নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কষ্ট করে হলেও সৎ থাকার চেষ্টা করো

শরীফ মহিউদ্দীন

অপেক্ষায় আছি সুন্দর সকালের.........

শরীফ মহিউদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহান স্বাধীনতা দিবস নিয়ে একটি ইতিহাস নির্ভর গল্প

০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪০

রক্তস্নাত বিজয়



৭ইমার্চ ১৯৭১। চাঁদপুর জেলার (১৯৭১-এ তৎকালীন মহকুমা) হাজীগঞ্জ থানার রাজারগাঁও ইউনিয়নের কৃষক বাতেন ভূইয়ার ছেলে হাফেজ মাওলানা সোহরাব ভূইয়া রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র ধরার চেষ্টা করছেন অনেকক্ষন থেকে। কিন্তু সিগনাল কিছুটা দূর্বল। আজ নাকি শেখ সাহেব ভাষন দিবেন। সোহরাবের বড্ড মেজাজ খারাপ এই মানুষটার উপরে। কত সুন্দর দুই মুসলমান ভাই ভাই একসাথে আছি কিন্তু এই লোক শুধু স্বাধীন হয়ে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু মানুষটার ভাষা আর বলার ভঙ্গি সোহরাবকে মুগ্ধ করে। অবশেষে সোহরাব রেডিও টিউন করতে পারলো। রেডিও থেকে ভেসে আসছে আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবেনা,তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো,মনে রাখবা এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। মাওলানা সোহরাবের মনের গহীনে নাড়া দিয়ে উঠলো। কিন্তু পরক্ষনেই সোহরাব ভাবলো এই লোকের মুখে মিষ্টি কথা,আসল উদ্দেশ্য মুসলিম দেশকে ছিন্ন ভিন্ন করা।



ঢাকা থেকে সোহরাব এর বাল্য বন্ধু ইদ্রিস এসেছেন। সোহরাব জিজ্ঞাসা করলো কিরে ইদ্রিস ঢাকার অবস্থা কেমন বুঝতেছিস। ইদ্রিস বললো সোহরাব যা অবস্থা বুঝতাছি শেখ সাব এবার দেশ স্বাধীন কইরাই ছাড়বো। সারা দেশ উত্তাল দেশের মানুষ আজ স্বাধীনতার সূর্য দেখতে শুরু করছে। একথা বলতে বলতে ইদ্রিসের চোখে পানি চলে আসলো। সোহরাব বিরক্ত হলো। কিযে হবে এই পাক জমিনের।সব ভারতের ষড়যন্ত্র। দুই মুসলমানকে এক সাথে দেখলে তাগো কইলজা জ্বলে।



২৫শে মার্চ রাতে মাওলানা সোহরাব ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখলেন। এক কুকুর এসে তার মায়ের মাংস চাবাচ্ছে। সোহরাবের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মাওলানা সোহরাবের মা মারা গেছেন বছর পাচেক আগে। মরা মায়ের মাংস কুকুর খাচ্ছে এ স্বপ্ন দেখে সোহরাবের মন অস্থির হয়ে গেছে।



সোহরাব যখন এ স্বপ্ন দেখছে তখন ঢাকার আকাশে ট্রেসার উড়ছে। আকাশ আলো হয়ে উঠেছে, তৈরী হচ্ছে আলোর নকশা। বাজির শব্দের মতো গুলি। উৎসব,এক অন্য ধরনের উৎসব। হত্যা ও ধ্বংসের উৎসব। ভীত মানুষের কান্না ও চিতকারের শব্দ শোনা যেতে লাগলো। সারা আকাশ আলোকিত। অসংখ্য যায়গায় আগুনের কুন্দলী পাকিয়ে উঠছে কালো ধোয়া। রাস্তা ঘাট শুধু যে জনশুন্য তা নয় প্রথমবারের মত কুকুর শুন্য। কোথায় কি হচ্ছে কেউ জানতে পারছেনা। শেখ মুজিবেরই ই বা কি হলো?

মিলিটারী ঢুকে পড়েছে জগন্নাথ ও ইকবাল হলে। তাদের পরিকল্পনা একটি ছাত্রও যাতে জীবিত বের হতে না পারে। তোমাদের জয় বাংলা অনেক সহ্য করেছি আর না। রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলে মেলিটারী ঢুকছে,আমাদের বাচাও একথা বলার মতো শক্তি মেয়েদের ছিলোনা।

সেনাবাহিনী আগুন লাগিয়ে দেয় ইত্তেফাক অফিসে,দাউদাউ করে জ্বলছে দি পিপলস,গনবাংলা এবং সংবাদ অফিস।

পাকিস্তানী মেলিটারী রাত একটায় যে অপারেশন শুরু করলো তার নাম “অপারেশন সার্চ লাইট”

ব্রিগেডিয়ার আবরারের ৫৭ ব্রিগেড ছিলো ঢাকা অপারেশনের দায়িত্ব। অধিনায়ক মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। তিনি শায়েস্তা করবেন ঢাকা নগরী। মেজর জেনারেল খাদেমের উপর দায়িত্ব সারা দেশ শায়েস্তা করার।

এক প্লাটুন কমান্ডো পাঠানো হলো ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বংগবন্ধু শেখ মুজিবকে ধরে আনতে।

রাত ১টায় ওয়ারলেসে ৫৭ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার মেজর জাফরের উৎফুল্ল কন্ঠে ভেসে আসলো Big Bird in the cage…..Others not in the nests. ………. Over.

সামরিক বাহিনীর জিপে করে তাঁকে নিয়ে আসা হলো ক্যান্টনমেন্টে। মেজর জাফর জেনারেল টিক্কাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি শেখ মুজিবকে দেখতে চান? টিক্কা উত্তর দিলো I don’t want to see his face.

জেনারেল টিক্কা খান ২৫ মার্চ রাত নটায় ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার মেজর জেনারেল ফরমান আলী সেনাদের বলতে লাগলেন ঢাকায় এমন তান্ডব তৈরী করো যাতে দুষ্টপ্রানী বাংলাদেশ এর মাথা ঢাকাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারো। দেখা যাবে ২৭ শে মার্চের মধ্যেই সব ঠান্ডা।

ভয়ংকর রাতের পর ভোর আসে,সেখানে কিছু আশা থাকে,কিছু আনন্দ থাকে। দিনের আলো মানুষকে আর কিছু দিক না দিক ভরসা দেয়। মঙ্গল সংগীতের মতো পাখি ডাকতে শুরু করে। এমনকি ভোরবেলার কাকের কা-কা ধ্বনিকেও শুভ মনে হয়। তারাও আলোর বার্তা পৌছে দিচ্ছে।

পঁচিশে মার্চের ভয়ঙ্কর রাত কেটে গেছে,ভোর হয়েছে,পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। অথচ কোন রকম ভরসা পাওয়া যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে একটা দীর্ঘ রজনী পার করার পর আরেকটি দীর্ঘ রজনী। রাতের পর দিন আসেনি,রাতের পর রাত এসেছে।



২৬মার্চ সারাদিন কারফিউ চললো সারা ঢাকায়,২৭শে মার্চ ও পার হয়। সারা দেশের মানুষ আতঙ্কে দিনপাত করছে। ঢাকার এই অবস্থার কথা মাওলানা সোহরাবের কানেও গেলো। মাওলনা সোহরাব বুঝতে পারলেন রাতের স্বপ্নের অর্থে, তিনি নিজের প্রতি ধ্বিক্কার দিতে লাগলেন। তার মা হলো তার এই দেশ। নরপিশাচের গোষ্টি এই দেশকে নিয়ে মেতে উঠছে কুতসিত খেলায়। তিনি ক্ষমা চাইতে থাকেন রবের দরবারে। আর প্রতিজ্ঞা করেন দেশমাতার জন্য নিজেকে উতসর্গ করার।

২৭শে মার্চ শনিবার রাত আটটায় রেডিওর নব ঘুরাতে ঘুরাতে এই দেশের বেশ কিছু মানুষ অদ্ভুত একটা ঘোষনা শুনতে পান। মেজর জিয়া নামের কেউ একজন নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষনা দিয়ে বলেন, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করছ। তিনি সর্বাত্বক যুদ্ধের ডাক দেন, দেশের মানুষদের ভেতর দিয়ে তীব্র ভোল্টেজের বিদ্যূতের শক প্রবাহিত হয়। তাদের নেতিয়ে পড়া মেরুদন্ড একটি ঘোষনায় খাড়া হয়ে দাঁড়ায়। তাদের চোখ ঝলমল করতে থাকে । একজন অচেনা মানুষের কন্ঠস্বর এতোটা উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারে ভাবাই যায়না।

এই ঘোষনা শুনে মাওলনা সোহরাব আনন্দে চিৎকার করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি আর ভয় নাই।

মাওলনা সোহরাবের চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু বইছে। বন্ধু ইদ্রিসের সাথে পাড়ি জমালেন ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ইন্ডিয়ায়। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাওলানা সোহরাব ঝাপিয়ে পড়ে মাকে বাঁচানোর লড়াইয়ে। ১৬ ই ডিসেম্বর স্বাধীন দেশের পতাকা নিয়ে ফিরলেন সব মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু ফিরলেন না হাফেজ মাওলানা সোহরাব ভূইয়া।বাংলার বিশাল প্রান্তরে কোথাও তার কবর হয়েছে।কেউ জানে না কোথায়।এই দেশের ঠিকানাবিহীন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কবরের মধ্যে তার টাও আছে।তাতে কিছু যায় আসে না।বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানকে ধারণ করেছে। জোছনার রাতে সে তার বীর সন্তানদের কবরে অপূর্ব নকশা তৈরি করে। গভীর বেদনায় বলে,আহরে আহারে!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

আমি আর নীরব থাকবনা বলেছেন: ভাল

২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: Humayun'io style e Sundor likhecen.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.