![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈদের ফেরি সমাচার ১
পরিবারই মূল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
কেবল ফেরিতে উঠলাম। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট। ফেরি ছাড়বে ছাড়বে ভাব। তখনই পাশের লঞ্চে সমস্যা হওয়ায় সেখানকার যাত্রীরা হুড়মুড় করে আমাদের ফেরিতে লাফ দিয়ে দিয়ে উঠছেন। বড় একটা ওয়াল ডিঙিয়ে এভাবে নামা আসলেই রিস্ক!!! এবার ধপাস করে লাফ দিয়ে নামলেন এক মধ্য বয়সী নারী। হাত-পা মোজা পড়া বোরখা আবৃত; শুধু দুচোখ দেখা যাচ্ছে। আর একটু হলেই তিনি পানিতে পড়ে যেতেন। সে যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পেলেও, পানিতে পড়ে গেল তার এক পায়ের জুতো। এ নিয়েই বিপত্তি।
সেই নারীর সাথে ছিলেন তার দীর্ঘ দাড়ি বেষ্টিত পাজামা-পাঞ্জাবি পড়া স্বামী আর ১১ কি ১২ বছরের এক মেয়ে। লাফ দিতে গিয়ে এক পায়ের জুতো কেন পড়ে গেল তা নিয়ে সেই লোক মহিলাটিকে সবার সামনে উচ্চস্বরে বকাঝকা করতে লাগলেন, থামার জো নেই। সবার সামনে তার স্ত্রী কতটা অস্বস্তিবোধ করছেন তার তোয়াক্কাই নেই। তার কথা, অন্য মহিলারাও তো নামলো; কারো তো জুতো খুলে পড়ল না, তো তার বিবির কেন এমন হলো। সাথের মেয়েও মাকে সেরমমম বকছে। সবাই পাড়ল তুমি কেন পাড়লা না। এখন আর এক পায়ে জুতা রেখে কি হবে। খুলো খুলো। ফেলে দাও পানিতে। গলায় ভীষণ শাসনের সুর!
কিন্তু সেই নারীর চোখ ছলছল। বলছে আমার নতুন জুতাটা। ৭শ টাকা দিয়ে কিনছি। আর অপলক তাকিয়ে আছেন পানিতে ভাসমান সেই হারানো জুতোটির দিকে। নিচেই নৌকো নিয়ে এক মাঝি ছিলেন সেটার পাশেই। খুব বুঝা যাচ্ছিল যদি মাঝিকে বলা যেত একটু! কিন্তু স্বামীর এমন অগ্নিমূর্তিতে সেটা বলা যে কোনোভাবেই যায়েজ হবে না; সেটা ঐ নারী বেশ জানেন।
ক্ষণে ক্ষণে চলছে সেই তিরস্কার। সেই কর্তাব্যাক্তিটি ঘুরে ঘুরে এসেই কিছু না কিছু বলে যাচ্ছেন তার স্ত্রীকে। মেয়েটিও থেমে নেই। ভদ্রমহিলা দেখলাম শুধু শুনছেন। একটা কথাও বলছেন না। বেশ বুঝা গেল, এমনটা নতুন নয়।
কিন্তু বরাবরের মত আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। ব্যাপারটা আর পারিবারিক নেই। ভদ্রবেশী লোকটিকে বেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললাম, পা মোজা দিয়ে এমন হিল ওয়ালা খোলা জুতো পড়ালেন কেন? পিছলে জুতোতো খুলে পড়বেই। আর এমন আঁটসাঁট বোরখা পড়ে উনি যে লাফ দিলেন নিজে যে পানিতে পড়ে যাননি; সেটাইতো অবাক করার মত। এত্তগুলো মানুষের সামনে আপনি ওনাকে এভাবে হেনস্থা করছেন। তখন সেই লোকের কণ্ঠ নিচু হয়ে এলো। একটু যেন অবাকই হলেন-কেউ ওনার আচরণের প্রতিবাদ করছেন! বেশ অমায়িকভাবে বললেন, নাহ ওর তো বাসায় অন্য জুতাও ছিল। এরপর সেই যে সেখান থেকে উধাও হলেন ফেরি ঘাটে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত আর এমুখো হলেন না। সেখানে উপস্থিত অন্যান্য দর্শকরা তখন আমাকে বললেন, ভাল করছেন, কিছু বলন দরকার ছিল, রানাও দৌঁড়ে এসে দেখল, এবার কি ঘটল।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটি একটা মোটরসাইকেলের ওপর বসল। আর মা ঠায় দাঁড়িয়ে প্রায় পৌনে এক ঘন্টার মত। করবেন ই বা কি। ভদ্রমহিলা পোশাকে- আশাকে এতটা জড়সড় আর এতক্ষণের আচরণে সবার সামনে এতটা নাজেহাল যে কোথাও বসাতো দূরে থাক; একটুর জন্য নড়লেনও না।
অনেকক্ষণ পর মা তার মেয়েকে ব্যাগ থেকে বিস্কিট-কোক বের করে খেতে সাধছেন। আর মেয়েটি চিৎকার করে বলছে, আমি খামু না। আর একবার সাধলে আমি পানিতে ঝাঁপ দিমু।
এবার আমি মেয়েটির কাছে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কোন ক্লাসে পড়? ক্লাস এইটে। কোন স্কুলে? নারায়ণগঞ্জের একটা স্কুলে। বললাম উনি তোমার কি হন? মা। তো মায়ের সাথে এমন আচরণ করছো কেন? সেই শুরু থেকে দেখলাম, তোমার বাবার সাথে তুমিও মাকে বকছো। কই তুমি তোমার মায়ের হয়ে বলবে, থাক বাদ দাও। যা গেছে, গেছে। আবার খাবার সাধাতে তুমি পানিতে ঝাঁপ দিবে কেন? এত ঔদ্ধত্যপণা কিসের। তুমি তোমার স্কুলের নাম দাও, আমি তোমার স্কুলে যাব। মেয়ের তখন মাথা নিচের দিকে। মা নিশ্চুপ।
মিনিট পাঁচেক পর মেয়েটি আমার কাছে আসল। বলল, সরি। চিপস আর কোক সাধলো। বললাম, মাকে গিয়ে সরি বলো, আমাকে না। তুমি দেখতে এত লক্ষ্মী একটা মেয়ে। স্কুলে পড়, অথচ ব্যবহার এমন হলে; হবে বলো। মা তোমাকে কত কষ্ট করে বড় করছেন। তুমি খারাপ ব্যবহার করার পরও, উনি কিন্তু প্রথমে তোমাকে খাবার সেধেছেন, দেখ।
ফেরি ঘাটে পৌঁছল। নামার আগে মেয়েটি তার বাসার ঠিকানা দিয়ে গেল বেড়াতে যেতে। মা হাসিচোখে বললেন, আসি।
©somewhere in net ltd.