নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব ধর্ম আক্রমনকারী সাবধান

মানুষ আসলে নষ্ট হতে চায় কিন্তু সারা জীবন ভালো থাকার অভিনয় করে

নীড় হারা পাখি

জানি আত্মার মৃত্যু নাই কিন্তু বন্ধু তোমায় হারিয়ে যে আমার আত্মার মৃত্যু হয়েছে

নীড় হারা পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অশ্লীল পোস্ট যা কেউ পড়ে না

২৭ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৫





মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের যৌন সন্ত্রাসের ধরন সম্পর্কে প্রথম তথ্য পাওয়া যায় ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত আমেরিকান সাংবাদিক সুসান ব্রাউন মিলার রচিত “এগেইনেস্ট আওয়ার উইল: ম্যান, উইম্যান এন্ড রেপ” গ্রন্থে। দেশে এ বিষয়ক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয় খুব কম এবং যা হয়েছে ৮০ সালের পর থেকে। যুদ্ধের পর ৭৬-৭৭ সাল পর্যন্ত গ্রহণ করা এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষাৎকার একমাত্র প্রকাশিত হয় প্রামাণ্যকরণ প্রকল্পের অষ্টম খন্ডে। কিন্তু এই খন্ড যাচাই করে দেখা গেছে, এতে মোট গৃহীত ২৬২টি সাক্ষাৎকারের মধ্যে নির্যাতনের সাক্ষাৎকার মাত্র ২২টি।



প্রকল্পের তৎকালীন গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রামাণ্যকরণ কমিটি তাদের কার্যালয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি পৃষ্ঠার তথ্য সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে মাত্র ১৫ হাজার পৃষ্ঠা গ্রন্থিত আছে। বাকি লাখ লাখ পৃষ্ঠার তথ্যের মধ্যে নারী নির্যাতন বিষয়ক বেশকিছু ঘটনা আছে। প্রকল্পের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক কে এম মহসীন বলেন, ‘ডকুমেন্টগুলো এখন জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব গ্র্রহনের পারস্পরিক টানাহেচড়ায় অরক্ষিত অবস্থায় আছে। যতোদূর জানি, বেশ কিছু ডকুমেন্ট চুরিও হয়ে গেছে।’



মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত লিখিত সূত্র, সমাজকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানিদের ধারাবাহিক ধর্ষণ উন্মত্ততার সঙ্গে মধ্য এপ্রিল থেকে যুক্ত হতে শুরু করে এদেশীয় দোসর রাজাকার, শান্তি কমিটি, আল বদর ও আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা। এরা বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে আনার পাশাপাশি ধর্ষকে অংশ নিয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্ট, পুলিশ ব্যারাক, স্থায়ী সেনা বাঙ্কার ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল কলেজ, সরকারি ভবন ধর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।



জানা যায়, একাত্তরে পুরো ৯ মাস পাকিস্তানি সৈন্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থলে, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বাঙালি নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন আটকে রেখে ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা গণধর্ষণ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির পুরুষ সদস্য, স্বামীদের হত্যা করার পর নারীদের উপর ধর্ষণ নির্যাতন চালাতো পাকিস্তানী সৈন্যরা। ৯ থেকে শুরু করে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা কেউই পাকিস্তানী সৈন্য বা তাদের দোসরদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সুসান ব্রাউনি মিলার তার গ্রন্থের ৮৩ পাতায় উল্লেখ করেছেন, কোনো কোনো মেয়েকে পাকসেনারা এক রাতে ৮০ বারও ধর্ষণ করেছে। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির “যুদ্ধ ও নারী” গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এক একটি গণধর্ষণে ৮/১০ থেকে শুরু করে ১০০ জন পাকসেনাও অংশ নিয়েছে। একাত্তরের ভয়াবহ ধর্ষণ সম্পর্কে একমাত্র জবানবন্দিদানকারী সাহসিক ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তার সাক্ষাৎকারে (একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি, সম্পাদনা শাহরিয়ার কবির) জানান, “রাতে ফিদাইর (উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা) চিঠি নিয়ে ক্যাপ্টেন সুলতান, লে. কোরবান আর বেঙ্গল ট্রেডার্সও অবাঙালি মালিক ইউসুফ এরা আমাকে যশোরে নিয়ে যেত। যাওয়ার পথে গাড়ির ভেতরে তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। নির্মম, নৃশংস নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে আমার বোধশক্তি লোপ পায়। ২৮ ঘন্টা সঙ্গাহীন ছিলাম”।



পাকিস্তানি সৈন্যদের ধর্ষণের বীভৎসতার ধরন সম্পর্কে পুনর্বাসন সংস্থায় ধর্ষিতাদের নিবন্ধীকরণ ও দেখাশোনার সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী মালেকা খান জানান, সংস্থায় আসা ধর্ষিত নারীদের প্রায় সবারই ছিল ক্ষত-বিক্ষত যৌনাঙ্গ। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছিড়ে ফেলা রক্তাক্ত যোনিপথ, দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেলা স্তন, বেয়োনেট দিয়ে কেটে ফেলা স্তন-উরু এবং পশ্চাৎদেশে ছুরির আঘাত নিয়ে নারীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতো।



পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের নারীদের একাত্তরে কতো বীভৎসভাবে ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতন করেছে তার ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশী ধরা পড়ে ১৮ ফেব্র“য়ারীর ৭৪ সালে গৃহীত রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একাত্তরে সুইপার হিসেবে কাজ করা রাবেয়া খাতুনের বর্ণনা থেকে। প্রামান্যকরন প্রকল্পের অষ্টম খন্ডে গ্রন্থিত ঐ বর্ণনায় কয়েকটি অংশ: রাবেয়া খাতুন জানান, ‘উন্মত্ত পান্জাবি সেনারা নিরীহ বাঙালী মেয়েদের শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই ছেড়ে দেয় নাই অনেক পশু ছোট ছোট বালিকাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করে ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজনে দুপা দুদিকে টেনে ধরে চড়াচড়িয়ে ছিড়ে ফেলে ছিল। পদস্থ সামরিক অফিসাররা সেই সকল মেয়েদের ওপর সম্মিলিত ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ একদিন তাকে ধরে ছুরি দিয়ে তার স্তন কেটে, পাছার মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ওরা আদন্দ উপভোগ করতো । ’ রাবেয়া খাতুনের আরেকটি বর্ণনায় জানা যায়, ‘ প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশলাইনের ব্যারাক থেকে এবং হেডকোয়ার্টার অফিসে ওপর তলা থেকে বহু ধর্ষিত মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত বিকৃত লাশ ওরা পায়ে রশি বেধে নিয়ে যায় এবং সেই জায়গায় রাজধানী থেকে ধরে আনা নতুন মেয়েদের চুলের সঙ্গে বেধে ধর্ষণ আরম্ভ করে দেয়। ’



১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরও পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কারে আটকে রেখে নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে বাঙালী নারীদের। বিচারপতি কে এম সোবহান প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘ ১৮ ডিসেম্বর মিরপুরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজনকে খুঁজতে গিয়ে দেখি মাটির নিচে বাঙ্কার থেকে ২৩জুন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথা কামানো নারীকে ট্্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাক আর্মিরা। ’



বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, পুরোপুরি পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত পাক আর্মিদের ধর্ষণ-উত্তর অন্যান্য শারীরিক নির্যাতনের ফলে বেশ কিছু মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, কাউকে কাউকে পাকসেনারা নিজেরাই হত্যা করেছে; আবার অনেকেই নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক ড. রতন লাল চক্রবর্তী ৭২- এর প্রত্যক্ষদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, ‘ যুদ্ধের পর পর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী, ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেশ কিছু নারীকে। তাদের ড্রেসআপ এবং চলাফেরা থেকে আমরা অনেকেই নিশ্চিত জানতাম ওরা যুদ্ধের শিকার এবং ওদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ’





শেষ কথা: এতো বিভৎস নির্যাতনের কোনো বিচার আজও হয়নি। বিশ্বের কাছে এসকল তথ্য অজানা। বিদেশ কেনো আমাদের নতুন প্রজন্ম যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে কতোটুকু জানে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এবং এই পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তা দানকারী আলবদর আলশামস এখনও বীরের মত ঘুরে বেড়ায়। আর জামাতী রাজাকার বাহিনীর বিচারের নামে সরকার কুতকুত খেলে। এই কি ছিল আমাদের নিয়তি? এদের বিচার না করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার যে চেষ্টা সরকার নিলজ্জ ভাবে করে যাচ্ছে এর প্রতিদান একদিন বাংলার মানুষ সুদে আসলে পরিশোধ করবে।

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:০২

শিশির সিন্ধু বলেছেন: থুতু মারতেও ঘেন্না লাগে ওদের দিকে

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:০৮

নিউজ-ম্যান বলেছেন: উপরের লেখাগুলো সবই সত্য ও দু:খজনক। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ঘটনাটি যদি ঠিক উল্টো হতো অর্থাৎ বাঙ্গালী সৈন্যরা যদি আন্দোলন দমনের জন্য পাকিস্তানে যেত তখন তারা কি করত? পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং নারিদের ওপর চালানো গণ ধর্ষণই এর প্রমাণ। তাহলে আমরা কতটুকু ভালো সেটাও কি একবার ভেবে দেখার দরকার নেই? উত্তর চাই সবার কাছ থেকে।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:০৮

কম্পন বলেছেন: এমন লোকও পাওয়া যায়, যারা রাজনীতি ও যুদ্ধাপরাধ এক করে ফেলে। আমার মনে হয় যারা এর বিচার এতদিন আরম্ভ করেনি তাদের কে প্রশ্ন করা উচিত। যুদ্ধাপরাধ সকলের বিষয়। এর সাথে দেশের সম্মান অস্তিত্ব জড়িত। যারা উল্টো করে ভাবে তাদের কে প্রশ্ন আপনার মা, বোন কে যদি পাকিস্তানীরা ধর্ষণ করত তাহলে কেমন লাগবে ভেবে দেখবেন?

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:২৪

নিউজ-ম্যান বলেছেন: কম্পনের সাথে পুরোপুরি একমত

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:২৪

সহজ পৃথিবী বলেছেন: ১৯৪৭ সালে বৃটিশরা যাওয়ার আগে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান এব্ং পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্র রেখে যায়। ১৯৪৮ সালে ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন বল্ললো উর্দু, ওয়ানলি উর্দু শ্যালবি দ্যা স্টেইট ল্যাংগুয়েজ অব পাকিস্তান তখনই বাঙালী জেনে গিয়েছিল পরাধীনতার ইতিহাস গত হয়নি।।৫২'র ভাষা আন্দলন, ৫৪'র যুক্তফ্রন্ট, ৫৮'র সামরিক শাসন ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন ৬৬'র ছয় দফা ৬৯'এর গণঅভ্যূথান ৭০'এর নির্বাচন ৭'ই মার্চেরর রেসকোর্স এরপর ২৫শে মার্চ সন্ধা রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গেইট দিয়ে বেরিয়ে আসা পাকিস্তানী সেনা বাহিনী এদেশে শুধুগণ হত্যা করার মিশন নিয়ে আসেনি। গণহত্যা আর গণধর্ষন করে একটি রাজনৈতিক বিশ্বাসের নামে একটি জাতিকে সম্পূর্ন ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিল।সেই সাথে এই দেশে থাকা একই মাতাদর্শের অনুসারী সহোযোগীর সহায়তায় তাদের পরিকল্পনার ডেমন্সট্রেশনও করেছে মানব সভ্যতায় নজির বিহীন। নয়মাস জুরে নির্বিচারে লক্ষ লক্ষ ছেলে, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ মানুষ হত্যার সাথে নারী ধর্ষণের এই মাত্রাটি পৃথিবীর আর কোন যুদ্ধের আছে কিনা সন্দেহ আছে। নেই ! বিশ্বে আর কোন যুদ্ধে এত নীচ একটি অভিপ্রায় নিয়ে কোন জাতি অন্য একটি জাতির উপর ঝাপিয়ে পরার ইতিহাস নেই। ২৬ মার্চ ১৯৭১ এ শুরুতেই শুরু হয় নারীদের গণধর্ষণ। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সুইপার রাবেয়া খাতুন বলেন ২৫ মার্চ ১৯৭১ রাতে পুলিশ লাইনের এস এফ ক্যান্টিনে ছিলেন। পুলিশদের প্রতিরোধ ব্যর্থ হবার পরে ধর্ষিত হন রাবেয়া খাতুন। সুইপার বলে প্রাণে বেঁচে যান কারণ রক্ত ও লাশ পরিস্কার করার জন্য তাকে দরকার ছিল সেনাবাহিনীর। সেখানে ঘটে যাওয়া এরপরের ঘটনার বিবরণ তিনি দিয়েছেন এইরকম : ২৬ মার্চ ১৯৭১,বিভিন্ন স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে মেয়েদের ধরে আনা হয়। আসা মাত্রই সৈনিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তারা ব্যারাকে ঢুকে প্রতিটি যুবতী,মহিলা এবং বালিকার পরনের কাপড় খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে ধর্ষণে লিপ্ত হতে থাকে।রাবেয়া খাতুন ড্রেন পরিস্কার করতে করতে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।পাকসেনারা ধর্ষন করেই থেকে থাকেনি,সেই মেয়েদের বুকের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দেয়,মাংস তুলে নেয়।মেয়েদের গাল,পেট,ঘাড়,বুক,পিঠ ও কোমর তাদের কামড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়।এভাবে চলতে থাকে প্রতিদিন।যেসব মেয়েরা প্রাথমিকভাবে প্রতিবাদ করত তাদের স্তন ছিড়ে ফেলা হত,যোনি ও গুহ্যদ্বা্রের মধ্যে বন্দুকের নল,বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢূকিয়ে হত্যা করা হত।বহু অল্প বয়স্ক বালিকা উপুর্যুপুরি ধর্ষণে নিহত হয়।এর পরে লাশগুলো ছুরি দিয়ে কেটে বস্তায় ভরে বাইরে ফেলে দেয়া হত।হেড কোয়ার্টারের দুই,তিন এবং চারতলায় এই্ মেয়েদের রাখা হত,মোটা রডের সাথে চুল বেঁধে।এইসব ঝুলন্ত মেয়েদের কোমরে ব্যাটন দিয়ে আঘাত করা হত প্রায় নিয়মিত,কারো কারো স্তন কেটে নেয়া হত,হাসতে হাসতে যোনিপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হত লাঠি এবং রাইফেলের নল।কোন কোন সৈনিক উঁচু চেয়ারে দাঁড়িয়ে উলঙ্গ মেয়েদের বুকে কামড় দিয়ে মাংস ছিড়ে নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ত।কোন কোন মেয়ের সামনের দাঁত ছিল না, ঠোঁটের দু’দিকের মাংস কামড়ে ছিড়ে নেয়া হয়েছিল, প্রতিটি মেয়ের হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে থেতলে গিয়েছিল লাঠি আর রডের পিটুনিতে। কোন অবস্থাতেই তাঁদের হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়া হত না, অনেকেই মারা গেছে ঝুলন্ত অবস্থায়।রাজারবাগ পুলিশ লাইনের একজন সুবেদার খলিলুর রহমানের অভিজ্ঞতা এইরকম : মেয়েদের ধরে নিয়ে এসে ট্রাক থেকে নামিয়ে সাথেই সাথেই শুরু হত ধর্ষন, দেহের পোশাক খুলে ফেলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ধর্ষণ করা হত। সারাদিন ধর্ষণের পরে এই মেয়েদের হেড কোয়ার্টার বিল্ডিং এ উলঙ্গ অবস্থায় রডের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখ হত, এবং রাতের বেলা আবারো চলত নির্যাতন। প্রতিবাদ করা মাত্রই হত্যা করা হত, চিত করে শুইয়ে রড, লাঠি,রাইফেলের নল, বেয়নেট ঢুকিয়ে দেয়া হত যোনিপথে, কেটে নেয়া হত স্তন। অবিরাম ধর্ষণের ফলে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলেও থামত না ধর্ষণ।


পাকিস্তানী রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীরা মুসলমান না, এদের মুসলমান বানাতে হবে। পাকিস্তান আর্মি বাঙালিদেরকে মুসলমান বানানোর এই সুযোগ লুফে নেয়। আর এর জন্য সহজ রাস্তা ছিল বাঙালি মেয়েদেরকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে তাদেরকে দিয়ে সাচ্চা মুসলমান বাচ্চা পয়দা করানো। মে জুনে এসে দিকে মানুষ মেরে ধর্ষন করে জ্বালীয়ে পুড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও বাঙ্গালীদের রুখে দাড়ানো ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠলে ধর্ষনের ভিন্ন নীতি গ্রহণ করে পাকিস্থানীরা। এ কে নিয়াজী তার The Betrayal of East Pakistan, Oxford University Press, Karachi বইতে মুক্তিযুদ্ধ গণ হত্যা গণধর্ষন এবং বাংলাদেশের জন্মসহ পুরো বিষয়টিকে পাকিস্থানী রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেছেন। নিয়াজী কমান্ডারদের কাছে কয়েকটি চিঠি দেখিয়ে পাঠিয়েছিলেন ওই সব চিঠিগুলোতে তিনি বলেছেন, যেভাবে নারী ধর্ষন লুটপাটের খবর আসছে তাতে তার ভাষায় ইসলামিক সেনাবাহিনীর শৃংখলা আর নৈতিক মনোবল ভেংগে যেতে বাধ্য। তার চিঠি উল্লেখ করে তিনি ওই বইতে এটিও বলেছেন যে, তার এ নির্দেশ মানা হয়নি। বলেছেন পুরো বিষয়টি যে একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল তা তিনি জানতেননা। নিয়াজী একাত্তরে সংগঠিত র্ধষণের ঘটনা স্বীকার করার সাথে সাথে একটি অসংলগ্ন উক্তিও করেছিলেন - আপনি এরূপ আশা করতে পারেন না যে, সৈন্যরা থাকবে, যুদ্ধ করবে এবং মুত্যু বরণ করবে পূর্ব পাকিস্তানে আর শারীরবৃত্তিয় চাহিদা নিবৃত্ত করতে যাবে ঝিলামে ! পাকিস্তানী সৈন্য এবং তার এদেশীয় দোসররা নারীদের ক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ করে আটকে রাখতো। উদ্দেশ্য ছিল তাদের গর্ভবতী করা। তারা নারীদের কাপড় খুলে উলংগ করে রাখতো। এরপরও কিছূ মেয়ে সিলিংয়ের সঙ্গে মাথার চুল পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে কেউ যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে সেজন্য মাথার চুল কামিয়ে দেয়া হতো। যুদ্ধ শেষে ক্যাম্প থেকে বীরঙ্গণা নারী যাদের উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের সবার মাথার চুল কামানো ছিল। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরও যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারতীয় বাহিনীর হেফাজতে থাক অবস্থায়ও তখনও বাঙ্কারে আটকে রেখে নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে বাঙালী নারীদের। বিচারপতি কে এম সোবহান প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘ ১৮ ডিসেম্বর মিরপুরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজনকে খুঁজতে গিয়ে দেখি পাক আর্মিরা মাটির নিচে বাঙ্কার থেকে ২৩ জন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথা কামানো নারীকে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন আটকে রেখে হররোজ ধর্ষণ করা হয়েছে তাদের। পাকিস্তান আর্মির দোসর রাজাকার এবং আলবদরেরা জনগণকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে সন্ত্রস্ত করে দেশছাড়া করে তাদের সম্পত্তি এবং জমিজমা দখলের জন্য ধর্ষণকে বেছে নিয়েছিল।

পৃথিবীর অন্যান্য যুদ্ধে নারী ধর্ষণ ছিল সৈনিকদের ভোগের উদ্দেশ্যে। মুক্তিযুদ্ধে তা ছিলনা। তা থাকলে বাসা বাড়িতে গিয়ে নারীদের ধর্ষণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো তারা। কিন্তু তারা তা করেনি। নারীদের ধরে ট্রাক বোঝাই করেই ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তাদের ট্রাক থেকে নামানোর আগেই অপেক্ষায় থাকা সৈন্যরা দল বেঁধে সবার সামনে নারীদের ওপর হামলে পড়েছে। কমান্ডারদের জন্য আলাদা নারী করে রাখা হতো। এটি ছিল সৈন্যদের রুটিন ওয়ার্ক। ব্রাউন মিলার লিখেছেন, একাত্তরের ধর্ষণ নিছক সৌন্দর্যবোধে প্রলুব্ধ হওয়া কোন ঘটনা ছিলনা আদতে; আট বছরের বালিকা থেকে শুরু করে পঁচাত্তর বছরের নানী-দাদীর বয়সী বৃদ্ধাও শিকার হয়েছিল এই লোলুপতার। পাকসেনারা ঘটনাস্থলেই তাদের পৈচাশিকতা দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ; প্রতি একশ জনের মধ্যে অন্তত দশ জনকে তাদের ক্যাম্প বা ব্যারাকে নিয়ে যাওয়া হতো সৈন্যদের জন্য। রাতে চলতো আরেক দফা নারকীয়তা । কেউ কেউ আশিবারেও বেশী সংখ্যক ধর্ষিত হয়েছে ! এই পাশবিক নির্যাতনে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, আর কতজনকে মেরে ফেলা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা হয়ত কল্পনাও করা যাবে না।

যুদ্ধের পর রাজধানীতেই অনেকগুলো অ্যাবরেশন সেন্টার খোলা হয়। বীর প্রতীক ডা. সেতার পারভীন একটি সাক্ষাতকারে এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। রাজধানীতেই ৫০টির মতো অ্যাবরেশন সেন্টার খোলা হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। ৭২ সালের প্রথম দিকেই ওইসব যুদ্ধ শিশু জন্ম নিতে শুরু করে। লোকচক্ষুর অন্তরালে এদের জন্ম দেয়ার কাজটি সারতে সারাদেশব্যাপী গড়ে তোলা হয়েছিল বাইশটি সেবাসদন। এতে প্রতিদিন তিনশ’ থেকে চারশ’ শিশু জন্ম নিতো। আমাদের নারীরা চিরকালই ধর্ষিত হলে তা লুকিয়ে ছাপিয়ে রাখতে চান। সমাজের প্রকৃতিও এমনই। এজন্য মুক্তিযুদ্ধে কতজন ধর্ষিত হয়েছিলেন এ সংখ্যা হয়ত কোন দিনও জানা যাবেনা। এমএ হাসান তার ‘The Rape of 1971: The Dark Phase of History’ এ দাবি করেন, ‘অ্যাবরেশন করানো নারীর সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ৮৮ হাজার ২ শ’। ’৭২ সালের মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ধর্ষিত নারীর খোজ পাওয়া যায় এবং আরো ১ লাখ ৩১ হাজার হিন্দু নারী স্রেফ গায়েব হয়ে গিয়েছিল। তারা বিলীন হয়ে গিয়েছিল বিশাল জনসমুদ্রে। তাদের হদীস তখন সরকারও রাখতে চায়নি। ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. জিওফ্রে ডেভিস জানান, সরকার উদ্যোগ নেওয়ার আগেই ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার নারীর ভ্রুণ স্থানীয় দাই, কিনিকসহ যার পরিবার যেভাবে পেরেছে সেভাবে 'নষ্ট' করেছে। আমেরিকার সাংবাদিক ব্রাউন মিলার Against Our Will: Men, Women and Rape নামের এক ছোট গবেষণা কাজে ১৯৭৫ সালে প্রকাশ করেন, ধর্ষণের পরও বেঁচে থাকা নারীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন গর্ভধারন করেছিলেন বলে জানা যায়। পৃথিবীর অন্য কোন যুদ্ধে এত ধর্ষনের শিকার কোন দেশের নারীরা হয়েছিলেন কিনা তা তার জানা নেই। পাকিস্থানী কর্তৃপক্ষ একটি হিসাব দেখিয়ে বলেছে, এত কম সংখ্যক সৈনিকরা এত সংখ্যক ধর্ষণ ঘটাতে পারেনা। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ তাদের যুদ্ধের নীতিই ছিল নারীদের ধর্ষণ করা। লিখেছিলেন, একাত্তরের ধর্ষণ নিছক সৌন্দর্যবোধে প্রলুব্ধ হওয়া কোন ঘটনা ছিলনা আদতে; আট বছরের বালিকা থেকে শুরু করে পঁচাত্তর বছরের নানী-দাদীর বয়সী বৃদ্ধাও স্বীকার হয়েছিল এই লোলুপতার। পাকসেনারা ঘটনাস্থলেই তাদের পৈচাশিকতা দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ; প্রতি একশ জনের মধ্যে অন্তত দশ জনকে তাদের ক্যাম্প বা ব্যারাকে নিয়ে যাওয়া হতো সৈন্যদের জন্য। রাতে চলতো আরেক দফা নারকীয়তা । কেউ কেউ হয়ত আশিবারেও বেশী সংখ্যক ধর্ষিত হয়েছে ! এই পাশবিক নির্যাতনে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, আর কতজনকে মেরে ফেলা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা হয়ত কল্পনাও করা যাবে না ।

বিজয়ের পর বাংলাদেশ সরকারও ওই সময়ে যুদ্ধ শিশু আর ধর্ষনকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কারণ দেশের সামাজিক অবস্থা কখনোই এর পক্ষে ছিলনা। এ কারণে ওইসব শিশুদের যাতে দত্তক নিতে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য অধ্যাদেশও জারি করা হয়েছিল। বিদেশী নাগরিকরা যাতে সহজেই যুদ্ধ শিশুদের দত্তক নিতে পারেন সে জন্য ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রজ্ঞাপিত হয় The Bangladesh Abandoned Children (Special Provisions) Order. বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের আহবানে সাড়া দিয়ে ধর্ষিতা মহিলাদের গর্ভপাতের জন্য ঢাকায় পৌছায় ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং অষ্ট্রেলিয়ান ডাক্তাররা। তারা বাংলাদেশে পৌঁছার পরেই প্রতিষ্ঠা করা হয় বেশ কিছু গর্ভপাত কেন্দ্র।। এই গর্ভপাতকেন্দ্রলো সেবাসদন নামে পরিচিত। সেখানে তারা বাংলাদেশি ডাক্তারদের সহযোগিতায় গর্ভপাত করানো শুরু করেন। সেই সময়কার সংবাদপত্রের ভাষ্য এবং বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ যেমন বিচারপতি কে, এম, সোবহান, মিশনারিজ অব চ্যারিটির সুপারভাইজর মার্গারেট মেরি, ডঃ জিওফ্রে ডেভিসের সাক্ষাতকার থেকে জানা যায় যে ঢাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে দুই হাজার তিন শত গর্ভপাত করানো হয়েছে।

সারাদেশব্যাপী গড়ে তোলা বাইশটি সেবাসদনে প্রতিদিন তিনশ’ থেকে চারশ’ শিশু জন্ম নিতো। ক্যানাডিয়ান ইউনিসেফ কমিটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর যুদ্ধপূর্ব এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। রেডক্রস প্রতিনিধি এবং ইউনিসেফের লোকজনের সংগে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অটোয়ার মূল অফিসে জানান যে, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া যুদ্ধ শিশুর সংখ্যা আনুমানিক দশ হাজার। সুজান ব্রাউনমিলারের মতে সন্তান জন্ম দিয়েছিল এমন বীরাঙ্গনার সংখ্যা পঁচিশ হাজার।

বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এই শিশুরা সমাজে তৈরি করে ভয়াবহ সংকট এবং সমস্যা। কেউ কেউ এই শিশুদেরকে বলে ‘অবাঞ্চিত সন্তান’, কেউ বলে ‘অবৈধ সন্তান’, কেউ বলে ‘শত্রু শিশু’ আবার কেউ বা নিদারুণ ঘৃণায় উচ্চারণ করে ‘জারজ সন্তান’ বলে। ফলে, এই সংকট থেকে কী করে মুক্তি পাওয়া যায় সেটাই হয়ে উঠে সেই সময়কার আশু চিন্তার বিষয়। সেই চিন্তা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়কেও ছুঁয়েছিল। শেখ মুজিব ধর্ষিতা নারীদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত এবং তাদেরকে নিজের মেয়ে হিসাবে উল্লেখ করলেও সেই মেয়েদের সন্তানদের ব্যাপারে তার কোন আগ্রহই ছিল না। তিনি পরিষ্কারভাবে বলে দেন যে, পাকিস্তানীদের রক্ত শরীরে আছে এমন কোন শিশুকেই বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। যুদ্ধ শিশুদের বিষয়ে নীলিমা ইব্রাহিম তার সংগে দেখা করতে গেলেও তিনি একথাই বলেন। এ বিষয়ে ফারুক ওয়াসিফ লিখেছেনঃ ‘যুদ্ধশিশু’ এবং তাদের মাদের একটা সুব্যববস্থা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম অনেক খেটেছিলেন। এদের ভাগ্যে কী হবে, তা জানতে তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাকে বলেন, ‘না আপা। আপনি দয়া করে পিতৃপরিচয়হীন শিশুদের বাইরে (বিদেশে) পাঠিয়ে দেন। তাদের সম্মনের সঙ্গে মানুষের মতো বড় হতে দিতে হবে। তাছাড়া আমি এসব নষ্ট রক্ত দেশে রাখতে চাই না’। (ইব্রাহিম, ১৯৯৮ : ১৮) এটি কেবল রাষ্ট্রের স্থপতি এক মহানায়কের সংকট নয়, এটা ছিল জাতীয় সংকট। গোটা জাতির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, গ্লানি জমছিল।

শেখ মুজিবের এই বক্তব্যই হয়তো যুদ্ধ শিশুদেরকে দত্তকের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইনে বাংলাদেশি কোন শিশুকে ভীনদেশে দত্তক দেওয়ার বিধান ছিল না, যদিও বাংলাদেশি পিতামাতা দত্তক সন্তান নিতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত অনুরোধে জেনেভা ভিত্তিক International Social Service (ISS/AB) এর ইউএস ব্রাঞ্চ সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে যুদ্ধ শিশুদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। সরকারী দু’টি সংগঠন Central-Organization for Women এবং Rehabilitation and Family Planning Association কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে থাকে ISS এর পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের পুরো পর্যায় জুড়ে।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের করুণতম অধ্যায়ের নাম হচ্ছে বীরাঙ্গনা নারী। যুদ্ধে সকল পক্ষেরই শত্রুর পাশাপাশি কোথাও না কোথাও মিত্রও থাকে। কিন্তু এইসব অসহায় নারীদের মিত্রপক্ষ বলে কিছু ছিল না। সকলেই ছিল তাদের শত্রুপক্ষ, তা সে শত্রুই হোক কিম্বা মিত্র নামধারীরাই হোক। যুদ্ধের সময় নয়মাস তাদেরকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, আল বদর, আল শামস, রাজাকার আর বিহারীদের কাছে শারীরিকভাবে ধর্ষিত হতে হয়েছে। আর যুদ্ধের সময় বা পরে যারা তাদের মিত্র হওয়ার কথা ছিল,পরম স্নেহে বা ভালবাসায় বুকে টেনে নেবার কথা ছিল, সেই বাপ-চাচা, ভাই বেরাদারেরাই তাদেরকে ধর্ষণ করেছে মানসিকভাবে, আরো করুণভাবে, আরো কদর্যরূপে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বীরাঙ্গনাদেরকে তাচ্ছিল্য করে এর কাছাকাছি উচ্চারণের চরম অবমাননাকর একটা নামেও ডেকেছে অনেকে। আমি একে বলি সামাজিক ধর্ষণ। সামাজিক এই ধর্ষণ শারীরিক ধর্ষণের চেয়ে কম কিছু ছিল না বীরাঙ্গনাদের জন্য।
আমাদেরই কারণে যে পঙ্কিলে তাদেরকে পতিত হতে হয়েছিল অনিচ্ছুকভাবে, মমতা মাখানো হাত দিয়ে তাদের গা থেকে সেই পঙ্কিল সাফসুতরো করার বদলে নিদারুণ স্বার্থপরতা এবং হিংস্রতার সাথে আমরা তাদেরকে ঠেলে দিয়েছিলাম আরো গভীর পঙ্কিলের মাঝে। পাছে না আবার গায়ে কাদা লেগে অশুদ্ধ হয় আমাদের এই বিশুদ্ধ সমাজ। অনিচ্ছাকৃত যে গর্ভাবস্থা তারা পেয়েছিলেন শত্রুর কাছ থেকে, সমাজের রক্তচক্ষু এবং ঘৃণার কারণে তা লুকানোটাই ছিল সেই সময় সবচেয়ে বেশি জরুরী কাজ। সমাজকে বিশুদ্ধ রাখতে তাদের কেউ কেউ গর্ভনাশ করেছেন নীরবে, কেউ কেউ আবার নিজের জীবননাশ করেছেন সংগোপনে। আর যারা তা পারেননি, তারা লোক চক্ষুর অন্তরালে সন্তান জন্ম দিয়ে চলে গেছেন অজানার পথে। জন্ম মুহুর্তেই চিরতরে ছিন্ন হয়ে গেছে মা আর তার সন্তানের নাড়ীর টান। দেবশিশুর মত সেই সব যুদ্ধ শিশুরাও এখন কে কোথায় তার কিছুই জানি না আমরা। এর দায়ভার কার?আমাদের এই সমাজের নয় কি?আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের জন্য, গণহত্যা চালানোর জন্য আমরা পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা দাবী করি। আমরা নিজেরাই কি আমাদের সেইসব বীরাঙ্গনা এবং তাদের সদ্যজাত সন্তানদের উপর যে চরম অবিচার করেছি, যে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছি তার জন্য ক্ষমা চেয়েছি কখনো? চাইনি। চাইনি বলেই যে চাওয়া যাবে না এমন কোন কথা নেই। এখন সময় এসেছে সেই সব বীর নারীদের এবং তাদের প্রসূত যুদ্ধ শিশুদের কাছে জাতিগতভাবেই আমাদের করজোরে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

এবার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য, নতুন প্রজন্মের নারী আনবে নারী মুক্তি।আর সেই মুক্তির প্রথম শর্ত জানার অধিকার, জানাবার অধিকার।

৬| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৪০

স্বপ্নতরী (রাজু) বলেছেন: আমার ঘৃনা করার ভাষা জানা নেই। ধিক্কার দেবার জন্য শব্দ কম পড়ে যাচ্ছে।

৭| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৫৭

জাতির নানা বলেছেন:
কিছু বলার ভাষা নেই।

৮| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৪

প্রিন্স অফ ব-দ্বীপ বলেছেন: উফফ! সহ্য করা যায় না যখন পড়ি। এসব দিক নিয়ে না ভেবে এখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কত রাজনীতি। মাথাটাই নুয়ে যায় লজ্জায়।

২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:০২

নীড় হারা পাখি বলেছেন: সেটাই এই অশ্নীল কথা গুলো আজ সব বাঙ্গালীর জানা উচিত

৯| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৪

সপ্রতিভ বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আমার ভবিষ্যত ভাবনা খুব স্পষ্ট। আর কিছু পারি না পারি আমার পরবর্তী প্রজন্মকে আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (ইতিহাস কখনো সত্য/মিথ্যা হয় না, মিথ্যা কখনো ইতিহাস নয় ) জানিয়ে যাব। আমি তো মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, আমি তো সেই নৃশংসতার আঁচ পাই নি, তবু কেন 'পাকিস্তান' নামটা আমার ভেতর আগুন জ্বালিয়ে দেয়, কেন আমার ভেতর ওদের জন্য এত ঘৃণা... কারণ আমার পিতার মুখে আমি ইতিহাস জেনেছি, আমার মায়ের মুখে আমি গল্প শুনেছি, আমি জানাবো আমার পরবর্তী প্রজন্মকে,তারা বয়ে নিয়ে যাবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মে, ইতিহাস আর অত্যাচারীদের প্রতি ঘৃণা দুটোই সঞ্চারিত হবে ওদের মধ্যে... কারা অপরাধী,কারা তাদের দোসর তাদের অন্তঃত চিনতে শিখবে ।

ধন্যবাদ দিয়ে পোস্টদাতাকে খাটো করতে চাই না, ভালো থাকবেন

২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:০১

নীড় হারা পাখি বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য

১০| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:২১

~মাইনাচ~ বলেছেন: সকল রাজাকারের প্রতি রইলো থুথু মাখা ঘৃনা

২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:০০

নীড় হারা পাখি বলেছেন: রাজাকার আল বদর নিপাত যাক। বাংলাদেশ মুক্তি পাক

১১| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩৬

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: just hats off to the writer and 'sohoj prithibi'...
Share korte pari ki?
Janale valo hoy...

২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৫৯

নীড় হারা পাখি বলেছেন: অবশ্যই পারেন। এটি আমার মৌলিক লেখা না। বিভিন্ন লেখার সংগ্রহ মাত্র।

১২| ২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:১০

সীমানা ছাড়িয়ে বলেছেন: এইজন্য আবালচোদা পাকির জাত দেখলেই কল্লা নামাই দিতে মঞ্চায়।

১৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৫৭

এস এম শাখওয়াত আহমেদ বলেছেন: এই লেখাগুলো পড়লে গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠে । তখন ভাবতে থাকি দেশের জন্য তাদের আত্ম-ত্যাগের কথা, আসলে আমরা কি তাদের প্রপ্য সন্মানটুকু দিতে পরেছি?
আজও এদেশে আমার মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন কারী ও বাপ- ভাইদের হত্যাকরীদের বিচার হয় না, সেটা নিয়ে হয় রাজনীতি। হায়রে দেশ।
ক্ষমা নাহি, ক্ষমা নাহি আমাদের, আমরা অভিশপ্ত। যত দিন না ঐ সব শয়তানদের বিচার হবে ততদিন আমাদের উপর এই ধরনের জুলুম, আন্যয়-অবিচার চলতে থাকবে।

২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৩

নীড় হারা পাখি বলেছেন: যারা গনহত্যা
করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক
পশু সেই সব পশুদের।

১৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:০৭

রক্তভীতু ভ্যাম্পায়ার বলেছেন: শেষ কথা: এতো বিভৎস নির্যাতনের কোনো বিচার আজও হয়নি। বিশ্বের কাছে এসকল তথ্য অজানা। বিদেশ কেনো আমাদের নতুন প্রজন্ম যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে কতোটুকু জানে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এবং এই পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তা দানকারী আলবদর আলশামস এখনও বীরের মত ঘুরে বেড়ায়। আর জামাতী রাজাকার বাহিনীর বিচারের নামে সরকার কুতকুত খেলে। এই কি ছিল আমাদের নিয়তি? এদের বিচার না করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার যে চেষ্টা সরকার নিলজ্জ ভাবে করে যাচ্ছে এর প্রতিদান একদিন বাংলার মানুষ সুদে আসলে পরিশোধ করবে!সহমত!

২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৩

নীড় হারা পাখি বলেছেন: ধন্যবাদ

১৫| ২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এই পাপ তাদের ক্ষমা করেনি করবেও না। ধ্বংস হোক এই পাপের সাথৈ সংশ্লিষ্ট সকলে।

আমাদের ইতিহাস নিয়ে খেলার মাঝে পড়ে, বাস্তবতা গুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে!
সবাই কেমন স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা ছাড়া কিছুই করতে রাজি না। আমি কেন করব? আমার কি লাভ? এইরকম!!!!!!!!!!!

এই চক্র থেকে সার্বজনিনতায় মুক্তি কবে ঘটবে? কে জানে... সবাই সবার জন্য হয়ে নিঃস্বার্থ কাজ করে যাবে।

২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:০৯

নীড় হারা পাখি বলেছেন: আপনি কতদিন পর আমার পোষ্টে আসলেন। আপনাকে মনে পড়ছিলো কালকে। কিছু জিনিস জানার ছিলো। ফেবুতে মেসেজ দিয়েছি কিন্তু উওর দেননাই

১৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৪৬

মোহাম্মাদ রাকিবুল হাসান বলেছেন: :( ভাল লাগেনা এসব পড়লে.. নিজেদের অমানুষ মনে হয়... অসহায় মনেহয়.... ৪০ বছরেও এসব ইস্যু নিয়ে নবাই এক হতে পারিনি.... এখনো রাজাকারের বিচার নিয়ে রাজনীতি হয়....

২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৩

নীড় হারা পাখি বলেছেন: আজ এখানে দাড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ
দিয়েছিলো সেঁটে,
মগজের কোষে কোষে যারা
পুতেছিলো আমাদেরই আপনজনের লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত,

১৭| ২৯ শে মার্চ, ২০১২ রাত ২:৪৯

মেংগো পিপোল বলেছেন: কি আর বলবো ভাই তার পরো আমদের কিছু লোক ফকিস্তান জিন্দাবাদ বলে গলা ফাটায়, আবার কিছু আছে বন্দে মাতারামের তালে মাথা ঝাকায়, আমি বুঝিনা এরা কবে সত্যি কারের বাংলাদেশী হবে?!

যা হোক আমি আপনার টার চেয়ে একটু কম অস্লিল একটা লিংকদেই, সময়ে পেলে দেখে আসবেন,
View this link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.