| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বহুকাল আগে এক রাজ্যে বাড়ুন রাজা নামে একজন রাজা ছিলেন।ধন, সম্পদ, অর্থ-প্রতিপত্তি সব থাকার পরেও তার মনে শান্তি ছিলনা।আর অশান্তির প্রধান কারণ ছিল তার নাম।বাড়ুন এর একটি প্রতিশব্দ হচ্ছে ঝাড়ু, অনেকে এটাকে হাছুনও বলে।যারা গ্রাম অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন তারা অনেকেই হয়ত এই নামের সাথে পরিচিত।যাই হোক, রাজা প্রায়শই তার নাম নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতেন।তাই রাজ্যের প্রজা থেকে প্রশাসন অনেকেই এই দুর্বলতার সুযোগ নিতো।রাজা যখনই বাইরে বের হতেন দুষ্টু প্রজারা আড়ালে আবডালে থেকে বাড়ুন রাজা, বাড়ুন রাজা বলে টিম্পনি কেটে তার মনটাকে আরো বিষিয়ে তুলতো।রাজা একদিন একা একা বসে বসে ভাবলেন আমি এই রাজ্যের রাজা অথচ আমার নাম কিনা বাড়ুন সুতরাং এই রাজ্যেই আর থাকবোনা।অভিমানে তাই তিনি রাজ্যে ছেড়ে চলে গেলেন।চলতে চলতে পথিমধ্যে ক্লান্ত রাজা বসলেন একটি গাছের নিকট।পাশেই বসে কাজ করছিল এক বৃদ্ধ লোক।কিছুক্ষন পর তিনি চিৎকার করে ডাকলেন বাঘরাজ, বাঘরাজ...।আর সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রায় আধ মড়া, ছাল লোমহীন কুকুড় এসে লেজ নাড়তে লাগলো। এ অবস্থা দেখে রাজা নিজের মনে হেসে দিয়ে বললেন ছাল নাই কুত্তার অথচ বাঘরাজ তার নাম। রাজা আবার চলতে শুরু করলেন। এবার তিনি একটা মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলেন এক মাঝ বয়সী মহিলা ধান শুকাচ্ছে।মহিলাটি চিৎকার করে লক্ষী, স্বরশতী বলে ডাকতেই দুইটি মেয়ে দৌড়ে এসে তাকে কাজে সহযোগিতা করতে লাগলো।রাজা ভাবলেন আহারে দেবীর নামে যাদের নাম তারা নুড়ে ধান।রাজা আবার হাটা শুরু করলেন।অনেক দূর যাওয়ার পর তার হঠাৎ মনে হলো আমি কোথায় যাচ্ছি আর কেনইবা যাচ্ছি।আমার নামটা একটু বিদঘুটে তাই...এটাতো কোন কারন হতে পারে না।কি মনে তিনি তড়িৎ সিদ্ধান্ত বদলে রাজ্যে ফিরে আসলেন।সমস্ত রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে প্রজাদের রাজ দরবারে ডাকা হলো।উপস্থিত সবার সামনে বুক ফুলিয়ে রাজা বললেনঃ
“ছাল নাই কুত্তার বাঘরাজ তার নাম
লক্ষী, স্বরশতী তারাই নুড়ে ধান
বাপ মায় রাখছে আমার বাড়ুন রাজা নাম
আর আমি করি রাজ্যেতার কাম”
সুতরাং যার যতো ইচ্ছা আমাকে বাড়ুন রাজা বলে ডাকো। ঐ দিনের পর প্রজাদের কেউই তাকে আর টিম্পনি কাটেনি আর রাজাও মনের অশান্তি ভুলে সুখে শান্তিতে রাজ্যে পরিচালনা করতে লাগলেন।
এতো পুরনো এটি ঘটনা আওড়ানোর পিছনে একটু কারণ আছে ।গত কয়েক দিন আগে এক লোকের সাথে সাক্ষাতের সময় তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই আপনার নাম কি?।উত্তরে লোকটি বললেন আমার নাম সামির ফায়াজ শামস্। নামের মধ্য কেমন একটু খানদানি খানদানি ভাব আছে। আলাপনটা কিছুক্ষন দীর্ঘ হওয়ার পর এক পর্যায়ে জানতে চাইলাম শামস্ নামের অর্থ কি বা এটা উনার পারিবারিক পদবি কি না। উত্তরে ভদ্রলোক বললেন “না, এটা আমার কোন পারিবারিক পদবী না।আমার বাবার নাম শামসুদ্দীন। সেই শামসুদ্দীন নামকে সংক্ষিপ্ত করে রাখা হয়েছে শামস্। কারণ শামসুদ্দীন পুরো নামটা কেমন সেকেলে গোছের। শামস্ নামটা যেমন আধুনিক তেমন খানদানি। ঐ চিন্তা থেকেই রাখা”। উত্তর শুনে আমি হতভম্ব। কি বলবো ভাষা খুঁজে না পেয়ে বললাম খুব সুন্দর নাম আপনার।
আমাদের মানসিকতা আজকাল এতটাই আধুনিক হয়েছে যে বাবার পুরোনো সেকেলে নামটা বলতেও আমরা হীনমন্যতায় ভুগি।সাজগোজ, পোশাক আশাক, বাইরের পরিপাটি আজকাল মানুষ মূল্যায়নের চাবিকাঠি। জাতি ভীষণ রকম আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছে। এ অবস্থার উত্তোরন দরকার। এখন আর বাচ্চাদের নীতিকথা, নৈতিকতা ঐ ভাবে শিক্ষা দেয়া হয়না।তাই তাদের কাছ থেকে আপনি সেই রকম ভালো কিছুও আশা করতে পারেন না।আমদের উচিত জাপানিদের মতো বাচ্চাদের স্কুলে দেয়ার আগে অন্তত ৫-৭ বছর আচার, ব্যবহা্র, নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া। ভুলে গেলে চলবে না আপনি যেমন বীজ বপন করবেন ফলটাও তেমনই হবে। আর কি আসে যায় নামে। যার কাজ যত সুন্দর সে ও ততো সুন্দর। সুতরাং নাম দিয়ে নয় মানুষের গুন দিয়ে তার বিচার করা উচিত।
মড়ালঃ নামে নয় কাজেই পরিচয়......
©somewhere in net ltd.