নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

শেহজাদ আমান

একজন সাংবাদিক ও সৃষ্টিশীল লেখক

শেহজাদ আমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবতার হাহাকার বাস্তুচ্যুত ও আশ্রয়হীন মানুষ

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৯



কল্পনা করুন, পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব শান্তিতে বসবাস করছেন আপনার চিরচেনা নীড়ে। হঠাত ‘প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে’ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল সবকিছু। বাসস্থানের ক্ষয়ক্ষতি, রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের হত্যা করা বা ইজ্জত লুটে নেওয়া হয়েছে, আপনারই চোখের সামনে; শুধু তাই নয়, থাকতে পারলেন না সেই জায়গাটিতে, যে জায়গায় আপনার নাড়ি পোতা। পাড়ি জমাতে হলো দূরদেশে, সহায়-সম্বলহীন হয়ে, অচেনা-অজানা পরিবেশে। কেমন লাগবে আপনার?
এই ভয়াবহ পরিণতিই বহন করতে হয় প্রতিবছর দুনিয়াব্যাপী প্রায় সাত কোটি (৬৮.৫ মিলিয়ন) লোককে। হতে হয় বাস্তুচূত, দেশান্তরী। শরণার্থী নামে পরিচিত এই জনগোষ্ঠীর মত মর্মদুস্ত মানবিক বিপর্যয়ের শিকার খুব কম মানুষই হচ্ছে। যুদ্ধ, শত্রুশক্তির আগ্রাসন বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো কারণে এই বিপুল সংখ্যক লোক প্রতিবছর হচ্ছে ভিটেমাটি ছাড়া, দেশ ছাড়া। বেঁচে থাকার তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছে অন্য দেশ বা ভূখণ্ডে, যেখানে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত তাদের সম্মুখীন।
কি তারা খাবে, কোথায় তারা থাকবে, জীবিকার ব্যবস্থাই বা কি হবে, এর সবই অনিশ্চিত। নেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা; অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সবকিছুই। তবে, নিশ্চিতভাবেই তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে তাদের ভয়াবহ অতীত। তাদের নিজের দেশেই তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে সহায়-সম্বল। শুধু সম্পদের উপরই আক্রমণ থেমে থাকেনি, তাদের চোখের সামনেই হয়তো হত্যা করা হয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মা, অবুঝ সন্তানকে; ধর্ষণ করা হয়েছে বোন বা স্ত্রীকে।
ফিরে দেখুন, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর উপর সংঘটিত হওয়া নির্মম গণহত্যা আর নির্যাতনের ব্যাপারগুলোকে…। এক পলায়নরত মা সাথে করে আনতে পেরেছে কেবল দুই সন্তানকে; পেছনে ফেলে আসতে হয়েছে বৃদ্ধ মাকে। ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছে, শুধু ১০০ মেয়েকে নাকি ধরে নিয়ে যাওয়ার পথেই ধর্ষণ করা হয়েছে। নিজ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে চলে এসেছিল ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এখন কক্সবাজারের ৬টি শরণার্থী ক্যাম্পে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বেশ কষ্টে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ছায়ায় বেঁচে আছে। বিদেশি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, রাখাইনে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নারী পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন শরণার্থী শিবিরেই।
এর আগে আরেক দফা ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। নিজ জীবন বাঁচাতে একা বা পরিবার-পরিজন নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে পৌঁছতে গিয়ে সলিল সমাধী হয়েছে শতশত রোহিঙ্গার। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে বা অজানা ভূখণ্ডে আজনবী হয়ে আধমরা হয়েছে বাকিরা।
শুধু রোহিঙ্গারাই যে বাস্তুভূত, ভূমিচ্যূত হচ্ছে, তা নয়। যুদ্ধের ডামাডোল আর ধ্বংসলীলা থেকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে –একই বছর -২০১৫-১৬তে লাখো লাখো মানুষ নিজ দেশ সিরিয়া ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছিল অন্যদেশে। পাহাড়, বনজঙ্গল, কূলহীন সমুদ্র পেরিয়ে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিজের জীবনটা বাঁচানো। আর তা করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছে শত শত সিরিয়ান, যাদের মধ্যে ছিল নারী, ছিল বৃদ্ধ, ছিল অবুঝ কোলের সন্তান। ভূমধ্যসাগরের তীরে পড়ে থাকা ৩ বছরের শিশু আয়লান কুর্দির মৃতদেহ নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে। আয়লানের ঘটনাটা একেবারে যুদ্ধের ভয়াবহতার বীভতস রুপ হিসেবে আমাদের সবার সামনে ধরা দিয়েছে; কিন্তু এধরনের মর্মশর্শী ঘটনা আছে ভূরি ভূরি। স্বরণ করা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়কার ভয়াবহ শরণার্থী সংকটের কথা!
নিজ দেশে আশ্রয় না পাবার মতো দুর্ভাগ্য আর নেই। আবার অনেকক্ষেত্রে আশ্রয় থাকলেও নিজ দেশে অনেক দুর্ভাগা মানুষ জীবিকার সংস্থান করতে পারেন না। জীবিকার মাধ্যম খোঁজ করতে হয় দূর পরবাসে; এই সুযোগটা নেয় কিছু অসাধু চক্র ও ঠগবাজ আদম ব্যবসায়ী। বিদেশে লোভনীয় কাজ দেওয়ার নাম করে তারা হাতিয়ে নেয় বিপুল অঙ্কের টাকা। অনেকে জমি-জিরেত বিক্রি করে শেষ সম্বলটুকু ফটকাবাজ আদম ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেন পরদেশে তথাকথিত ভালো কাজের ধান্ধায়। কিন্তু, অনেকক্ষেত্রেই জীবিকাসন্ধানীরা হচ্ছেন প্রতারিত। তারা বিদেশে যেতে পারছেন না; ঠগবাজ অসাধু চক্র তাদের অনেককে গন্তব্যে ঠিকমতো না পৌঁছিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন অজানা-অচেনা বিদেশ বিভূঁইয়ে; ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে বা স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে তারা হচ্ছেন নির্গৃহিত। আর যারা পৌঁছতে পারছে সঠিক গন্তব্য, তারা পাচ্ছে না প্রতিশ্রুত কাজ। অমানবিক শর্তসম্বলিত বা অনেক কম সুযোগ-সুবিধার কাজ তাদেরকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সেটাই তারা করছে; হচ্ছে নির্যাতিত আর নিগৃহিত। ভাবছে, দেশ ছেড়ে না আসাই ভালো ছিল। তারা ফিরতে চায় আবার নিজভূমে। কিন্তু সেটাও পারে না; ধীরে ধীরে তারা হারিয়ে ফেলে জীবনীশক্তি, হয়ে যায় নিঃশেষ। এই হিউম্যান ট্রাফিকিং বা মানব পাচারের ব্যাপারটার শিকার হচ্ছে প্রতিবছর ২ কোটি ১০ লাখের মতো লোক। যাদের ৬৮% (১ কোটি ৪২ লক্ষ) লোক জীবিকার সন্ধানে হচ্ছে প্রতারিত, ২২% (৪৫ লক্ষ) নারী ও শিশুকে যৌনসামগ্রী হিসেবে পাচার করা হচ্ছে বিদেশে। সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজের জন্য গিয়ে বাংলাদেশি নারীদের নির্যাতন ও ধর্ষনের শিকার হওয়া এর জ্বলজ্ব্যান্ত উদাহরণ।
ঠিকানাবিহীন, বাস্তুচ্যূত লোকদের হাহাকারে ভারী হয়ে ওঠছে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস। আকশে উড়ে বেড়ানো পাখিরও বৃক্ষ-বনায়নে থাকে ছোট্ট একটা হলেও নীড়। যেখানে সে নির্ভয়ে করতে পারে বসবাস। কিন্তু, কোনো মানুষের যদি সেটা না থাকে, আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয় আজনবী ভূখণ্ডে, যাপন করতে হয় অনিশ্চিত, ভয়াল জীবন, তাহলে তা মানবতার চরম অপমান, মানবাধিকারের চরম লংঘন। স্বরণ করা যেতে পারে ইউএন হাই কমিশনার ফর রিফিউজির কথাটা, “কেউ নিজের ইচ্ছায় শরণার্থী হয় না। কিন্তু আমরা ইচ্ছে করতে পারি কিভাবে তাদের সাহায্য করতে পারি।”
তার পাশাপাশি দরকার মানুষ যাতে বাস্তুচ্যূত, আশ্রয়হীন মানুষে পরিণত না হয়, সেইজন্য স্থানীয়, দেশিয়, আন্তর্জাতিক এবং ব্যষ্টিক, সামষ্টিক – সব ধরনের উদ্যোগ। মনে রাখতে হবে, যুদ্ধের প্রথম শিকার হচ্ছে মানবতা। যুদ্ধ বন্ধ করা হয়তো সম্ভব নয়; তবে, যুদ্ধের কারণে সাধারণ, বেসামরিক মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ বা হুমকির সম্মুখীন না হয় সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। জীবিকার প্রয়োজনে হয়তো মানুষকে দেশের বাইরে পাড়ি জমাতে হতে পারে। তবে, সেটা করতে গিয়ে যাতে কেউ বিপদাপন্ন না হয়ে যায়, সেজন্য দরকার দেশিয় ও আন্তর্জাতিক আইনের কঠোর প্রয়োগ।
পৃথিবী হোক সব মানুষের শান্তির নিবাস। জয় হোক মানবতার।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৪

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: এই যে কিছু মানবতা বাদিসংস্থা গুলো আছে এরা কোটি কোটি টাকা ডোনেশন নেয়। আর এসব নিজেরা ভোগ করে।

তারা আন্দোলনের নামে ছোট ছোট দেশের পিছনে কুত্তার মতো লেগে থাকে।। আর বড় দেশে কিচ্ছু করতে পারেনা। এই হল মানবতা

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০

শেহজাদ আমান বলেছেন: সবাই তো আর টাকা মেরে খায় না। ভালো কাজ করছে অনেক মানবতাবাদী সংগঠনই।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৯

আখেনাটেন বলেছেন: সেদিন ঢাকা অান্তর্জাতিক ফোক ফেস্টের শেষ দিনে কিছু ভদ্র পোশাকের ইয়াং ছেলে ফান করে অন্য জনকে ডাকছে 'রোহিঙ্গা' বলে। মানে 'রোহিঙ্গা' প্লাইটকে এরা ভিন্ন চোখে দেখে এটিকে একটি গালি হিসেবে প্রচলন ঘটাচ্ছে। কী নির্মম!

দেশের শেষ প্রান্তে বাড়ি হওয়ায় পরিবারের বড়দের মুখে শুনেছি শরণার্থীদের ঢলের কথা। অাশ্রয়ের কথা। দুঃখ-দুর্দশার কথা। গোটা বিশ্বে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে যাওয়া এত বিপুল সংখ্যাক জনগোষ্ঠীর জীবনমান নিয়ে কারো কোনো বিকার নেই। সবাই এদের নিয়ে দেশে দেশে রাজনীতি খোঁজে। শান্তির নাম করে অশান্তির পতাকা উড়ানোই যেন বিশ্ব মানবতার ধর্ম হয়ে গেছে আজকাল।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

শেহজাদ আমান বলেছেন: 'রোহিঙ্গা' শব্দটা যে গালি হয়ে গেছে, সেটা বেদনাদায়ক। অন্যদেশের লোকজন যদি আমাদের বাঙ্গালি বা বাংলাদেশি বা বাঙ্গাল পরিচয়কে গালি হিসেবে ব্যবহার করে। তাহলে, আমাদের কতটা খারাপ লাগবে - সেটা সবার চিন্তা করে দেখা উচিত।

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: যে জীবন যাপন করতে চাইছিলেন সেইটা কি পারতেছেন?

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৪

শেহজাদ আমান বলেছেন: কোন জীবন আমি আবার যাপন করতে চাইলাম?

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪২

হাবিব বলেছেন: হায়রে মানবতা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.