নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

[email protected]

শ।মসীর

At present I am living in the consequences of a choice made earlier বেঁচে আছি এটাই আনন্দের.........।। ইচছা হয় সারাদিন ঘুরি পথ থেকে পথে ঘোরা হয়না..............................।।

শ।মসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়িওয়ালির অশরীরি মেয়ে -১৪-১৫ তম পর্ব

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৫




১৪ তম পর্ব

না ঘুমিয়ে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে আসল শানু । এই প্রথম সবার আগে সে অফিসে এসে হাজির হল । যেই আসে সে তার দিকে তাকিয়ে বলে কি ভাই সারারাত কি প্রেম করেছেন নাকি যে আজকে সাত সকালে সবার আগে এসে হাজির হয়েছেন , নাকি প্রেমে টেমে পড়েছেন, মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমাতে পারেননি ।

শানু হালকা হাসি দিয়ে সবাইকে বলে আরে না, আগে আগে ঘুম ভেঙ্গে গেছে তাই ভাবলাম আজকে যেহেতু সুযোগ পাওয়া গেল সুতরাং সবার আগে অফিসে চলে যায় , সবাই আমার আগে অফিসে চলে আসে, এই কথা তাহলে আপনারা আর জোর গলায় বলতে পারবেননা । চা নিয়ে বসে সে, সারাদিন আজকে কয়েকদফা চা খেয়ে সে মোটামুটি নিজেকে সজাগ রেখেছে ।

কাজে কর্মে যে খুব বেশী মনোযোগ দিতে পেরেছে তা ও না । কেমন একটা অস্হির ভাবনায় কেটেছে সারাদিন । ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বাস্তব না তার কল্পনা সে হিসেব মেলাতে পারেনা । তার মন পরে থাকে ছাদের অশরীরির প্রতি ভাবনায় । রুমে ফেরার জন্য কেমন যেন তাড়া অনুভব করে সে । অফিস শেষে আজ কোন আড্ডা দিতে যাবেনা, সোজা বাসায় চলে আসবে, মনে মনে এই ডিসিশান নিয়ে নেয় সে ।

অফিস শেষে সোজা বাসার পথ ধরে শানু । না ঘুমানোর ক্লান্তি আর সারাদিন তেমন কিছু ভালভাবে না খেতে পারার কারনে শরীরে বেশ দুর্বলতাও কাজ করে । বাসার কাছাকাছি একটা হোটেলে ঢুকে ভরপেট খেয়ে নেয় সে । সাথে রাতে খাবার জন্যও হালকা খাবার কিনে নেয় । গত দুদিন বাজার করা হয়নি, তাই বুয়া আসলেও কিছু রান্না করে রেখে যেতে পারার কথা না । অবশ্য এমন সিচুয়েশন মাঝে মাঝেই হয়, ব্যাচেলর লাইফে এইটাতে অবাক হাবর ও কিছু নাই, সে জানে । এইসব পরিস্হিতিতে তার বুয়া বেশ বুদ্ধীমানের পরিচয় দেয় মাঝে মাঝে, ঘরে চাল আর ডাল থাকলে সে সুন্দর করে খিচুড়ী রান্না করে রেখে যায় ।

খাওয়াদাওয়া শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে এশার এর আজান হয়ে গেছে । নিচে লিফটের জন্য যখন অপেক্ষা করছিল তখন সে দেখেছিল আশরাফুলকে, গাড়ি ধোয়ামোছার কাজ করছে সে । অন্যদিন হলে সে দুচারটা কথা বলত, আজ আশরাফুলকে দেখা মাত্রই কেমন যেন মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছিল , মনে মনে সে ভাবছিল এই হারামজাদার জন্য একটা মেয়ের জীবন অকালে ঝরে গেল । তার মনে হচ্ছিল কষে ভয়ংকর একটা চড় মারতে পারলে হয়ত ভাল লাগত ।

বাসায় এসে দরজা খোলা রেখে ফ্রেশ হয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় হেলান দিল সে । অপেক্ষা করছে বাড়িওয়ালির অশরীরি মেয়ে আবার কখন দেখা দিবে ।

সকালে রোদের ঝকমকে আলো এসে চোখে পড়াতে ঘুম ভেঙ্গে গেল শানুর । ধড়মড় করে সে বিছানায় উঠে বসল । হায় হায় এত সকাল হয়ে গেছে । শানুর মনটাই খারাপ হয়ে গেল । নিশ্চয়ই রাতে সে এসেছিল, শানুকে ঘুমাতে দেখে হয়ত আর ডাকেনি । নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হল তার । তবে ভাল ঘুম হওয়াতে বেশ ঝরঝরে ও লাগছে তার , এই ভেবে নিজেকে স্বান্তনা দিল সে, গতকাল রাত ও জেগে কাটালে শরীর অনেক খারাপ হয়ে যেত , একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে ঘুম হওয়াতে ।

অফিস শেষ করে আজও যথারীতি রুমে চলে আসল সে । খাওয়া দাওয়া শেষে অনেকক্ষন ছাদে হাঁটাহাঁটি করল সে, কিন্তু না মেয়েটির কোন দেখা নেই । দরজা খোলা রেখে বিছানায় হেলান দিয়েও অনেকক্ষন বসে ছিল সে । শেষে বরং তার মেজাজই খারাপ হয়ে গেছে । সে নাহয় মেয়েটি না চাইলে তাকে দেখতে পাবেনা, কিন্তু মেয়েটিত নিশ্চিতভাবে তাকে দেখছে । তাহলে সে দেখা দিচ্ছেনা কেন । এইসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পরল ।

বৃহস্পতিবার , নরমালি এর আগে উইকএন্ডে হয় সে নিজে কোন বন্ধুর বাসায় চলে যেত, না হয় বন্ধুদেরকে ফোন দিয়ে বলত তার বাসায় চলে আসতে । আজ তার কোনটাই করলোনা সে । আজও অফিস শেষে নিজের রুমে চলে আসল সে । রাত বারটা বেজে গেছে, এখনও তার দেখা নেই । চিলেকোঠার ছাদে পা দুলিয়ে বসে আছে সে । আকাশে বিশালাকার চাঁদ উঠেছে । পেপারে দেখেছিল এইটা নাকি এই শতকের সবচেয়ে বড় চাঁদ । আসলেও তাই । আজকে চাঁদটাকে অন্যদিনের তুলনায় বড় দেখাচ্ছে, সেই সাথে আলোও অনেক বেশী স্বচ্ছ ও পরিষ্কার । এমনসব পূর্ণিমা রাতে সে অনেকক্ষন রাত জেগে বসে থাকে । এই জিনিসটা তার মাঝে ভর করেছে হুমায়ুন আহমেদের কারনে । প্রিয় এই লেখকের লেখা পড়েই আসলে সে চাঁদ দেখতে শিখেছে । চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকে গোগ্রাসে জোছনা গেলার এই জিনিসটা না হলে সে জানতেও পারতোনা । অপলক চোখে সে এখন পূর্ণিমার রাতগুলোতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে, বেহিসেবী সময় বয়ে যায় । সে নিজেও জানেনা কি খুঁজে বেড়াই ঐ চাঁদের দিকে তাকিয়ে । কেমন নেশাগ্রস্তের মত তাকিয়ে থাকে ,মাঝে মাঝে তার মনে হয় সে যেন চাঁদের দিকে হেঁটে চলেছে, আর একটু গেলেই হয়ত চাঁদের মাঝে সে বিলীন হয়ে যাবে । প্রতিটা পূর্ণিমাতেই এ ঘটনা ঘটে চলে ।

কেমন আছেন ?
শানু আজকে একটুও চমকায়না, কিছুটা না ভালই রাগ পুষে আছে তার মনে , তাই ইচ্ছে করে ঘুরেও তাকায়নি সে ।
কি খুব রাগ করে আছেন মনে হয়, নাকি ভাব ধরে আছেন । কথা বলছেননা কেন ?
এই কয়দিন কই ছিলে ?
আশেপাশেই ছিলাম । ।
তাহলে দেখা দাও নাই যে ।
দেখা দেই নাই ইচ্ছা করে, দেখা দিলে পরে দেখা যেত গল্প করতে করতে সকাল হয়ে গেছে, আপনার তখন না ঘুমিয়ে অফিস করা লাগত ।
বাহ, তুমিত দেখি আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা কর ! অফিসে যেতে দেরী হবে সেটা ভাবলা, আর এসে আমি যে অপেক্ষা করে থাকতাম সেটা দেখ নাই ।
দেখছিত । কিছুক্ষন অপেক্ষা করে বিরক্তি নিয়ে ঘুমিয়ে যখন যেতেন তখন আপনাকে দেখতে আরো ভাল লাগত । ক্লান্ত চেহারা নিয়ে কি গভীর ঘুম দিতেন আপনি ।

তো আজকে দেখা দিলে কি কারনে ?
কালকে আপনার অফিস নাই, তাই ভাবলাম আজকে আপনার সাথে বসে গল্প করা যায় । তার উপর কি সুন্দর পূর্ণিমা । এমন রাতে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় । চারপাশে এত সুন্দর আলো দেখে চোখ ধাধিয়ে যায় । নিজের এই জীবনের উপর রাগ কয়েকগুন বেড়ে যায় । কেন আমি এমন একটা ভুল করলাম সেটাই খালি মাথায় বাজতে থাকে । কিংবা সে ভুলের পরে এখন আমি এই শাস্তিইবা কেন পাচ্ছি তাও আমার মাথায় ঢুকেনা ।

অশরীরি মেয়েটি শানুর পাশে এসে বসে । একদম গা ঘেষে সেও পা দুলিয়ে দেয় । দূর থেকে কেউ দেখলে অবশ্য মেয়েটিকে দেখবেনা, তারা দেখবে শানু পা দুলিয়ে বসে আছে , আর সম্ভবত নিজের মনে গল্প করছে, নিজে নিজে কথা বলছে , তাই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ।

উদ্দেশ্যহীন আলোচনা চলতে থাকে তাদের মাঝে , দুজন দুজনের নানা বিষয় জানতে চায় । শানু জানতে পারে মেয়েটির ক্ষুধা নামক কোন অনুভূতি কাজ করেনা । সে অবাক হয় । হিসেব মেলাতে পারেনা, যে ঘটনা সে অবলোকন করছে এটা আসলে কতটুকু সত্যি । কি ভাবেইবা সম্ভব । কাউকে বললে নিশ্চিতভাবে তাকে মানসিক রোগী বানিয়ে দিবে কিংবা বলবে সে হয়ত নিয়মিত নেশা করে ।

শানুর আব্দারের কারনে মেয়েটি শানুকে তাকে ছুয়ে দেখতে দেয় । শানু শানু ভয়ে ভয়ে মেয়েটির হাতের দিকে হাত বাড়ায় । দ্বিধান্বিত হাত, খুবই স্বন্তর্পনে সে মেয়েটির হাতের উপর রাখার জন্য নিয়ে যায়। সে টের পায় কেবল জায়গাটা শূন্য নয়, তাই বলে রক্ত মাংসের মানুষের হাতের মতনওনা । মেয়েটির অস্তিত্ব বুঝতে পারে শানু, কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক তার পক্ষে এটা বিশ্বাস না করার এখন আর কোন কারন নেই ।

দূরে আকাশে প্লেন উড়ে যায় । শানু কথায় কথায় জানায় তার অনেক দিনের এই প্লেনে চড়ার শখ খুব জলদি সে পূরন করবে । বহুদিন ধরে সে কেবলই ভেবেছে কেমন লাগে এই প্লেনে চড়তে ।

মেয়েটি জানতে চায় কখন চড়বে শানু, উত্তর দেয় সে হাসতে হাসতে । বলে এটা তোমাকে বলবোনা । গত কয়দিন আমি যে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, সেটাতে যে কেমন পেইন লেগেছে তা তোমারও একটু বুঝার দরকার আছে । তোমাকে না বলেই যাব, তুমি তারপর প্রতিদিন অপেক্ষা করবে । তখন বুঝবে কেমন লাগে ।

মেয়েটি হাসতে হাসতে জবাব দেয় কে বলল আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব, আর আপনি না আসলে আমার খারাপ লাগবে । আমি আপনাদের জাগতিক এই সব অপেক্ষা, ভাল লাগা খারাপ লাগা থেকে অনেক দূরে বসবাস করি । মানুষের কোন অনুভূতিই এখন আর আমাকে নাড়া দেয়না । আপনারা মানুষরা ভাল না এমনিতেই । একে অন্যকে কস্ট দেয়া ছাড়া আপনারা আর কিছু পারেন বলেও মনে হয়না আমার ।

ফজরের আজানের সময় মেয়েটি জোর করে শানুকে ঘুমাতে পাঠিয়ে দেয় , না হলে হয়ত আজও সকাল হয়ে যেত তাদের গল্প করতে করতে । এরপর প্রতিদিনই তারা অল্প সময় গল্প গুজব করে কাটাত । মেয়েটি শানুকে ঘুমাতে যেতে বললে সে আরেকটু সময় গল্প করার আব্দার জুড়ে দিত । শানু যেহেতু গল্প করা থেকে নিজের ইচ্ছায় ঘুমাতে যাবার পাব্লিক না, তাই প্রায় প্রতিদিনই মেয়েটি হঠাত করে নাই হয়ে যেত ।


১৫ তম পর্ব

প্লেনের টিকেটের অফার চলছে কক্সবাজার এ আসা যাওয়া সাথে পাঁচ তারকা হোটেলে দুই রাত থাকা অর্ধেক খরচে । বন্ধুদের কারোরই সময় হচ্ছেনা, মোটামুটি মেজাজ খারাপ করেই শানু টিকেট কেটে ফেলল , নিজেই নিজেকে বলল, কেউ না গেলে না যাক, প্লেনে চড়ার শখ এবার আমি পূরণ করবই । টিকেট কেটে ফেললেও একটা ঝামেলা রয়ে গেছে , এই অফারটা দুই জনের জন্য হলে সুবিধাজনক, এক হলে বলা আছে টুইন শেয়ারের রুম, তার মানে অন্য কারো সাথে হয়ত রুম শেয়ার করতে হবে । এই নিয়ে অবশ্য সে খুব বেশী টেনশন করছেনা । একেত যারাই এই অফারে যাবে তাদের বেশীর ভাগই জোড়ায় জোড়ার যাওয়াটাই স্বাভাবিক, তার মত এমন পাবলিক হবার সম্ভাবনা কমই । আর হলেও মন্দ হবেনা, আরেকটা দল ছুট মানুষের সাথে কপাল বেশী খারাপ না হলে খুব বেশী খারাপ সময় কাটবেনা । যাই হউক দুই রাতের ই ব্যাপার, রুমে আর কতক্ষনই বা থাকবে । মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, পুরোটা সময় সে সাগড়পাড়ে একটা বিচ চেয়ার নিয়ে শুয়ে শুয়ে কাটাবে । প্রথমবার বিমানে চড়তে যাচ্ছে সে এটা ভেবে বেশ থ্রীল অনুভব করছিল সে ।

জীবনে প্রথমবার প্লেনে চড়ে বসেছে সে, যতটুকু উত্তেজনা অনুভব করার কথা তার কিছুই সে করছেনা । প্লেনের ভেতরটা এতদিন সিনেমায় দেখলেও আজ বাস্তবে দেখছে । তার কাছে আহামারি কিছুই মনে হচ্ছেনা, লাক্সারি চেয়ার কোচ গুলাও এর চেয়ে কোন অংশে কম না । নিজের সিটে গিয়ে বসল সে, সিট বেল্ট বাঁধতে হয় কিভাবে সেটা নিয়ে কিঞ্চিত টেনশন হলেও হাসিমুখে এগিয়ে আসা এয়ার হোস্টেস আরো মিস্টি করে হাসি দিয়ে সে সমস্যা দূর করে দিল , আর যাত্রার শুরুতেই তার হৃদকম্পন কিছুটা হলেও বাঁড়িয়ে দিয়ে গেল ।

প্লেনের টেক অফ তার কাছে এমন কোন আহামরি বিষয় মনে হলোনা যেটার জন্য সিট বেল্ট বাঁধার দরকার আছে । জানালার পাশের সিট পায়নি সে, মনের মাঝে খালি উসখুস করছে নিচে দেখতে না জানি কেমন লাগে । প্লেনে চড়লেও দেখা যাচ্ছে তার ইচ্ছা এখনও অপূর্ণ রয়ে যাচ্ছে নিচে দেখার । আসার সময়ের সিট নাম্বার দেখে সে কিছুটা স্বান্তণা পেল, কারন সেটা উইন্ডো সিট । কিন্তু সেত পরের কথা । তার খুব ইচ্ছা করছে পাশের যাত্রীর সামনে দিয়ে উঁকি দিয়ে জানালা দিয়ে দেখতে , নিচের সব কিছু কেমন দেখা যায়, নদীগুলো দেখতে কেমন লাগে । টিভিতে দেখা দৃশ্যগুলো ভাবতে লাগল, নিচে মেঘনা নদী কেমন লাগবে সেটা সে কল্পনায় দেখে নিচ্ছে । পাইলট ঘোষনা দিলেন আমরা এখন ভূমি থেকে আঠারহাজার ফিট উচ্চতায় অবস্হান করছি । শুনে সে হিসেব করতে লাগল আঠার হাজার ফিটে কত মাইল, তাহলে একটা আন্দাজ করতে পারবে সে মাটি থেকে কত উপরে আছে ।

হঠাত করে প্লেন একটা ঝাকি খেল, শানু বেশ ভয় পেয়ে গেল । পাইলটের ঘোষনায় বুঝা গেল প্লেন এখন মেঘের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, আরো কিছু সময় এমন হতে পারে, সবাইকে সিল বেল্ট বাঁধার পরামর্শ দেয়া হয়েছে । উঠলাম আর নামলাম টাইপের ব্যাপার ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া । প্লেনে দেয়া বার্গারটা সে এখনও খেয়ে শেষ করেনি । প্লেনের ল্যান্ডিংটা তার কাছে এক্সাইটিং মনে হল । এয়ারপোর্টে বের হয়েই হোটেলের প্লাকার্ড হাতে একজনকে দেখে কাছে এগিয়ে গেল , হোটেলের পিক ড্রপ সার্ভিস দেখে সে উঠে বসল ।

রিসেপশনে সে জানতে পারল তাকে একটা কাপল রুম দেয়া হয়েছে, যদিও সে সিঙ্গেল, কিন্তু তাদের সিঙ্গেল কোন রুম নেই আর টুইন শেয়ারের ও কোন গেস্ট না থাকায় এই সুবিধা । মনে মনে খুশি হল সে । যাক আরামেই কাটবে দুই দিন । রুমে ঢুকেই বিশাল নরম বিছানায় নিজেকে শপে দিল সে । আহ কি আরাম , অস্ফুটস্বরে বেড়িয়ে আসল মুখ থেকে । ড্রেস চেঞ্জ করে সাগরের কাছে যাবার জন্য বেড়িয়ে পরল সে । হোটেল থেকে বের হলেই সাগর , মনটাই ভরে গেল তার ।

সাগরে দাপাদাপির চেয়ে সাগরপাড়ে শুয়ে থাকতেই বেশী ভাল লাগে শানুর । তার উপর একা একা দাপাদাপি খুব একটা উপভোগ্য হবারও তেমন কোন কারন নেই । একটা ইজি চেয়ার নিয়ে সে শুয়ে পড়ল । মাথার উপরে সূর্য থাকলেও তেমন গরম লাগছেনা আর ছাতার কারনে রোদ ও গায়ে লাগছেনা, আবহাওয়া বেশ আরামদায়কই আছে । শুয়ে শুয়ে আনমনে দিগন্তপানে চেয়ে থাকে সে । হঠাত করে তার অশরীরি মেয়েটির কথা মনে পড়ে যায় । এখন পর্যন্ত সে মেয়েটির নাম টাই জানতে পারলোনা । অবশ্য নাম জেনেই বা কি লাভ । অশরীরি নামেই থাকুক । আসার সময় মেয়েটিকে বলে আসেনি কাজটা ঠিক ভাল হল কিনা বুঝতে পারছেনা সে । বলে আসলেই বা এমন কি হত । এমনতো না যে সে তাকে আসতে মানা করত কিংবা মানা করলেই বা তার কি । যাবার পর এটা নিয়ে মেয়েটি নিশ্চয় রাগ করবে কিংবা এমনও হতে পারে আর হয়ত দেখাই দিবেনা । নিজের ভেতরেই তার কেমন যেন টক্কর চলছে, একবার ভাবছে বলে আসলেই পারত আবার ভাবছে বলে আসেনি তাতে এমন কি বা হয়েছে ।

দূরন্ত হাওয়ায় কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়ালই নেই । ফোন আসাতে তার ঘুম ভাঙ্গল । এক বন্ধু ফোন দিয়ে কতক্ষন খোঁচাখুঁচি করল, তার এই একা একা কক্সবাজার আগমনের আকরন কি জানতে চেয়ে, নাকি সাথে কোন গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে এসেছে ! শানু হাসতে হাসতে বলল সে কথাতো বলা যাবেনা, এসে দেখে যা । দুপুরে ভারি কোন খাবার খাওয়া হয়নি, পেটে ক্ষুধা টের পেলেও সূর্যের অস্ত যাওয়া না দেখে সে উঠতে পারছেনা । পশ্চিমের আকাশ একেবারে পরিষ্কার, মনে হচ্ছে চমতকার একটা সূর্যাস্ত দেখা যাবে । এর আগে সাগড়পাড়ে সে কখনো ভালভাবে সূর্যাস্ত দেখতে পারেনি । যতবারই দেখেছে প্রতিবারই দিগন্তরেখায় মেঘের আনাগোনা ছিল, ফলে সূর্য ঠিক সাগরে অস্ত যেতনা, তার আগেই উপরে মেঘের কোলে হারিয়ে যেত ।

শেষ মুহুর্তে আস্ত সূর্যটা একটা ডিমের কুসুমের মত হয়ে গেল । কুসুমটা যেন টুপ করে পানিতে তলিয়ে গেল । অস্ত যাবার মুহুর্তটা বেশ তাড়াতাড়ি ঘটে, হঠাত করে দেখা যায় কুসুমটা আর নেই । বারবার ডিমের কুসুমের সাথে সূর্যের মিল খুজতে গিয়ে শানু টের পেল তার পেটের ক্ষুধা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে । কিছু একটা খেতে হবে এই ভাবনা নিয়ে রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে সে আবার বেড়িয়ে পরল ।

লাইভ কিচেনে পছন্দমত লবস্টার আর রূপচাঁদা দিয়ে বেশ ভরপেট ডিনার করল সে । সেখান থেকে সোজা আবার সাগড় পাড়ে । শুয়ে শুয়ে আকাশের তারা দেখার সময় । উফ পরিষ্কার আকাশে তারার মেলা বসেছে । অন্য সময় হলে সে হয়ত ভাবত আকাশে তারা গিজগিজ করছে । বন্ধুরা মিলে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েও এমন অসংখ্য তারার দেখা পেয়েছিল তারা, মিল্কিওয়ে পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল । অত তারা একসাথে দেখে সে বলেছিল আকাশেত তারা গিজগিজ করছে , অমনি আরেক বন্ধু বলল দোস্ত এত সুন্দর তারার মিলন মেলা মেলাকে গিজগিজ করছে বিশেষন দিলে ব্যাপারটা সুন্দর হয়না । অন্য কিছু একটা শব্দ খুজে বের কর । সবাই মিলে ভেবেও সুন্দর একটা বিশেষন খুজে পায়নি তারা সেদিন । আজ তাই গিজগিজ শব্দটি সযত্নে পরিহার করেছে সে, যদিও আজকের আকাশের জন্যও কথাটি সমভাবে প্রযোজ্য । সেই সাথে আরেকটা জিনিস সে ভাবছে, একা একা ঘুরে বেড়ানো আর বন্ধুদের সাথে বেড়ানো পুরো একশ আশি ডিগ্রী বিপরীত অনুভূতি । বন্ধুরা সাথে নাই, তার মানে এই না যে সে তাদেরকে অনেক মিস করছে, একাকীত্বের সৌন্দর্য সে উপভোগ করছে, তবে বন্ধুরা সাথে থাকলে নিশ্চিত ভাবে আনন্দের মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে যেত ।

কেমন করে যে দুটি দিন পার হয়ে গেল টেরই পেলনা শানু । সাগরের ঢেউ আর নির্মল বাতাসে শুয়ে বসে সময়টুকু পার করে দিয়েছে সে । শহুরে ব্যস্ততা পুরোপুরি ভুলেই ছিল সে । জীবনের নানা ভাবনা আর পরিকল্পনার কথা ভেবে ভেবে কেটে গেছে তার সময় । যদিও উপভোগ্য এ সময়ে অশরীরি মেয়েটি তার মন থেকে একবারের জন্য দূরে সরে যায়নি । সে কোন হিসেব মেলাতে পারেনা মেয়েটিকে নিয়ে । মৃত একটা মানুষের এমন উপস্হিতি আসলেই সম্ভব কিনা সে বুঝে উঠতে পারেনা । মেয়েটি কোন ভাবেই তার মনের কল্পনা নয় এটা সে নিশ্চিত । আবার এমন না যে নেশরা ঘোরে এমনটি হয়ে চলেছে । ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নেশার কারনে সে ভেবেছে তাও নয় । সিগারেট ছাড়া অন্য কোন নেশা সে করেনি এই সময় । বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কদাচিত তারা যে মদের নেশায় আচ্ছন্ন হয়নি তা না, কিন্তু গত কিছু দিনে সে কোন ধরনের নেশা করেনি । আত্মহত্যা করে মরে যাওয়া একটা মেয়ে কি করে এমন অশরীরি হয়ে উঠে সে এই ভাবনার কোন কূল কিনারা করতে পারছেনা । ইন্টারনেটে ঘেটেও দেখেছে সে, এ ধরনের কোন ঘটনা আদৌ অন্য কোথাও ঘটেছে কিনা তার ও কোন রেফারেন্স সে খুজে পায়নি । বিধাতার এই পৃথিবীতে কত কিছুই ঘটে , এটিই হয়ত তেমনই একটা ব্যতিক্রম, শেষ পর্যন্ত এইভাবেই সে ব্যাপারটাকে মেনে নিয়েছে । ঢাকায় ফিরলে নিশ্চিত ভাবে মেয়েটি হয়ত কিছুদিন তার সাথে দেখা দিবেনা, শানু বলে না আসায় রাগ করাটাই স্বাভাবিক ।

ফিরতে পথে জানালার পাশের সিটে বসতে পেরে শানুর মনটা বেশ ফুরফুরে । উপর থেকে নিচের পৃথিবী কেমন দেখা যায় , সেটা আজ সে দেখতে পাবে । জানালা দিয়ে বাইরে দেখার জন্য সে অনেকটা কাত হয়ে বসেছে, ভেতরের মানুষজন নিয়ে তার খুব একটা মাথাব্যাথা নেই । আঠারহাজার ফিট উপর থেকে নিচের সবকিছুই মানচিত্রের মতই মনে হয় । কর্ণফুলী, পাহাড় ঘেরা প্রকৃতি আর মেঘনা পার হয়ে একসময় প্লেন ঢাকার আকাশে চলে আসে । উপর থেকে ইট পাথরের জঞ্জালকেও কেমন যেন সুন্দর ছবির মত মনে হয় । ভাল লাগা ভরে থাকে তার মনে । এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এক বন্ধুর মেসে চলে যায় সে । আড্ডা দিয়ে রাতে নিজের রুমে ফিরবে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: শানুর সাহস আছে। সাধারণ কোনো মেয়ে হলে অজ্ঞান হয়ে যেত।

খুব দ্রুত লিখছেন মনে হয়। এত তাড়াহুড়া কেন?

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৩

শ।মসীর বলেছেন: মাথা মনে হয় সেভাবে কাজ করেনা আজকাল :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.