![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Some of you say, "Joy is greater than sorrow," and others say, "Nay, sorrow is the greater." But I say unto you, they are inseparable. Together they come, and when one sits alone with you at your board, remember that the other is asleep upon your bed. -- Kahlil Gibran
আগের পর্বের লিংক
১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪
আমরা প্রায় সকাল সাতটার দিকে টেকনাফ চলে এলাম। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ আসার পথটা ছিল অদ্ভুত রকমের সুন্দর। চিকন রাস্তা, বিপরীত দিক থেকে মাত্র দুটি গাড়িই যাওয়া-আসা করতে পারে। আবার মাঝে মাঝে ক্রস করার সময় যেকোন একটিকে রাস্তা ছেড়ে একটু বাইরে চলে যেতে হয় যাতে অন্যটি অনায়াসে ক্রস করতে পারে। সুর্য উঠার পর পরই মানুষজন যার যার কাজে বেরিয়ে পড়েছে। এত ভোরবেলায় মানুষ বেরিয়ে পড়েছে তারপরেও কোথাও কোন ব্যস্ততা নেই, তাড়াহুড়ো-দৌড়াদৌড়ি নেই।
আমি মাঝে মাঝে অনেক ভোরে গাড়ী নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ডিসির দিকে বেরিয়ে পড়ি, সেই ভোরেও দেখি গাড়ির লম্বা লাইন, ট্রাফিক, সবার মাঝেই অন্যকে ফেলে আগে চলে যাওয়ার একটা প্রবণতা, ড্রাইভিং সিটে বসেই কেউ কেউ নাস্তা করে, কেউ কফিতে চুমুক দেয়, কেউবা রেডিওতে সংবাদ শুনে - দিনের শুরুই হয় ব্যস্ততা আর মাল্টি-টাস্কিং দিয়ে। কিন্তু এখানে পুরো পরিবেশ জুড়ে একটা স্থিরতা আছে। ছোট ছোট বাচ্চারা মসজিদের দিকে যাচ্ছে আরবি শিক্ষার জন্য। আবার কোন কোন মসজিদে প্রায় ৩০/৪০ জন বাচ্চা সমস্বরে কায়েদা, আম-পারা ইত্যাদি পড়ছে। তাদের পড়ার আওয়াজ আমি বাসে বসে শুনতে পাচ্ছি। কাউকে কাউকে দেখলাম ক্ষেতে কোন একটা কাজ করছে। দোকানিরা তাদের ছাপড়া দোকানগুলি খুলছে, চা বা অন্যকিছুর জন্য কাস্টমারের বিরাট লম্বা লাইন নেই। অনেকদিন পর এরকম কিছু দৃশ্য চমৎকার একটা ভালো লাগা তৈরি করে দিল।
বাস থেকে নামার সাথে সাথেই ছোট ছোট বাচ্চারা চারপাশে ঘিরে ধরলো। এদের বয়স দশ পার হয়নি। সামনেই জাহাজের টিকিট কেনা-বেচার একটি স্থান। চারিদিকে খোলা ও উপরে টিনের ছাদ দেওয়া বড় একটি জায়গা। বসার জন্য অনেকগুলি লম্বা বেঞ্চ ও টেবিল লাগানো আছে। পাশেই আছে বিভিন্ন জাহাজের (তারা এটাকে জাহাজই বলে) টিকিট কাউন্টার। বুঝতে পারলাম, ঢাকা থেকে টিকিট না কেটে এখানে এসেও টিকিট করা যায়। জাহাজে উঠার আগে এখানে এসে সবাই অপেক্ষা করে, প্রাতঃকৃত্য সেরে নেয়। বাথরুমে যাওয়ার জন্য যথারীতি লম্বা লাইন ও অপরিষ্কার। আমার এতে সমস্যা হয়নি কারণ আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, এটা এমনই হবে। বাচ্চারা সবার কাছেই ঘোরাফেরা করছে। এখান থেকে জাহাজে লাগেজ পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে কিছু পয়সা পাবে। কিন্তু কাউকেই দেখলাম না, তাদের কাছে লাগেজ দিতে। যাত্রীরাও তাদেরকে পয়সা দিতে নারাজ। আমাদের জাহাজ ছাড়বে সকাল সাড়ে ন’টায়। ধীরে ধীরে সময় ঘনিয়ে এল। একটু রাস্তা পেরিয়ে কাঠের সাঁকো দিয়ে আমরা জাহাজে গিয়ে উঠলাম।
এখানে আসার আগে জানতাম না যে, কেয়ারী সিন্দবাদ ছাড়াও অন্যান্য কোম্পানির জাহাজও আছে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জন্য। কেয়ারীর পাশাপাশি অন্য জাহাজও দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে কোন সিট নাম্বার নেই। যে যার সুবিধামতো বসলেও জাহাজ ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে বেশিরভাগ যাত্রীই বাইরে চলে এল। উপরে খোলা আকাশ আর নীচে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশি রেখে কে ভেতরে বসে থাকবে? কিছুক্ষণ পরই আমাদের পিছু নিল একদল সামুদ্রিক গাংচিল! যাত্রীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। সবাই এদেরকে বিস্কিট, চিপস খাওয়াচ্ছে। মনে হচ্ছে, সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সারাটা পথ এরা আমাদেরক সংগ দিবে, আনন্দ দিবে।
মাঝে মাঝে মনে হল, বিবর্তনের ধারায় আমাদের দুটি পাখা তৈরি হল না কেন? এই ইচ্ছাটি মনে হয় সবার মধ্যেই আছে। কাজেই অদূর ভবিষ্যত মানুষের দুটি করে পাখা থাকার সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না! জাহাজে খাবার-দাবারও বিক্রি হয়। একটি ছেলে কাছে এসে কফির কথা বলতেই কফি খাওয়ার ইচ্ছে হল। মনে পড়ে গেল, আমি যখন ম্যাসেচুসেটস বে-তে গিয়েছিলাম তিমি দেখার জন্য, তখন দুটি বাডউইজার বিয়ার নিয়েছিলাম। তখন অন্তরা সাথে ছিল না। সেই দ্রুত গতির জাহাজের সাথে বিয়ার যেমন উপভোগ্য, ঠিক তেমনই এই ধীরগতির জাহাজের সাথে কফিই হবে চমৎকার! চড়া দামে ছোট প্লাস্টিকের গ্লাসের তিন ভাগের এক ভাগ পূর্ণ দুটি কফি নিয়ে এল অন্তরা, সাথে আছে চিপস।
চিপসের প্রায় পুরোটাই গেল গাংচিলগুলোর পেটে। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। অন্তরা একটি একটি চিপস বাইরে শূন্যে ছুঁড়ে মারছে আর গাংচিলগুলো অদ্ভুত দক্ষতায় সেগুলো পানিতে পরার আগেই ছোঁ মেরে মুখে পুরে নিচ্ছে। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী না করলে আফসোস থেকে যাবে। টেকনাফ ছেড়ে আমাদের জাহাজ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মাছ ধরার নৌকা দেখতে পাচ্ছি। যাওয়ার পথে একপর্যায়ে এক পাশে দেখেছিলাম পাহারের সারি। ঠিক পৌঁছানোর কিছু আগে অন্যান্য যাত্রীরা জাহাজের এক পার্শে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলেছিল, ওটা মায়ানমার। আমদের দেশে ট্যুরিজম ব্যাপারটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। নাহলে সারাটা পথ জাহাজ কতৃপক্ষের কেউ একজন সেন্ট মার্টিনের ইতিহাস শোনাতে পারতো, যাওয়ার পথে যা যা দেখা যাচ্ছে, তার একটা বর্ণনা দিতে পারতো।
প্রায় তিন/সাড়ে তিন ঘণ্টা কীভাবে পার হয়ে গেল টের পেলাম না। কেয়ারী সিন্দবাদের জাহাজ আমাদের সেন্ট মার্টিন পৌঁছে দিল। বাক্স-পেটরা সহ জাহাজ থেকে বের হয়ে দ্বীপে নেমে এলাম। কোলাহলপূর্ণ বাজার। লাইন ধরে অনেকটা রিক্সার মতো করে প্রচুর ভ্যান দাঁড়ানো আছে। আগে থেকে আমাদের কোন হোটেল ঠিক করা ছিল না। তবে আমার কাছে তথ্য ছিল যে, সেন্ট মার্টিনে দুই ধরনের হোটেল আছে - এক, বাজারের মধ্যে বা বাজার এলাকার কাছাকাছি কিছু হোটেল, যেখান থেকে বাজারে সহজে যাতায়াত করা যায়; দুই, আরেক ধরনের হোটেল বীচের কাছাকাছি যাতে সহজেই বীচে যাওয়া যায়। আমার উদ্দেশ্য ছিল বীচের কাছাকাছি হোটেলে থাকা, তাই ব্লু মেরিনের কথা অনেক শুনলেও সেটা তালিকা থেকে আগেই বাদ দিয়েছিলাম। বরং ঠিক করেছিলাম যে, ঘুরে ঘুরে দেখে হোটেল নির্বাচন করবো। পর্যটনের একটি হোটেল আছে সেখানে। প্রথমে সেখানে যাওয়া স্থির করলাম। এবার ভ্যান ঠিক করার পালা। যে ভাড়ায় ভ্যান ঠিক করেছিলাম, আর পরে আবার সন্ধ্যার দিকে হোটেল থেকে যে ভাড়ায় একই জায়গায় খাওয়ার জন্য এসেছিলাম - দুইয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বললে কম বলা হবে।
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
বাহ!
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০০
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আপনার ভ্রমন কাহিনী ভালো লাগল। আমিও গত এপ্রিলে ১৫ তে গিয়েছিলাম কেয়ারি সিনবাদে করেই।অনেক ভালো লাগছিল।
৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০০
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: সাবলিল বর্ননায় সুন্দর ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। পড়তে ভাল লাগছিল। তবে ভাবছিলাম আসলেই আমাদের দেশের ট্যুরিজমটা কত্ত পিছিয়ে আছে।
৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বাকি টুকুর অপেক্ষায় রইলাম।
৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৫
ইমরান আশফাক বলেছেন: আমি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সস্ত্রীক সেন্ট মার্টিনস ঘুরে এসেছি। এই ব্লগেই খোজ খবর নিয়ে বাজারের কাছেই হোটেল ব্লু মেরিনে উঠেছিলাম। ওখান থেকে পাথরমুক্ত (কোরাল পাথর) বীচে যেতে লাগতো ৩ থেকে ৪ মিনিট। তাছাড়া খাওয়া দাওয়ার জন্যে বাজারে আসতে হত। বাজারের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে থরে থরে সাজানো টাটকা মাছ মসলা মাখিয়ে দিয়ে সাজিয়ে রাখা থাকতো, আমরা পছন্দ মত মাছগুলি দামদর ঠিক করে ভেজে দিতে বলতাম আর ওখানে বসেই সেইগুলি মজা করে খেতাম। সন্ধার পর খেতে যেতাম মাছের বারবিকিউ। আপনি কোন মাছ পছন্দ করে ওজনপূর্বক দরদাম করে ঘন্টা খানেকের জন্য ঘুরে এসে দেখবেন আপনার জন্য বারবিকিউ রেডি। একটা কথা সেন্ট মার্টিনসে রান্নার কোয়ালিটি খুবই ভালো এবং টাটকা। ওখানে টাটকা লবস্টার আর সামুদ্রিক কাকড়াও খেয়েছি। আর ওখানকার ডাবের কথা কি আর বলবো। তবে ডিসেম্বরের পরে গেলে স্থানীয় ডাব আর পাবেন না, আপনাকে মূল ভূখন্ড থেকে আনা ডাব খেতে হবে। স্থানীয় লোকজন খুবই অমায়িক আর বিশ্বস্ত।
৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯
রানা আমান বলেছেন: সেন্ট মার্টিনস এ আরেকটা খুব সুন্দর রিসোর্ট আছে , সীমানা পেরিয়ে । আমি যতবার গিয়েছি ওখানেই ওঠেছি । আপনার লেখাটা পড়ে আবারো যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সময় যে নেই ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার ভ্রমন কাহিনী পড়তে খুব ভালো লাগছিলো! হঠাৎ মনে হলো শেষ হয়ে গেল। বাকি পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।