নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিকরমপুরি সাহেব

বিকরমপুরি সাহেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ গন্তব্য

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

আমি ঠিক যে জায়গায় টায় বসে আছি সেখান থেকে ল্যান্ডিং ষ্টেশন টা খুব বেশি দূরে না, কান পাতলেই ভোতা একটা আওয়াজ পাওয়া যায়। বাইভার্বাল গুলো এতই দ্রুত আসা যাওয়া করছে যে মনে হবে খাতার উপরে কেউ যেন কাটাকাটি খেলছে। বিকাল চারটা হবে ঘড়িতে কিন্তু প্রতিদিনকার মতো আজো আমার ঘড়ি দেখতে মন চাচ্ছে না, কিন্তু জানি ঠিক পাচঁটা বাজতেই বুকের বা পাশ টা চিন চিন করে ব্যথা করবে। ব্যথা টা সহনিও থাকা অবস্থাতেই ফিরতে হবে কন্ট্রোল বূথে না হলে ব্যথা টা শুরুর মতো চিন চিন আর থাকবে না সেটা হয়ে উঠবে এক ভয়ংকর রকম অভিগ্যতা, যেটা সহ্য করতে না পেরে বেশিরভাগ মানুষই দুই মিনিটের ও কম সময়ে নিজেরাই নিজেকে মেরে ফেলে। ব্যথার তিব্রতা সহনিও থেকে সর্বচ্চ পর্যন্ত যেতে সময় থাকে কম বেশি চার ঘন্টার মতো, এই চার ঘন্টার ভেতর শহরের যেখানেই থাকুক না কেন, বাচতে হলে তাকে নিজে থেকেই কাছাকাছি কন্ট্রোল বুথে ঢুকতে হবে আর তা না হলে নিজেকে নিজে শেষ করা ছারা আর কোনও পথ খোলা থাকে না। এ এক অব্যর্থ নেভিগেশন সিস্টেম যেখানে বাচঁতে হলে ঠিক ঘড়ির কাটা অনুযায়ি নীড়ে ফিরে যেতে হবে যে যেখানেই থাকুক।

৩০২৪ সালের এই পৃথিবী প্রাচিন কালের মতো দেশ আর শহর এ বিভক্ত নয়, এখন পুরো পৃথিবীর মাত্র ১০ ভাগ শুকনো আর বাকি ৯০ ভাগই পানি। পৃথিবীর বাসযোগ্য ভুমি গুলো কে ভাগ করা হয়েছে কয়েকটি সেক্টরে। পাঠ্যবই এর হিসাব অনুযায়ি পৃথিবিতে সেক্টর আছে সর্বমোট পাচঁটি কিন্তু আমি জানি আরো একটি লুকানো সেক্টর আছে যার অস্তিত্ব পৃথিবীর কোনও মানচিত্রে নাই। আমাকে কেও কিছু বলে দেয় না, কেনো যানি আমি নিজেই সবকিছু বুঝতে পারি। যদিও আমার কাছে কোনও প্রমান নেই তবুও আমি ঠিকই অনুভব করি ষষ্ট সেক্টর টিকে।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা তিন কিওক (৩০ লাখ = ১ কিওক)। পাচটি সেক্টর ঠিক পঞ্চভূজ এর আকৃতিতে সাজানো আছে আর চারিদিকে আছে বিশাল জলরাশি। হিসেব মতো একটি সেক্টর থেকে আরেকটি সেক্টর এ পানির উপর দিয়ে যাওয়া সম্ভব যেহেতু সবগুলো সেক্টরই তাদের বহিরাংশ পানি দিয়ে যুক্ত। কিন্তু পৃথিবীর কোনও মানুষই সমূদ্র পথে ১ কাইল (১০ কিলোমিটার = ১ কাইল) এর বেশি যেতে পারে না। কারন একজন স্বাধিন মানুষকে নিকটবত্রি কন্ট্রোল বুথ থেকে ৩ কাইল সার্কেল এর ভেতর অবস্থান করতে হবে।

আমি থাকি সেক্টর ১এ। পাচঁ সেক্টর এর ভেতর সবচেয়ে কম সুবিধা সম্পন্ন সেক্টর হলো এই সেক্টর ১, মোট জনসংখ্যা পাচঁ দিওক। ( এক দিওক = ১০ হাযার) ,আমরা মূলতো সবাই এখানে কর্মি বাহিনি, ২৪ ঘন্টার ভেতর ১৬ ঘন্টা কারখানায় কাজ করতে হয়। আজকের এই পৃথিবীতে মানুষকে খাবার খেতে হয় না, খাবার এর বদলে নিতে হয় কিছু সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট। আমাদের সবার গলায় আর্মি ডগ ট্যাগ জাতিও একটি লকেট ঝুলানো থাকে যেখানে সবার আইডেন্টিটি সাথে ১৪টি ট্যাবলেট রাখার চেম্বার থাকে। সপ্তাহর শুরুতে চেম্বারটি ভরে নিতে হয় ডিস্ট্রিবিউশন ডাগ আউট থেকে, দিনে ২টি ট্যাবলেট, ৭ দিনে ১৪টি। এই ট্যবলেট ছারা একজন মানুষ বাচতে পারে সর্বচ্চ ৭২ ঘন্টা। যেহেতু এখন মানুষকে কোনও পানি খেতে হয় না, এই দুইটি ট্যাবলেট এর একটি পানির কাজ করে। ঠিক ৭২ ঘন্টা পর থেকে ডিহাইড্রেশন শুরু হয় এবং পরবর্তি পাচঁ ঘন্টায় সে মারা যায়।

আমাদের চারপাশের সমুদ্রের নোনা পানি ছারা পুরো সেক্টর জুরে আর একফোঁটা পানিও নেই। ভুগর্বস্থ পানির লেয়ার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে আজ থেকে কম করে হলেও ৫০০ বছর আগে। সমূদ্রের পানিকেও রিসাইকেল করা সম্ভব নয়, মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েসন এর কারনে। যেহেতু সবুয রং এর ট্যাবলেটটি পানির বিকল্প হিসাবে কাজ করে তাই এখনকার পৃথিবীর মানুষ জানেই না পানি নামক কিছু একটা ছিলো জিবন ধারনের জন্য যা মানুষকে পান করতে হতো। তবে আমি কেন এত কিছু জানি? তা না হয় পরে বলা যাবে।

আমরা যারা কারখানায় কাজ করি তাদের বেতন সাপ্তাহিক ভিত্তিতে দেওয়া হয়। বেতনের অন্তত ৪০ ভাগ চলে যায় লাল সবুয দুই রং এর ১৪ টি ট্যাবলেট কিনতে। বাকি টাকা দিয়ে সবাই বিচিত্র ধরনের ন্যানো চিপ আর নেশার ট্যাবলেট কিনে। এক নং সেক্টর এ বিনোদন বলতে আমরা বুঝি ন্যানো চিপ যা অনেকটা আগের দিনের মানুষদের ডিভিডি তে সিনেমা দেখার মতো, নেশা, মেয়ে আর জুয়া। আমাদের এই পৃথিবীতে কোনও পরিবহন খরচ নেই। ছোটো দূরত্বের জন্য আমরা ব্যবহার করি বাইজেন ( হাযার বছর আগের মানুষদের বাইসাইকেল এর মতো অনেকটা, আর বড় দূরত্বের জন্য রয়েছে টেলিপোর্ট। এই টেলিপোর্ট জিনিষটা অনেক জটিল এবং আমাদের কারো বিন্দুমাত্র ধারনা নাই কিভাবে এটি কাজ করে। আমাদের সেক্টরের বিভিন্ন লোকেশন এ অবস্থিত কন্ট্রল বুথ এ চারকোনা লিফট আকৃতির ছোটো ছোটো ঘর গুলই হচ্ছে টেলিপোর্ট। এই ঘরটিতে ঢুকে একটি মাত্র বোতাম টিপলেই পৌছে যাওয়া যায় কাঙ্খিত গন্ত্যব্যে। তবে টেলিপোর্ট এর ভ্রমনটি এক কন্ট্রল বুথ থেকে আরেক কন্ট্রল বুথ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে ৪০ বর্গ কাইল এই সেক্টরের জন্য কন্ট্রল বুথ গুলো এমনভাবে অবস্থিত যে এদের মধ্যবর্তি দূরত্ব কখনই এক কাইল এর বেশি নয়। আগের পৃথিবীর সাব ওয়ে স্টেষনগুলোর মতো। টেলিপোর্ট এর এই ভ্রমন কিন্তু সেক্টরের ভেতরেই সীমাবদ্ধ, এক সেক্টর থেকে আরেক সেক্টরে যেতে হলে বাইভার্বাল ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। বাইবার্ভালে ওঠা তো দূরে থাক, ল্যান্ডিং স্টেষনের ধারে কাছে যাওয়ার অধিকারও আমাদের নেই।



আমি আমার বাইজেনটিকে নিয়ে আস্তে আস্তে কন্ট্রল বুথ এর দিকে আগাতে থাকি। আজকের আকাশ অন্য দিনের মতো সমান সুন্দর, হালকা মেঘে ঢাকা অপরূপ নীলাভ দ্যূতি ছরানো, আমি প্রতিদিন এখানে আসি শুধু এই আকাশ দেখবার জন্য

চলবে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.