![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুহাম্মদ শামসুল আলম১১০ মনেশ্বর রোডজিগাতলা, ধানমন্ডি, ঢাকা।অফিসার, মার্কেটিং ডিভিশনপ্রাইম ব্যাংক লিমিটেডহেড অফিস, ঢাকা
আমার ছোট্ট পাপ্পু। বয়স আড়াই বছর। আমার স্ত্রী আমার পরিবারের সদস্যেদর সাথে ব্যত্বিত্তের সংঘাতে আমার উপর দুনিয়ার তাবৎ দোষ চাপিয়ে প্রায় দুইমাস ধরে বাপের বাড়িতে। সাধারন বিবেচনায় আমার স্ত্রী অনেক সেসেটিভ এবং কারো সাথে ঝগড়া লাগলে অফিস থেকে ফেরার পর সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপায়। দোষের বোঝা বইতে বইতে আমি প্রায় ক্লান্ত।
পাপ্পু তার মায়ের এত দোষের মাঝেও আমার কাছে সারাক্ষণ আরাধনার বিষয়। মায়ের গর্ভে আসার পরই আমি তার নাম ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার সন্তান আমার খুবই ভালাবাসার।
আমার জীবনের বড় দূঃখ হলো যাদের আমি সবচেয়ে বেশী ভালবাসি তারা কেউ-ই জানে না যে তাদের আমি আদৌ ভালবাসি কি-না। সাবচেয়ে বেশী যাদের ভালবাসি তাদের প্রায় সবাই আমাকে ভালোমত অপছন্দ করে কেউ কেউ ঘৃণাও করে। আমার বাপ এই লাইনে সবার উপরে। এই পৃথিবীতে আমি তাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি কিন্তু আমার দুনিয়ায় তিনি-ই আমাকে সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করেন। পাপ্পুকেও ভালবাসতে ভয় লাগে সে-না আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।
গত পরশু ছুটির দিনে ওদের দেখতে গেলাম। শ্বশুড় বাড়ী প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের পথ। রাতে গাড়ীতে উঠলাম মাঝরাতে পৌছলাম। পাপ্পু জেগে আছে দেখে মনটা খুব হালকা হলো। সকালে উঠে ফেরার জন্য তৈরী হলাম, পাপ্পু কান্না শুরু করলো। তার মাকে বলছে, আম্মু বাবাকে থাকতে বলোনা। তার মা বকাবকি শুরু করলো। একসময় পাপ্পু বলে বসলো আমিও যাব। তার মা রাগ করে কাপড় পরিয়ে দিয়ে বললো যা। সে কাপড় পরার পর রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কোত্থেকে একটা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে এসে বললো কাপড় দাও। তার মা বললো যা তুই নিয়ে নে। পপ্পু তার ছোট ওয়ারড্রবের মধ্য থেকে বেছে বেছে কিছু জামা ব্যাগে ডুকালো। আমি বসে বসে দেখছি সব। এটা ওটা নেয়ার পর আমার কাছাকাছি এসে দাড়ালো। তার মা বললো তুই যাবি? সে তার বাম হাতের মধ্য আঙ্গুল ডান হাতে মোছড়াতে লাগলো। আমার বুকটা হা হা করে উঠল। আমি যখন কোন সিদ্ধান্ত নেই এবং কেউ বাধা দিলে এই কাজটা করে থাকি। আমার যোগ্য সন্তান। তার মা তাকে বলল ওখানে গেলে সবাই মারবে। তুই যাবি? সে একই কাজ করতে থাকলো। শেষমেষ ভারি ব্যাগটা টেনে টেনে আমার কাছে নিয়ে আসলো। আমার হাতের আঙ্গুল ধরে দাড়িয়ে আছে। আমার পৃথিবী তখন দুলছে। আল্লাহ তুমি কি দেখালে???
ছোট খাট ব্যাবসা করতে গিয়ে অনেক বড় ক্ষতির মাঝে পড়ে আজ প্রায় ৫ মাস ধরে আমি দিশেহারা। ব্যবসার সমস্ত পুজি আমার আর পার্টনার রা বলে আমি টাকা মেরে দিয়েছি। ঋণের ভার বইতে না পেরে মাঝে মাঝেই আত্বহত্যার কথা ভাবছি.. পরিবারের সবাই নানা কথা বলছে যা শুনলে ইচ্ছে করে এখুনি মরি না-কেন? আমার এই দুঃসময়ে সবার আগে আমাকে ছেড়ে গেছে আমার পরমপরা স্ত্রী যাকে বিয়ে করার জন্য দুনিয়ার সবকিছু ত্যাগ করেছি। কিডনী রোগে আক্রান্ত বাপের জন্য প্রতি সপ্তাহে দরকার অনেক টাকার যা আমার পক্ষে যোগাড় করা অসম্ভব।
এই অবস্থায় একজন মানুষের মানষিক অবস্থা কিরূপ থাকতে পারে?
এতশত দুঃখের মাঝে আমার পাপ্পুর এই কাজ আমার পৃথিবীর সমস্ত হিসাবকে উল্টে দিয়েছে। সেই মুহূর্তে আমার মনে হলো পৃথিবীতে আমি জম্ম নিয়ে নিজে সার্থক আর সার্থক বাপ হতে পেরে। আমি পাপ্পুতে কোলে নিয়ে বাইরে বের হলাম, সে ব্যাগসহ বেরুতে চাইছে। আমি ব্যাগটা রাখতে বললাম সে রাজি না, কোলে করে রাস্তায় বেরিয়ে ব্যাগটা জোর করে ওর নানিকে ধরিয়ে দিলাম। সে কান্নাকাটি শুরু করলো। আমি তাকে অনেক কষ্টে শান্ত করলাম।একটা রিক্সা নিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা ঘুরলাম। আবার ওকে নিয়ে ওর নানা বাড়ি ফিরলাম। গোসল করিয়ে খাওয়া দাওয়া করালাম। তারপর ঘুম পাড়িয়ে দিলাম আর আমি বেরুলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। মনের ভেতর খুব, খুব ব্যাথা লাগছিল। ওর মাকে ফোন করলাম পাপ্পু উঠেছে কি-না? বলল উঠেছে, জিঙ্গেস করলাম আমাকে কি আর খুজেছে? জানাল পাপ্পু উঠে বলছিল বাবা ক-ই? তার মা জানালো বাবা চলে গেছে। আমার পাপ্পুর পরবর্তী প্রশ্ন ছিল- আমাকে ফেলে চলে গেছে? বাবা আমি কখনো তোকে ফেলে আসতে পারি না বাবা........তুই আমার রক্তের প্রতিটি ফোটাতে। আমি প্রতিটি নিঃশ্বাসে...কিভাব তোকে ফেলে আসি...........
২| ১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৯
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভাল আবেগ দিয়ে লেখা। বাস্তব হলে আপনার চেয়ে দুঃখী কেউ নেই।
৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৩৩
এম এম করিম বলেছেন: লেখাটা পড়ে চোখে পানি চলে এলো।
৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:৪৪
কালের সময় বলেছেন: লেখাতা পড়ার পরে মনতা কেদে উঠল।
৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৩
শামস 8929 বলেছেন: নিজে নিজে লেখাটা বার বার পড়ি। চোখের পানি কোনবারই আটকাতে পারিনা। আবার গর্বও হয় বুকভরা। আমি একজনকে পেয়েছি যে আমাকে হাজার বছর বাছিয়ে রাখবে।
৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:০৮
অয়ন নাজমুল বলেছেন: দুবছর আগের লেখাটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। কেমন আছেন? পাপ্পু কেমন আছে জানতে পারলে খুশি হব। শুভেচ্ছা রইলো।
৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২৯
শামস 8929 বলেছেন: অয়ন ভাইকে বলছি- গল্পের শেষটা আরো মধুর আর সমান বেদনাদায়ক। ২০১৪ সালের শেষ দিকে আমি চাকুরীটা হারিয়েছি, আকাশ থেকে একটা মামলা মাথার উপর এসে পড়েছে, আমার বাবা পরপারে চলে গেছেন আর আমি ঢাকায় উদ্ভাস্তুর মত আছি। হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা!! হ্যাঁ, কাজের কাজ একটিাই করেছি সেটা হলো--- পাপ্পু ও পাপ্পুর মা এখন আমার সাথেই আছে (তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটা ছিল আমার শ্বশুর মশায়ের সাথে)। খুব কষ্টে ছোট একটি বাসাতে কোন রকমে খুব ভাল আছি বলব। সবচেয়ে বড় সুখ হলো পাপ্পু পাশে আছে। পাপ্পুর ভাষায় আমি নাকি সুপার হিরো আর সে পার্ট টাইম সুপার হিরো। হা হা হা। গলির একটা স্কুলে তাকে ভর্তি করিয়েছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে আমার দুরাবস্থার কথা বলার পর তিনি টাকা পয়সা একটু কমিয়ে নেন আর যখন ইচ্ছা তখন দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। হ্যাঁ ভাই- খুব ভাল আছি। ধন্যবাদ খবর নেয়ার জন্য।।।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৫
একজন ঘূণপোকা বলেছেন: সুন্দর