নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...
সাল:২০০৪, দার্জিলিঙে এক ঈদের সকাল!
ঘুম ভাঙল সাতটায়।আড়মোড় ভেঙে দুকাপ বেড টি খেয়ে আমরা দুই বন্ধু বেরিয়ে পড়লাম। রিসেপসনে যেতেই কাউন্টারে বসা ভদ্রলোক আমাদের ঈদের শুভেচ্ছা দিয়ে অনুরোধ করল নামাজ পড়তে যাবার সময়ে যেন তাদের রেস্টুরেন্টে সেমাই খেয়ে যাই! তার এহেন আন্তরিকতায় বিগলিত হলাম। সম্মতি জানিয়ে আমরা বিদায় নিলাম।
বেরিয়ে হোটেলের উল্টো দিকে উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে হাটতে শুরু করলাম। যথেষ্ট খাড়া পথ পা চালাতে কষ্ট হয়। একটু এগুতেইদেখা পেলাম মসজিদের। ঈদের নামাজের জন্য তখনই তোড় জোড় শুরু হয়েছে। ভাবলাম,- যাক নামাজটা এখানেই সারা যাবে। একজনকে জিজ্ঞেস করে সময়টার জেনে নিলাম;শুরু হবে ন’টায়।
আরেকটু হাটতেই পথের মোড়ে বিশাল ছিমছাম গির্জার দেখা মিলল। চারিদিকে পরিচ্ছন্ন- পরিবেশটাওবেশ পবিত্র! সে তুলনায় মসজিদের আশেপাশটা বেশ অপরিচ্ছন্ন - আগাছা ও ভাঙ্গা ইটের স্তুপ।
গির্জার পাশ ঘুরে আরো কিছুটা এগিয়ে গিয়ে রেলিংএ ঘেরা একটা জায়গায় দাড়াতেই নজরে এল বরফে মোড়া ধবল পর্বত শ্রেনী। মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে কাঞ্চন জংঘা তার সঙ্গী সাথী নিয়ে। যদিও আকাশে মেঘের আনাগোনা সূর্যের ঔজ্জল্য নেই তবু আমি মোহিত- কেননা এধরনের দৃশ্য সেই আমার প্রথম দেখা। ওখানে দাড়িয়ে দু-চারটা ছবি তুলে ফের হোটেল অভিমুখে ফিরে চললাম।
মসজিদের সামনে আসতে আসতে সোয়া আটটা বেজে গেল। ততক্ষনে মুসুল্লিদের ভীড় জমে গেছে।
হোটেলে ফিরে আসতেই হোটেল ম্যানেজার ব্যস্তসমেত হয়ে নিজেই দু’বাটি সেমাই নিয়ে আমাদের সামনে হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাড়ালেন।
বাটিতে শুধু দেখি ড্যাল ড্যালে দুধ! চামচ দিয়ে নেড়ে নীচে খানিকটা সেমাই আছে দেখে আশ্বস্ত হলাম। এক চামচ মুখে দিতেই ভয়ঙ্কর মিষ্টি স্বাদে মাথা চক্কর দিয়ে উঠল! তবুও কি আর করার; তাদের আতিথিয়েতায় মুগ্ধ হয়ে চরম সুস্বাদু হয়েছে এই মুখভাব করে অতিকষ্টে পুরো সেমাইটা খেয়ে রুমে ছুটলাম!
রুমে ফিরে তাড়াহুড়ো করে গোসল সেরে নামাজ পড়তে গিয়ে দেখি বিশাল মসজিদের চত্বর পুরোটা ভর্তি! এত মুসলিম এখানে!!! অগত্যা কি আর করার মসজিদের মুল ফটক ছাড়িয়ে পিছনের দিকেই বসতে হল।
কিন্তু জুতা রাখতে গিয়ে হল বিপত্তি! শেষ কাতারের পিছনে দেয়ালের পাশেই সবাই সারি বেধে জুতা রাখছে। কিন্তু সেখান দিয়ে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিরা যেভাবে গোয়াড় ষাড়ের মত ছুটোছুটি করছে,তাতে জুতোর দফা রফা হতে দেরী হয়না।
কোন উপায়ান্তর না দেখে, জুতা জোড়া সেখানে রাখতেই অন্যদেরটার মত মুহুর্তের মধ্যে ধুলো কাদায় মাখামাখি হয়ে গেল। মিনিট দশেকেই তার অন্য চেহারা!
শুনেছিলাম ন’টায় শুরু হবে এখন দেখি সাড়ে নয়টা বাজে তবুও নামাজ শুরু করার নাম নেই! তখনো কাতারে কাতারে লোকজন আসছে বসার জায়গা ফুরিয়ে গেছে অনেক আগে। দু-তিনবার সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফাঁকা জায়গাগুলো পুরন করল।
ঘটনা কি? দার্জিলিং এ এত মুসলুমান আছে বলে শুনিনি কখনো! এর মাঝে দেখি কিছু গোর্খা পুলাপানও টুপি পরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাশে বসা ভদ্রগোছের এক মুসুল্লিকে আদব ভরে সালাম দিয়ে কারণটা জিজ্ঞেস করলাম? চাচা এখানে কি এত মুসলমান? আবার দেখি গোর্খারা মুসলিম ও আছে!
চাচা হেসে কয়; মুসলমান আছে বাবা কিছু-তা প্রতিবারই মাঠ ভরে যায়। কিন্তু এইবার এসেছে তিনগুন মানুষ। এর মধ্যে কয়জন সত্যিকারে মুসলমান আর কয়জন আজকের জন্য সেইটা বোঝা মুশকিল!
‘কারন কি চাচা -কোন ঝামেলা হবে নাতো?’আমার মনে তখন শংকা!
তিনি হেসে বললেন,‘না বাবা। তুমিতো জানো শাহরুখ খান এসেছে এখানে শ্যূটিং করতে। তার নাকি আজ ঈদের নামাজ পড়তে আসার কথা! তাই এই অবস্থা!’
এইবার বুঝলাম আসল কাহিনী!
ইমাম সাহেব উর্দু ভাষায় এতক্ষনে বার তিনেক নামাজের দোয়া দরুদ আর রুকু সেজদার কায়দা কানুন সবিস্তারে বয়ান করে ফেলেছেন। তিনি আর বলার মত কথা খুজে পাচ্ছন না ( সম্ভবত শাহরুখ খান আসার অপেক্ষা তিনিও করছেন- এত সময় ক্ষেপন করতে করতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন) ।
বহু মাতব্বর একখানে জড়ো হয়েছে। একজনে নামাজ শুরু করার জন্য হ্যা বললে অন্য দু জনে বাঁধা দেয় - সেই দুজন আবার হ্যা বললে প্রথম দুজন বাগড়া দেয়। কেউ একজন রাগ করে উল্টেদিকে হাটা দেয়,অন্যজন আবার তার পিছে দৌড়ায় মান ভাঙ্গাতে।
ওদের হাবে-ভাবে বদ্ধমুল ধারনা হল দার্জিলিং এ মুসলিম নেতার উৎপত্তি ঈদের জামাত থেকে। তাদের এই ঝুলো-ঝুলিতে প্রথমে মজা পেলেও একসময় মেজাজটাই খিঁচড়ে গেল।
অবশেষে শুরু হল দশটা নাগাদ। শেষ হল সাড়ে দশটায়। নামাজ শেষে দেখি আশে পাশের হাজার হাজার লোক ব্যালকনি ছাদ আর রাস্তায় দাড়িয়ে নামাযীদের দেখছে! আমার দুই বন্ধু হতবাক এত মানুষ দেখে।
তবে এরমধ্যে কতজন নামাজ দেখছে আর কতজন শাহরুখের জন্য ব্যাকুল নয়নে তাকিয়ে আছে সেটা বের করা আমার কর্ম নয়!
সবাইকে ঈদ মোবারক!
সময়কালঃ ২০০৪ সাল / ছবিঃ সেই সময়ে দার্জিলিং এ 'ম্যায় হু না' ফিল্মের স্যুটিং(২০০৪)-এর ক্লিপ।
১৪ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২৫
শেরজা তপন বলেছেন: এইটা কি প্রবন্ধ?
অশেষ ধন্যবাদ ভ্রাতা আপনাকে।
২| ১৪ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: মুসল্লি বাড়ার এটাই বড় কারণ। ঈদ মোবারক।
১৪ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৭
শেরজা তপন বলেছেন: তাতো অবশ্যই এতে কোন সন্দেহ নেই।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে- ভাল থাকুন।
ঈদ মোবারক
৩| ১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩৮
সভ্য বলেছেন: ঈদ মোবারক লেখা ভালো হয়েছে। ঈদ ভালো কাটুক, শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।
১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:০৯
শেরজা তপন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও ঈদের শুভেচ্ছা আপনাকে- ভাল থাকুন
৪| ১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধি।
ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন
ঈদ মোবারক
১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:১১
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার প্রতিও আমার অনুরূপ শুভ কামনা। ভাল থাকুন সুন্দর থাকুন।
৫| ১৪ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: ঈদের দিন শহরের ছেলেরা পায়জামা পাঞ্জাবি এবং গ্রামের অধিকাংশ মানুষ লুঙ্গি পরে। কারণ কী?
১৪ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৫৪
শেরজা তপন বলেছেন: আমার জানা নেই- আপনি কি জানেন?
৬| ১৫ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৫৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: ইস ফ্লিল্ম স্টারের জন্য ঈদ জামাতে এক মাঠ মুসলমানের অপেক্ষা। কি দারুণ মুসলমান
১৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৪১
শেরজা তপন বলেছেন: আমার ব্লগে সম্ভবত আপনার প্রথম আগমন। তেমনটা হলে স্বাগতম!
ঠিক বলেছেন- ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে ধর্মপ্রান মুসলমানদের জন্য কষ্টদায়ক
৭| ১৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৭
অশুভ বলেছেন: আমরা সবাই দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত। তাই দুনিয়ার তারকাই আমাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। একটু বাসি ঈদ মুবারক।
১৬ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২২
শেরজা তপন বলেছেন: আপনাকে পেয়ে ভাল লাগল।
ধন্যবাদ
ঈদ মোবারক
৮| ১৭ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৮
মনিরা সুলতানা বলেছেন: এই উৎসাহ সবখানেই! আমার ইন্ডিয়া বসবাসের জীবনে বহুবার দেখেছি , দুবাই তে ও এক ই কাহিনী।
যাইহোক দারুণ স্মৃতিচারণ ! ঈদ শুভেচ্ছা প্রিয় ব্লগার।
১৭ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৪৭
শেরজা তপন বলেছেন: আপনি ইন্ডিয়াতে বসবাস করেছিলেন নাকি?? বেশ তো
দুবাইতে কোথায় ছিলেন?
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা- ভাল থাকুন সবসময়
৯| ১৮ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৫৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: জ্বি মোটামুটি একটা সময় পার করেছি- ২০০৫ থেকে
মুম্বাই তে থাকতাম আন্ধেরী আর হিরানন্দিনী/ পাওয়াই।
গুরগাঁও তে সেক্টর২৯ ইউনিওয়ার্ল্ড
সিংগাপুরে কোভান
দুবাইতে মিরদীফ ।
২০১৯ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে থিতু হয়েছি।
১৮ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:১১
শেরজা তপন বলেছেন: বোম্বে এখনো যাওয়া হয়নি। দুবাইতে ৪ মাস ছিলাম!
আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডারতো বেশ ওজনদার
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অত্যন্ত সুলিখিত প্রবন্ধ।