![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Writer, Organizer & Creative Director
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।
২০২০ সাল বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। তাই
এবারের নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বা স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, "আমি প্রজন্মের সমতা: মহিলাদের অধিকারকে উপলব্ধি করছি!" ইংরেজী অনুবাদ করলে দাড়ায়, "I am Generation Equality: Realizing Women’s Rights."
জাতিসংঘ এ বছর আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস পালিন করেছে ৬ মার্চ শুক্রবার জাতিসংঘ সচিবালয়ে সকাল দশটায়। নারী দিবস ছাড়াও ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়!
নারীদের ওপর চাপানো বৈষম্য, নির্যাতনের বিরুদ্ধে করা প্রতিবাদে নারীদের চেতনা জাগ্রত ও নারীদের সম্মান প্রদর্শন করাই নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
নারী দিবসের রঙ নির্ধারিত হয়েছে বেগুনি এবং সাদা, যা নারীর প্রতীক। বেগুনি রঙ নির্দেশ করে সুবিচার ও মর্যাদা, যা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করে নারীর সমতায়ন।
১৯৮৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদী লেখক অ্যালিস ওয়াকারের উপন্যাস ‘দ্য কালার পারপল’ বইটি এই রঙ নির্ধারণে অনুপ্রেরণা জোগায়। এই গ্রন্থে তিনি নারীদের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন।সেখান থেকেই নারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছে বেগুনি-সাদা রঙ।
নারী দিবসের আছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।
বিশ্বব্যাপী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হবার আগে এর নাম ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের লক্ষ্য ভিন্নতর পরিলক্ষিত হলেও সবখানেই মুল সুর কর্মস্থলে নারী সহকর্মীর প্রতি সহমর্মিতা, সম্মান ও শ্রদ্ধা! কখনো কখনো নারীর আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাও গুরুত্ব পায়।
এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৬৩ বছর আগে ১৮৫৭ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কে অধিকার ও দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। আন্দোলনের বিষয় ছিল মজুরিবৈষম্য, সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারন! কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সেই মিছিলে সরকার লাঠিচার্জ করে ব্যাপক নিন্দিত হয়েছিল! তারপর আমেরিকার নিউইয়র্কে ১৯০৮ সালে গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকগণ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য ধর্মঘট ডেকেছিল।
১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাসে নারী সংগঠনের আয়োজনে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয় আমেরিকার নিউইয়র্কে। সেই বিশাল নারী সমাবেশে নেতৃত্ব দেন জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন ও স্বনামধন্য নারী সংগঠক ক্লারা জেটকিন। পরের বছর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে বিশ্বের ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলো। ঐ ঐতিহাসিক সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। সেই থেকে ৮মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। ক্লারা জেটকিনের ঐ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস পালন করে। সেই বছর দিবসটি উপলক্ষে যে পোষ্টরটি করা হয়েছিল তা ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানায়। তখন দিবসটি পালনে বিশ্বব্যাপী গতি পায়। বাংলাদেশ অবশ্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগে থেকেই এই দিবসটি পালিত হতো। বর্তমানেও ব্যাপকভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অনুষ্টানাদি চোখে পড়ার মত ও প্রশংসার দাবী রাখে। দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন
এরশাদ পৃথক পৃথক বাণী দিয়ে থাকেন।
এবারে নারী নিয়ে খ্যাতিমান মনীষীগণের কিছু উদ্ধৃতি বা বাণী দেয়া হলো।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স) হাদীসে ফরমায়েছেন,
"স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে তোমরা কল্যাণের উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা তাদেরকে তৈরীই করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে, আর পাজরের যা সবচেয়ে বক্র তা উপরের অংশে থাকে। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তবে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি এমনি ছেড়ে দাও তবে তা চিরদিন বক্রই থেকে যাবে। অতএব, তাদের ব্যাপারে কল্যাণের অসিয়ত গ্রহণ কর। "
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, " আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!" তিনি তাঁর 'সাম্যবাদী' কাব্যগ্রন্থে 'নারী' কবিতায় লিখেছেন,
"বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। "
তিনি "আমাদের নারী" কবিতায় লিখেছেন,
"গুনে গরিমায় আমাদের নারী আদর্শ দুনিয়ায়।
রূপে লাবন্যে মাধুরী ও শ্রীতে হুরী পরী লাজ পায়!"
আমার প্রিয় লেখক যাকে কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় না সেই হুমায়ূন আজাদ স্যার লিখেছেন, "পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা!" তিনি আরেক স্থানে লিখেছেন,
"ছেলেটি তার বিছানা গুছিয়ে না রাখলে মা খুশি হয়, দেখতে পায় একটি পুরুষের জন্ম হচ্ছে; কিন্তু মেয়েটি বিছানা না গোছালে একটি নারীর মৃত্যু দেখে মা আতংকিত হয়ে পড়ে!"
গ্রীক গণিতবিদ ও দার্শনিক পিথাগোরাস বলেছেন, " মেয়েদের চোঁখে দুই রকমের অশ্রু থাকে, একটি দুঃখের অপরটি ছলনার"!
কালজয়ী লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, "স্ত্রীলোকদিগের উপর যেমন কঠিন শাসন, পুরুষের উপর তেমন কিছু নেই। কথায় কিছু হয় না, ভ্রষ্ট পুরুষের কোন সামাজিক দণ্ড নেই। একজন স্ত্রী সতীত্ব সম্বন্ধে কোন দোষ করিলে সে আর মুখ দেখাইতে পারে না। হয়তো আত্মীয় স্বজন তাকে বিষ প্রদান করেন, আর একজন পুরুষ প্রকাশ্যে সেই সব কাজ করিয়া রোশনাই করিয়া জুড়ি হাকাইয়া রাত্রিশেষে পত্নীকে চরণরেণু স্পর্শ করাইয়া আসেন, পত্নী পুলকিত হয়। "
নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, "পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো; শান বেশি না দিলেও কেবল ভারেই অনেক কাজ করতে পারে। মেয়েদের বুদ্ধি কলম-কাটা ছুরির মতো; যতই ধার দাওনা কেনো, তাতে বৃহৎ কাজ চলে না"!
তিনি আরও লিখেছেন, "সাধারণত স্ত্রীজাতি কাঁচা আম, ঝাল লঙ্কা এবং কড়া স্বামীই ভালোবাসে। যে দুর্ভাগ্য পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত সে - যে কুশ্রী অথবা নির্ধন তাহা নহে; সে নিতান্ত নিরীহ"!
পদ্মা নদীর মাঝি খ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রবোধকুমার ওরফে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, "মেয়ে মানুষের এরকম হয়, ওরকম হয়, সব রকম হয়, শুধু মনের মত হয় না। "
"যখন রাত আসে তখন ঘুম আসে যখন ঘুম আসে তখন স্বপ্ন আসে যখন স্বপ্ন আসে তখন তুমি আসো – যখন তুমি আসো তখন ঘুমও আসে না, স্বপ্নও আসে না। " প্রেয়সীকে নিয়ে
নিমাই ভট্টাচার্য লিখেছিলেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, "তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো!"
"নারী হেসে উঠার আগ পর্যন্ত পৃথিবী ছিল বিষন্ন, বাগান ছিল জঙ্গল আর পুরুষ ছিল সন্ন্যাসী। " কালজয়ী এই বানীটি দিয়েছেন ক্যাম্পবল।
৪ ডিসেম্বর ১৮২৯ সাল। রাজা রাম মোহন রায় জঘন্য সতীদাহপ্রথা বিলোপ করে হিন্দু বিধবা নারীদের মুক্তির সাথে নিজের নামটি জড়িয়ে রেখেছেন। ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন চালু করে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরও সমাজ সংস্কারক হিসাবে অমর হয়ে আছেন!
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় অনেক দেশেই। যেমন রাশিয়া, কিউবা, বেলারুশ, জর্জিয়া, কম্বোডিয়া মঙ্গোলিয়া, উগান্ডা, ইউক্রেন ইত্যাদি! তাছাড়া, নেপাল, গণচীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার ইত্যাদি দেশে শুধু নারীরাই সরকারী ছুটির ভোগ করে থাকেন দিনটিতে। আমাদের দেশের সকল নারীগণ দশ হাত দিয়ে সংসার ও অফিস সামলান। নারীদের সম্মানে শুধু নারীদের জন্য বিশ্ব নারী দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষনার দাবী করছি।
পুরুষ শাসিত ও পুরুষ দ্বারা রচিত ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা উচু করে লেখা হয়েছে নারীর অবদানের দিকে সেই অর্থে অবহেলাই করা হয়েছে! নারী মায়ের জাতি! আমার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা আর ভালবাসা স্থান। নারী দিবসে নারীদের নিয়ে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলিসরূপ কবিতা "নারী তুমি অনন্যা" সম্মানিত পাঠকদের জন্য নীচে দেয়া হলো।
নারী তুমি অনন্যা
তুমি প্রেয়সী ললনা!
দুর্গতিনাশিনী তুমি অনন্যা,
তুমি আলোকিত কর অঙ্গন,
তুমি মহান হে অঙ্গনা।
তুমি দিগ্বিজয়ী বিজয়া-জায়া
সকল সৃষ্টিশীল কর্মের প্রেরণা!
সুখে কি দুখে দিন কি রাতে
সকল সময় তুমি রও পাশে
তোমার নেই কোন উপমা,
তুমি নিরুপমা তুমি অনুপমা!
শত আদরের বোনটি তুমি;
স্নেহময়ী কণ্যা তুমি,
চির-বন্ধু মায়ের প্রতিচ্ছবি;
তোমার হাঁসিতে দূর হয়ে যায়
ক্লান্তি-আঁধার-বিষাদ-বেদনা,
ঠোটের কোনে জেগে উঠে রবি!
তুমি তুলনাহীনা সহধর্মিণী
সংসার রনাঙ্গনে তুমি সেনানী
তুমি জয়িতা, তুমি গরবিনী
তোমাতে বিশ্ব-ব্রম্মান্ড চির-ঋণী!
সকল কর্মে তুমি পারদর্শী,
তুমি অঘটনঘটনপটিয়সী।
তুমি সবার উপরে তুমি মা
তুমি জন্মদাত্রী মহান জননী।
বিশ্ব নারী দিবসে আমরা সকলে
বিনয়াবনত ভালবাসার কথা বলি।
হোক প্রত্যয় হৃদয় থেকে
প্রতিদিন যেন জানাতে পারি
নারীর প্রতি বিনম্র অতল শ্রদ্ধান্জলি!
উৎসর্গঃ নাজমা আশেকীন শাওন এম. এ. এম. এড.
এ কে সরকার শাওন
শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাকা
৮ মার্চ ২০২০
https://www.muktocolumn.com/literature/show/201906021559515661?fbclid=IwAR2GflRZnpb81W5_t2i3MyiAm3yh62FVGGfwNf2QE9zCyHVHkW3Q1thOvG
©somewhere in net ltd.