![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“ নতুন দিনই নতুন চাহিদা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়॥ ”
গতকাল আমি আর আমার কিছু বন্ধু জান্নাতের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা জাহান্নামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে জাহান্নামের কিছু বাসিন্দাদের সাথে কিছুটা সময় অতিবাহিত করলাম। মৃত্যুর পরের জাহান্নামের সাথে দুনিয়ার এই নরকের সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য দেখলাম। মৃত্যুর পরের জীবনে পাপের বিনিময়ে দেয়া হয় জাহান্নাম। আর এখানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিনিময়ে দেয়া হয় নরকের টিকিট। ঘড়িতে তখন ৮ টা বেজে ৪০ আমি,তুমি,সে এবং তারা বের হলাম দড়াটানার মোড় হতে, সঙ্গে কিছু পুরাতন কাপড় আর কিছু মধ্যম মানের হোটেলের খাবার। নাহিদকে বললাম ক্যামেরাটা নেবার জন্য, হাজার হলেও প্রথমবার দুনিয়ার এই জাহান্নামে ঘুরতে যাওয়া কিছু দুর্লভ ছবিতো তুলতেই হয়। যাইহোক দুইটা মোটর ছাইকেলে রওনা দিলাম, শহরের আদলে গড়ে উঠা গ্রামের এই রাস্তায় ততোক্ষণে সূর্যি মামা তাঁর জোর দেখাতে শুরু করেছে, বাস্ত মানুষ গুলা জীবিকার টানে ঘর ছেড়েছে, কোকিলের সুর কানে আসলো কয়েকবার। মধ্যপথে যাত্রা বিরতিতে কয়েকটা চিগারেট আর কয়েক কাপ চা। বেশ ভালোয়ই লাগছিলো ৯টা ৫৫ আমরা পৌছালাম জাহান্নামের গেটে,কিন্তু হটাৎ করেই সেই কোকিলের সুরের বদলে শুনলাম কাকের বিশ্রী কা কা ডাক, সূর্যটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ভাবলাম জাহান্নামতো তাই মনে হয় এখানে আলো বাতাস থাকতে নেই। একটু ভিতরে যেতেই হৃদয় পোড়া একটা গন্ধ পেলাম। আমরাও সীমারের বংশ অনুভূতি আর বিবেক বলতে আমাদের কিছুই নাই। একটু পর এক ভদ্র মহিলার সাথে কথা হলো,তাকে জিজ্ঞসা করলাম “মা” আপনি কেমন আছেন? উত্তরে উনি বললেন “মেলা দিন পর আইন্নেরা আমারে মা বলে ডাকলেন,এহানে হজ্ঞলে আরে বুড়ি কইয়া ডাহে” জীবনে প্রথমবার অনুধাবন করলাম মা শব্দের গভিরতা । সত্য বলতে আমি আমার নিজের মাকে ডাকার সময়ও এতটা আপ্লুত হয়নি। প্রথমবার মনে হলো মা এই শব্দটা একটা, বীজ,একটা মন্ত্র, একটা মসজিদ, একটা গির্জা, একটা মন্দির, একটা পৃথিবী, একটা শব্দ ভাণ্ডার ।আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কোথা হতে এসেছেন? উনি বললেন মাগুরার শাহিনপুর হতে। আমি আবারো প্রশ্ন করলাম আপানার ছেলে মেয়ে নাই, হম আছেতো বাবু আমার ছেলে। সেই বাবু ভাইয়া এখন কই থাকে? এরপর আমাকে আর কনো প্রস্ন করতে হলো না, এখন উনার কথা গুলা আমার সৃতি থেকে নিজের ভাষায় বর্ণনার চেষ্টা করতেছি,
রাকিবুল আমি ওকে বাবু বলে ডাকি, ওর বাবা রিক্সা চালাত, উনি অনেক ভালো লোক ছিল তাই আমারে ছেড়ে চলে গেলেন,তখন ওর বয়স ১২ কি ১৩। বাবারে একমাত্র অই নারীই জানে মা হতে কতো কষ্ট সহ্য করতে হয়,ও যখন পেটে কিছু খাইতে মন চাইতো না । তার পরও জোর করে খাইতাম। মাঝে মাঝে ও আমার পেটে লাথি দিতো, চোখ দিয়ে পানি আসলেও , মুখ দিয়ে হাসি আসতো। আমার শরীরের প্রতিটা নাড়ি ছিঁড়ে যখন ও আসলো খুব হেসেছিলাম সেদিন। ওর হয়তো মনে নেই ওর যখন ৯ অথবা ১০ বছর বয়স ওর খুব জ্বর হয়েছিলো , আমি সারা রাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম রাত জেগে ওর মাথায় জল পোরটি দিছিলাম। ছোট থাকতে ও রাতে যখন আমার কোলে প্রস্রাব করতো আমি প্রস্রাবের উপর শুয়ে ওকে আমার কোলে রাখতাম,যাতে ঠাণ্ডা নালাগে। ওর বাবা মারা যাবার পর আমি মানুষের বাড়ি কাজ করতাম ওরে কখনো কনো কাজ করতে দিই নাই। কতো কষ্ট করছি ওরে নিয়া এক আল্লাহায় জানে আর আমি জানি। পরে অরে বিয়া দিলাম ,তার পর থেকে আস্তে আস্তে ও আমারে আর খেতে দিতে চাইতো না, আমি হয়তো অনেক খাইতাম!! আমিও আর কাজ করতে পারতাম না,যে কাজের লোক হিসাবে ওদের কাছে থাকবো। বাবু এখন শ্বশুর বাড়ি থাকে। আমারে এখানে আমাদের গ্রামের মেম্বর রাইখাগেছে। আমি এই প্রথমবার তার চোখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম তার ছানি পড়া ঐ দুচক্ষু যেন পৃথিবীর তাবৎ পুষ্পের থেকেও সুন্দর,তার চোখে ছিল শুভ্রতা,খানিকটা নিরাবতা,তার চোখ দুজোড়া হন্য হয়ে কাকে যেন খুজতেছে। আমি হলফ করে বলতে পারি তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা পৃথিবীর কারোর নাই, আমার চোখ যেন আর বাঁধ মানতে চাই না। আমার দম যেন বন্ধ হয়ে যাইতেছিল, প্রচণ্ড এক অপরাধ বোধ আমায় গ্রাস করে নিচ্ছিল,পায়ের নিচের মাটি সরে যাইতেছিল। নিজের অপর প্রচণ্ড ঘৃণা হইতেছিল,মানুষ হলাম কেন??
১১.৩০ আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া খাবার গুলা একজন পরিচিকাকে দিয়ে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশে। ক্যামেরাটা ওভাবে হাতেই থাকলো। মোটর সাইকেলে স্ত্রাট দিবার পর একবারের জন্যও পিছু ফিরে তাকালাম না। কনো বিরতি বাদেই মজনু মামার দোকানে আসলাম। কিন্তু আজ আর গল্পে কনো ছন্দ নাই, কারোর মুখে কনো কথা নাই ,বারবার মনে হয়তেছিল কিছু যেন ফেলে আসছি, জানি না কি সেটা………???????
=
©somewhere in net ltd.