![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা
যেদিন অভ্র মারা গিয়েছিলো সেদিনও বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিলো। ভোরের শীতল বাতাস যখন বৃষ্টি হয়ে ঝরছে অভ্র তখন আইসিইউতে। ফরিদপুরের খুব নামি এক হাসপাতালে ভর্তি। বয়স কত আর হবে আট নয় মাস। দেখতে খুব সুন্দর এক ফুটফুটে শিশু যে খুবই মারাত্নক এক রোগ নিয়ে জন্মগ্রহন করেছে। এই রোগের কারনে শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি পড়ায় অবস্থা। জীবিত থেকেও সে মৃত। সে যদি বেঁচে থাকে তবে তাকে বড় হতে হবে সমাজের তীব্র ঘৃণা আর লাঞ্ছনা নিয়ে। এই রোগের জন্য কি অভ্র দায়ী ? যে ফুটফুটে চোখে তার গোটা জগত দেখার কথা ছিল তা আর সত্য হবে না। সে তার পৃথিবী দেখতে পারবেনা চোখ জুড়ানো দৃষ্টি মেলে। সে বুঝতেও পারবে না কি অসহায় এবং তীব্র বিতৃষ্ণা নিয়ে মানুষ তাকাবে তার দিকে বার বার। অথচ এই জীবন কিন্তু আর চার পাঁচটা বাচ্চার মতো সাবলীল হতে পারতো।
উত্তমের সাথে ঋতুরও দেখা হয়েছিল এক বর্ষা মওসুমে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিলো বাইরে। বিকালের দিকে এক নরম মিষ্টি আভায় গোটা বিক্রমপুরের রোদ বৃষ্টিতে মাখামাখি অবস্থা। এমন সময় প্রথম ফোন আসে ঋতুর মোবাইলে। ঋতুর বোন রিয়া মোবাইল রিসিভ করে। বলে হ্যালো কে বলছেন ?
উত্তম এমনিতে খুবই লাজুক স্বভাবের ছেলে। সে মনে করলো ফোন ধরেছে ঋতু।
সে বললো, “হ্যালো, আপনি কি ঋতু বলছেন ?
রিয়া বললো, হ্যাঁ আমি ঋতু বলছি। কি চাই, কে আপনি ?
উত্তম বললো,” আমি উত্তম। নামটা হয়তো শুনে থাকবেন।“
“কেন আপনাকে চেনাটা কি জরুরী ?”
থতমত খেয়ে উত্তম বললো, না ইয়ে মানে এটা কি টংগীবািড় নয় ? হ্যাঁ এটা টংগীবাড়ি আর আমি ঋতুই বলছি। এতো প্যাচাচ্ছেন কেনো ?
না মানে আমি ফরিদপুর থেকে উত্তম বলছিলাম। এই নাম্বারেই যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে আমাকে।
কেন যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে ? রং ণাম্বারে ফোন দিয়ে ফাইজলামি করেন? মেয়ে মানুষের সাথে লটর পটর করতে খুব মজা তাই না ?
না আমি সে উদ্দেশ্যে ফোন করিনি। আসলে আমি জানতে চাচ্ছিলাম আপনি কেমন আছেন ? আপনার বাবা মা কেমন আছে তা। মাঝখান থেকে আপনি শুধুশুধু আমাকে ভুল বুঝছেন।
ঋতু পাশের ঘরে সুনীলের দূরবীন পড়ছিল। রিয়ার কথা শুনে বিছানা থেকে উঠে ঋতু রিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো, “কি রে তুই আমার মোবাইলে কার সাথে কথা বলছিস ?”
রিয়া হুট করে ফোনটা কেটে দিয়ে বললো,”আপু দুলাভাই ফোন করেছিল”।
মানে কি? দুলাভাই কোথা থেকে আসলো, কে ফোন করেছিলো ?
উত্তম ভাইয়া ফোন করেছিল। আমি তুই হয়ে এতক্ষণ কথা বললাম।
ঋতু মৃদু গলায় বললো,” ও আচ্ছা! কি বললো ও ?
আমার সাথে কথা বলে পুরোপুরি ভড়কে গিয়েছে। তার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি টাইপ অবস্থা।
তুই দিন দিন মহা ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস। কি বলেছিস বল তাড়াতাড়ি ।না জানি কি মনে করে বসে আছে সে!
আমি কিছুই বলিনি । শুধু একটু ফাঁপর দিয়েছি। এই যা। তাদের কথার মাঝখানে বিকাশ আবার ফোন দিলো। এবার ঋতুই ফোন ধরলো। উত্তম বললো, হ্যালো দুঃখিত। আপনি কি ঋতুই বলছেন ?
হ্যা আমি ঋতু।
কণ্ঠস্বরটা কেমন আলাদা লাগছে।
ঋতু বললো,” আসলে তখন আমার ছোট বোন মোবাইল ধরেছিল। ও খুব পাজি। সরি ও কোন উল্টা পাল্টা কিছু বলে থাকলে।“
ও তাই বলুন। আমিও ভেবে পাচ্ছিলাম না। এই নাম্বারে কেনো এরকম হলো। কেমন আছেণ আপনি?
ঋতু বললো, জ্বী ভালো , আপনি?
এইতো ভালোই আছি। আপনার বাসার সবাই কেমন আছেন ?
ভালো, আপনার ?
হ্যাঁ ভালো।
আচ্ছা রাখি ভালো থাকবেন। এই বলে উত্তম ফোন রেখে দিলো। সে নিজেও ভেবে পেলো না সে এমন হোঠাত তাকে ফোন দিলো কেনো আর এমন আচমকা কেটে দিলো কেনো ?
সে ঋতুদের বাড়িতে যাওয়ার মূল সড়কে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি। কিছুদিন পরেই বিয়ে। তাদের সামনা সামনি দেখা হয়েছে শুধু একদিন তাও পানি চিনির দিন। তারপর থেকে মোবাইলে কথা বলে আসছে। আজ এসেছে দেখা করতে। মনে করেছিলো সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু পড়ঠোমেঈ ফোন দিয়েই রিয়ার ব্যবহারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে। পরে ঋতুর কণ্ঠ শুনে আশ্বস্ত হয়ে হুট করে লাইন কেটে দিয়েছে। বাইরে হালকা বৃষ্টি পড়ছে। গাড়ির ভেতরে বাজছে হাবিব ওয়াহিদের গান ‘একটু দাঁড়াবে কি এখনি নামবে বৃষ্টি’ গানটা। ওয়েদার আর সিচুয়েশন একদম খাপে খাপ। ঋতুর ফ্যামিলি অনেক রেসত্রিক্টেড। ঋতুকে বিয়ের আগে বিকাশের সাথে কোথাও ঘুরতে দিতে দিবেনা কিন্তু দেখা করা যেতে পারে তো? তাই এখন এসেছে দেখা করতে। উত্তম আবার ফোন করলো ঋতুকে।
ঋতু জানতো উত্তম আবার ফোন দিবে। তাই সে মোবাইল হাতেই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিল ।
উত্তম ফোন দিতেই ঋতু রিসিভ করে চাপা গলায় বললো
হ্যালো, আমি জানতাম আপনি ফোন দিবেন।
আচ্ছা আপনি কি কোন আকাশী রং এর শাড়ি পড়ে আপনার বাড়ির পুকুর ঘাটে আসবেন ?
ঋতু অবাক হয়ে বললো, কেন আপনি কোথায় ?
আমি আপনাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে কাকভেজা ভিজে যাচ্ছি।
ঋতু আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠে বললো, “কোথায় তুমি মানে আপনি? আমার বাসার সামনে?”
তবে কি আমি মিথ্যা বলছি? জানালা দিয়ে একবার বাইরে তাকিয়ে দেখুন।
ঋতুর চিৎকারে তার পরিবারের সবাই এক হয়ে গেলো বসার রুমে। ঋতুর দাদু উড্বেগের সাথে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,’ দাদু কি হয়েছে, এমন চিৎকার করলি কেনো ?
ঋতু কিছু না বলে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখলো।
রিয়া বলে উঠলো, ‘’আরে দাদু উত্তম ভাইয়া বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। সেই সংবাদ শুনে আপু এতো জরে চিৎকার দিয়েছে। সবাই বসার ঘড়ের জানালা দিয়ে দেখলো বাইরের রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে উত্তম দাঁড়িয়ে আছে।
ঋতুর বাবা স্বপন চোধুরি বলে উঠলেন, গাধাটা বাড়ির ভিতরে না এসে বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছে কেনো?
ঋতু একবার বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। উত্তমকে কেউ গাধা বললে তার ভীষণ রাগ লাগে। মনে হয় একটা লাঠি দিয়ে বারি মেরে ঠাস করে মাথাটা ফাটিয়ে দেই। রিয়া মুচকি হেসে বললো, বাবা কি করো কি করো! উত্তম ভাইয়াকে আর যাই বলো গাধা ডেকো না। গাধা ডাকলে আপু খুব রাগ করে।
স্বপন চওধুরী থতমত খেয়ে বললেন, “রাগ করে মানে?”
ঋতুর দাদু বলে উঠলেন,” আরে বাদ দে অইসব উত্তমকে ফোন করে বাড়ির ভিতরে আসতে বল। ও শুধু শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছে কেনো? “
বাইরে জোছনার বান ডেকেছে। চাঁদ তার সমস্ত আলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেইন্টমারটিন বালুর উপরে, সমুদ্রে। যতোদুর দৃষ্টি যায় সাদা জোছনায় ডেউ তলা ফেণা মুখে ভেঙে ্যাওয়া সমুদ্র। উত্তম আর ঋতু হানিমুনে এশেছে। কিছুদিন কক্সবাজার থেকে তারপর সেইনটমারটিনে। তাদের অনেকগুলো প্ল্যানের মধ্যে একটা সারা রাত দুই জনে খোলা জোছনায় দুজনের হাতে হাত ধরে বসে সমুদ্র দেখবে। তারা উঠেছে হোটেল সি ভীলেজ এ। আজ নিয়ে দুইদিন হলো তারা ছেঁড়াদ্বীপে যাবে। ঋতুর অনেক শখ ছেঁড়া দ্বীপের কাঁকড়া ভাজা খাওয়ার। বাংলাদেশের শেষ সীমানায় গিয়ে নিজের সত্যিকারের অস্তিত্ব গড়তে চায়। হানিমুন ট্যুরের একটা অংশ এটা। তারপর যাবে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, সিলেট শেষে কুড়িগ্রামের বাংলাবান্ধা। যেখান থেকে কাঞ্চন জংঘা দেখা যায়। বিয়ের আগেই উত্তমকে বলে রেখেছিলো সে হানিমুনে বাংলার বাইরে বিদেশে কোথাও যাবেনা। নিজের দেশের একেক প্রান্তে থাকবে হানিমুনের ট্যুর। বিকাশ ভেবে পায়নি একটা মেয়ের মধ্যে এতোগুলো পাগলামি এক সাথে আসে কি করে? সে পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিন এর শেষ প্রান্ত গুলোকে টাচ করবে তার হানিমুন ট্যুরে। গোটা বাংলাকে অস্তিত্বে বেঁধে ফেলতে চায় সে। অনেক দিন বিদেশে থাকার পর দেশে এলে এরকম পাগলামি দেখা যায় মানুষের মধ্যে। নিজের দেশের আনাচে কানাচে দেখতে চায়। কতোটা পরিবর্তন ঘটলো দেশের। কোথায় কি তৈরি হলো। কোন জায়গায় কি পালটে গেলো আর নানা কথা। উত্তম সন্ধ্যার দিকে বের হয়েছিলো কিছু কেনাকাটা করতে। সারা রাতের প্ল্যানের অংশ। ঋতুকে বলে বোঝানো যায় নি যে সারা রাত জাগলে কালকেও ছেঁড়া দ্বীপ কেনসেল হতে পারে। কিন্তু এক রোখা জেদের কাছে হার মেনে গিয়েছে উত্তম। ঋতু বলেছে সারা রাত জেগে সকাল সকাল ছেঁড়া দ্বীপে চলে যাবে। উত্তমের এখনি ঘুম পাচ্ছে। এখানে নেটওয়ার্ক এর অনেক বেশি ঝক্কি ঝামেলা। এই থাকেতো এই থাকে না। বিকাশ ফোন বের করতেই দেখলো এগারোটা মিস কল তার মোবাইলে। দেখল বাবা মা আর তার বড় ভাই ফোন দিয়েছে।
উত্তমের বাবা জনাব রাজ্জাক সাহেব খুবই রাশভারি মানুষ। তার কিছু পৈতৃক সম্পত্তি ছিলো তা তিনি মেধা বুদ্ধি দিয়ে চতুর্গুণ করে তুলেছেন। শহরের ক্ষমতাবানদের কাতারে তার নাম চলে আসে। পরিশ্রম এবং মেধা দিয়ে তিনি তার দুই পুত্রের জন্য একটা স্বর্ণের সাম্রাজ্য দাঁর করিয়েছেন। মিষ্টির ব্যবসা করলেন , কয়েকটা ফার্মেসী দিলেন, হোটেল দিলেন। তার ব্যবসায় কর্মচারী যারা আছেন তাদেরকে দিয়ে একটা গ্রাম বানানো যায়। তার এক বোন আছেন নাম ফাতেমা বেগম। তিনি তার পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে আছেন। এই ক্ষমতাবান রাজ্জাক সাহেব তার জীবনে অনেক উত্থান পতন দেখেছেন। তার সমসাময়িক বন্ধুরা এখন পড়ে রয়েছে সমাজের বিভিন্ন কাতারে। কেউ অনেক নিচে নেমে গিয়েছে কেউ তার উপরে চলে গিয়েছে। তার কাছে ব্যবসাই সব। তিনি যে কোন ধরনের ব্যবসায় রাজি। শুধু মুনাফা থাকলেই হলো। বড় ছেলেকে ফার্মেসি গুলোর দায়িত্ব দিয়েছেন। ছোট ছেলেকে দিয়েছেন হোটেল ব্যবসা। নিজে বসেন তার পুরাতন দই মিষ্টির দোকানে। বড় ছেলে আকাশ বিবাহিত তারও একটা ছেলে আছে। ছেলে কেজী টুতে পরে নাম নীল চোওধুরী। আকাশের স্ত্রী মেধা। তারা উভয়েই পড়ালেখা জানা শিক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রী তারা অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছে। ছোট ছেলে উত্তমকে নিয়ে রাজ্জাক সাহেবের একটা মাথা ব্যথা ছিল। তাও কিছুদিন হলো শেষ করে দিয়েছেন তিনি। ছোট ছেলের বিয়ে দিয়ে তিনি মহা আনন্দে আছেন ।
রাজ্জাক সাহেব বাড়ির কাজের ছেলে রনিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন,” রনি তুই মাছ মারতে জানিস ?
গ্রামের ছেলে রনি। সে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছে আগে। মাছ ধরতে লাগে আদার। টোপ হিসেবে যেটা ব্যবহার করতে পারে।
জ্বী হুজুর। আমি গ্রামের পাশের বিলে ছোট থাকতে অনেক মাছ ধরছি। পুঁটি, কই, তেলাপিয়া, নলা।
বড় মাছ ধরছিস কোন দিন ? এই ধর বোয়াল, রুই, কাতল এগুলা?
না হুজুর। আমাদের হুইল বড়শি কেননের ট্যাকা নাই।
আরে ধুর গাধা। বড় মাছ ধরতে সব সময় হুইল বরশি লাগে না। যেটা লাগে সেটা হলো মাছ ধরার কওশল।
জ্বি আপনি যেইটা বলেন।
এক কাজ কর কোথাও থেকে দুইটা বড় লাল পিপড়ার বাসা জোগাড় করে নিয়ে ায়। আর এই নে টাকা ধর। বাসি বন রুটি নিয়া আসবি।
ক্যান হুজুর? কথায় কথায় ক্যান হুজুর বলাটা রনির দীর্ঘদিনের বদ অভ্যাস।
রাজ্জাক সাহেব বললেন, তুই আমারে কারন জিগাস? তোর সাহসতো কম না।
থতমত খেয়ে রনি বললো হুজুর মাফ করবেন। আর হবে না।
রাজ্জাক সাহেব বললেন," লাল পিঁপড়ার বাসার ভিতরে দেখবি প্রচুর সাদা সাদা ডিম আছে। আগুলা পিপড়াদের লার্ভা। মাছেদের জন্য খুব সুস্বাদু খাবার। এর গন্ধেই মাছেরা চলে আসবে। আর বন রুটী আনলেই দেখতে পারবি কি করি।"
রাজ্জাক সাহেব তার আলিশান বাড়ির নিচ তলার গ্যারাজে চলে এলেন। সেখানে হরেক রকমের যন্ত্রপাতি রাখা আছে। আর আছে সাথে ছয় সাত প্রকারের হুইল বড়শি। একটা দিয়ে তার দাদা মাছ ধরতেন। অনেক পুরাতন। মাছ ধরার নেশাটা বংশগত বলা যায়। তাঁর বাবাও প্রচুর মাছ ধরতেন সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ব্যতিক্রম শুধু তাঁর ছেলে উত্তম। আর আকাশ বিয়ের পরে মাছ আর ধরেই না বলতে গেলে।
আধা ঘন্টা পরে কোথা থেকে দুই হাতে দুইটা জাম্বো সাইজের লাল পিপড়ার বাসা নিয়ে হাজির হলো রনি। সারা গায়ে পিপড়ার কামড়ে লাল হয়ে ফুলে আছে। হাতের পাতার বাসার এদিক ওদিক থেকে বের হচ্ছে লাল পিঁপড়া।
হুজুর আনছি। দেখেন এই দুইটায় কাম হইবো নাকি।
রাজ্জাক সাহেব বাসা দুটো খুলে দেখেন ভিতরে প্রচুর সাদা লার্ভা রয়েছে। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বললেন,’সাবাস রনি। কাজের কাজ করছিস। বাসি বন রুটি কই?
হুজুর বাসি বন রুটির কথা জিগাইলে দোকানদার কেমন চোখে যেনো দেখে আমারে।
অরে দোকানদারতো আর জানে না যে আমরা বন খাবো না মাছ ধরতে কাজে লাগাবো।
রাজ্জাক সাহেব দুইটা বনরুটি পানি মিশ্রন করে আটার দলার মতো করে ফেললেন। তারপর তাতে পিপড়ার ডিম মিশিয়ে আরেকবার দলা করলেন। বেছে বেছে স্যামসাং এর দুইটা হুইল বড়শি আর ছোট জাল নিয়ে রনিকে বললেন তুই ড্রাইভারকে গিয়ে বল গাড়ি স্টার্ট দিতে আমি আসতেছি।
সকাল থেকেই রিতুর মন খারাপ। তার কোন কিছু করতে ইচ্ছা করছে না। কান্না করতে ইচ্ছা করছে নীরব অভিমানে। কারন ভোরবেলা সে খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছে। স্বপ্নে দেখছে একটা বাচ্চা ব্যাকুল হয়ে তাকে মা মা করে ডাকছে অনেক দূরের কোন জায়গা থেকে। কিন্তু সে খুঁজে পাচ্ছেনা বাচ্চাটাকে। উত্তমকে বলতে ইচ্ছা করছে না। ও শুধু শুধু দুষ্টামি করবে খারাপ কথা বলবে। এরতো কোন অর্থ হয় না তাই না। সারা দিন রিতু এটা ওটা করে ব্যস্ত থাকলেও তার স্মৃতি থেকে সে স্বপ্নে বাচ্চার আহবানটা ইগনোর করতে পারছে না। উত্তম বাচ্চা নিতে চায় কিন্তু সেই নিষেধ করে রেখেছে। কারন মাত্র তাদের বিয়ে হয়েছে। সংসারের সব কিছু ভালো মতো গুছিয়ে উঠতে পারেনি এখনো। রিতু চাইছিলো সেভিংস আরেকটু বাড়ার পরে সে বাচ্চা নিবে। রিতু তার শ্বশুরবাড়িতে খুব ভালো ভাবেই আছে। বিত্তবান ঘরের বউ হওয়াটা যাতা ব্যাপার না। অনেক কিছুই সে এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। তার শাশুড়ি রোকছানা বেগম খুবই পরহেজগার নারী। সবারই তিনি ভালো চান। রিতু চিন্তা করলো সে তার শাশুড়িকে বলবে স্বপ্নের ব্যাপারে। কেনো এরকম স্বপ্ন সে দেখলো তা জানতে চাইবে। রোকছানা বেগম মাত্র সকাল বেলার কোরআন তেলোওয়াত শুরু করছিলেন রীতুকে দেখে থেমে গেলেন।জিজ্ঞাসা করলেন, এসো মা কিছু বলবে?
একটু ইতস্তত করে বললো, না মানে মা আপনি ব্যস্ত থাকলে পরে এসে বলি।
না বল। কি কোন সমস্যা হয়েছে?
মা আমি না একটা খুব খারাপ স্বপ্ন দেখছি।
কি দেখেছো স্বপ্নে?
একটা ছোট বাচ্চা কাদতেছে আর মা মা করে ডাকতেছে। কিন্তু আমি তাকে খুজে পাচ্ছিনা।
রোকছানা বেগম মৃদু হাসলেন। হেসে বললেন,
মা তুমি কি প্রেগনেন্সি টেস্ট করেছো?
কেন বললেন মা? না করাইনি এখনো।
অনেক সময় পেটে বাচ্চা আসলে মায়েরা তাদেরকে নিয়ে অনেক ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখে থাকে। তোমার মন ব্যাকুল হয়ে আছে একটা বাচ্চার মা ডাক শোনার জন্য। কিন্তু তোমার শরীর চাচ্ছেনা। তাই সব মিলিয়ে একটা ধাধা ধরনের স্বপ্ন দেখেছো তুমি। ও কিছু না অবচেতন মনের কল্পনা। ভুলে যাও।
রিতু আনমোনা হয়ে সারাদিন কাটালো। উত্তম অনেকবার জিজ্ঞাসা করলো কি ব্যাপার কি হয়েছে?
কিন্তু সে চুপচাপ মনের ভিতরে ছিলো।
উত্তম এখনি ঘর সাজাতে শুরু করে দিয়েছে বাচ্চার জন্য। ছেলে হলে এক ধরনের হবে আর মেয়ে হলে এক ধরনের হবে। রিতু বসে বসে উত্তমের পরিকল্পনা দেখছে।
কি নাম রাখবে তা নিয়ে একবার ঝগড়াও হয়ে গেলো দুই জনের মধ্যে। শেষে ঠিক হলো ছেলে হলে রাখবে অভ্র আর মেয়ে হলে বিপাশা। রিতু জিজ্ঞাসা করেছিলো কেনো একজন অভিনেত্রীর নাম রাখতে হবে! উত্তম বললো কোন অভিনেত্রীর নাম না বিপাশা একটা নদীর নাম। পশ্চিম পাকিস্তানের এক খরোস্রোতা নদী। উত্তম হঠাত প্রশ্ন করে বসলো আচ্ছা আমরা অভ্র বিপাশাকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবো না বাংলা মিডিয়ামে?
রিতু বললো, অবশ্যই বাংলা মাধ্যমে। বাংলা ছাড়া কিছু হয় নাকি? বাংালিয়ানা শত ভাগ। আমার ছেলে মেয়ে বাংলা মিডিয়ামেই পড়াশোনা করবে।
কিছুক্ষন চুপ থেকে উত্তম বললো, এই হলো মেয়ে মানুষের বুদ্ধি। গোটা দুনিয়া চলছে যেখানে ইংরেজীর উপরে সেখানে বাংলা নিয়ে পড়ে থাকাটা বেক ডেটেড। আর তাছাড়া আমরাতো বাসায় বাংলাতেই কথা বলবো। বাচ্চার সাথে কমিউনিকেশন থাকবে বাংলায় তবে বাচ্চার নিজের সাথে নিজের কমিউনিকেশন ইংরেজীতে হওয়াটাই বেটার। যদি কারন জানতে চাও তবে হাজারটা কারন দিতে পারি। প্রথমত আমরা যতোই ব্রিটেন আমেরিকাকে গালা গালি দেই না কেনো দিন শেষে তাদের সাথেই আতাত করতে হয়। বেচারাদের ব্যবহারিক ভাষা কি ইংরেজী। ভালো ভালো তথ্য সমৃদ্ধ বই কোথায় পাওয়া যাবে ইংরেজীতে। ইংরেজী সাহিত্য হচ্ছে নতুন আলেকজান্দ্রিয়া।
রিতু টানা উত্তমের কথার পাত্তা না দিয়েই বেবি ডল সাজাতে লাগলো বিছানার উপর। ইয়া বড় বড় পাঁচটা টেডি বিয়ার কিনে এনেছে উত্তম শপিং মল থেকে। তার মাথায় ঘুরছে বাচ্চা যখন আসবে তখন কোনটা সে পছন্দ করবে আর কোনটা করবে না।
শেষ বিকালের দিকে রাজ্জাক সাহেব তিনটা কাতল আর একটা রুই মাছ নিয়ে বীরদর্পে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেন। পিছন পিছনে রনি হাতে হুইল বড়শি আর জালের র্যকেট।
রাজ্জাক সাহেব বললেন, দেখলি মাছ কি রকম ভাবে শিকার করলাম?
রনি প্রথম দিকে অবাক হয়ে গিয়েছিলো জামে মসজিদের পুকুর ঘাটে গিয়ে। কমপক্ষে বিশ একুশ জন এক বিশাল দীঘির চারপাশে যে যার পছন্দ মতো হাতে হুইল বড়শি ছিপ নিয়ে বসে আছে। মাথার উপরে প্রত্যেকের ছাতা। ডান পাশে হুইল বড়শি রাখা। আর বাম হাতে নানান পদের জিনিস নিয়ে সবাই বসে আছে। মাছ ধরতে যে এতো উপকরনের প্রয়োজন হয় তা রনির খুনাক্ষরেও জানা ছিলো না। নানান পদ মিশিয়ে চারা তৈরি করছে। তারপর ফেলছে পুকুরের বিভিম্ন স্থানে। একজন সাহেবদের ড্রেস পড়ে মাছ ধরতে এসেছে। সে মাছ ধরতে গিয়ে পুকুরের পাড়ের কাদা পানিতে পড়ে গিয়ে মাখা মাখি অবস্থা। বিকাল তিনটা পর্যন্ত মাছ ধরা যাবে। যে সবচাইতে বড় মাছটি ধরতে পারবে তার জন্য বিশেষ পুরস্কার আছে। সকাল থেকে বিকাল গড়িয়ে অনেক মাছ মারা পড়লো। তবে সরদার সাহেব ধরলেন আসল মাছটা। দশ কেজি ওজনের এক ডাউস সিলভার কার্প।পুরস্কারটা তিনিই জিতলেন কিন্তু সবচাইতে সেরা মাছ তিনটা রাজ্জাক সাহেবের বড়শিতেই আটকিয়েছে, এই নিয়ে রনি ব্যাপক খুশি।
©somewhere in net ltd.