নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক অপরাজিতা। কোন বাঁধাই আমার চলার পথে বাঁধা হয়ে থাকেনা। সব বাঁধা কে অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে আমার জীবনের মূলমন্ত্র

শারলিন

শারলিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলহামদুলিল্লাহ মেনে নিয়েছি আমি আমার নিয়তিকে।

২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১০

আলহামদুলিল্লাহ মেনে নিয়েছি আমি আমার নিয়তিকে।
প্রথমে যখন শুনলাম বাম চোখে আর দেখতে পাবনা, চমকে উঠেছিলাম, কেঁদেছিলাম, টানা ৭ দিন ধরে পাগলের মত করে কেঁদেছি, কখনও সবার সামনে, কখনও অন্ধকারে বসে। তবে হ্যাঁ এখন আর কান্না করছিনা, আর কান্না করে কি বা হবে যদি নিয়তি থাকে এক চোখওয়ালা হয়ে বেঁচে থাকা, কিন্তু সত্যিকথা বলতে কি আমি আমার মায়ের কান্নাকে থামাতে পারছিনা।
বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করেছিলাম সেই জন্মের পর থেকেই। সুস্থ্য স্বাভাবিকভাবেই এসেছিলাম এই ধরণীতে, কেঁদেছিলাম আমি হেসেছিল আমার মা, আমার চারপাশের মানুষ, আমার আত্মীয়স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই।
কিন্তু সেই হাসি বেশীদিন হাসতে পারেননি আমার মা। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত জন্মের ছয়মাসের মাথায় আক্রান্ত হলাম সেবিরাল পলিও নামে এক মারাত্নক রোগে, পুরোপরি প্যারালাইসিস বলতে যা বোঝায়, তাই হল। যেই বয়সে বাচ্চারা হামাগুড়ি দিয়ে একটু একটু করে বড় হতে থাকে, পরিচিত হতে থাকে নতুন পৃথিবীর সাথে সেই বয়সে আমি পরিচিত হতে থাকলাম নতুন নতুন টেস্ট আর চিকিৎসার সাথে। কখনও ব্লাড টেস্ট, কখনও মেরুদণ্ডের টেস্ট, কখনও বুকের টেস্ট আরও কতকি। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় টেস্টের জন্যে আর আমার মা কাঁদেন দরজার সামনে দাড়িয়ে; আহা বাছা আমার এত কষ্ট কিভাবে সহ্য করছে। মায়ের লড়াইয়ের কাছে নিয়তি এসে কিছুটা থমকে দাঁড়াল, শরীরের ডান পাশ অবশ হয়ে গেলেও সে যাত্রায় বাম পাশ বেছে গেল।
জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল। তাই এবার কর্মের লড়াই শুরু করলেন আমার মা, কিভাবে আমাকে এই পৃথিবীতে অন্য আর পাঁচজন মানুষের মত করে স্বাভাবিক জীবন দিতে পারেন সেই লড়াই শুরু করলেন তিনি। বাম হাতে কলম ধরিয়ে দিলেন আর আমিও মায়ের হাতধরে এই পৃথিবীর লড়াইয়ে যাত্রা শুরু করলাম।
না, তারপর আমি কিংবা আমার মা আর পিছনে তাকাইনি, বরং পৃথিবীর মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়েছে বহহুবার, প্রশংসা করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন সামনে এগিয়ে যাবার। সকলের দোয়া আর ভালবাসা নিয়ে একটি একটি করে জীবনের অনেকগুলো ধাপ পার করেছি, পড়াশুনা শেষ করেছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে। কর্মজীবন, সংসার জীবন সবখানেই আজ আমি একজন সফল মানুষ, আর আমার মা একজন পরিতৃপ্ত মা কেননা তিনি পেরেছেন তার মেয়েকে এই পৃথিবীতে আর পাঁচজন মানুষের মত স্বাভাবিক, সুন্দর ও সার্থক জীবন দিতে। তিনি কয়েকদিন আগেও সবাইকে বলতেন তার যেই মেয়েকে নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তা ছিল সেই মেয়েই এখন সবচেয়ে সফল।
কিন্তু নিয়তি আমার মায়ের সেই ভরসার যায়গায় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত আবার এসে আঘাত করল। গত ২ নভেম্বর হঠাৎ করেই আমার বাম চোখে এক দুরারোগ্য রোগ (একিউট রেটিনাল নেক্রোসিস)ধরা পড়ল, যার ফলাফল হচ্ছে চোখের দৃষ্টি চলে যাওয়া। ফাইনাল্লি গতকাল ডাক্তার বলে দিলেন তেমন কিছু করার নেই, দৃষ্টি আগের চেয়ে আরও কমে গেছে, সামনে আরও কমবে। ওষুধ কন্টিনিউ করতে বলেছেন, সেকেন্ড অপিনিয়ন এর জন্যে চাইলে দেশের বাইরে যেতে পারি, তবে সব যায়গায়ই চিকিৎসা পদ্ধতি একই রকম। এই কয়দিন আমার মা দিনরাত শুধু আল্লাহ্‌রেই ডাকছেন, এখনও ডেকে যাচ্ছেন। কিন্তু গতকালের খবর শোনার পর থেকে উনি আর কিছুই ভাবতে পারছেননা, একেবারে চুপ হয়ে গেছেন, কিছুই বলছেননা।
না গতকালকে ডাক্তারের কাছ থেকে এসে আমি আর কাঁদিনি, মেনে নিয়েছি আমার নিয়তিকে, এইটাই হয়ত মহান আল্লাহর ইচ্ছা, আমার প্রতি তার ভালবাসা, তিনি তো যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন। কিন্তু আমি আমার মায়ের দিকে তাকাতে পারছিনা, আমি জানিনা কি বলে আমি আমার মাকে সামলাব। সবাই আমার মায়ের জন্যে দোয়া করবেন তিনি যেন এই বাস্তবতাটা মেনে নিতে পারেন। আর গালিব আমার লাইফ পার্টনার ওর কথা কি বলব ও আমার হাতটা ধরে আছে, কিন্তু আমি জানি ওর মনের মধ্যে কি যুদ্ধ চলছে।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৫

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: মন খারাপ করা লেখা :(

ঘটনাটা কি সত্যি

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: ভালো বলেছেন।।। সুন্দর যুক্তিগত কথা

৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার জন্য শুভকামনা রলো, সামনে ভালোদিন আসবে।

৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০২

কিরমানী লিটন বলেছেন: মনটা খারাপ হয়ে গেলো আপনার লিখাটি পড়ে। শুভকামনা রইলো- আপনার জন্য।

৫| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৫

রাফা বলেছেন: অন্ধকার যত গভীর হয় ,আলো ঠিক ততটাই সন্নিকটে।হারাবার কিছু নেই পাওয়ার আছে অনেক কিছুই।আপনরা টাইম লাইনের লেখাগুলো পড়ে বুঝতে পারছি ,আপনি সত্যিকার অর্থেই অপরাজিতা।আপনার 'মা" যেমন আপনার শক্তি হয়ে পাশে থেকেছে ও আছে ।ঠিক তেমনি আপনিও আপনার মার শক্তি হন।

আপনার জন্য শুভ কামনা,শারলিন।ভালো লেগেছে আপনার প্রকাশ।

৬| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: স্রষ্টার প্রতি যার এত অবিচল আস্থা, তিনি সকল অমঙ্গলকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন, যেমনটি এতদিন পেরেছেন, স্রষ্টারই সহায়তায়।
তাই চাঁদগাজীর মত আমিও বলতে চাই, আস্থা রাখুন, সম্ভব হলে চিকিৎসা চালিয়ে যান, সামনে ভালোদিন আসবে!
শুনেছি, মানুষের এক চোখ নষ্ট হয়ে গেলে অপর চোখটি প্রাকৃ্তিক নিয়মেই শক্তিশালী হয়। ভাল এক চোখ নিয়ে অনেককে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেখেছি। আপনি নিরাশ হবেন না। প্রার্থনা করছি, আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন আপনার সহায় হউন এবং আপনার সংগ্রামী মায়ের দুঃখ দূর করুন। আপনার জীবনসঙ্গীসহ আপনাদের তিনজনের প্রতিই রইলো আমার নিরন্তর শুভকামনা!

৭| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৬

নতুন নকিব বলেছেন:



অন্তহীন কল্যানের দুঅা অাপনার জন্য। অাপনি হতাশ হননি, মনোবল হারাননি এটাই বড় কথা। অাল্লাহ তাঅা'লার রহমত অাপনার সঙ্গী হোক।

৮| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৯

করুণাধারা বলেছেন: সব সময় আল্লাহ যেন আপনার সহায় হোন, আপনার মাকে তেমনই সবর যেন আল্লাহ দেন, যেমন সবর আপনাকে দিয়েছেন।

আপনার পোস্ট পড়ে কষ্ট লাগলো ঠিকই, কিন্তু আল্লাহর উপর আপনারা ভরসা এবং মনোবল দেখে ভালো লেগেছে।

৯| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

বাকপ্রবাস বলেছেন: আল্লাহ তুমি সহায় হও। সদয় হও। হয়তো তুমি যাকে পছন্দ করো তাকে বিভিন্ন পরীক্ষার উপর রাখো।

১০| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

সুব্রত দত্ত বলেছেন: জীবনের এই নিয়তিগুলো মেনে নেয়া সত্যি কঠিন। তবু আপনি সেই কবে থেকেই তো যুদ্ধ করে এতদূর এসেছেন এবং কাঙ্ক্ষিত জয়ও পেয়েছেন। তাই বলব, জানি কষ্ট হচ্ছে তবু সামলে নিন। আল্লাহ আপনাকে অন্যকোনো ভাবে অবশ্যই এগিয়ে যাবেন আরো। আর মা-কে বোঝানো, সেতো যুদ্ধের চেয়ে ভয়ঙ্কর। আল্লাহই একমাত্র তার যুদ্ধে সহায়তা করবেন। দোয়া রইল আপনাদের দুজনের জন্য।

১১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আহারে----
দুঃখজনক।
মানুষের জীবনে খারাপ সময় আসে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সেটা সাময়িক।

১২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬

আরোগ্য বলেছেন: ক্ষণস্থায়ী জীবনের কষ্ট ক্ষনিকের আর চিরস্থায়ী জীবনের সুখ অমর। হতাশ হবেন না। এই দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার।
আল্লাহ ভরসা। আপনার সার্বিক আরোগ্য কামনা করছি।

১৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১৮

খাঁজা বাবা বলেছেন: আল্লাহ আপনার ধৈর্য বাড়িয়ে দিক।
নিশ্চই তিনি আপনার সহায় হবেন।

১৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১২

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আপনি অপরাজিতা হয়েই থাকুন। কোন বাঁধাই যেন আপনার চলার পথে বাঁধা হয়ে না থাকে ।

১৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৫৭

শেরজা তপন বলেছেন: কেন যেন মনে হচ্ছে আপনার নামটা চেনা অথচ আপনার লেখা কখনো পড়িনি। আমার ব্লগ বাড়িতে আপনার নাম দেখে আসলাম।

ঘটনাটা যদি আপনার হয়ে থাকে তবে এখন বাম চোখের অবস্থা কেমন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.