![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র। শেষ বর্ষ। খুলনার ছেলে। গুন বলতে কোন কিছু আমার মধ্যে আছে কিনা জানিনা। অনেকের মধ্যে অনেক গুন থাকে। কারো গানের গলা ভাল, কারো কবিতা লেখার হাত ভাল, কেউ আবার অনেক মেধাবী। আমার মধ্যে এমন কোন গুন নেই। বন্ধু মহলে জোকার নামে স্বীকৃতি আছে। কারন আমি প্রায় সব ব্যাপারে কেয়ারলেস একটা ভাব দেখাই স্পেশিয়ালি বন্ধুদের সামনে। অনেকে আবার অলস ও বলে। ভালই লাগে শুনতে। কারন এইচ এস সি পর্যন্ত এত ভাল ভাল কথা শুনেছি যে এই স্বাদ পরিবর্তন টা উপভোগই করি।
ছোট বেলা থেকেই রাব্বি শুনে আসছে মানুষ চাইলে সব পারে। ভার্সিটি থেকে সম্মান পাশ করা প্রায় শেষ কিন্তু এই কথার সত্যতা রাব্বির জীবন দিয়ে কখনও উপলব্ধি করা হয়নি। বিশেষত প্রেম করবার ব্যাপারে এই কথা তার অসম্ভব বলেই মনে হয়। কারন তানিয়া নামের এক সুন্দরী রমনির প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া সত্ত্বেও তানিয়ার কিছু এড়ে লুক ছাড়া আর কোন কিছুই আজও রাব্বি পায়নি। তবে রাব্বি এবার কচ্ছপের মত উপরিউক্ত কথার সত্যতা প্রমানের জন্য দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করেছে।
প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার মানসে প্রথম অভিযান তানিয়ার মোবাইল নম্বর খুঁজে বের করা। বেশ কয়েকদিন ভার্সিটির আশে পাশের সব টপ আপ পয়েন্টে জোরদার ডিউটি দেওয়া সত্বেও যখন প্রায় বিফল হবার পথে ঠিক তখনি এক বন্ধুর বদান্যতায় একটি মোবাইল নম্বর যোগাড় হল। এজন্য অবশ্য পকেট থেকে কিছু মাল্লুও খরচে পিছপা হয়নি রাব্বি। কারন ‘হার এক দোস্ত কামিনা হোতি হ্যায়’। তবে সন্দেহ ছিল নম্বরটা তানিয়ার কিনা তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। সেটা নিশ্চিত করতেই সেই বিটলুর সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম কল করে কন্ঠ শুনে নিশ্চিত হয়ে নেয় রাব্বি। কথা অবশ্য তখন বলতে পারেনি... কারন তানিয়ার কন্ঠ শুনেই সে এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে যে তার বোলতি বন্ধ।
পরের তিন দিন ছিল অত্যন্ত স্পেশাল রাব্বির জন্য। কারন রাব্বি বুঝতে পেরেছে ভালবাসার মানুষের কন্ঠ শুনলে নিজের কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়। এই দুরবস্থা থেকে বের হতে রাব্বি আপ্রান চেষ্টা করে একটা স্ক্রিপ্ট লিখল। যার অনুশিলন আর বন্ধুদের সামনে প্রমো দিতে দিতে রাব্বি নিশ্চিত হল এবার সে প্রস্তুত।
এখন সময় মাহেন্দ্রক্ষণের। এই অসামান্য ঘটনার সাক্ষী হতে প্রস্তুত রাব্বির জনাকয়েক জিগ্রি দোস্ত। নির্ধারিত সময়ে রাব্বি মুঠোফোনের ডায়াল চেপে কল দিল তানিয়াকে। উতসুক জনতা অপলকে তাকিয়ে আছে রাব্বির চেহারার দিকে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে কপালের মাঝে কোঁচকানর দাগ স্পষ্ট থে স্পষ্টতর হচ্ছে। এদিকে উৎসুক জনতারও হার্ট বিট তখন ৮০র কাটা স্পষ্ট করেছে।
এহেন মারমার কাটকাট উত্তেজনার সময় রাব্বি কান থেকে মুঠোফোন নামিয়ে উপস্থিত জন্তাকে জানাল, ‘ধরেনা সে ধরেনা, ফোনটা সে ধরেনা... ওদিকে ফোন বাজে, এদিকে বুক কাপে...তার তো মন ভজেনাআআআ, ভজেনা’।
উপস্থিত জন্তা রাব্বিকে মনে করিয়ে দিল ‘ এক বার না ধরিলে, ট্রাই কর শতবার’। রাব্বি মনে আশা ফিরে পেয়ে আবার ফোন করল তানিয়া কে। উৎসুক জনতা অপেক্ষা করছে এ মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে। এবার ফোন আছে লাউডস্পিকারে... সবাই স্পষ্ট শুনল ২ বার রিং হবার পর এক সুরেলা মিষ্টি কন্ঠী ওপাশ থেকে বলল, ‘হেলো’। রাব্বি বসা অবস্থায় লাফিয়ে উঠলো ‘ধরছে, ধরছে’ বলে। বন্ধুরা তাকে ঠেকিয়ে দিল তার ফোন করার কারন মনে করিয়ে দিয়ে। রাব্বি কিঞ্চিত লজ্জা পেয়ে গেল। তবুও লজ্জাকে এক পাশে ঠেলে সে জলদ্গম্ভীর গলায় বলল
ঃ হেলো, তানিয়া বলছেন।
ঃ জ্বি, আমি তানিয়া বলছি। আপনি কে বলছেন?
ঃ আমি রাব্বি বলছি... আপনার সাথে একটা জরুরী কথা ছিল।
ঃ ওওও, ভাইয়া আমার তো সামনের সপ্তাহে বিয়ে। আমি একটু শপিং এ এসেছিলাম আমার হাবির সাথে। পরে কথা বলব আপনার সাথে। রাখছি...
একথা বলে তানিয়া ফোন কেটে দিল। রাব্বির চোখে বেদনা সাথে উৎসুক জনতারও... উদযাপন করতে আনা মিষ্টি বিস্কুট গুলো নোনতা হয়ে গেল রাব্বির আঁখিজলে। উপস্থিত জনতা রাব্বিকে একা রেখে ছলে গেল যার যার কাজে...
পুনশ্চঃ রাত ৮ টা। রাব্বির ফোন বেজে উঠল। রাব্বি স্ক্রিনে দেখল তানিয়ার নম্বর। অনিচ্ছা সত্বেও রাব্বি ফোন রিসিভ করল।
রাব্বিঃ হেলো।
তানিয়াঃ জি, তানিয়া বলছি। সকালে ফোন দিয়েছিলেন কিছু বলবার জন্য। সরি, আপনি তার আগে আপনার পরিচয়টা কি দেবেন?
রাব্বিঃ কনগ্রাচুলেশন, উইশ ইউ এ হ্যাপি ম্যারিড লাইফ।
ফোনটা কেটে দিল রাব্বি। রাব্বি তাকিয়ে আছে আকাশের চাঁদের দিকে। আজ সারারাত সে বারান্দায় বসে চাঁদ দেখবে। চাঁদের আকৃতিটা যে তানিয়ার মুখাবয়বের মত...
©somewhere in net ltd.