নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের জানাল২৬৪১

মনের জানাল২৬৪১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের ভাষা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৩৭

২০০৮ সাল সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছি। একটা বেসরকারী চাকুরী শুরু করলাম। তার কয়েক মাস পর আবার চাকরী পরিবর্তন করে আরো বেশী মাইনের একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে যোগদান করলাম। ভালই চলছিল জীবন। হঠাৎ কি যেন মাথায় এলো বিদেশ যাবো। তা ভালো কথা। কোন কিছু না ভেবে বিদেশ যাবার জন্য চেষ্টা শুরু করলাম। অবশেষে চেষ্টা আলোর মুখ দেখালো। জীবনের প্রথম দেশের বাইরে পা ফেললাম তাও আবার ইউরোপের দেশ ইটালী। এয়ারপোর্টের বিষয়ে নানা কথা শুনেছিলাম। যাই হোক বাংলাদেশ এয়ারপোর্টের অভিজ্ঞতার কথা আরেকদিন বলবে। উড়োজাহাজ অবতরন করলো ইটালীেতে। এবার ইমিগ্রেশন ক্রস করলাম। এরপর শুরু হলো এক মহাপ্রলয় যা জীবনে কোনদিন চিন্তাও করিনি, যে এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে। সমস্যাটা হলো ভাষা। ইমিগ্রেশন ক্রস করার পর ফ্রেশ রুম খুঁজিতেছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না। যাই হোক এইবার যথারিতি এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিয়ে জানতে চাইলাম " I am looking a fresh-room. Would you please tell me which way it is? ভদ্রলোক কি বুঝলো বুঝতে পারলাম না কিন্তু উনি একটা রুমের দিক নির্দেশনা দিল আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম সেটা ফ্রেশ রুম না ওটা একটা এয়ারপোর্ট অফিসরুম। এরপর বুঝতে পারলাম আমার ইংরেজী ভাষা এরা বুঝতে পারছে না। আমি ভেবেছিলাম বিদেশের বাড়ী ইংরেজী ভাষা বুঝবে কিন্তু এরা দেখি ইংরেজী বলেও না আবার পারেও না। এরপর শুরু হলো ভাষার যুদ্ধ। সেকি যুদ্ধ আমি পারলে জোর করে তাদের ইংরেজী বুঝাই। কিছুদিনতো গেল ইটালীর রোম শহরে। সেখানে তরপীনাতারা নামে একটি স্থান আছে সেখানে প্রচুর বাঙ্গালীদের বসবাস। সেখানে কিছুদিন কাটানোর পর শুরু হলো ভাষার যুদ্ধ। কেমন যুদ্ধ সেটা শুনুন। কিছুদিন রোমে থাকার পর যাচ্ছি বড় ভাইয়ের বাসায়। যথারিতি রোম থেকে ট্রেন এর টিকেট কেটে ট্রেন এ উঠলাম কিন্তু এই ট্রেন কিন্তু সরাসরি বড় ভাই যেখানে থাকে সেই জায়গারটার নাম হলো রিমিনি, সেখানে যাবে না মাঝপথে ট্রেন পরিবর্তন করতে হবে। ট্রেন পরিবর্তন করতে গিয়ে আমি বিকাল ৫.৩০ ঘটিকার ট্রেনে না উঠে আমি তাড়াহুড়ো করে বিকাল ৫ ঘটিকার ট্রেনে উঠে পরলাম। উঠার পরে দেখি আমি ভুল সময়ের ট্রেন এ উঠেছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। ট্রেন এর বগিতে না হলেও ৫০ জনের মত লোক আছে। আশেপাশের লোকজনকে ইংরেজীতে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে আমি ভুল ট্রেন ধরেছি এখন কি করবো অনেক কষ্ট করে পরে মুখ-অভিনয় করে বুঝাতে সক্ষম হবার পর এক ভদ্রলোক বুঝতে পারে আমার সমস্যা। পরে সে আমাকে সাহায্য করে। আমি জানি ঐ ইটালীয়ান আমার ইংরেজীর ই ও বুঝেনি আর আমি কিন্তু তার ভাষা বুঝতে পারিনি কিন্তু দিনশেষে মানুষের কষ্টের বা ভালো লাগার আলাদা স্বতন্ত্র একটা ভাষা আছে যেটা কোন দেশের বা জাতির ভাষা নয়। এটা হলো মানুষের বা মানব জাতির মনের ভাষা। সে বলে যেখান থেকে ভুল ট্রেন ধরেছি সেখানে ফেরত যেতে হবে এবং সেখান থেকে সঠিক ট্রেন ধরতে হবে। আমার শরীর দিয়ে ঘাম ছুটছিল। বাইরে মাইনাস ২০ ডিগ্রী ঠান্ডা কিন্তু আমি ভয়ে ঘেমে গোসল। এটা ছিল ভাষা না জানার এক করুন অভিজ্ঞতা। কারন সাধারন ইটালীয়ানরা ইংরেজী পারেও না আর পারলেও বলে না। তাদের বক্তব্যটা আমার মনে হেয়েছে এইরকম যে আপনি আমার দেশের ভাষা জানেন না তাহলে এখানে আসছেন কেন। তাদের ভাষার প্রতি তাদের যে শ্রদ্ধা তা দেখে আমি মুগ্ধ। এরপর বড় ভাইয়ের বাসায় যেখানে সন্ধ্যায় পৌঁছানোর কথা সেখানে রাত ১১ টায় পৌঁছাই। বড় ভাইতো কাজে চলে যায় আমি কি করি সকালে বের হই বিকালে বাসায় ফিরি কিন্তু কষ্টটা হলো সারাদিন একা ঘুরি বোবা হয়ে । কারন কারো সাথে কথা বলতে পারি না কারন আমি ইটালীর ভাষা জানি না আর ইটালীয়ানরা ইংরেজী বুঝে না। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আমি বারো দিন কারো সাথে কথা না বলে কাটিয়েছি। পরে অনুধাবন করলাম আমার মাতৃ ভাষার জন্য কেন এত লোক শহীদ হয়েছিল। ভাষার যে একটা ক্ষুধা আছে এবং ভাষার জন্য বাঙ্গালী জাতি কেন প্রাণ দিয়েছিল তা সত্যিকার অর্থে আমি তখন অনুভব করে বুঝতেপেরেছিলাম।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৯ রাত ১২:২০

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: কতিপয় দেশের মাতৃভাষা ইংরেজির থেকে সমৃদ্ধ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.