![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“ নতুন দিনই নতুন চাহিদা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়॥ ”
দেব শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ইনাক্ক থেকে যার অর্থ ঈশ্বর বা দেবী,আর দাসী শব্দের অর্থ অন্যর দাসত্ব স্বীকার করে তার উপসনা বা সেবায় নিযুক্ত মেয়ে। এককথায় দেবদাসী শব্দের অর্থ উপাসনা করার জন্য "নিবেদিত" মেয়ে যারা একটি দেবতার সেবা করে তার জীবনের অর্ধাঙ্গ হবার জন্য একটি মন্দিরে নিজেকে উৎসর্গ করে। ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম দেবদাসীদের আবির্ভাব ঘটে।কালিদাসের মেঘাদূতে সর্বপ্রথম এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।এছাড়া বিভিন্ন পুরাণে দেবদাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।কালিদাসের মতে কিছু সুন্দরী মেয়ে যারা মন্দিরে পূজা দিত যাতে তাদের সতীত্ব রক্ষা পাই।একটা সময় তারা মন্দিরে পূজার সময় নাচ গান শুরু করে তাদের বিশ্বাস ছিল স্বয়ং দেবতা তাদের নাচ গানে খুশি হয়ে অবতার হয়ে ধরণীতে এসে তাদের সতীত্ব রক্ষা করবে।তাদের এই বিশেষ নাচ “মহাকাল উজ্জায়ন”হিসাবে পরিচিত ছিলো।
দেবদাসীরা চোল সম্রাজ্জে আদিগালার বা ঈশ্বরের দাস হিসাবে পরিচিত হতে থাকে।প্রখাত গবেষক শ্রী শ্রী আভিত্তয়ন ঠাকুরের মতে উড়িষ্যার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য জগন্নাথ মন্দির কমপ্লেক্সে এরা মাহারি হিসাবে সমাদৃত। এইসময় দেবদাসীরা অর্কেস্ট্রা নামক গানের আয়োজন করতো যেখানে তারা প্রায় এক হাজার বছরের পুরানো চোল রাজকুমারীর শিখানো নাত্তুভুসারন নৃত্য প্রদর্শন করতো। আস্তে আস্তে ভারত মহাদেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই দেবদাসীরা।যাদের প্রধান জ্ঞান বা ভিত্তি ছিল মাহারি বা মহনের সঙ্গি এবং রিপুয়ারি বা মদনের সজ্জ দাসি।স্বভাবত দেবদাসীরা প্রথমে মন্দিরের ভিতরে নৃত্য করতো। নৃতের সময় তাদের শরীরের সুপারি গাছের পাতা দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ পোশাক থাকতো এবং তাদেরকে কালো গাভির দুধ দিয়ে গোছল করানো হতো। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা মন্দির ছেড়ে সমাজের অধিপতিদের মনোরঞ্জনের জন্য নৃত্য প্রদর্শন করতে আসরে হাজির হতো।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে তৎকালীন সময়ে ছায়নিচেরি নামের এক অপরূপ সুন্দরী দেবদাসী ছিল। তখন মন্সকার রাজ্যর অধিপতি ছিলো দুরাপ্পনা যাকে ঈশ্বর জ্ঞান করা হতো। একসময় দুরাপ্পনা ছায়ানিচেরির প্রেমে পড়ে যাই এবং তাকে তার কাম সঙ্গী হিসাবে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দুরাপ্পনা ছায়ানিচেরিকে তার সঙ্গি হিসাবে পাবার পর দেবদাসীদের সন্মান বহুগুণে বেড়ে যাই। এইচ এস অল্কট এর মতে মাত্র ১৩ বছরে দেবদাসীদের সংখ্যা দুই হাজার থেকে বিশ হাজারে দাঁড়ায়। দেবদাসীদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের তাদের প্রতি কাম লিস্পা বাড়তে থাকে। মন্দিরের পুরোহিতরা তাদেরকে কাম সঙ্গি হিসাবে পেতে শুরু করে। অল্প কয়েক বছরের মধ্য তারা সমাজে পতিতা বৃত্তি শুরু করে।তাদের সঙ্গে যৌন মিলন তখন পুণ্যর কাজ বলে গন্য হতো। একটা সময় এই দেবদাসীরা সমকামিতায় জড়িয়ে যাই। ১৮০০ শতাব্দীর মাঝের দিকে শিক্ষিত সমাজ তাদের এই অবাধ যৌন ব্যাবসার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আন্দোলন গড়ে উঠে। ছাত্র,শিক্ষক,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ারসহ সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ আন্দোলন করতে থাকে।১৮৪৪ সালে ভারত সরকার দেবদাসীদের নিষিদ্ধ করে।এরপর বিলোপ পেতে শুরু করে এই দেবদাসীরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে ভারত সরকার দেবদাসীদের নিষিদ্ধ করলেও বহু দেশ আজকে দেবদাসীদের সেই যৌন ব্যাবসা এবং সমকামিতাকে লাইফ ইন্সুরেন্স দিচ্ছে।
©somewhere in net ltd.