নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কষ্ট করে হলেও সৎ থাকার চেষ্টা করো

শরীফ মহিউদ্দীন

অপেক্ষায় আছি সুন্দর সকালের.........

শরীফ মহিউদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জেনে নিন একজন সেরা মানুষের কাহিনী, জাগ্রত করি আমাদের বিবেক

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪০

রাস্তা ঘাটে বের হলে মাঝে মাঝে ওজন মাপার মেশিন দেখা যায়। কিছু কিছু মেশিন আবার কথাও বলে। ওয়েল খাম, ওয়েল খাম । ভাবখানা এমন ওজন মাপাই যেন এ জাতির একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য। শরীরের ওজন মাপার যন্ত্র আছে কিন্তু লজ্জার ওজন মাপার কোন যন্ত্র নাই। থাকলে পলিটিশিয়ানদের লজ্জাটা মাপা যেত। যাহোক কথা সেটা না।



সুভাস্তু নজরভ্যালীর সামনে একজন বুড়ো মহিলাকে অনেকে দেখবেন ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে বসে থাকে। কোন এক বিচিত্র কারনে এই মহিলাকে খুশি করার জন্য আমি প্রায় ওখানে গেলে ঐ মেশিনটায় দাঁড়িয়ে যায়। অনেকদিন থেকে ওজন মাপার কারনে মহিলার সাথে একটা সখ্যতা গড়ে ওঠে। আমার বাসায় ওজন মাপার যন্ত্র থাকার পরও আমি নিয়ম করে সেখানে যাই ঐ বুড়ো মহিলার সাথে কথা বলার জন্য। তিনি আমার ওজন খুব ভালো ভাবেই মনে রাখে... নাতি আইজ মনে হয় বেশী খাইয়া ফালাইছো ওজন বাইড়া গেছে,কিংবা ওজন কমতাসে ভালা লক্ষন ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন কথা প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার বাড়ি কই? এই বুড়ো বয়সে কেন এত কষ্ট করে শীতের রাতে বসে আছেন। তিনি আমাকে যা শুনালেন তা আপনাদের সাথে শেয়ার করার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।



আজ থেকে বছর পঞ্চাশেক আগে শেরপুর জেলার নলিতাবাড়ী উপজেলার ধনেশপুর গ্রামের জমিদার হাজী কাদের মোল্লার বড় ছেলে ইদ্রিস মোল্লার সাথে জুলেখা বেগমের বিয়ে হয়। গ্রামের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারে এসে কিশোরী জুলেখা বেগমের আনন্দের সীমা নেই। জুলেখা বেগম আর ইদ্রীস মোল্লার ঘরে জন্ম হলো ৫ সন্তানের। ২ মেয়ে ৩ ছেলে।

একসময় কোন এককারনে সেই পরিবারে অভাব নেমে আসলো। ইদ্রিস মোল্লা আর জুলেখা বেগম পাঁচ সন্তান সহ ঢাকায় চলে আসলেন। একসময় অসীম শক্তির সাথে মোকাবেলা করে ইদ্রিস মোল্লা ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তুললেন। ২ ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেছেন চাকরী করে, আরেক ছেলে পড়াশোনা শেষ করবন এমন অবস্থা।

কিন্তু এরই মাঝে ইদ্রিস মোল্লা জগত সংসার ছেড়ে বিদায় নিলেন, আর জুলেখা বেগমের জীবনে নেমে আসলো দুখের সময়। মেয়েদের স্বামীর বাড়িতে তার জায়গা হলোনা, ছেলেরা কেউ তাকে রাখতে চায়না। ছেলেরা একে অন্যের ওপর মাকে চাপিয়ে দিতে চায়। শেষ জুলেখা বেগম বুঝলেন কেউ আসলে তাকে রাখতে চায়না। তাই বের হয়ে আসলেন ঘর থেকে। নুরের চালার একটা ঝুপড়ী ঘরে থাকেন জুলেখা বেগম, প্রতিদিন ভোরে তিনি একটি ওজন মেশিন নিয়ে আসেন আর ফেরেন রাতে। সারা দিনের কামাই ১০০/১৫০ টাকা। এই দিয়েই চলছে তার জীবন, ইদানিং হাপানীর ব্যথা বেড়েছে তাই ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সব সময় তিনি কিনতে পারেননা। দুবেলা খাবার জোগারই যার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এসব কথা যখন বলছেন আমি দেখছি তার চোখ টলটল করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেরা কোথায় আছে জানেন? তিনি বললেন তারা জানেনা আমি কই আছি,কিন্তু আমি তাগো খবর রাখি সবাই ভালা ভালা চাকরি করে তারা সুখে আছে। বড় ছেলের ঘরে নাতি আছে, দেখতে নাকি রাজপুত্র। তিনি দূর থেকে দেখেছেন।



নাটক সিনেমার কাহিনী নিয়ে আমরা কত আলোচনা করি কিন্তু আমাদের চোখের সামনেই ঘটে যায় কত নাটক তার খবর কেউ রাখিনা।



হে মায়ের সন্তানেরা কিভাবে ভুলে গেলে সে ৯ মাসের কষ্ট,তোমাকে পেটে নিয়ে সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটানো তোমার সে কিশোরী মায়ের কষ্ট, তোমাকে প্রসব করার সময় গগনবিদারী সে চীৎকার কি করে ভুলে???



একজন মা তার দশটি সন্তান লালন পালন করতে পারে কিন্তু কেন দশজন সন্তান একজন মাকে লালন করতে পারেনা??

কোরআনে কারীমে আল্লাহ বলেন সাবধান মা যেন তোমার ওপর বিরক্ত হয়ে ওহ শব্দটিও না করতে পারে। অনেক ভালো কাজের কোন মূল্য স্রষ্টার কাছে নাই যদি মা বাবা অখুশী থাকেন।



অনেকে ভাবছেন আমরা এমন নই বাকী সবাই এমন করে আমি ভালো , আসলে ব্যাপারটি তা নয় । আমরা অনেক সময় নানা কারনে বিরক্ত হই মায়ের ওপরে মা তুমি বুঝনা, এই সেই। কিন্তু একদিন যখন আমরা তাদের জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবো তখন হয়তো বুঝবো তাদের কলিজাটা কেটে দিতে কোন আপত্তি ছিলোনা। কিন্তু সেদিন হয়তো খুব দেরী হয়ে যাবে তাদের কাছে ক্ষমা চাইবার মত সময় পাবোনা। তাই চলুন আজই তাদের কাছে নিজেদের অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাই, কে জানে হয়তো আমার সন্তানও আমার সাথে এর চেয়ে খারাপ ব্যবহার করবে, কারন স্রষ্টা বরাবরই ইটের বদলে পাটকেল ফেরত দিয়েছেন।



সবার আগে বরষা নামুক বিবেকের উঠোনে.....এই কামনা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৬

নস্টছেলে বলেছেন: :(( :(( :((

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: চোখ খুলে দিলেন। সত্যিই আমাদের সমাজে এমন কিছু ঘটনা আছে, যা সিনেমাকে হার মানায়। মা’য়ের দুঃখ নিয়ে যা লিখলেন, রীতিমতো হৃদয়বিদারক।

“একজন মা তার দশটি সন্তান লালন পালন করতে পারে কিন্তু কেন দশজন সন্তান একজন মাকে লালন করতে পারেনা?”
-জানি না এমন কেন হয়। আমাদের অনেক অপরাধের জন্মস্থান মনে হয় মা-বাবার প্রতি অবহেলা।

সুন্দর লেখাটির জন্য আপনাকে অভিনন্দন!

এমন একটি লেখা নির্বাচিত হলো না। নির্বাচকদের বিচক্ষণতা দিন দিন অধঃপতনে যাচ্ছে।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৭

শরীফ মহিউদ্দীন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ, মাইনুল ভাই। সামু এখন একটা সিন্ডিকেট ব্লগে। ব্লগে অনেকদিন থাকার কারনে অভিজ্ঞতা বলছে সামুর ব্লগ এখন নির্বাচিত হয় নাম দেখে। লেখা দেখে নয়।

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪১

খেয়া ঘাট বলেছেন: ওফ, ছেলেরা কেমন করে এমন জানোয়ার হয়।
খুব ব্যতিত হলাম পোস্টটি পড়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.