![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
A competent and confident freelance Journalist, writer, author of 37 popular science (non-fiction)books and novel for kids working as a corporate digital documentary maker on educational affairs. Familiar with information approaches, tools, methods, logics for planning, executing and monitoring printing and information strategies. Working for the public and knowledge of social, political and development issues at home and abroad. Strong analytical skill with some research background. Has an Intimate knowledge of modern methods of publicity, public relation, copy writing, publication, and art criticism. Quick learner, well conversant and smart. Also possesses a poetic instinct to express thought in a lucid way.
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুই হবে না! শুরু হলো। শেষ হবে না! শেষ হলো। মৃত্যুদণ্ডের রায় দিতে পারবে না! মৃত্যুদণ্ডের রায় হলো। আশঙ্কা এভাবেই একের পর এক। আশঙ্কা কাটতেও থাকল একের পর এক। খুনিকে রক্ষা করে পুরস্কৃত করার কালো ইতিহাস যে জাতির আছে, সে জাতিতো সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাবেই। এমন কত কত ভয় আর আশঙ্কা!
৩৯ বছর পর হলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে। যে সরকার এই বিচারের ব্যবস্থা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে, সেই সরকারের মেয়াদ যতই শেষের দিকে এগোচ্ছে ততই আশঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে এরইমাঝে ট্রাইব্যুনাল থেকে একে একে চারটি রায় হওয়াতে নতুন প্রত্যাশা- রায় কার্যকর হওয়া। একইসাথে নতুন আশঙ্কা- রায় কার্যকর হবে তো? সংশোধিত আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আপিল মিমাংসা ৬০ দিনের মধ্যে করার কথা বলা আছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬০ দিন অতিবাহিত করেছে। তবে মিমাংসা হয়নি। কাদের মোল্লার মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় জনমনে আবার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে কী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে না? এই প্রেক্ষিতে প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী দলের) শক্তি বৃদ্ধিতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয় সরকার। ৬০ দিনে আপিল নিষ্পত্তি বিষয়ে ড. তুরিন আফরোজ আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, ‘আপিল বিভাগ এটি মানতে বাধ্য নয়। তবে এটির প্রতি সম্মান দেখিয়ে মামলার কার্যক্রমে গতি আনতে পারে। আপিল বিভাগে এত এত মামলা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল ইত্যাদির পরও কাদের মোল্লার মামলাটির বিচারিক কার্যক্রমে গতি ভালোই। তা ছাড়া আপিল বিভাগ এরইমধ্যে একাধিক বেঞ্চও গঠন করেছে। তাতে নিশ্চয়ই এই মামলাগুলোর কারণে অন্যান্য মামলার গতি শ্লথ হবে না।’
ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসি) দেওয়া হয়। কাদের মোল্লার মামলার রায়ের মতো এই রায়ের বিরুদ্ধেও উভয়পক্ষ (আসামিপক্ষ ও প্রসিকিউশন) আপিল করেছে। সাঈদীর মামলাটিও বর্তমানে আপিল বিভাগে রয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলার রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার রায়েও আসামি কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। আসামিপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী রায় দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয়পক্ষই আপিল করতে পারবে। আপিল করার ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করার কথা থাকলেও এটির বাধ্যবাধকতা নেই। কেবলমাত্র ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়নি। পলাতক আসামি আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে এই রায়ে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে। আপিল না করায় শুধুমাত্র এই রায়টি কার্যকর করতে আইনি কোনো বাধা নেই। তবে আসামি পলাতক থাকায় এই রায়টিও কবে কার্যকর হয় তার ঠিক নেই।
উল্লেখ্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতিও ক্ষমা করে দিতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা যেন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পান তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করার দাবি অনেক আগে থেকেই করা হচ্ছে। তবে সরকারের দি ফুরিয়ে আসার সাথে সাথে রায় কার্যকর হবার বিষয়ে আশঙ্কা যত বাড়ছে এই দাবিও তত তীব্র হচ্ছে। এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি মুনতাসির মামুন বলেন, ‘এই দাবি আমাদের অনেক আগের। আইনমন্ত্রীতো তা জানেনই। উভয়পক্ষের আপিল করার সুযোগ রেখে আইন করার সময় একবারে এটিও করার কথা আমরা বলেছিলাম। আইনমন্ত্রী তা করেননি। কেন করেননি তা তিনি জানেন। এখন যদি ইচ্ছে হয় করবেন, না হয় করবেন না! নিশ্চয়ই আইনমন্ত্রী আমাদের চেয়ে ভালো জানেন।’ এ বিষয়ে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রাখা দরকার বলে মত দেন তিনি।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে রায় কার্যকর না হবার আশঙ্কার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলমান থাকে কি না সে বিষয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এ কারণে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও অনেক আগ থেকেই।
ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় আছে। তা ছাড়া দুটি ট্রাইব্যুনালে যে কয়টি মামলা চলমান রয়েছে তার মধ্যে বিচারিক ধাপ অনুসারে সবচেয়ে এগিয়ে আছে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলা। জামায়াতের বর্তমান এই সেক্রেটারি জেনারেলের মামলাটি যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনপর্যায়ে রয়েছে বলে আমাদের অর্থনীতিকে জানান প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। বিচারিক কার্যক্রমের ধাপ অনুসারে রায়ের আগে এটিই শেষ ধাপ। এ পর্যায়ে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল মামলাটির রায়ের তারিখ ঘোষণা করবে বা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখবে। এই মাসের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে আসছে জুন মাসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করতে পারে। পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে যদি কোনো পক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তাহলে জুলাই মাসের মধ্যে তা করতে হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ অক্টোবরে শেষ হবার কথা। সে হিসেবে আপিল নিষ্পত্তিতে দুই বা আড়াই মাসের মতো সময় লাগলেও এই সরকারের মেয়াদে তা কার্যকর করার সুযোগ আছে। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম জানান, আসামি মুজাহিদের মামলার পর আবদুল আলীম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা বিচারিক ধাপ অনুসারে এগিয়ে আছে। এ দুটি মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে আছে বলে তিনি জানান। তারপর আসামিপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব। এ পর্ব শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে। যা বিচারিক কার্যক্রমে রায় প্রদানের আগে শেষ ধাপ। নির্বাচিত নতুন সরকার ক্ষমতাগ্রহণ করার আগ পর্যন্ত বর্তমান সরকারই সংবিধান অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ক্ষমতায় থাকার কথা। সে হিসেবে আরো কয়েকটি মামলার রায়ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগেই কার্যকর হতে পারে । তা ছাড়া মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলী, মোহাম্মদ ইউসুফসহ অন্যান্যের মামলা এখনও শুরুর দিকে আছে।
©somewhere in net ltd.