![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Writer, Organizer & Creative Director
এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি শুক্রবার ছিল। শুক্রবারে ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যাক্তিগত অনেক কাজের চাপ থাকে। পুরো দিনটি কাজ ছুটির আমেজে কাটানো যায় না। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় এসে এটা সেটা করতে করতে রাত ১১টা বেজে গেল। শরীরটাও বেশ ক্লান্ত লাগছিল। রাত ১২ টায় পাড়ার শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমানো একুশের হারানো ঐতিহ্য “প্রভাত ফেরীর” পরিপন্থী বলে আমার কাছে মনে হয়। আমার বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়া কষ্ট ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার শহীদ মিনারে না যাওয়াটাও মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা। দেশপ্রেমী সোনার ছেলেরা মায়ের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করলো, আর আমি সেই দিনে অপদার্থের মতো শুয়ে শুয়ে দিন গুজরান করবো, সেটা আমার কাছে অলসতা বিলাসী ও অপমানজনক মনে হয়।
বৃহস্পতিবার ঘোড়াশাল অফিস থেকে আগে বের হয়ে আগে বাড়ী আসতে পারলে নিজেরাই বাশ, রং ও কাগজ দিয়ে একটা শহীদ মিনার বানিয়ে ফেলতাম। ছোট বেলায় ঝালকাঠির তুলা পট্টিতে আমরা ছোটরা একটি ক্লাব বানিয়েছিলাম। ক্লাবটির নাম ছিল “জনতা ক্লাব”! নাম শুনে মোশা মামা হেসে বলেছিল তোরা তো জনগনই হস নাই। আমাদের আবদারের ভিত্তিতে আশে পাশে অনেক দোকানদার ও বড় ভাইয়েরা স্বেচ্ছায় চাদাও দিয়েছিল।
এখনকার মত চাদা না দিলে দেখে নিব সেরকম কিছু নয়। এখন তো অনেক ওয়ার্ড কমিটির ছাতি নেতারও গাড়ী বাড়ী ব্যান্ক ব্যালেন্স বিস্মিত হবার মত। তাদের নিরুপায় বাবা মা ও দারুন খুশী। এম বি এ ও ইন্জিনিয়ারিং পাস দেয়া বেকার ছেলেদের টপকিয়ে গিয়েছে কলেজে ফেল করা এই সোনার ছেলেটি। বড় নেতারা দেখেও এড়িয়ে যায়। দলে শক্তি কমে যাবার ভয়ে নীতির সাথে আপোষ!
গিন্নির কথায় বাল্যস্মৃতি রোমন্থন থেকে বাস্তবে এলাম। গিন্নি গ্রীবা বাঁকা করে জিগেস করলো,
জগলু, কি হয়েছে, এপাশ ওপাশ করছো কেনো?”
-কোন শহীদ মিনারে যাবো সেটা ভাবছি।
-তুমি চাইলে আমার সাথে যেতে পারো। সকালে আমার স্কুলে প্রোগ্রাম আছে;
সেখানে শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারবে। ড্রেসিং টেবিলে বসে চুল আচড়াতে আঁচড়াতে বললো। মিষ্টি একটা গন্ধে ঘরটা মৌ মৌ করছে!
-পূর্বাচলে তোমার স্কুলে যাওয়াও তো অতো সহজ না! আমি বললাম।
-গাড়ির ব্যবস্থা আছে, সমস্যা নেই।”
-না, অন্যের গাড়িতে আমি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি না। আমাকে নিতে হলে তোমাকেও অটো, সিএনজি বা বাসেই যেতে হবে!
-আচ্ছা ঠিকা আছে সেটা দেখা যাবে এখন ঘুমাও হানি।
সকাল পাঁচ টায় ঘুম ভাংলো, উঠে সেভ গোসল ইত্যাদি করে আধা নাস্তাপানি খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটি সি এন জি নিয়ে রওয়ানা দিলাম তার স্কুলের উদ্দেশ্যে।
সকাল সাড়ে ৭ টায় তার স্কুলের সামনে আমরা হাজির হলাম। সামনে বিশাল মাঠ। মাঠে সাদা সবুজ পোষাক পরে পাখিরা ছোটাছুটি করে কিচিরমিচির করছে। ফুল ফুলের তোড়া নিয়ে অনেকেই তখনও আসছে। অনেকের মাথায় সবুজ সান ক্যাপ। চারপাশটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। পরিবেশটা আমার খুবই পছন্দ হলো। স্কুলটির নাম পশি হারার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পশি ও হারার বাড়ি এই দুটি গ্রামের নামে স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছিল। স্কুলটি না থাকলে আরো অনেক গ্রামের মতো, এ দুটি গ্রামের নাম ও কৃত্তিম পূর্বাচল ১০ নং সেক্টরের গর্ভে বিলীন হয়ে যেতো। গিন্নি কে বললাম,
-তুমি যাও স্কুলের প্রোগ্রাম শুরু করো,আমি ওদিক থেকে আসছি। সে চলে গেলো স্কুলে আমি চলে গেলাম স্কুলের পূর্ব দিকের চায়ের ষ্টলে। চার পাচজন চা পান করছে আর অন্যদের সমালোচনা করছে। এদের কাজকর্ম নেই তাই তারা টিভি দেখছে। চা পান না করলে তো ষ্টলে বসতে দিবে না। এই চিত্র সমগ্র বাংলাতে। কৃষিকাজে কৃষকের লাভ মধ্যসত্বভোগীরা খায়। তাই কৃষিকাজে অাগ্রহ নেই গায়ের লোকদের । গ্রামে বেকার লোক দিনকে দিন বাড়ছেই। আমি অনেকদিন থেকে ভাবছি এদের যদি কাজে লাগানো যায়! ওদের যদি ঘন্টা ভিত্তিক কাজে লাগানো যেত! অনেকটা ফ্রি ল্যান্সারের মত।
সুযোগ পেলেই এক ঘন্টা কাজ করে একশত টাকা নিয়ে চলে গেল এ রকম। তখন ওদের বয়স দশ বছর কমে যেত। প্রতিবার সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীগণ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। ঐ টাকায় একটা প্রতিষ্ঠান গড়লে বেকার সমস্যা সমাধানে ভুমিকা রাখা যেত।
এর মধ্যে গিন্নির ফোন আসলো, তাদের স্কুলের পোগ্রাম শুরু, আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে বললো। আমি স্কুলের দিকে ছুটলাম, গত রাতেই গিন্নি তার স্কুলের দপ্তরিকে ফুলের ডালী বানিয়ে রাখতে বলেছিলো। আমি বললাম ডালী কই? নিয়ে আসলো ফুলের তোড়া। আমি বললাম,
-তোড়া হবে না ডালী লাগবে। হেড ম্যাম বললেন এখন ডালী পাবো কোথায়!
ছাত্র-ছাত্রীদের জিগেস করলাম, তোমরা ফুলেরডালী বানাতে পারো, কয়েকজন সমস্বরে বললো, না। আমি বললাম সমস্যা নেই আমরাই ডালী বানাবো চলো! বানানোর জন্য তাদের মধ্যে কৌতুহল দেখা গেলো। পিছনে ঝোপের জিংলা কেটে বৃত্ত বানালাম। মাঝ বরাবর দু’টো জিংলা আড়া আড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম লিখার স্থান রাখলাম। তারপর বিভিন্ন ফুল ও পাতা দিয়ে ডালি বানিয়ে ফেললাম! শিশুদের মাঝে সে কি আনন্দ উদ্দীপনা। কেউ ছবি তুলছে! কেউ ফুল এনে দিচ্ছে। কেউ আনছে বনজ লতা পাতা । ছোট্ট একটি শিশু সাদা সবুজ পোষাকে তাকে দেবদূত মনে হলো। সে দুটো কাগজের ফুল নিয়ে এসে আমাকে দিয়ে বললোা
এই যে, দুইতা পুুল নেওতো!
আমি সালাম দিয়ে ফুল নিয়ে বললাম,
-আপনার নাম কি মামনি?
আমার নাম তৈতি!
আমি বুঝলাম ওর নাম চৈতি।
এর মাঝে ২টি ডালি তৈরী হয়ে গেল। একটিতে স্কুলের নাম অন্যটিতে শাওনাজ ফাউন্ডেশনের নাম সেটে দিলাম। স্কুলের নাম বড় তাই লিখার ফন্ট ছোট। বাসা থেকেই প্রিন্ট দিয়ে নিয়ে আসছিলাম। স্কুলের ডালিটি দপ্তরী আলীকে দিয়ে বললাম,
-যাও এই ডালি দিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে বলো।
স্যার আপনি?
আগে স্কুলেটা হোক।
আমি তো ব্যাক্তিগত ভাবে দিব!
তখন তোমাদের কেউ চাইলে আমার পাশে থাকতে পারো। দূর থেকে ওদের অনুষ্টানটি দেখছি। কিছু ছবিও নিয়েছিলাম।
সুন্দর গোছানে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান।
সমাবেশে সবাই সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে পড়লো। সারি ও কলামের মাঝে শিক্ষকগণ সুন্দরভাবে দাড়াতে সাহায্য করলো। আমার তিনি প্রধান শিক্ষক নাজমা পারভীন এম. এ. এম. এড. ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে একুশের ইতিহাস, তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরলেন। আবার প্রমাণ পেলাম,”History makes a man wise”. তারপর তিনি সবাইকে নিয়ে মাঠের উত্তর পূর্ব প্রান্তে শহীদ মিনারে সহকর্মীদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। সেখান থেকে স্কুলের রিসোর্স হলে। সবাই সারিবদ্ধভাবে মেঝেতে ম্যাটের উপর আসন গেড়ে বসে পড়লো।
কবিতা আবৃতি হলো। তারপর মহান ভাষা অান্দোলনের উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হলো। তারপর ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ছবি তোলার পালা শেষ করলাম। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড়শ। সাতজনের সবাই শিক্ষিকা! সবশেষে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে কথোপকথন।
শিক্ষকবৃন্দ ও অতিথিদের আন্তরিকতার সাথে আপ্যায়ণ পর্বে অংশ নিলাম। আমাকে অনেক দিন আগেই ঢাবিয়ান শিক্ষিকা ইতি ভৌমিকের অনুরোধ করেছিলেন এই স্কুলে আসতে। তখন কর্মব্যস্ততার কারণে না আসতে পারলেও একটি কবিতা লিখেছিলাম। সম্মানিত পাঠক, আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলের শেষে সেই কবিতাটি দেয়া হলো।
আমি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ অনেক শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এ ব্যপারে অামার ঝুলিতে দুটি অভিজ্ঞাতা হলো। একটি ১৯৮৬ সালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেই কাল রাতে জগন্নাথ হলে গোলাগুলি পর্যন্ত হয়েছিল। মনে হয়েছিল পৈত্রিক প্রানটা এই বুঝি আজই গেলো! সে দিন মায়া ভাই আহত হয়েছিল। মধ্যরাতে জাসদ সমর্থীত ছাত্র-ছাত্রীদের বিশাল মিছিল দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। সকালে চিত্তদার (তিনি বর্তমানে গণিতের শিক্ষক, কসবা টি আলী কলেজ) সুবাদে একেবারে শহীদ মিনারের উপরে ভলান্টিয়ারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলাম।
ঐ সময়ের সব নেতাদের সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল! মাওলানা আবদুর রহিম তর্কবাগীশ এসেছিলেন হুইল চেয়ারে বসে। আজ শিশুদের সাথে ফুল দেয়া। এটা ছিল অন্যরকম ভাললাগার। আমি কখনো ভুলবো না। এ কে সরকার শাওন, শাওনাজ, ঢাকা। ২২.০২.২০২০ বিঃ দ্রঃ অন্য সব লিখার মত প্রায় ছয় হাজার শব্দের এই আর্টিকেলটিও রাত জেগে লিখেছি সাড়ে চার ইঞ্চি বাই সোয়া দুই ইঞ্চি সাওমি রিড মি৪ সেল ফোন দিয়ে। বানান বিভ্রাট হলে নিজগুনে ক্ষমা করবেন
পশিহারা
এ কে সরকার শাওন
চলে আসুন না কোন একদিন,
আমাদের পশী হারা গায়!
সবুজের বুক চিরে রূপালী নদী
যেথায় নিরুদ্দেশে হারায়!
কি আর বলব আমি;
চারপাশটা অতি চমৎকার!
বেশ মনে ধরবে আপনার,
আমি দিচ্ছি নিশ্চয়তার!
চোখ জুড়াবে, দম আটকাবে,
উদাসী হাওয়ায় মন হারাবে!
গুনগুনিয়ে গান জাগবে;
গাইতে ইচ্ছে করবে গলা ছেড়ে!
আসুন না একবার সময় করে!
কলকাকলী সুর-লহরী
চারিদিকে শুনশান গুলশান!
মায়ের পরতে পরতে স্বর্গসূধা,
কখনো শেষ হবে না গুনগান!
মাথার কাল চুল উড়বে
দুরন্ত পুবের হাওয়ায়!
পান্জাবী-শাল নাচ ধরবে;
ভাসবেন যখন খেয়ায়!
দিগন্তবিস্তৃত বিশাল রাস্তার
দু’পাশের খোলামেলা রেস্তোরায়!
কব্জি ডুবিয়ে খাবেন জনাব
সতেজ খাবার বেশ সস্তায়!
আতপ চালের ভাপ উড়া ভাত,
সাথে শাক-শুটকির বাহার!
শিং-সরিষা আর ইলিশ কারি
সাথে চুকাই পাতার আচার!
সাদা ফকফকে ফিরনি শেষে
না হলে কি বাঙ্গালীর চলে!
তাম্বুরা বিলাসে মুখ রাঙ্গাবেন
বাড়ী ফিরিবার কালে!
চরণ চিহ্ন ফেলতে ফেলতে
চলে যাবেন বহুদূর!
স্মৃতিকণা রবে মনের মাঝে
অবসরে জাগাবে সুর!
©somewhere in net ltd.