![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বপ্ন দেখি, মিশে গেছি এই বাংলার এই সংস্কৃতিতে! স্বর্গ মোহে ধরে না আমায়।
জাহানারা ইমামের (অন্য নাম শহিদ জননী ) জন্ম ১৯২৯ সালের ৩মে।
জাহানারা ইমাম এমন একজন লেখিকা যার দিনলিপি রচনা "একাত্তরের দিনগুলি "
থেকে জানা যায় পাকিস্তানি বর্বর, নরপিশাচ দের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা।
কতটা ভয়ংকর ছিলো তারা।
অবশ্যই তারা জানত না, তারা যে মৌচাকের বাসায় এসে
বসেছে, আবার সেই মৌচাকের মধু তারা অন্যায় ভাবে চুরি করছে,আবার সেই মৌমাছিদের হত্যা করছে,
সেই মৌমাছিরা ভয়ংকর হলে কেমন হতে পারে !
তারা হয়ত জানত না মৌমাছি রা একত্রে সব কিছু করে।
তারা হয়ত জানত না মৌমাছিরা প্রতিশোধ নিতে জানে।
তারা মনে হয় জানত না মৌমাছিরা কবে থেকে বিপ্লাবিত হচ্ছে,
সেই ১৯৫২ থেকেই মৌমাছিরা বিপ্লবের আগুন পুষে রেখেছিলো অন্তরে।
তাই ত তারা বিপ্লব ঘটিয়েছে ১৯৭১ এ।
কারন বিপ্লব সৃষ্টি হলে তা আর থেমে থাকে না,
যখন শুরু হয় সবকছু জয় করে শেষ হয়।
আর সেই জয় আমরা পেয়েছি ১৯৭১ এ।
মৌমাছি তার মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে,
নৃশংস ভাবে পরাজিত জাতির সিল মেরে দিয়েছে বর্বর, নরপিশাচদের।
কতগুলো মৌমাছি অভিশাপ মুক্ত করে দিয়েছে তাদের পুর্বপুরুষ দের।
বীরের মত করে দিয়েছে তার পরবর্তি প্রজন্মান্তর কে।
সেই মৌমাছির একজন সাহসিনী মৌমাছি হলেন জাহানারা ইমাম।
এবং তার পরিবার।
তাদের পরিবার টাই ছিলো মুক্তিযোদ্ধা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের পুরো পরিবার
প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলো । তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান রুমী
উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানিকে উপেক্ষা করে
মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জাহানারা ইমাম ও তাঁর স্বামী
শরীফ ইমাম মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় ঢাকায় থেকে
মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয় সহযোগিতা দেন।
মুক্তিসেনাদের নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া, তাঁদের খাবার
ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া, পানির ট্যাংকে অস্ত্র
লুকিয়ে রাখা, খবর আদান-প্রদান প্রভৃতি দায়িত্ব তাঁরা পালন
করেন অসীম সাহসের সঙ্গে। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে
শহীদ হন তাঁর ছেলে রুমী।
তারা পাশামামকে লেখা একটা চিঠি-
"
প্রিয় পাশা মামা,
অবাক হয়ো না! এটা লেখা হয়েছিল আর তোমার
কাছ পর্যন্ত পৌঁছালও। পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট
করে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকে কিছু লিখে
জানানোর চেষ্টা কোরো না। তাহলে তাদের
বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম।
হাতেসময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল
এখান তেকে চলে যেতে হবে।
আমরা একটা ন্যায়সংগত যুদ্ধে লড়ছি। আমরা জয়ী
হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া কোরো। কী
লিখব বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার
আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াবহ
ধ্বংসের যত ছবি তুমি দেখছ, জানবে তার সবই
সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে
ক্ষতবিক্ষত করেছে, মানব-ইতিহাসে যার তুলনা
নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন,
একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর
ঝাঁপিয়ে পড়ব। ইতিমধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক
এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা
আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব। জানি না আবার
কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখো না। সোনার
বাংলার জন্য সর্বোচ্চ যা পারো করো।
এখনকার মতো বিদায়।
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ
রুমি
"
একাত্তরের দিনগুলি রচনা থেকে -
(২১ এপ্রিল, বুধবার, ১৯৭১)
"...আম্মা, দেশের এ অবস্তায় তুমি যদি আমাকে (রুমী)
জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ
পর্যন্ত। কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো
অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়ত বড়
ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইন্জিনিয়ার হবো; কিন্তু বিবেকের
ভ্রুকুটির সামনে কোনদিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও
আম্মা?
…আমি (জাহানারা ইমাম) জোরে দুই চোখ বন্ধ করে বললাম, …ঠিক আছে,
তোর কথাই মেনে নিলাম। দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা,
তুই যুদ্ধে যা।... " (তার জন্যই তুমি শহিদ জননী, স্যালুট)
(৮ আগস্ট, রবিবার, ১৯৭১)
(মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে, রুমী একদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে)
"…আমার (জাহানারা ইমাম) চোখ পানিতে ভরে গেল। এখন ধরা গলায় বললাম,
না, আমার সামনেই খা (সিগারেট)। অল্প ক-দিনের জন্য এসেছিস। সিগারেট
খাওয়ার সময়টুকুও তোকে আড়াল করতে চাই নে। ..."
(২৮ আগস্ট, শনিবার, ১৯৭১)
"…আমি বললাম, চুপ কর রুমী, চুপ কর…আমার চোখে পানি টলমল করে এল।
হাত বাড়িযে রুমির মাথাটা বুকে টেনে বললাম, রুমী। রুমী এত কম বয়স তোর,
পৃথিবীর কিছুই তো জানলি না।
রুমী মুখ তুলে কি রকম যেন হাসল। মনে হল অনেক বেদনা সেই হাসিতে।
একটু চুপ থেকে বলল, …যদি চলেও যাই কোন আক্ষেপ নিয়ে যাব না।..."
(২৯ আগস্ট, রবিবার, ১৯৭১)
ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের নেতৃত্বে পাক আর্মি রুমী, জামী, জাহানারা ইমামের স্বামী
শরীফকে ধরে নিয়ে যায়। সবাই ফেরত আসেন, আসেন না কেবল রুমী।
শরীফ সাহেবের উপর চালানো হয় দৈহিক নির্যাতন।
ইচ্ছে করলে সেইদিন রুমীকে বাঁচাতে পারতেন তার পরিবার, কিন্তু রুমী চান নি পাকিস্তানের কাছে মাথা নত করে সে ছাড়া পাক। জাহানারা ইমাম ও তার ছেলের কথাই রাখলো।
১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ গণ-আদালতের রায়ে উচ্চারিত হয়
গোলাম আযমের ফাঁসির দণ্ড। ঘাতকদের বিচার চাইতে
গিয়ে জাহানারা ইমামকে নিদারুণ কষ্ট সহ্য করতে
হয়েছে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বর্তমানে চলমান
যুদ্ধাপরাধীর বিচার শহীদজননী জাহানারা ইমামের
আন্দোলনেরই অবদান। শহীদজননী তাঁর ব্যক্তিগত
শোককে অমোঘ শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে এক
নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তিনি দেখে যেতে পারেননি ঠিকই,
কিন্তু তাঁর আহূত আন্দোলনের ফলেই আজ বাঙালি জাতি
কলঙ্কমুক্ত।
©somewhere in net ltd.