![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা
বড় ভাই শাকিলের খুব জোর এক ধাক্কা খেয়ে ঘুম ভাংলো সাব্বিরের। সে এমনিতেই মারাত্নক অলস। তার উপর পরিবারের ছোট ছেলে
আদরের কোন কমতি নেই। তার আপুটা সব থেকে বেশি কিউট। ভাইয়ের সব কথাতেই তার দারুন সম্মতি। ইমা শাকিলের উপর ক্ষ্যাপে গেলো।
এই তুই সাব্বিরকে জ্বালাচ্ছিস কেন? ঘুমাচ্ছে বেচাড়া ঘুমাক না। তোর সমস্যাটা কোথায়?
আরে আপু জানিস না, অয় কাল রাতে কম্পিউটারে গেইম খেলতে গিয়ে সেটিংস অপশনে গিয়ে কি যেনো উলটা পালটা করে রাখছে। এখন উইন্ডোজ ওপেন হচ্ছেনা।
এভাবে ওর ঘুম ভাংালে কি ওপেন হবে?
না তা না, কিন্তু কোথায় আকামটা করছে সেটাতো বলতে হবে। নাইলে ঠিক হবে কি করে? বিকালে আমার আবৃত্তি অনুশীলনের ক্লাস আছে। আবৃত্তির রেকোর্ডিংটা কম্পিউটারে।
সাব্বির তখনো মরার মতো ঘুমিয়েই যাচ্ছে। কোন হুশ নেই। শাকিল পুরো খাট একবার ঝাকি দিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো
এই হারামী ওঠ। আমার কম্পিউটারে তুই কি করছিস?
সাব্বির এতো ঝক্কিঝামেলার পর আড়মোড়া ভেংে হাই তুলতে তুলতে বললো
ভাইয়া কি হইছে? এরকম চিৎকার করতেছো কেনো?
শাকিল ইমার দিকে তাকিয়ে বললো
দেখছিস আপু, কি বলে? আমি বলে চেচাচ্ছি!
অই তুই কম্পিউটারে কি করছস কাল রাতে ঘুমানোর আগে যে এখন অন হয় না?
সাব্বির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন শাকিলের দিকে। তারপর চোখ রোগড়ে বললো
আমি কিছু জানিনা। আমাকে ঘুমাতে দে তোরা।
এই বলে আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো।
শাকিল দাত কিড়মিড় করে তার আম্মাকে ডাক দিলো।
আম্মা, আম্মা! দেখেন আপনার ছোট ছেলে কি করছে!
নূরজাহান বেগমের বয়স পয়ত্রিশের কাছাকাছি। খুবই রূপবতী মহিলা। অমায়িক ধরনের ভালো মানুষ। খুবই ভালো রান্না করতে পারেন। তার পায়েসের কাছে অমৃত ফেইল। তার স্বামী তাকে আড়ালে বেগম জান বলে ডাকেন। তিনি এসে বললেন
সাত সকালে কি হচ্ছে কি ভাই বোন মিলে এসব? এতো হইচই কিসের?
আম্মা, সাব্বিরা আমার কম্পিউটারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আমি বলেছিলাম ওরে হাত দিতে দিয়োনা। এখোন আমি কি করবো?
নষ্ট হলে ঠিক করাতে নিয়ে যাও। তাই বলে কি এরকম করবে নাকি? তোমার পড়াশোনা নাই? সকাল বেলা কম্পিউটার কিসের?
আর ইমা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও গিয়ে কোরান শরিফের আয়াত মুখস্থ করো। জোরে জোরে পড়বে আমি যেনো শুনতে পাই।
নূরজাহান বেগম ছোট ছেলে সাব্বিরের খাটের কাছে গিয়ে দাড়ালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
সাব্বির, ও সাব্বির ঘুম ভাংছে? সকাল হয়ে গিয়েছেতো।
মাথার চুল টেনে দিতে দিতে বললেন
তোর না প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার কথা।
সাব্বির আরামে বালিশে আরো মুখ গুজে দিলো। কিছুক্ষন পর বললো,
আপনে না অনেক ভালো আম্মা। ভাইয়াটা একটা খাটাশ!
নূরজাহান হেসে ফেলে বললেন,
ছিঃ বাবা! বড় ভাই সম্পর্ক এ এসব বলতে হয় না। এখন তাড়াতাড়ি উঠো বাবা পড়তে যেতে হবে তো।
সাব্বির চাদপুর জেলার মতলব দক্ষিন উপজেলায় অবস্থিত মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস এইটে পড়ে। এই অল্প বয়সেই চোখের উপর একটা ভারি লেন্সের চশমা বসে গিয়েছে। সারাদিন সে এ কলোনি ও কলোনি করে করে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফেরে। মারামারি করাতে ওস্তাদ। কেউ কানা বললেই দে ধইরা মাইর। তার উপর আছে বিভিন্ন ধরনের গুটিবাজি। এই অল্প বয়সেও বেশ রাজনীতি করে বেড়ায়। তার বন্ধুদের নামও অদ্ভুত ধরনের। মোটা তুষার, সততা তুষার, বাটা রিয়াদ, ছোটা মিথুন, কাইয়ূম, ঘোষা আরও বিভিন্ন রকমের। এদের চরিত্র অনুযায়ী নামের আগে উপমা বসে গিয়েছে।
এখন ফেব্রুয়ারি মাস চলছে। বসন্তের হাওয়া মনকে উড়ু উড়ু করে এক অদ্ভুত নেশা ধরিয়ে দেয়। ধনাগদা নদীর তীর ধরে যখন হেটে যাওয়া হয় জোয়ার ভাটার টানের সাথে এক অদ্ভুত ভালো লাগার শিহরন কাজ করে দেহে মনে প্রানে। বাজারটা পড়েছে নদীর ধারেই। বিকালের দিকে সাব্বির তার আপুর সাথে এসেছে কিছু কেনাকাটার জন্য।
এই আপু চল্ না। তোর জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে। ম্যাচটা শুরু হয়ে যাবে।
আরে দাড়া দুই মিনিট। হিসাবটা দেখে নেই।
অস্থির হয়ে বার বার এদিক ওদিকে পায়চারী করতে থাকলো সাব্বির। কিছুক্ষন পরেই স্কুল ফিল্ডে কলাদী বনাম কলেজ গেইটের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ হবে। সে একজন প্লেয়ার। তার মাঠে থাকতেই হবে। সে পরে আছে বাজারে। ইমার হিসাব শেষ হতেই বললো
চল্, এতো তাড়াহুড়া করলে কি করে হয়!
কথা বলতে বলতে ওরা বাজার থেকে বের হয়ে কলাদি রোডে পড়লো। সামনের মোড় ঘুরলেই সাব্বিরের বন্ধু মিথুনের বাসা। মিথুনের বাসার সামনে আসতেই সে আবছা দেখতে পেলো একটা মেয়ে আস্তে আস্তে হেটে আসছে। আর তার আরেক বন্ধু কাইয়ূম তাকে টিজ করছে। বেশ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে। তাকে ভীত সন্ত্রস্ত হরিনীর মতো লাগছে। এই মুহুর্তে কি যে হলো সাব্বিরের সে ঠিক নিজেও বলতে পারবে না। কন্যাসুন্দর আলোয় মেয়েটির ভীত হওয়ার দৃশ্য দেখে জীবনে প্রথম বারের মতো বড় সর এক ধাক্কা খেলো। এই প্রথম কোন মেয়ের রূপ, ভীত চাউনী তার ভিত নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। তার কাছে এখন সব কিছু কেমন যেনো হালকা লাগতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে ফাপা কোন গর্তের মধ্য দিয়ে সে পড়ে যাচ্ছে। এরকম অন্ধ অনুভুতি তার আগে কখনো হয়নি। সে বুঝলো তার হৃদস্পন্দন এর আগে এতো দ্রুত কখনো হয়নি। এ কেমন অনুভুতি! সে আশেপাশে একবার দ্রুত দেখে নিলো কেউ তাকে দেখছে কিনা। দেখলেই সেরে ছিলো আর রক্ষা থাকতোনা কিছু বড় আপুর সামনে। প্যাচে পড়ে ম্যাচটা মিস হলো তার। কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে কিছুটা আনমোনা হয়ে সে সন্ধ্যায় বাড়িতে ডুকলো।
©somewhere in net ltd.