নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চামড়া ও চামড়াশিল্পে কেন আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি? # ৪

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:২৭


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link
বিজনেস প্রমোশনাল গিফটস ও স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাবসায় উত্থান ও ধ্বসঃ

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে জনাব লোকমান নামে এক চামড়াজাত পন্য উৎপাদনকারী- কর্পোরেট ও মাঝারি/ছোট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসা বা পন্যের প্রচারনার জন্য ক্রেতা বা স্টেকহোল্ডারদের উদ্বুদ্ধ করার নিমিত্তে যে উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকে,তাদের সরবরাহের জন্য চামড়াজাত পন্য উৎপাদন শুরু করেন।
বিজনেস প্রমোশনাল গিফটস সাপ্লাইয়ের কিছু পূর্ব শর্ত থাকে;
প্রথমত নিজের কোম্পানীর নাম প্রচার করা যাবে না। পন্যের দাম ও ডিজাইনের গোপনীয়তা রক্ষা করা জরুরী।
যেই সকল কোম্পানী প্রোডাক্ট নিচ্ছে তার কোম্পানী নাম বা ব্রান্ডিং স্পষ্ট ও সুন্দর হওয়া জরুরি। আর প্রোডাক্টের প্যকেজিং ও হতে হয় দৃষ্টি নন্দন। যেহেতু ক্রেতা বাল্ক পণ্য নেন সেহেতু মুল্য হতে হবে সাশ্রয়ী-সেই সাথে সব পণ্যের গুনগত মানও একইরকম হতে হয়।
আপনাদের যদি এই নিয়ে কারো জানার বেশি আগ্রহ থাকে বা এই ধরনে ব্যাবসায় জড়িত হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন তাহলে আমি বিস্তারিত পরে লিখব।
জনাব লোকমান উচ্চভিলাষি ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যাবসায়ী ছিলেন বলে আমার ধারনা। তিনি ও তার কোম্পানী ‘এবস্যুলেট লেদার’ বিজনেস প্রমোশনাল গিফটস এর পাইওনিয়ার( চামড়াজাত পণ্য) বলা যায়। কিন্তু তার কথা কোথাও লেখা নেই। এদের কথা ইতিহাসের পাতায় থাকে না।
তার মুলত ব্যাবসাক্ষেত্র ছিল; তৎকালীন মুষ্টিমেয় কিছু কর্পোরেট কোম্পানী, কিছু ঔষধ কোম্পানী ও স্থানীয় কিছু ব্যাক্তিমালিকানাধীন কোম্পানীতে। কিন্তু বাংলাদেশে এই ব্যবসার রমরমা বাজার শুরু হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যু বরন করেন!
১৯৯৭ সাল গ্রামীনফোন নামে নরওয়ে ভিত্তিক টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানী টেলিনরের হাত ধরে বাংলাদেশের কর্পোরেট যুগে প্রবেশ। (২০১২ সালে ‘গ্রামীন ফোনের সেকাল একাল’ নিয়ে দুটো পর্ব দিয়ে মাঠ ছেড়ে ভেগেছিলাম – কেউ চাইলে পেছনে গিয়ে পড়তে পারেন।)
গ্রামীনফোনের মত এদেশে এত দ্রুত অন্য কোন কোম্পানীর ব্যাবসায়িক উম্ফলন হয়নি- কথা খুব না বেশি ভেবে চিন্তে বলা যায়। গ্রামীনের অনেক দোষত্রুটি হয়তো অনেকে খুজে পাবেন কিন্তু ‘বিজনেস প্রমোশনাল গিফটস এর ব্যবসাটা এদেশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে জিপি এটা স্বীকার করতেই হবে।
প্রায় সব বাঙ্গালীই মনে মনে প্রতিনিয়ত ব্যাবসার প্লান করে- একদিন ব্যাবসায়ী হবার সপ্ন দেখে কিন্তু ধৈর্য ও সৃষ্টিশীলতার খুব অভাব! আমাদের আরেকটা বড় সমস্যা হল 'দুরদর্শীতা'র অভাব। সেই সাথে অতি দ্রুত সহজ পথে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা আর সমষ্টিগত চিন্তা না করা,বড় ও ভাল ব্যাবসায়ী হওয়ার মুল প্রতিবন্ধক!
গ্রামীনের সেই রমরমা সময়ে কিছু ব্যবসায়ী অ-ব্যাবসায়ী বুঝে না বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ল সেখানে। দিনের পর দিন দৌরাত্ব বাড়তে থাকল দালাল শ্রেণীর ব্যাবসায়ীদের- তাদের প্রভাবে স্মার্টনেস আর এডিকেটে মুল ধারার ব্যবসায়ীরা হালে পানি পায় না। এখানে শুধু চামড়া নয় দেশীয় সব ধরনের পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত ছিল- এই ব্যবসায়।
ছোট ছোট চামড়া শিল্প ও অন্যান্য কুটির শিল্পের মুল সমস্যা ছিল এর উদ্যোক্তাদের শিক্ষার অভাব। এরা কর্পোরেটে গিয়ে সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারছিল না। এখানে শুধু পণ্য উৎপাদনই তো নয়, এখানে ব্রান্ডিং, প্যাকেজিং, কনসেপ্ট, আইডিয়া অনেক কিছু জড়িত- তাছাড়া পুঁজি লগ্নির বিষয়টা তো আছেই। খুব কম কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান অগ্রীম টাকা দেয় মাল ডেলিভারি করলেই টাকা দেয়( এই টাকা পেতে ন্যুনতম ১৫ দিন থেকে ৩/৪ মাস লাগে) এতগুলো বিষয় নিয়ে সুক্ষভাবে কাজ করা উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভীষন অসুবিধার ছিল তাই তারা সমর্পিত হয় সেসব মধ্যস্বত্তভোগী,ভেন্ডর, সাপ্লাইয়ার বা দালালদের কাছে।
(বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী বিজনেস প্রমোশনাল গিফটস ক্রয় করে ঔষধ কোম্পানিগুলো। এই গিফটসের একটা বড় অংশ চামড়াজাত পণ্য। )
গ্রামীনফোন থেকে অন্যান্য কর্পোরেটের বুদ্ধিমান বাঙ্গালী পারচেজ ও মার্কেটিং বসেরা দিন দিন কাকের মত বাড়তে থাকা ভেন্ডরদের দেখে খুশিতে মেনে মনে আকর্ণ হাসতে থাকেন।
শুরু হল দাম নিয়ে মুলোমুলি- কোয়ালিটি নিয়ে প্যাচাপ্যাচি আর সরবরাহের সময় কমিয়ে আনার জন্য চাপাচাপি।
সাপ্লাইয়াররা ঘোরেন হন্য হয়ে এর দুয়ার থেকে অন্য ম্যানুফ্যাকচারের দুয়ারে।মুল কোম্পানি যদি ঘুষি দেয় এরা দেয় গদা। মুল্য কমানোর জন্য বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করে, কখনো নগদ টাকার লোভ- কখনো ব্যাপক কাজ দেবার সপ্ন।তারপরে খারাপ কাঁচামাল ব্যাবহারের জন্য প্ররোচনা। ওদিকে যে উৎপাদক গোষ্ঠী খুব ঈমানদার তাতো নয়- দু’টাকা লাভের আশায় হেন নীচ পন্থা নেই যা অবলম্বন করেনি।
সাপ্লাইয়ারদের কেউবা কারো কারো প্ররোচনায় না বুঝে নিজেরাই ফ্যাক্টরি খুলে বসল।
আর এক গ্রুপ এখানে সুবিধা করতে না পেরে অন্য দেশ থেকে মাল এনে সাপ্লাই দিতে উঠে পড়ে লাগল। এদের মুল লক্ষ্য চাইনিজ প্রোডাক্ট! আগে থেকেই এমন ধারার ব্যাবসায়ী গোষ্ঠী ছিল কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সেটা হোল ম্যাসিভ।
কোণঠাসা হতে লাগল স্থানীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠতে নতুন নতু ক্ষুদ্র কারখানা। অশিক্ষিত সাধারন কারিগরেরা স্তানীয় বাজার থেকে দুটো সেলাই মেশিন, আর কিছু কারিগরি সামানা কিনেই নতুন একটা নামমাত্র ফ্যাক্টরি দিয়েই ছূটতে শুরু করে সেইসব দালালদের পেছনে। সবাই সবাইওকে টেনে ধরে নামাতে চায় কেঊ উঠতে পারে। কেউ কেউ অতি উদ্যোগী হয়ে একটা সঙ্গঠন করার জন্য কিছু নীতিমালা নিয়ে এগিয়ে আসে কিন্তু এই বাঙ্গালীকে রোখে কার সাধ্যি। ছোট এক ছিদ্র পেলে সবাই একসাথে মাথা গলিয়ে দিতে চায়। ব্যাবসা করতে হবে টাকা কামাই করতে হবে। আমি চিনি আমারে আর কারো চিনিনা।
এই করে সব তাল্গোল পাকিয়ে এখন লাড্ডু।
ঔষধ কোম্পানিগুলো( মুলত দেশী- বিদেশী কিছু কোম্পানী দেশীয় কোম্পানীর উলম্ফনে টিকতে না পেরে পাততাড়ি গুটিয়েছে, আর কিছু কোম্পানী কোন গিফট নীতিগতভাবে অনুমোদন করে না। তারপরে কিছু বিদেশী কোমানী করে।) তাদের বার্ষিক বিক্রির ৫-১০ ভাগ নাকি বিভিন্ন গিফট,নগদ অর্থদান, বিদেশে প্লেজার ট্যুর সহ প্রমোশনাল গিফটসের মোড়কে ডাক্তারদের ঘূষ দিয়ে থাকেন। অবশ্য এর একটা অংশ প্যড কলম, মগ, চাবির রিং সহ ভিন্ন ভিন্ন পণ্য গিফটয়ের মোড়কে বিভিন্ন ফার্মাসী ও স্বশিক্ষিত ডাক্তার কম্পাউন্ডারদের কাছেও যায়। অবশ্য এর মাঝে কিছু দেশি ঔষূধ কোম্পানী অন্য দেশেও তাদের শাখা বিস্তার করায় এখান থেকে প্রোডাক্ট তৈরিয়ে বাইরের ডাক্তারদের কাছেও যাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে ই হোক আর যে ভাবেই হোক না কেন। এরা কিছুটা হলেও দেশীয় কোম্পানীকে প্রোমট করছে। যদিও এদের সাপ্লাইকৃত পণ্যের বড় একটা অংশ আসে চায়না ও ভারত থেকে। তবুও দেশের কয়েক শত ফ্যাক্টরি ও সাপ্লাইয়ার টিকে আছে এদের দয়ায়।
(বাংলাদেশে প্রমোশনাল গিফটস-এর বাজার বেশ বড়-ই। মোবাইল ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, বীমা, সিমেন্ট, টাইলস কোম্পানী, ব্রোকারেজ হাউস, গার্মেন্টস, সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যা ব থেকে শুরু করে বেসরকারি খাতের প্রায় সব বড় ও মাঝারি কোম্পানীগুলো সারা বছরই কিছু না কিছু উপহার সামগ্রী কিনে থাকেন।)
ধরে নেই টোটাল প্রমোশনাল গিফটস এর বাজার ২০০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে ১০ ভাগ ও যদি চামড়াজাত পণ্য হয় তাহলে হবে ২০০ কোটি! যেখানে এখানে ২০০ ফ্যাক্টরি থাকলে তারা খেয়ে পড়ে বাচতে পারে সেখানে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারী ফ্যাক্টরি মিলে মোত ফ্যাক্টরির সংখ্যা এখন প্রায় পাঁচ শতাধিকের উপরে। এরপরে আছে ভারতীয় চামড়াজাত ও চায়নিজ অ-চামড়াজাত পণ্যের আগ্রাসন!
এদের কামড়া কামড়িতে পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়লেও মুল্য কমছে তার থেকে দ্রুত গতিতে। ১৯৯৮ সালে যেখানে একটা চামড়ার মানিব্যাগ সাপ্লাই হত ৪০০-৫০০ টাকায় সেটার মুল্য এখন নেমে এসেছে ২০০ টাকা বার তার থেকেও কম! ম্যানুফ্যাকচারার ও সাপ্লাইয়াররা এখন উন্মুক্ত কচ্ছে উর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে এই কর্পোরেট হাউস থেকে অন্যটায়। যেন তেন উপায়ে তাদের কাজ চাই।
চামড়া চাই এখন পানির দামে কিংবা তার থেকেও সস্তায়। ছোট ছোট ট্যানারির মালিকেরা তাদের অস্তিত্ব টিকেয়ে রাখার স্বার্থে পারলে নিজেদের গায়ের চামড়া খুলে ট্যান করে দেয়।
আজ আমরা পরাজিত নিজেদের স্বার্থের কাছে, নিজেদের লোভের কাছে। শিক্ষা,কুশিক্ষা,অশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, অপ রাজনীতি, রাতারাতি ধনী হবার বাসনা, কুট চিন্তা,শুধু আমিত্ব, আমাদের মানুষ আর থাকতে দিল কই?

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩২

দারাশিকো বলেছেন: যা লিখলেন তা শুধু চামড়ার ব্যবসার ক্ষেত্রেই না, বাংলাদেশে আরও অনেক ব্যবসার ক্ষেত্রেই নির্মম সত্য কথা। ভালো লেগেছে আপনার পর্যবেক্ষণ। ধন্যবাদ।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৫

শেরজা তপন বলেছেন: ভাই্ দারাশিকো- আপনাকে এক্সপেক্ট করছিলাম। আপনার মন্তব্যের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। দয়া করে আগের পর্বগুলো পড়ে আপনার
সু-চিন্তিত মতামত দিবেন। আসুন আমরা সবাই মিলে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ি।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: চামড়া শিল্পের ধ্বস নিয়ে আপনার এই সিরিজ দারুন এক তথ্য পিডিয়া হয়ে থাকবে।
খূটিনাটি কিছুই বাদ দিচ্ছেন না। এবং তুলে আনা শুধু হালকা চালের তথ্য নয় বরং
বিস্তারিত এবং সম্পৃক্ত সকল বিষয়কে টাচ করে।

দারুন সিরিজের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

উপসংহারে আশা করি ফিরে দাড়ানোর সম্ভাব্য পথ, পদ্ধতি আর প্রস্তাবনাও দেবেন।

+++++

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৯

শেরজা তপন বলেছেন: ফের অনেক ধন্যবাদ ভৃগু ভাই- জানিনা কতদুর কি লিখতে পারব কিংবা কতদিন ধৈর্য থাকে। অবশ্যই খুঁটিনাটি সব বর্ণনা শেষে আমার মত করে আমি উপস্থাপন ও প্রস্তাবনা করব কিভাবে চামড়া ও চামড়া শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে তার বিস্তারিত।
সেখানে অবশ্যই আপনার/ আপনাদের মত বিজ্ঞ মানুষদের পর্যবেক্ষণ ও মতামত থাকবে।

আমি আশা করতেই পারি সেটা হবে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের ঘুরে দাড়ানোর অনন্য এক উদাহরন!
ভাল থাকুন-সব সম্য

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: প্রমোশনাল আইটেমের ব্যবসাটা মুলত যোগাযোগ নির্ভর। মিডল ম্যানরা এই ব্যবসার লাভের গুড় খেয়ে থাকে। ফলে আসল প্রস্তুতকারকের লাভ কম হয় যদিও এই ব্যবসার লাভের হার বেশী। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের আরও শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। ব্যবসার আধুনিক টেকনিক তাদের জানা প্রয়োজন। আগেকার দিনের সনাতনী ব্যবসার বুদ্ধি দিয়ে বর্তমান যুগে তাদের জন্য চলা কঠিন। আমার মনে হয় সরকারের উচিত ট্যানারি সংক্রান্ত কর ও শুল্ক কাঠামো ঢেলে সাজানো যেন ট্যানারি শিল্প এদেশে দৃঢ় পায়ে দাড়াতে পারে। গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে সরকার যেমন অনেক সুবিধা দিয়েছে ট্যানারির ক্ষেত্রেও অনুরুপ সুবিধা দেয়া উচিত। ট্যানারি শিল্পকে শুধু কর্পোরেট ক্রেতার উপর নির্ভর করলে চলবে না। বাংলাদেশ একটা বিশাল বাজার। বিদেশী চামড়াজাত পণ্য বন্ধ করে দেশীয় চামড়া শিল্পকে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য উপযুক্ত ও কার্যকরী রাষ্ট্রীয় নীতি প্রনয়ন করতে হবে। যে পণ্য আমাদের দেশে সুলভ সেগুলি আমরা কেন বাইরে থেকে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করবো। এই সব কারণেই আমাদের দেশে মিল ফ্যাক্টরি গড়ে উঠে নাই পর্যাপ্ত মাত্রায়। ফলে বেকারত্বও বেশী। কারণ মানুফাকছারিং খাত থেকেই চাকরী সৃষ্টি বেশী হয়। শুধু গার্মেন্টস সেক্টর দিয়ে এদেশ চলতে পারবে না। আমাদেরকে চামড়া, ওষুধ, ইস্পাত, হিমায়িত মৎস্য ইত্যাদি সেক্টরের কথাও ভাবতে হবে। সরকার পাশে দাঁড়ালে চামড়া শিল্প আবার ভালো অবস্থায় যেতে পারে বলে আমি মনে করি। আর ব্যবসায়ীদেরও একতাবদ্ধ হতে হবে ও ব্যবসার আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আমাদের দেশের সস্তা শ্রম কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগীদের পরাজিত করতে হবে। সস্তা শ্রমের সুবিধা সব দেশের নাই।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার অতি সুচিন্তিত মতামতের জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি!
আপনার লাভের গুড় ও ট্যানারিতে শিক্ষিত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যাপারে আমি সহত পোষন করছি।
তবে কিছু শিক্ষিত টেকনিক্যাল পারসন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি যে নাই তা নয়। আমি এসব বিষয় নিয়ে আসব পরের পর্ব গুলোতে।
শুধু কর্পোরেট ক্রেতা নয় সব ধরনের ক্রেতাদের টার্গেট করেই বাজার এগিয়ে যাচ্ছিল বা যাচ্ছে। কিন্তু এখানে দরকার তদারকি, বিদেশী পণ্য আমদানী বন্ধ, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ,নতুন শিক্ষিত উদ্যোক্তা ও আধুনিক যন্ত্রায়ন।

বেশ বড় দারুন এই মন্তব্যের জন্য আপনাকে ফের ধন্যবাদ।
বরাবরের মত সামনের দিনগুলোতে আপনাকে সাথে পাব এই প্রত্যাশায়

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অনেক সুন্দর পোস্ট।
এমন পোস্ট রচনা করা খুব সহজ একটা ব্যাপার না।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪২

শেরজা তপন বলেছেন: পুরো সিরিজটাই রচিত হয়েছে আমার বেশ কিছু বছরের কর্বামজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে। সাথে অর্ন্তজাল, কিছু মানুষের
সহযোগীতা ও আপনাদের অনুপ্রেরনাই এই লেখাটা এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। ভাই সাথে থাকবেন- অনেক অনেক কিছু লেখার
বাকি আছে। আপনার মত বিজ্ঞ ব্লগারদের সুচিন্তিত মতামত এখানে খুব প্রয়োজন।

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি আধুনিক যন্ত্রপাতি না বরং আধুনিক ব্যবসার পদ্ধতি বোঝাতে চেয়েছিলাম। কারণ কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি ও শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার আমাদের দেশে আছে এটা আমি জানি। আমার এক বন্ধু আছে যে লেদার টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ার। আমি তার কাছে শুনেছি যে ট্যানারি মালিকরা প্রচুর টাকার মালিক হলেও এদের অধিকাংশের ব্যবহার খুব খারাপ আর এরা কর্পোরেট কালচার বোঝে না। এদের ব্যবসায়ীক চিন্তা যে সেরকমই হবে এটা আমার মনে হয়েছে। ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ খুব জরুরী গার্মেন্টস এর মত। আমি বারে বার গার্মেন্টসের উদাহরণ টানছি কারণ এই ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আছে। আর রপ্তানি নির্ভর ব্যবসাগুলির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে তাই ঐ আলোকে বলি। ট্যানারির জন্য নগদ প্রণোদনা কি আছে? আমার পরিষ্কার জানা নাই।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩১

শেরজা তপন বলেছেন: আমি এই সিরিজের প্রথম পর্বেই লিখেছি; চামড়া রপ্তানিতে ১০% ও চামড়াজাত পন্য রপ্তানিতে ১৫% ক্যাশ ইনসেন্টিভ দেয়া হয়।
আপনার আগের মন্তব্যের আমি ধারনা করেছিলাম আপনি গার্মেন্টস শিল্পের সাথে জড়িত আছেন। জ্বী আপনার বন্ধু ঠিকই বলেছেন। তবে চামড়াজাত পন্যের রপ্তানিকারকের একতা বড় অংশ শিক্ষিত শ্রেনীর। কিন্তু তাদের অর্থ ও ক্ষমতা অনেক কম। এরা চামড়া শিল্প খাতকে ঘুরিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখেননা।
পরের পর্বে- ট্যানারি শিল্প ও ট্যানারি বানিজ্য নিয়ে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব- আশা রাখছি আপনাকে সাথে পাব

৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনেক তথ্যমূলক ও যুক্তিনির্ভর আলোচনা । তবে যারা পরিচালক তারা কেন ভালো দিক বুঝে না , বুঝে আসে না । এতিমখানা গুলি এবার অনেক টাকা পাওনা হতে বঞ্চিত হয়েছে।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৮

শেরজা তপন বলেছেন: ইয়াতিমদের বঞ্চিত হওয়া নিয়ে আমারো কষ্ট কম নয়!তবে এই খাত ফিরে না দাড়ালে- সহসাই কোন আশা নেই, এই বঞ্চনার গল্প চলতেই থাকবে।
অনেকেই বোঝে - ট্যনারি খাতে ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেশী। না বুঝে আসাই উত্তম!
অনেক ধন্যবাদ ভাই নেওয়াজ আলি- ভাল থাকুন

৭| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: গার্মেন্টস খাটে নগদ সহায়তার হার আরও কম। সম্ভবত ৫% থেকে ১০% এর মধ্যে।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৯

শেরজা তপন বলেছেন: হ্যা তা-তো কমই হবার কথা। ওই ৫% দিতেই সরকারের ত্রাহি অবস্থা!!

৮| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১১

আকন বিডি বলেছেন: সিরিজটা চলুক। অন্যগুলাও সাথে।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৫

শেরজা তপন বলেছেন: আমিতো বুঝেছি আপনি কি বলতে চাচ্ছেন :)
এইটার ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে দেখে 'আলকাশ' দিচ্ছিনা। পুরো উল্টো ধারার লেখাতো! এখন একটু বুদ্ধিজীবীর মুখোশ পরে আছি-
আলকাশ দিলে ওই মাতালের কথা আর কেউ শুনতে চাইবে না, নাকি কি বলেন? :)

৯| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই লেখাটি চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩০

শেরজা তপন বলেছেন: দেশের প্রতি ভালবাসা ও আপনার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলাম- আগে শেষ করি, যদি সত্যিকারেই তেমন কিছু হয় তখন না হয় চেষ্টা করব। আপনারাও করবেন নিশ্চয়ই-
ভাল থাকুন ভাই রাজীব নুর

১০| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২৩

সাফকাত আজিজ বলেছেন: এই পর্বে চামড়াজাত পণ্যের কথা থাকলেও প্রায় অনেক শিল্পের কথার মৌলিক সমস্যা উঠে এসেছে...

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩১

শেরজা তপন বলেছেন: জ্বী ঠিক বলেছেন- সমস্যাটা শুধু চামড়া আর চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রেই নয় সমস্যাটা সার্বিক!

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটা পড়ার জন্য- বাকি পর্বগুলো পড়ে আপনার সু-চিন্তিত মতামত জানাবেন বলে আশা রাখছি।

১১| ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩২

শেরজা তপন বলেছেন: আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ আমার সাথে থাকার জন্য- ভাল থাকুন

১২| ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: আমি সব সময় ভালো পোষ্ট গুলোতে উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করি।
এই পোষ্ট লিখতে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেটা পোস্ট পড়লেই বুঝা যায়। পরিশ্রমের ফল সব সময় মিঠা হয়।

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯

শেরজা তপন বলেছেন: আমিও খানিকটা মিষ্টতা আশা করলেও তিক্ত অভিজ্ঞতা নয়। দেখা যাক আমার সাধ্যমত চেষ্টা আমি করে যাচ্ছি- কিছু না হলে চেষ্টা করেছি এই সান্তনাতো পাব।
ধন্যবাদ ভাই ফের

১৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪

অশুভ বলেছেন: রাজীব ভাইয়ের সাথে সহমত। অনেক পরিশ্রম করেছেন চামড়া শিল্পের খুটিনাটি তুলে ধরার জন্য। আপনার লেখাটা বড় পরিসরে কোথাও প্রকাশ হওয়া দরকার যাতে এই শিল্পের কর্তাব্যক্তিদের চোখে পড়ে। কিছুটা হলেও যদি এই শিল্পের উন্নতি হয়, ক্ষতি কী?

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০২

শেরজা তপন বলেছেন: পুরোটাই আমার দীর্ঘ দিনের পর্যবেক্ষণ! দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমি কোথাও নোট করে রাখিনি- তাই সঠিক তথ্য দিতে একটু ঝামেলা হচ্ছে। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি- আপনারা সাথে থাকলে অবশ্যই ভাল কিছু আশা করতে পারি।


সবিশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সব সময়

১৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪২

কল্পদ্রুম বলেছেন: আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না বলে নতুন কিছু যোগ বিয়োগ করতে পারছি না।এই সিরিজের সবগুলো পোস্টই পড়েছি।অনেক কিছু জানতে পারলাম।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৪

শেরজা তপন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ- উপস্থিতিটা জানিয়ে যাবেন, তাতেই চলবে। অন্তত আরো লেখার উৎসাহ পাব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.