ধানমন্ডি কেএফসির সামনে বাস থামতে সে নেমে পড়লো। মোবাইলে ঘড়ি দেখে দেখলো এখনো অনেক দেরি। ততক্ষন চা সিগারেট খাওয়া যায়। সিগারেট ধরাতে গিয়েই কি কারনে যেনো শুভ্রর মাথায় বস্তিতে আগুন লাগার ব্যাপারটা ঘুরতে থাকলো। বস্তি থেকেই নির্ঝর এর কথা মনে পোড়ে গেলো। সব কিছু কতোটা কানেক্টেড। নির্ঝর খুবই উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে। গাড়ি বাড়ি বলতে যা বোঝায় তা আক্ষরিক অর্থ এই তার আছে। কিন্তু একরোখা জেদের কারনে সে শুভ্রকে বলেছে তাদের এলাকার আশেপাশে কম ভাড়ার মধ্যে একটা ফ্ল্যাট দেখে দিতে। শুনে শুভ্র হেসেই খুন। একে ব্যাচেলার তার উপর তিন হাজার টাকায় ফ্ল্যাট। ওকে নিয়ে গিয়ে ওর ফ্ল্যাট দেখিয়ে এনেছে শুভ্র। বস্তির সামনে আসতেই নাক সিটকাতে শুরু করে ছিলো কিন্তু গলির ভিতরের বাসা তার পছন্দ হয়েছে বলে দিয়েছে। শালার বড় লোকের ছেলেদের কতো যে আশ আহ্লাদ থাকে তা তারা নিজেরাও জানে না। ব্যাটা আছিস এসি ঘরে নরম বিছানায় গা এলিয়ে না। শুভ্র ভ্রু কুচকে মনে মনে তিক্ত কথাটা বলে ফেললো। চা সিগারেট শেষ করার পরোও হাতে আরো পঁয়তাল্লিশ মিনিট সে করবেটা কি? একবার চিন্তা করলো কে এফসির ভিতরে ডুকে যাবে নাকি। সে খেয়াল করে দেখেছে যখনই সে কোন না কোন কে এফসিতে ডুকেছে ভিতরে তিন চারটা হুর পরী থাকবেই তাদের বয়ফ্রেন্ড অথবা ফ্রেন্ড দের সাথে। সুন্দরী মেয়ে দেখে সময় কাটানো যায়। তাদের বিভিন্ন ভংিমা নিজেকে উপ্সথাপনের রং দেখতে মন্দ লাগে না। ঝামেলাটা পাকায় ওয়েটার। কিছুক্ষন পর পর স্যার কি নিবেন, আপনার ওর্ডারটা বলে বিরক্ত করে ছাড়ে।কোন রকমের ঝামেলা ছাড়াই সময় কাটিয়ে শুভ্র কে এএফসি থেকে বের হয়ে এলো। কেউ কিছুই বলেনি। তবে দুইটা কাপল বারবার তার দিকে তাকাচ্ছিলো কিছুক্ষন পর পর। মনে মনে একবার ভেংচির কথা চিন্তা করেও নিজের বর্তমান সুখ বিসর্জনের দুরাশায় তা বাতিল করে দিয়েছে। ক্লাস শেষ হতেই চোখে সানগ্লাস পড়ে জয় হাজির।
পরবর্তী সমাচার জয় নতুন একটা বাইক কিনেছে। নাম ইয়ামাহা ফেজার। ওর সাথে মানিয়েছে ভালো। সে এই মোটর মেশিনকে এক অপ্সরা নারীরূপে ট্রিট করছে। তার বাইকের প্রতি যত্ন দেখে যে কোন মেয়ে ঈর্ষান্বিত হতে বাধ্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.