এ কিউরিয়াস কিডন্যাপ

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৩২

সকালে ঘুম শেষ হওয়ার আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন
বেজে উটল । ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ।
-হ্যালো,মি: জন স্পিকিং
-মি: জন কি খবর?
-জ্বি ভালোই,আপনি কে?
-সেটা জানা কি খুবই গুরুত্ববহ?আপনার
মেয়ে রিনিকে আমরা কিডন্যাপ করেছি গতকাল রাত্রেই ।
-কি আজে বাজে কথা বলতেছেন?
-জ্বি হ্যা মি: জন কিডন্যাপের কথা শুনে প্রাথমিক অবস্থায়
শুনে ধাক্কা খেলেও খবরটা কিন্ত মিথ্যা না,চাইলে ওর
রুমে গিয়ে চেক করতে পারেন।
-হু দা হেল আর ইউ??তুমি কি চাও?
-বেশি কিছু না মি: জন,বিশ লক্ষ টাকা দিলেই
রিনিকে কোন প্রকার আঘাত ছাড়া ফেরত পাবেন আর
পুলিশকে জানালে ওর লাশ কোন
নদীতে ফেলা হবে সেটা নিজেও জানি না। কিন্ত
রিনি এখন ভালোই আছে মি: জন । আর দুদিনের ভেতর
টাকাটা জোগাড় না করলে বাকীটুকু আর বললাম না।
-কে আপনি?
ওপাশ থেকে উত্তর নেই। সংযোগ বিছিন্ন।
মি: জন চিন্তিত স্বরে নাস্তার টেবিলে গেলেন ।
গিয়ে উনি কিছু বলার আগেই মিস কেরি হাউ-মাউ
করে কান্না শুরু করে দিলেন । কাঁদতে কাঁদতে জনকে বললেন
-রিনিকে কোথাও খুজে পাচ্ছি না। সারা ঘর তন্নতন্ন
করে খুঁজেছি,ওর ফ্রেন্ড এর বাসায় ফোন দিলাম কিন্ত কোন
খবর পাওয়া যায় নি।
-রিনিকে কিডন্যাপ করে কালকে রাত্রে দুইটার দিকে একদল
মাফিয়ারা। একটু আগে আমার কাছে ফোন আসল কিন্ত নাম
জানায় নি। এরা রিনিকে ফেরত দিবে যদি বিশলক্ষ
টাকা দেই ।
-তোমার ব্যাবসায় প্রচুর লোকসান আর এই বিপদেরগন্ধ এখন
আসল,এই সময়ে তুমি এত টাকা কই পাবে?
-সেটা আমারো চিন্তা।
কথা না বাড়িয়ে জন ওর বন্ধুর নিটক গেল । সব বুজিয়ে বলার
পর জনের বন্ধু ওয়াকিত টাকা দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত থাকলেও
টাকা তিনদিন পর দিবে বলে জানায় কিন্ত জনের দুইদিন পর
টাকার নিড । বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী কেরির সোনা-
গয়না বিক্রি করে রিনিকে উদ্ধার করতে হবে। কিন্ত
মেয়েদের কাছে কোন জিনিস চাওয়া মানে পাহাড় চাওয়ার
সমান । আর রিনির
ব্যাপারে কেরি টাকা দিতে মানা করবে না।
রিনি প্রচন্ড ঘুমে । তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন
এমনবভাবে দেওয়া হয়েছে যাতে সে কমপক্ষে সাত থেকে দশ
ঘন্টা অজ্ঞান থাকে । ঘুম ভাংগার সাথেই রিনি দেখল
প্রচন্ড অন্ধকার । এই মুহুর্তে তার কালকে রাত্রের
কথা মনে হচ্ছে । তিনজন লোক দুইতলার
দরজা দিয়ে এসে রিনির কাছে আসার
সাতজে রোমালজাতীয় কিছু দিয়ে ভাল্লুকগুলা রিনির মুখ
চেপে ধরে অজ্ঞান করে ফেলে । এদের সবাই
মুখে কালো মাস্ক পড়ে ছিল । রিনির জ্ঞান ফেরার পর
দেখে নোংরা টাইপের ঘরে গন্ধযুক্ত বিছানার উপর সে ।
মাথার উপর ষাট পাওয়ারের বালব। ফেনের কোন স্পীড নেই ।
সামনে এক জগ পানি আর এক প্যাকেট বিস্কুট । কিছুক্ষণ
হতভম্ব ছিল রিনি । কোথায় সে? একগাছার মত কেন এখানে?
মিনিট দশেক পর একটি লোকের প্রবেশ ।
-এই মেয়ে কিছু লাগলে বলবা।
তোমাকে আমরা মাফিয়ারা কিডন্যাপ করেছি । কিন্ত
চিন্তা করো না। তুমি এখনকার পরিবেশে সুরক্ষিত থাকবে।
তোমার মুক্তিপণ পাওয়ার সাথেই
তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
-আমি এখানে কেন? আমার আব্বু আম্মু কই?
-তোমাকে কিডন্যাপ করে এখানে রাখা হয়েছে। তোমার
কি?
-আমি অপরিচিতদের সাথে কথা বলি না আর
নামটা তো বলা দূরের কথা।
-ও আচ্ছা। তোমার বয়স তো এগারো বার হবে কিন্ত এত রাগ?
-আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি বাসায় যাবো।
পাশ থেকে ডাক আসল "রাকিন ,কপি নিয়ে আয়"
লোকটা রিনির রুম থেকে চলে গেল । চল্লিশউর্ধো বয়সের
ব্যাক্তি।
সেদিন রাত্রে রিনি ভয়ের মাঝেই ঘুমিয়ে গেল ।
ওকে পাহারা দিচ্ছিল রাকিন নামের কিডন্যাপার । আর
কপিতে চুমুক দিচ্ছিল হেটে হেটে ।
সকালে চায়ের কাপে চুমুক নিতেই ফোন বেজে উটল।
-মি: জন আজকে কিন্ত টাকা না দিলে আপনার
এগারো বছরের মেয়েটার কোন পাত্তাই পাবেন না।
-টাকা রেডি । কিন্ত আমার মেয়ের কিছু হলে রেহাই নাই ।
-হুমকি দিচ্ছেন? যদি পুলিশকে সাথে নিয়ে আসেন
তাইলে কিন্ত আপনি আর রিনির রক্তাক্ত লাশ আপনার
স্ত্রী কেরিকে উপহার দিবো।
-নাহ আমি কিছুই কাউকে বলব না এমন কি পুলিশকেও না।
কোথায় আসব ?
-রিওয়াল স্ট্যাচু লেনে আসবেন তের নং রোডের পিংক
কালারের দুই তলা বাড়িতে আছি আমি আর আপনার
মেয়ে রিনি। রাত্রে ঠিক নয়টায় ।
টুট টুট টুট।
জনের স্ত্রী কেরির কিছু জমানো টাকা আর সোনা-
গয়না বিক্রি করে বিশ লক্ষ টাকার ব্যাবস্থা করলেন মি:
জন। রাত্রে আটটায় অপরিচিত মাফিয়াদের কথা মত
টাকা নিয়ে পিংক কালারের বাড়িতে গেলেন জন ।
দ্বিতীয় তলায় উটার সাথে সাথে মুখে বাধা একজন লোক
জনকে আমন্ত্রন জানিয়ে ভিতরের দিকে নিয়ে যায় । ঘরটার
চারিদিকে অন্ধকার। দেখে বোঝা যাচ্ছে কেউই
এখানে থাকে না । তিন চারটা রুম যাওয়ার পর মূল
ফটকে নিয়ে গেল মুখোস পরা নাম অজানা লোক।
ভিতরে ঢুকতেই কে যেনো বলে উটল।
-স্বাগতম মি: জন । টাকা এনেছেন তো?
-জ্বি হ্যা,আমার মেয়ে কই?
-আরে এত অস্থির হচ্ছেন কেন?একটু বসুন ।
-আমি এখানে বসার জন্যে আসি নাই । আমার
মেয়েকে দেখান । আমি টাকা দিয়েই আমার
মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো।
-এই রাকিন রিনিকে নিয়ে আয় ।
রাকিন রিনিকে নিয়ে আসল । মেয়েটা চোখে কালো দাগ
পড়ে গেছে । চোখে মুখে আতংক।
-মি: জন টাকাগুলো রাকিনের হাতে দিন ।
-আমার মেয়েকে আমার হাতে দিন আগে ।
-আগে টাকা পরে রিনি ।
মাফিয়ার বসে কথামত কাজ করলেন জন । রাকিন টাকা গুনেই
বসকে বলল ঠিক আছে টাকা । মাফিয়াদের বস কিছু না বলেই
হঠাত গুলি চালালেন মি: জন আর রিনির উপর । রাকিনেকেও
গুলি চালানোর কথা বলা হল । রাকিনের হাতে এম-ফাইভ
পিস্তল । রাকিন জন ও রিনির দিকে গুলি চালানোর
বদলে মাফিয়া বস এহেনের দিকে এপার ওপার
করে চারটা থেকে পাঁচটা গুলি চালাতে থাকল । গুলিও শব্দ
শুনে বাহিরে থাকা রাকের এসে গেল । বস
এহেনকে মাটিতে পড়তে থেকে দেখে রাকের তার হাতের
লোড করা আমেরিকান আর্মীদের ব্যবহার করা পি ৪৯
দ্বারা একটানা বুলেন ছুড়তে থাকল । রাকিনও গুলি ছুড়ল
রাকেরের দিকে। রাকিন মাটিতে পড়ার আগেই রাকের
মাটিতে পড়ে গেল । সম্ভিত
হয়ে দাড়িয়ে গোলাগুলি দেখলেন জন । আর রিনি কেদেই
যাচ্ছে এসব দেখে । মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় রাকিন
জনকে বলল
- জন এখান থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাও।
গোলাগুলি হয়েছে তাই পুলিশ আসবে।
কথাটা বলেই নি:শ্বাস ত্যাগ করল রাকিন ।
রিনিকে কিডন্যাপ করার দুদিন আগেই মাফিয়া পরিবারের
মধ্যে মারামারি লাগে। যার জেড় ধরেই
মাফিয়ারা একে অপরের পরিবারকে খুন করতে থাকে ।
বিরোধী মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা পায় নি রাকিনের
ছেলে রুন ও তার মা। বস এহেনের জন্যেই এই মারামারি তাই
সুযোগ খুজেই তাই আজকে সেই সুযোগের ব্যবহার করল রাকিন।
নিজের ছেলেকে বাঁচাতে না পারলেও রিনিকে বাঁচানোর
সিদ্ধান্ত নিছিল রিনির মত নিরীহ মেয়েকে। সেখান
থেকে কোন রকম জখম ছাড়া বাসায় গেলেন মি: জন ও রিনি ।
রিনিকে পেয়ে রিনির মা কান্না শুরু করে দিলেন।
পরদিন রাকিনের লাশ কফিনে করে আনা হল ড্যামোসেল
কবরস্থানে । সেখানে ছিল রিনি আর মি: জন ।
রিনি কান্না করতে লাগল ।
রাকিনের কবরের উপরের দিকে সাদা প্লেটে লিখা ছিল
"If You Were A Bad Man You Have To Do A Good Work In Your Life"

০ টি +০/-০