![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা
আমার চিন্তার সূতা কেটে গেল। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম পিছনে বসা লোকটার দিকে। চোখে তীব্র সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষন।
ঠান্ডা গলায় বললাম, বাসে বসে কি ফাইজলামি করেন?
আমার গলা এবং কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো লোকটা।
তিনি ভাবতে পারেননি কোন ছেলে তার মতো বয়সি একটা লোকের সাথে এই গলায় কথা বলতে পারে। লোকটা আপন মনে হাতের আংুল নাচাচ্ছিলো কিন্তু সামনের সিটে বসা এক মেয়ের মাথার চুলের খোপায় কিছুক্ষন পর পর ছোয়া লাগছিলো। যেনো কিছু সময় পর পর খোপায় টোকা দিচ্ছেন। তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন জ্বি আমাকে বলছেন?
তাহলে কি আমি বাতাসের সাথে কথা বলছি? এক পা তো কবরে আছে আরেক পা ডুকানোর ব্যবস্থা করবো নাকি? রাস্তা ঘাটে মেয়ে দেখলে হুশ থাকেনা না! বূড়া বয়সে ভিমরতি পাইছে?
লোকাটা আহত চোখে তাকিয়ে থাকলো অনেকক্ষন আমার দিকে যেনো কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেন না। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি হত বিহ্বল হয়ে পড়েছেন।
লোপা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আরে দোস্ত বাদ দে। হয়তো ভুলে লেগে গিয়েছে।
আমি বললাম, পর্যাবৃত্ত গতিতে লাগা লাগি হয় নাকি?
আগুন চোখে তাকিয়ে আমি বললাম সিধা হয়ে বসে থাকেন। এদিক থেকে ওদিক হলে ফিক্কা বাসের থাইকা বাইরে ফালায় দিমু।
লোকটা কাচুমাচু হয়ে শুধু বললেন বাবা ভুল হয়ে গিয়েছে। আর হবে না।
ইতিহাস বাস ডেইরি গেইটের কাছে আসতেই আমি আর লোপা বাস থেকে নেমে পড়লাম।
ও আচ্ছা লোপা সম্পর্ক এ কিছু বলা হয়নি। সে আমার ক্লাসমেট। আমরা একই সাথে পদার্থ বিজ্ঞানকে উদ্ধার করতে নেমেছি। খুবই স্মার্ট একটা মেয়ে। স্বাধীন চেতা। ড্যাম কেয়ার টাইপের। ফুল পরী বলা যায় অবশ্য তাকে। কারন তাকে দেখলেই যে শব্দটা মাথায় আসে তা হলো লোটাস ফুল। ও থাকে মিরপুর ডিওএইচএসে তার বাবা মায়ের সাথে। তার বাবা বাংলাদেশ বেতারে কাজ করেন। তার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। হলি ক্রস থেকে সে ইন্টার পাশ করেছে। এর বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি।
ইনফেক্ট আমরা একসাথেও আসিনি। ও কোথা থেকে উঠেছে ইতিহাসে তা আমি জানিনা কিন্তু আমি উঠেছি গাবতলি থেকে। বাসে উঠেই দেখি সে আনমনে জানালার বাইরে মুখ রেখে হাওয়া খাচ্ছে।
ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। লেইটে ক্লাসে ডুকলে স্যারেরা এটেন্ডেন্স আর দিতে চায় না। যে মার্কের জন্য আসা ক্লাসে সেটাই না পেলে ক্লাসে ডুকে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শোনার কোন প্রকার অর্থ হয়না।
লোপাকে বললাম চল ক্যান্টিনে যাই! শিঙাড়া অথবা খিচুড়ি ডিম পাওয়া যাবে।
লোপা বললো নারে দোস্ত আমি খেয়ে এসেছি। ক্ষুধা নাই মোটেই।
লোপাকে রেখে আমি ক্যান্টিনের দিকে না গিয়ে নিচে নেমে চলে গেলাম সোজা মুরাদ চত্বরে। গিয়ে দেখি ইংরেজী বিভাগের জ্যাকি আর রুমন দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই ফিচেল হাসি হাসলো দুই জনে। ইউসুফকে বললাম একটা রং চা আর মারলবোরো লাল একটা।
জ্যাকি আমাকে দেখেই বলে উঠলো কি রে তুই না বলে মাল খাওয়াস? খুবতো কথা বললি সেদিন।
আমি বললাম এখন টাকা পয়সা নাই। পকেট গরম হলে গলা নরম হবে তার আগে শুকনা মরুভূমি।
রুমম আমার দিকে তাকিয়ে মিচকা শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে বললো এবারের প্ল্যান কি? কি করবি এবার?
আমি হালকা হেসে বললাম ঘটনা ঘটলেই টের পাবি। তার আগে মুখ বন্ধ।
চা সিগারেট শেষ করে বললাম দোস্ত ক্লাস আছে যাই। দুপুরে বটে দেখা হবে বলে আমি ডিপার্টমেন্ট এর দিকে হাটা ধরলাম। এখনো দুইটা ক্লাস বাকি। চুপচাপ বসে বসে ইকুয়েশনের ফুলঝুরি ছাড়া কিছুই করার নেই। মোবাইলে যে গেইম খেলবো সেই উপায়ও নেই। মোবাইল ফোন বন্ধ অথবা সাউণ্ড সাইলেন্ট মুডে রেখে দিতে হবে পকেটে।
কোয়ান্টামের ক্লাস। ক্লাস নিবেন বিখ্যাত ফরিদা মজিদ ম্যাডাম। এই ম্যাডামের ক্লাসে যদি পিন ও পড়ে তবে মনে হবে এটম বোমা হিরোশিমাতে না পড়ে পড়েছে জাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় তলায়। তার ক্লাসে এক সেকেন্ড লেইটে ডুকলে তিনি এমন ভঙ্গিমায় তাকান যেনো আইন্সটাইনের স্পেস টাইম ইকুয়েশন লংঘন করে ফেলা হয়েছে। তার রোল কল যদি কোন ছাত্র স্কিপ করে তবে সেই ছাত্রর অবস্থা থেকেও নাই টাইপের হয়ে যায়। তার ক্লাসে টাইম ডাইলেশন ঘটা শুরু করে। সময় স্থির হয়ে যায়। ঘড়ির কাটারা দুই হাত দুই দিকে মেলে শুয়ে পড়ে আবার ঊঠে নির্ধারিত সময় অতিক্রম করতে চায় না। তবে মহিলা মারাত্নক রকমের ধারালো বুদ্ধিমতি আর খুব স্মার্ট একজন নারী। তাকে অন্য সব ম্যাডামদের থেকে খুব সহজেই আলাদা করা যায় তার প্র্বজেন্টেশনাল এপ্রোচের কারনে। তা তিনি যতোই সুখ্যাত ক্রিমিনাল ম্যাডাম হোক না কেনো তার ক্লাসে কোম প্রকারের বাঁদরামি করা যাবে না এটা হলো চিরন্তন সত্য একটা ঘটনা। মুখ ভার করে একবার পটেনশিয়াল এর কুয়ায় পড়ো আরেকবার বেরিয়ার টপকে যাও নতুবা তাকে ভেদ করো ইকুয়েশনের মাধ্যমে। অনুরোধে ডেকি গেলা বলে যে বাক্যটা আছে তা এখানে যথাযথ প্রযোজ্য সব ছাত্রের ক্ষেত্রে। এটেন্ডেন্স মারকের জন্য বসে বসে ইকুয়েশন খাতায় লিখো আর গেলো। অবশ্য সাবজেক্টাও কাটখোট্টা। তার সাথে সেই ধাচের ম্যাডাম।
অপমান সহ্য করার অভ্যাস আমার আছে। অপমান এখোন আর গায়ে মাখি না। আর মাখলেও এমন ভানে মাখি যেন একটু ঝারা দিলেই ঝরে পড়ে যায়। রাস্তায় পুলিশের সাথে ঝামেলা পেকেছিলো সুন্দরবন লং মার্চের এক প্রোগ্রামে। এক পুলিশ আরেক জনকে বলছেন
এরা সবাই সামাজিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত চোর। উচুদরের জ্ঞানী আসামী।
পুলিশের সংে যে কবিতার বিরোধ আছে তা সবাই জানে। কিন্তু এদের কথাবার্তা পুলিশ না যেনো কবিরা কথা বলছেন একে অপরের সাথে। তাদের এই কথা শুনে মনের ঝাল মিটাবো কিনা চিন্তা করা শুরু করলাম। এমনিতেই পুলিশের প্রতি আমার রাগ বহু পুরাতন। জন্মগত বলা যায়। বাবা ছিলেন পুলিশ। পুরা শৈশব আর কৈশোর কেটেছে আমার পুলিশি শৃংখলার মধ্যে। শিশুর জীবন নরক বানাতে এরা খুবই দক্ষ।আমার দিকে তাকিয়েই তারা মুখ বন্ধ করে এদিক ওদিকে তাকাতে শুরু করলেন। আরো কিছুক্ষন পর আমার চোখ ফেরানো না দেখে সামনের জিপ গাড়ির সামনে তাদের বাকি সদস্যদের সামনে গিয়ে দাড়ালেন
আমি মুচকি হেসে মনে মনে বললাম শুধু একজনের দৃষ্টিপাতেই এই অবস্থা সবাই তাকালেতো ঝলাসানো গ্রিল হয়ে যেতো সবাই। আমি যখন টেনে পড়ি তখন আমাকে ম্যাথ করাতেন মিল্লাত স্যার। তার গ্রিল মাংস অনেক পছন্দের ছিলো। আজ অনেক দিন পড় স্যারের কথা খুব মনে পড়লো। আমি হাটা ধরলাম শহীদুল্লাহ হলের দিকে। আমার বন্ধু রবিন মাইক্রো বায়োলজি র ছাত্র। সে হলে থাকে। সেও স্যারেরই ছাত্র। তার সাথে দেখা করা জরুরি। পকেট ফাকা হয়ে আছে। তার কাছ থেকে ধার করতে হবে। আশেপাশে ধার দেওয়ার মতো মন মানসিকতা শুধু তারই আছে। বাকিরা নাকে মুখে দ্বির্ঘশ্বাস তুলে বলবে দোস্ত আমি অনকে হাত টানে আছি। সব শালাদের চেনা আছে। আর বাসায় টাকা চাওয়াই যাবে না। ইনফেক্ট বাসার সবাই জানে আমি এখন ক্যাম্পাসে হলে। আমি যে শাহবাগে এসে আস্তানা গেড়ে আছি তা খুব কম মানুষই জানে। শহিদুল্লাহ হলের পুকুরের দিকে যেতেই দেখি ভীষন ভীড়। ঘটনা কি দেখতে উত্সুক হতেই শুনি কাকে বলে টেনে নিয়ে গিয়েছে পুকুরের ভিতরে! কাহিনীর আগাগোড়া কিছুই বুঝলাম না। টেনে নিয়ে গিয়েছে মানে কি? হলের পুকুরে কি হাংর কুমিরের চাষ হয় নাকি? যে মানুষ দেখলেই খপ করে টেনে নিয়ে যাবে!
আমি রবিনকে ফোন দিলাম। চার পাঁচবার রিং হওয়ার পর সে ফোন ধরলো।
আমি বললাম, কি রে কোথায় তুই আর এতোক্ষন লাগে ফোন ধরতে?
আমি বাথরুমে ছিলাম। কি হইছে বল।
আমি কি বলবো? ঘটনা শোনার জন্য ফোন দিলাম।
ঘটনা, কিসের ঘটনা?
তুই আছিস কোথায় বলতো। তোর উঠানের পুকুরে মানুষ ডুবে গেলো আর তুই বাথরুমেই থেকে গেলি।
মানে কি?
হলের পুকুরে ছাত্র ডুবির ঘটনা ঘটেছে। আর মোবাইলে এতো প্যাচাল পাড়তে পারবো না। নিচে নাম। আমি তোর হলের গেইটের সামনে।
কি বলিস? নামতেছি দাড়া তুই।
নিচে নামতেই দেখি ও একটা নীল রং এর জিন্স পড়েছে আর মেটালিকার টি শার্ট। তখন পুকুরের চারপাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে দেখার জন্য। বিশেষ করে যেখানে ডুবুরী নামানো হচ্ছে সেখানে ভীড় অনেক বেশী। রবিন তার পরিচিত এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ঘটনাটা জানলো।
ফুটবল খেলে ক্লান্ত সহপাঠীদের সংগে গোসল করতে নেমেছিলো পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র বায়েজিদ। সবাই উঠে আসলেও সে তলিয়ে যায় পুকুরে।
আমি বললাম চিনিস নাকি ছেলেটাকে?
ফেইস দেখলে বলতে পারবো।
এই পুকুরতো মানুষখেকো পুকুর হয়ে গিয়েছে রে।
তাইতো দেখা যাচ্ছে।
তুই নেমেছিলি কোন দিন?
নামবো না কেনো? অইসব ভুজুংভাজুং এ আমি ভয় পাইনা।
পুকুরের ইতিহাস জানিস তো? জানবো না কেন?
বল শুনি।
এই পুকুরে এখন পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে তার কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই হল প্রশাসনের কাছে। তবে হয়েছে আঠাশ জনের মতো। প্রায় প্রতি বছরই ঘটে এরকম ঘটনা।
আর কি জানিস।
চল নন্দলাল দেব এর কাছে যাই।
সে কে?
আছে একজন। স্বাধীনতার পর থেকে আছেন এখানে। তিনি ভালো তথ্য দিতে পারবেন।
না আমার গিয়ে কাজ নেই। যার মরার সে মরেছে। ওর টাইম শেষ আজরাইল জান কবচ কইরা নিয়া গেছে। আমি আসছি টাকার জন্য। আমারে পাঁচশ টাকা ধার দে।
তুইতো ইতিহাস জানতে চাইলি।
আচ্ছা চল। টাকাটা কিন্তু খুব দরকার। হাত একদম খালি। বাপের হোটেলের ধারে কাছেও ঘেষা যাবে না। মাকে তো চিনিস।
আমরা হাটতে হাটতে কেচি গেইট টপকে চলে এলাম একটা টি স্টলের সামনে। রবিন বললো দেবু দা কই?
নাম নিতে না নিতেই তিনি এসে হাজির। বললেন দেখছেন কান্ডটা? আমি বলছিলাম, মানাও করছিলাম। তারপরও শুনে নাই।
নন্দলাল দেব প্রায় চল্লিশ বছরের মতো ঢাবির মৃত্তিকা,পানি ও পরিবেশ বিভাগের ল্যাব সহকারীর দায়িত্বে ছিলেন। এখন তিনি অবসরে আছেন।
হ্যা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দাদা পরিচয় করিয়ে দেই ও হচ্ছে শুভ্র জাবিতে পড়ে। এই পুকুরটা সম্পর্ক এ জানতে চাচ্ছে।
দেবুদা বললেন, পত্র পত্রিকাতেতো অনেক লেখালেখি হইছে এটা নিয়া। আপনেরা দেখেন নাই?
দেখলেও মনে নেই আপনি একটু বলেন। আপনি যা জানেন।
এই হলের পুকুরে অভিশাপ আছে। কয়েক মাস পর পর পুকুরের ক্ষুধা পায়। ব্রিটিশ আমল থেকে এই পুকুরে প্রতি বছর একজন করে শিক্ষার্থী ডুবে মরে। এই পুকুরে অদৃশ্য কিছু আছে। অতিপ্রাকৃত ধরনের। তিথী মেনে মেনে মৃত্যু গুলো ঘটে। পুকুরের চারপাশে চারটি বড় গর্ত রয়েছে। গর্তগুলোকে অনেক বার বুজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কোন এক অজানা কারনে গর্তগুলো ভরাট হয় না। আর মৃত দেহ গুলো অইসব গর্তেরই আশেপাশে পাওয়া যায়।
কথার মাঝখানে বেমক্কা একটা প্রশ্ন করে বসলাম আমি। বললো, কেউ কি মরতে মরতে বেচে ফিরে এসেছে? অথবা এমন কোন অভিজ্ঞতা আছে এরকম ঘটনা নিশ্চই জানা আছে আপনার।
দাদা বললেন, বছর দুই আগে এক ছাত্র ডুবতে ডুবতে বেচে গিয়েছিল। ছেলেটা সাতার কাটতে কাটতে পুকুরের মাঝখানে চলে যায়। হঠাত করে তার শরীরে নাকি বিদুয়ত চমকের মতো কি যেনো একটা স্পর্শ করে। সে চিত্কার করতে পারছিলোনা। শুধু তার হাত নাড়ানো দেখে আশেপাশের মানুষ জন দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পরে তাকে উদ্ধার করে।
রবিন জিজ্ঞাসা করলো কি যেনো তিথীর কথা বলছিলেন দাদা।
হ্যা তিথী মেনেইতো জেগে উঠে এই পুকুরের মৃত্যু ক্ষুধা। যেমন শেষ যে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিলো সেদিন ছিল বুধবার আর অষ্টমী তিথী।
আমি বললাম, আমার কিছু প্রশ্ন ছিল দাদা। যদি কিছু মনে না করেন আপনি।
জ্বি বলেন বলেন।
এই যে প্রতি বছর মৃত্যু, যারা মারা যাচ্ছে তাদের অভিভাবকদের সাথে কি কখনো কথা বলতে পেরেছেন?
রবিন বললো কি বলিস তুই? দাদার কাছেতো জানতে চাইলাম ঘটনা। আর তুই চিন্তা করছিস গার্ডিয়ান নিয়ে।
দাদা বললেন, না এই চিন্তাতো মাথায় আসে নাই আমার কখনো।
রবিন বললো আচ্ছা দাদা আসি ।পরে দেখা হবে। ডুবুড়ি বোধ হয় এতক্ষনে পেয়ে গিয়েছে ছেলেটাকে।
রবিন আর আমি পুকুরের ঘাটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়লাম। হঠাত করে আমার মাথায় একটা প্রশন উকি দিলো। আমি বললাম দোস্ত চলতো দাদাকে কিছু প্রশ্ন করি।
আবার কি প্রশ্ন?
না এতো কিছুই যেহেতু জানলাম সেহেতু আরো কিছু তথ্য জেনে রাখা ভালো।
কি প্রশন করবি?
শুধু কি শিক্ষার্থীরাই মারা যায় এই পুকুরে? অন্য কেউ মানে আর কারো কি মৃত্যু হয় না? আর পুকুরের এমন কোন নির্দিষ্ট জায়গা কি আছে যেখান থেকেই শুধু ডুবে যাওয়ার ব্যাপারটা আসে?
এমন প্রশন মনে হলো কেনো তোর?
জানি না। ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে। বেচারার পরিবারের কথা একবার ভাব। এরকম কিছু যদি আমাদের সাথে ঘটে যায় তবে কি হবে!
আবার চায়ের দোকানে চলে এলাম আমরা। দাদাকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন,
আরে আচানক ব্যাপরটাতো এইটাই যে এতো মৃত্যুর সব গুলোই হয়েছে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। কখনো কোন কর্মচারি পুকুরে ডোবেনি। আর আরেকটা কাহিনী হচ্ছে বেশিরভাগই পরিবারের এক মাত্র সন্তান ছিলো।
রবিন বললো এটা কি কোইন্সিডেন্স নাকি?
আমি বললাম হতেই পারে। আবার নাও হতে পারে। দোস্ত আমার ভিতরের টিক টিকি তো কিছুক্ষন পর পর আওয়াজ দিচ্ছে।
এখানে কি অন্য কিছু খুজে পাচ্ছিস তুই? আমাকে বলার বলেছিস আর কাউকে বলিস না কিন্তু। লোকে পাগল বলে দৌড়ানি দিবে।
আমি বললাম তোকেইতো বলছি, পরিকল্পিত হত্যাকান্ড কি হতে পারে না?
মানে বুঝলাম না। অতিপ্রাকৃতর মধ্যে তুই খুন পেলি কোথায়?
আমার কাছে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে যে হয়তো আগে এরকম দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হয়েছে কয়েকটা তারপর এতোগুলো প্রায় আঠাশ জনের মধ্যে সবার একি নিয়তি? কি সুন্দর প্ল্যান। একবার চিন্তা করে দেখ। দল বেধে নামলাম পুকুরে মাঝখান থেকে একজন উধাও হয়ে গেলো হঠাত। কে করলো কিভাবে করলো কেউ জানলো না। যে বেশি বাড়াবাড়ি করেছে অথবা কোন গোপন তথ্য ফাসের ঝুকি হচ্ছে দিলো খালাস করে। আর অপরাধী পুকুরের এই ভয়টা কাজে লাগাচ্ছে।
কি সব আবোলতাবোল বকছিস?
আরে আমি আমার ধারনার কথা বললাম।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে তো এখানে এক বা একাধিক খুনি আছে। কারন বছরের পর বছর ধরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে চলেছে।
আরেকটা সম্ভাবনাও আছে দোস্ত।
মুচকি হেসে রবিন বললো কি বল শুনি। তোর মাথা থেকে তুই কাকে বের করিস।
সিরিয়াল কিলার।
©somewhere in net ltd.