নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...
চারদিকে শুধু তুষারের সমুদ্র। আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বরফে ঢাকা অসংখ্য পাহাড় সাদা সাদা মাথা তুলে বিষণ্ণ আকাশটা ছুঁয়ে আছে। আকাশে তারা জ্বলছে, কিন্তু কেমন নিবু নিবু। দূর থেকে মাঝেমধ্যে কানে আসছে তুষার-ধ্বসের শব্দ। একটা সময় তুষারাবৃত গিরিপথ অতিক্রম করে গেলাম। প্রকৃতির এই অপরূপ মূর্ত-স্তব্ধ-শান্ত-মোহময় রূপ আগে কখনো দেখিনি। সেই অনিন্দ্য প্রাকৃতিক শোভা আমাকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে আজও তার বর্ণনার ভাষা খুঁজে পাই না।শরৎচন্দ্র দাশের লেখা ‘আ জার্নি টু লাসা অ্যান্ড সেন্ট্রাল টিবেট’ বইয়ের দেবাংশু দাস গুপ্তের করা বাংলা অনুবাদ ‘তিব্বতে দুবার’ থেকে বিবরণটি তুলে দেওয়া হয়েছে।
আজ থেকে ১৪০ বছর আগে ১৮৮১ সালের ৩০ নভেম্বর তিব্বতের কোন এক পার্বত্য পথের বিবরণ লিখে গেছেন শরৎচন্দ্র দাশ। পাশ্চাত্য দুনিয়ার কাছে তিনিই প্রথম তুলে ধরেছিলেন তিব্বতের সমাজ, সংস্কৃতি ও বৌদ্ধ দর্শনের নানা ইতিবৃত্ত। এ ছাড়া লিখেছিলেন ভ্রমণকাহিনী, তিব্বতি ভাষার অভিধান ও সেদেশের সংস্কৃতি নিয়ে একাধিক বই। কেবল অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান অর্জন নয়, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে শরৎচন্দ্রের দুই দফা তিব্বত অভিযান বিশেষ গুরুত্ববাহী।
কলম্বাস, ম্যাগেলান, ক্যাপ্টেন কুক কিংবা ডেভিড লিভিংস্টোনের মতোই আবিষ্কারের নেশায় ছুটেছিলেন শরৎচন্দ্র। চট্টগ্রামের পটিয়ার আলমপুরের এই সন্তান এখনো বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের কৌতূহলের বিষয়। সিনেমার চরিত্রের মতোই তাঁর জীবন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ও সাময়িকীগুলোতে তাঁকে নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। নিয়মিতই ছাপা হচ্ছে প্রবন্ধ-নিবন্ধ। তবে বেশির ভাগ জায়গায় তাঁকে চিত্রিত করা হয়েছে ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে। আনন্দবাজার পত্রিকায় পর্জন্য সেনের লেখার শিরোনাম ছিল ‘পণ্ডিত গুপ্তচর’। নিউইয়র্ক টাইমস-এ সোমনাথ সুব্রামানিয়ানের লেখার শিরোনাম, ‘দা ইন্ডিয়ান স্পাই হু ফেল ফর টিবেট’।
যে গুপ্ত রাজনৈতিক দৌত্যের কথা বলা হল এখানে, যার অপর নাম গুপ্তচরবৃত্তি, তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে রাষ্ট্রের ধরন, তার উত্থান পতন। আমরা বৌদ্ধধর্মের পণ্ডিত হিসাবেই চিনি শরৎচন্দ্র দাসকে (ছবি)। তাঁর রচিত দু’টি মহামূল্যবান গ্রন্থ অবদান-কল্পলতা(কন্ট্রিবিউশন) ও জার্নি টু লাসা— বৌদ্ধ মহাবোধি সোসাইটিতে গেলে দেখতে পাওয়া যায়।
***
মানচিত্রের নিখুঁত জ্ঞান, সাহসী ও সৎ চরিত্রের জন্য স্বয়ং বড়লাট তাঁকে পাঠান এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মিশনে। ১৮৭৯ সালে, বৌদ্ধ ভিক্ষুর বেশে শরৎচন্দ্র দাশ প্রবেশ করেন তিব্বতে। ফিরে আসেন তিব্বতের সুস্পষ্ট ভৌগলিক জ্ঞান নিয়ে, তৈরি করেন মানচিত্র। ১৯০৩ সালে ফ্রান্সিস ইয়ংহ্যান্ডের নেতৃত্বে তিব্বত আক্রমণ করে ব্রিটিশ সরকার। অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে শরৎচন্দ্র দাশের গোপন মিশন, বৌদ্ধ মঠে দিনযাপন। ভাষাশিক্ষা আমূল বদলে দেয় তাঁর অস্তিত্বকেও।
তিব্বতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল শরৎচন্দ্রের কিন্তু অনুমতি পত্রের পাশাপাশি এমন একজন ভ্রমণ সঙ্গীর প্রয়োজন যিনি হবেন তিব্বতিয়ান ভাষায় পারদর্শী বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, চতুর ও সাহসী পাশাপাশি তিব্বতের রাস্তা তাঁর হাতের তালুর মত পরিচিত থাকতে হবে। এর উপরে স্থানীয় হলে ভাল হয়-কিছু সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী লোকের সাথে পরিচয় থাকলেতো কথাই নেই। তেমন একজনকে তিনি পেয়েও গেলেন- সেই বন্ধু-শিক্ষক, সহ-অধ্যক্ষ উগিয়েন( অনুবাদের বইতে তাঁকে ‘উইগেন’ বা ‘উগ্যেন’ বলা হয়েছে) গাৎসো-র সূত্রে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। উগিয়েন আগাগোড়াই শরৎচন্দ্রের এই গুপ্তচরবৃত্তির কথা গোপন রেখেছিলেন। তাঁর সঙ্গ সাহচর্য ছাড়া লাসায় পৌঁছানো ছিল অসম্ভব। ‘সেভেন ইয়ার্স ইন তিব্বত’ ফিল্মটা দেখলে বোঝা যায় নেপালি, ভুটানি কিংবা তিব্বতি লামা বাদে বিদেশীতো বটেই ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকার জন্য ভারতীয়দেরও তখন লাসায় ভ্রমণ ছিল প্রায় অসম্ভব। দাশের যাত্রা পথে কত শত প্রতিবন্ধকতা ছিল সেটা অল্প কথায় প্রকাশ অসম্ভব।
উগিয়েন গ্যাতসো ছিলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক। তিনি সিকিমের রিনচেনপং মঠের একজন লামা ছিলেন, যেটি পূর্ব তিব্বতের শিগাৎসে তাশিলহুনপো লামাদের সাথে যুক্ত ছিল। উগিয়েনই তাশি লুনপো ( তাশিলুহুনপু) থেকে শরৎচন্দ্রের জন্য একটি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছিলেন এবং তাঁর সাথে তিব্বতে গিয়েছিলেন। গোপন মিশনের জন্য শরৎচন্দ্রের বেতন মাসে দেড়শ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিনশ টাকা করা হয়। সে বিবাহিত ছিল. রওনা হওয়ার আগে শরৎচন্দ্র তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন যে তিনি কিছু অফিসিয়াল কাজে কয়েকদিনের জন্য শিগাৎসে যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই, শিগাৎসে কোথায় ছিল বা "ব্যবসা" এর প্রকৃতি কি তা তার কোনও ধারণা ছিল না; তার স্বামী মিশন থেকে ফিরে না আসলে সরকার তার জন্য একশত টাকা পেনশন নির্ধারণ করেছে তাও সে জানত না।
শরৎচন্দ্র দুবার তিব্বতে গিয়েছিলেন; প্রথমে ১৮৭৯ সালে চার মাসের জন্য এবং তারপর ১৮৮১ সালে চৌদ্দ মাস ছিলেন সেবার।
দার্জিলিং থেকে পেমিয়াংচি, তারপর কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরে জোংরি। যাত্রার সময় শরৎচন্দ্র দাসকে বৌদ্ধ লামার ছদ্মবেশ নিতে হয়েছিল। কাঞ্চনজঙ্ঘার অজানা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল অতিক্রম করে নেপাল হয়ে চথং লা পেরিয়ে তিব্বতের তাশি-লুনপোতে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। সেখানে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। তিব্বত ভ্রমণের সুবিধার্থে তাশি লুনপো মঠে ছাত্র হিসেবে ভর্তিও হয়ে যান শরৎচন্দ্র। সেই দফায় ছয় মাস মঠে থেকে তিব্বতি ভাষা ও বৌদ্ধধর্ম চর্চা করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ফিরে আসার সময় লামার মঠ থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন ভারতে হারিয়ে যাওয়া দণ্ডীর কাব্যাদর্শ, কাশ্মীরি কবি ক্ষেমেন্দ্রের ‘অবদান-কল্পলতা’ ও চান্দ্র ব্যাকরণের প্রাচীন পুথি। এ ছাড়া তিব্বতের গুরুত্বপূর্ণ পর্বত, হিমশৈল আর পথ-প্রান্তরের স্কেচ।
তাঁর এই অভিযানের কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘার অজানা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোর বিষয়ে একটি প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিলেন ইংরেজরা।
সালটা ১৮৮২। তীর্থযাত্রীদের দলে মালবাহক ও তিব্বতি লামারা আছেন। আর আছে লামার পোশাক-পরা, লাল পাগড়ি, চোখে সানগ্লাস, এক ভিনদেশি। ক্লান্তিতে মাঝে মাঝে নুয়ে পড়ছে সে। চিনে পেস্ট্রির দোকানে জমায়েত হওয়া ভিড়টা তাকে দেখে মন্তব্য করল, ‘দেখেছ, আবার এক বসন্ত রোগী হাজির হয়েছে। ইস, বেচারির চোখ দুটো বোধহয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আহা রে! বাঁচলে হয়!’ ব্রিটেনে তার ৩২ বছর আগে এডওয়ার্ড জেনার নামে এক ডাক্তার বসন্তের টিকা বের করে ফেলেছেন, তবে এই দেশে সেই খবর পৌঁছায়নি।
পেস্ট্রির দোকানের জমায়েত জানে না, লাল পাগড়ি ভিনদেশির সঙ্গে আছে রিভলভার, কম্পাস, সেটস্কোয়ার ও হরেক কাগজ। ভিনদেশি তিব্বতি ভাষায় সুদক্ষ, কখনও পাঞ্চেন লামার মঠে খুঁজে পেয়েছেন তিব্বতি হরফে দণ্ডীর কাব্যাদর্শ, কাশ্মীরি কবি ক্ষেমেন্দ্রের ‘অবদানকল্পলতা’ ও চান্দ্র ব্যাকরণের প্রাচীন পুঁথি। সেগুলি নকল করে তাঁর দেশে নিয়ে যাবেন ভারতে।
তিব্বতি সংস্কৃতি ও জনজীবনে আগ্রহী এই ভিনদেশি আর একটি কাজ করেছেন। চলার পথে প্রতিটি পাহাড়, নদীনালা ও ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য কাগজে লিখে নিয়েছেন, লাসায় আসার পথে চুম্বি উপত্যকা, ‘ইয়ামদ্রোক সো’ হ্রদে ঝটিতি জরিপ করেছেন। টুকে নিয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এলাকার হরেক পাহাড় ও পথের পরিচয়। পরে সেগুলি ভারত সরকারের দফতরে গোপনে বাক্সবন্দি হবে, তার পরে লর্ড কার্জনের আমলে ব্রিটিশ সেনাপতি ইয়ংহাজব্যান্ড এই সব তথ্যের ওপর নির্ভর করেই তিব্বত দখলে হানাদারি চালাবেন।
***
ওই ভিনদেশি এক বঙ্গ-সন্তান। শরৎচন্দ্র দাশ। তাঁর পরিচয় নিয়ে কয়েক বছর পরেও তিব্বতে ঘোর ধোঁয়াশা। শরৎচন্দ্র দাশ তবে ঠিক কি? পণ্ডিত? রোমাঞ্চকর দুর্গম পথের অভিযাত্রী? না কি ব্রিটিশের বেতনভুক গুপ্তচর?
লাসা সফরের তিন বছর পর এই রহস্যময় চরিত্রটিকে দেখা গেল চিনের রাজধানী পিকিং (এখন বেইজিং) শহরে। সেখানে বাণিজ্যের খোঁজে আসা তিব্বতিরা তাঁকে ‘কা চে লামা’ বা ‘কাশ্মীরের লামা’ বলে ডাকেন। শরৎচন্দ্র দাসের সঙ্গে অবশ্য কাশ্মীরের কোনও সম্পর্ক নেই, তিনি এসেছেন ‘কোলম্যান মেকলে’ নামে এক ব্রিটিশ কূটনীতিককে সাহায্য করতে। কোলম্যান লাসা শহরে ব্রিটিশ দূতাবাস খুলতে যাবেন, পিকিং শহরে তাই ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন। চিনের রাজধানীতে বাঙালি শরৎচন্দ্র দাস এ বিষয়ে তাঁর প্রধান সাহায্যকারী।
দূতাবাস খোলা আর হয়নি। কিন্তু শরৎচন্দ্র দাসের পরিশ্রমী তথ্য থেকে ব্রিটিশরা এ ভাবেই নানা সাহায্য পেয়েছে।
আবার, কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় এই গুপ্তচরের লেখালিখি খুলে দিয়েছে তিব্বত ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার নতুন দিগন্ত। নিজেই তৈরি করেছেন তিব্বতি-ইংরেজি ভাষার অভিধান। অতঃপর থাইল্যান্ডে গিয়েছেন, বৌদ্ধ শাস্ত্রচর্চার জন্য খেতাব দিয়েছেন সেখানকার রাজা। মৃত্যুর দু’বছর আগেও বৌদ্ধ শাস্ত্র ও সংস্কৃতি ঘাঁটতে কয়েক মাসের জন্য পাড়ি দিয়েছেন জাপান। উনিশ শতকেই তিব্বত-চর্চার জন্য সারা পৃথিবীর কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছেন এই বাঙালি।
***
দার্জিলিং থেকে পেমিয়াংচি, তার পর কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরে জোংরি। সেখান থেকে চাং থাং গিরিপথ। বরফে পা ডুবে যাচ্ছে, এক এক জায়গায় উগ্যেন কোমরের কুকরি দিয়ে বরফ কেটে তৈরি করছেন পায়ে চলার ধাপ। গাছের শাখাপ্রশাখা কেটে তৈরি করছেন রাস্তা। ঝুরো পাথর নেমে আসছে, ১৯০০০ ফুট উচ্চতায় দুজনেরই নিশ্বাস পড়ছে ঘন ঘন। রাতে থাকার জায়গা বলতে পাহাড়ি গুহা। চাং থাং পেরিয়ে এ ভাবেই ওঁরা ঢুকে এসেছেন তিব্বতি সীমানার মধ্যে। চলার পথে বহুবার নিশ্চিত মৃত্যুর ফাঁদ থেকে বেঁচে ফিরেছেন।
~ দাশ কতৃক প্রণীত বিশ্বের প্রথম তিব্বতিয়ান টু ইংলিশ ডিকশনারি।
তিব্বতি সংস্কৃতিতে আগ্রহী বাবু শরৎচন্দ্র দাশ সে যাত্রায় প্রায় ছয় মাস ছিলেন পাঞ্চেন লামার তাশি লুনপো মঠে। নিয়ে এসেছেন ভারতে হারিয়ে-যাওয়া নানা বৌদ্ধ গ্রন্থের অনুলিপি। তারই মধ্যে ব্রিটিশ সরকারকে জানাচ্ছেন দেশটা নিয়ে হরেক তথ্য। ভারতের তৎকালীন সার্ভেয়ার জেনারেল বাবু শরৎচন্দ্র দাশের পাঠানো রিপোর্ট সম্বন্ধে লিখছেন, ‘ওঁর পাঠানো প্রতিটি তথ্য মূল্যবান, মানচিত্র তৈরিতে কাজে দেবে।’
অচেনা দেশকে জানতে গেলে, দখল করতে গেলে প্রথমেই দরকার তার মানচিত্র। ব্রিটিশ সরকার শরৎচন্দ্রকে তাদের মতো ব্যবহার করছে, আবার শরৎচন্দ্র গুপ্তচরবৃত্তির ফাঁকে জেনে নিচ্ছেন বৌদ্ধ ধর্মের হরেক তথ্য, নিয়ে আসছেন তিব্বতি ভাষায় লেখা বিভিন্ন সংস্কৃত পুঁথি। এই সব পুঁথিপত্র সংগ্রহ তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফল, ব্রিটিশ সরকারের এ বিষয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই।
দু’বছর বাদে শুক্লপক্ষের এক রাতে ফের দার্জিলিং থেকে রওনা দিলেন শরৎচন্দ্র ও উগ্যেন। এ বার ১৪ মাসের সফর।
তাশি লুনপোয় ফের পরিচিতদের সঙ্গে দেখা। দেখা গেল, পাঞ্চেন লামার দরবারে এক মন্ত্রীর বউ সিকিমের রাজকন্যা। মেয়েরা নাচগানে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পরিচিত অতিথিদের। একই গান প্রথমে তিব্বতিতে, তার পর চিনা ভাষায়। বাবু শরৎচন্দ্র দাস জানেন, হিমালয়ের সংস্কৃতিতে প্রত্যেক দেশের সঙ্গে প্রত্যেকের সম্পর্ক থাকে।
পাঞ্জাবের কেশরী রণজিৎ সিংহের পর তাঁর এক সেনাপতি তিব্বত দখলের প্রবল চেষ্টা চালিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তিব্বতি ও চিনা সৈন্যরা সেই শিখদের পরাস্ত করে।
***
তাশি লুনপোয় পাঁচ মাস থেকে শরৎচন্দ্র এ বার লাসা শহরে। তিব্বতি জনজীবন ফুটে উঠছে তাঁর রিপোর্টে, সেখানে কখনও জানা যাচ্ছে ‘রাগ্যিবা’দের কথা। রাগ্যিবারা মূলত ভিক্ষা করে খায়। ‘লাসার সমাধিস্থলে মৃতদেহ এলে সেগুলিকে টুকরো টুকরো করে কুকুর, শকুনদের খাওয়ায়।’
কখনও বহুবিবাহের কথা, ‘মেয়েটি অবাক হয়ে তাকাল। সে কি, তোমাদের ওখানে এক মেয়ের একটাই স্বামী? তোমার মনে হয় না, আমরা অনেক বেশি সুখী?’ পরক্ষণে তাঁর মন্তব্য, ‘ভারতে স্ত্রীরা স্বামীর প্রেম ও সম্পত্তির অংশীদার। কিন্তু পরিবারের সব ভাইয়ের উপার্জন ও উত্তরাধিকার যাঁর হাতে বর্তায়, সেই তিব্বতি স্ত্রী সত্যিকারের ক্ষমতাবান গৃহিণী।’ জনশ্রুতি, তাঁর এক তিব্বতি স্ত্রীও ছিল।
কিন্তু ঘটনাটিকে আজকের দৃষ্টিতে দেখলে হবে না। তখন নেপাল বা চিন থেকে যাঁরা তিব্বতে ব্যবসা করতে চান, তাঁদের অনেকেরই দেশে একটি স্ত্রী, তিব্বতে আর একটি।
দুর্গম এই সফর পণ্ডিত গুপ্তচরকে কখনও ক্লান্ত করেছে, কখনও বা হতবাক। দেখেছেন নীল পোশাকে, ঘোড়ায় চড়া ‘তেসি’-দেরও। তেসি-রা এক রকমের কুরিয়ার, হলুদ ব্যাগে চিঠিপত্র ও দলিল দস্তাবেজ নিয়ে লাসা-পিকিং যাতায়াত করেন। এই ঘোড়সওয়ার, ডাকহরকরাদের অন্য খাতির। একটি সরাইখানায় পৌঁছেই বন্দুক উঁচিয়ে আকাশে ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করেন, যাতে পরবর্তী সরাইখানা তাঁর জন্য ঘোড়াদের সাজিয়ে রাখতে পারে। প্রতি সরাইখানায় তেসি-র জন্য পাঁচটি ঘোড়া মজুত থাকে, মধ্যরাতে তেসি বসে তিন ঘন্টা ঝিমিয়ে নেন, তার পরই সরাইওয়ালা ডেকে দেয়। তেসি-র চাকরিতে শুয়ে ঘুমানো বারণ। পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো লঙ্কা ও দুধ খাওয়াও নিষিদ্ধ।
লাসা ভ্রমণের এ রকমই সব বিবরণ লিখে গিয়েছেন এই পণ্ডিত গুপ্তচর। সে যাত্রা লাসা থেকে ফেরার পর আর তিব্বতে ঢোকার অনুমতি তিনি পাননি। কিন্তু হিমালয়ের গহনে সেই দুর্গম দেশটিকে কোনও দিনই ভুলতে পারেননি তিনি। বাড়ি করলেন দার্জিলিঙে, নাম রাখলেন ‘লাসা ভিলা।’ সেখানেই থাকত তিব্বতি পুঁথিপত্র ও মূর্তি-সম্ভার। মাঝে মাঝে কলকাতায় মানিকতলার বাড়িতে স্ত্রী, পুত্রদের কাছে আসতেন। জাপান থেকে ফেরার পর ১৯১৭ সালে এই দার্জিলিঙের বাড়িতেই মারা যান শরৎচন্দ্র।।
মানিকতলার সেই বাড়ি আর নেই। দার্জিলিঙে স্টেশনের কাছে ‘লাসা ভিলা’ বাড়িটি টিকে আছে হতমান অবস্থায়। শরৎচন্দ্রের উত্তরসূরিরা বাড়িটি বেচে দিয়েছেন। তার পিছনে বেখাপ্পা সব ইমারত। ভিলার বর্তমান মালিক সুদীপ তামাং পণ্ডিত গুপ্তচরের কাহিনী জানেন, তিনিই কোনও মতে ঐতিহাসিক বাড়িটিকে প্রোমোটারের আগ্রাসন থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
ভোলেননি স্থানীয় তিব্বতিরাও। বছর দুয়েক আগে নোরবু নামে তিব্বতি বংশোদ্ভূত স্থানীয় এক ভারতীয়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দার্জিলিঙে তৈরি হয়েছে ‘হিমালয়ান টিবেট মিউজিয়াম।’ সেখানে আধুনিক তিব্বত-চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ হিসাবে শরৎচন্দ্র সসম্মানে উল্লিখিত।
***
• কিছু তথ্যগত অসগ্নলতার জন্য দ্বিতীয় পর্বটা একটু দেরিতে পোষ্ট দিলাম। এর মাঝে ‘সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত’ সিনেমাটা ফের দেখলাম। শরৎচন্দ্র দাশের বাংলা অনুবাদকৃত কলকাতা থেকে আনা বইটা (তিব্বতে দু’বার) খুঁটিয়ে পড়লাম। তিব্বতে তিনি যেই ক্ষমতাসম্পন্ন লামা, সাধু ও পণ্ডিত ব্যক্তিটির সাহচর্য ও সহযোগিতা পেয়েছিলেন তাঁকে তিনি তাঁর বইতে বারবার মন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্টের একটা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তবে পুরো তিব্বত জুড়ে তাঁর যে প্রভাব প্রতিপত্তি- তাঁর ছত্রছায়ায় না থাকলে শরৎচন্দ্র কোনমতেই তিব্বত পৌছুতে পারতেন না সেটা নিশ্চিত করে যে তিনি সাধারণ কোন মন্ত্রী নয়। যদিও এর উত্তর মেলেনি। শরৎচন্দ্রের ভ্রমণসঙ্গী উইগেনের নিয়েও তেমন আলোচনা কোথাও নেই। একমাত্র তিনিই জানতেন দাশ ভ্রমণ ও জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি মূলত গুপ্তচরবৃত্তি করছেন। শুধুমাত্র আনন্দবাজারে তাঁর ছোট্ট একটু পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
২য় পর্ব শেষ
প্রথম পর্বের জন্যঃশরৎ চন্দ্র দাশঃ 'পণ্ডিত,পরিব্রাজক ও গুপ্তচর' #১
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৯
শেরজা তপন বলেছেন: মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম।
সর্বকালের সেরা বাঙ্গালীদের মধ্যে একজন তিনি নিঃসন্দেহে তবে আমার একটাই কষ্ট যে, তিনি বাংলায় কোন বই লেখেন নি।
২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এ পর্বে আরও কিছু জানা হলো এক সময়ের নিষিদ্ধ দেশ তিব্বত সম্পর্কে।+++
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:০০
শেরজা তপন বলেছেন: যারা যারা আগের পর্ব পড়েছে তারা বেশীরভাগই ভুলেই গেছে সম্ভবত।
তাও আপনি মনে রেখেছেন। অনেক ধন্যবাদ মাইদুল ভাই- ভাল থাকবেন। পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১১
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: শরতচন্দ্রের জীবন সম্পর্কে কিছুই আসলে জানা ছিল না। অনেক কিছু জানলাম।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৩
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হলাম। ধন্যবাদ-ভাল থাকুন।
৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৩৪
কামাল১৮ বলেছেন: বকতিয়ার খিলজি তিব্বত অভিজানে গিয়েই সমূলে ধ্বংস হন।তিব্বত এখন চীনের অংশ।উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৫
শেরজা তপন বলেছেন: বখতিয়ার খিলজির তিব্বত অভিযানের বিষয়টা আমার জানা ছিল না।
হ্যাঁ বেইজিং থেকে লাসা পর্যন্ত চীন যে ট্রেন লাইন করেছে সেটা বিশ্বের আরেক বিস্ময়।
৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৩৩
ঢাবিয়ান বলেছেন: অনেক কিছু জানলামশরৎ চন্দ্র দাশ সম্পর্কে ।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৬
শেরজা তপন বলেছেন: লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ সুপ্রিয় ব্লগার ঢাবিয়ান।
শুভাকামনা নিরন্তর!
৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: শেরজা এরকম একটি পোস্ট লিখতে অনেক পড়তে হয় এবং অনেক সময় লাগে সেটা আমি জানি।
অথচ আমরা আপনার পরিশ্রমের লেখাটি দশ মিনিটেই পড়ে শেষ করে ফেলি। কখনও কখনও বাঁকা একটা মন্তব্য করে দেই।
আপনি আরো লিখুন।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০২
শেরজা তপন বলেছেন: দুঃখিত দেরিতে মন্তব্য উত্তর দেওয়ার জন্য। জেনে আপ্লুত ও অনুপ্রাণিত হলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ফের মন্তব্যে আসার জন্য।
৭| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: বড় ভাই অনেক জানলাম তবে ইয়ে মানে ঐ যে রোমাঞ্চকর কিছু , ঐটা জানলাম না কতদিন অপেক্ষা করতে হবে ?
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০৪
শেরজা তপন বলেছেন: রোমনাঞ্চকর কোনটার কথা বলছেন গো ব্রাদার??? বুঝতে পারছি না।
উত্তর দিতে গিয়ে যে পরিমান দেরি হল তাতে এই উত্তর আপনার নজরে গোচর হয় কিনা আল্লা মালুম!
৮| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫১
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: খেই হারিয়ে ফেলেছি।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০৪
শেরজা তপন বলেছেন: লিখতে গিয়ে পদে পদে আমিও খেই হারিয়ে ফেলেছি ভাই- আপনাত আর কি দোষ
৯| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩৫
করুণাধারা বলেছেন: শরৎচন্দ্র দাসের সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন ছিল প্রথম পর্ব পড়ে। সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর এই পর্বে পেলাম।
ভেবেছিলাম মন্তব্য করবো না, তবু করলাম আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে। চোখের সমস্যা দূর হয়েছে?
এই পোস্ট লিখতে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে! অল্প অল্প করে লিখলেও পারতেন!
চোখের সমস্যা সমাধান না করে উত্তর দেবার দরকার নেই।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:১০
শেরজা তপন বলেছেন: আমার চোখের অবস্থা ভাল মন্দ মিলিয়ে আছে এক রমক। কম্পিউটারে একেবারেই কম বসছি। মোবাইলে ব্লগ পড়া হয় কিন্তু মন্তব্য করা হয় কম আর মোবাইল ভার্সানে উত্তর দেবার প্রশ্নই আসে না।
অবশ্যই মন্তব্য করবেন। আপনার মন্তব্যের গুরুত্ব আমার কাছে অনেকখানি। আমি সময় সুযোগ বুঝে উত্তর দিব না হয়।
কম বয়সে পড়াশুনা কম করেছি এখন বেশী বয়সে এসে সেটা পুষিয়ে নেবার চেষ্টা করছি
ভাল থাকুন সবসময়।
১০| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৬
সোনালি কাবিন বলেছেন: আনকোরা সব তথ্য জানা হলো। ++++++
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০৭
শেরজা তপন বলেছেন: মি জেনে আপ্লুত হলাম। কাউকে নতুন কিছু জানাতে পারলে নিশ্চিতভাবে খুব ভাল লাগে। ফের যদি সেটা হয় নিজের দেশ বা দেশের মানুষের গর্বের কিছু।
ধন্যবাদ।
১১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ভোর ৬:১৩
সোহানী বলেছেন: এ লিখা কি আগে পড়েছিলাম?
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০৬
শেরজা তপন বলেছেন: আপনিই তো এই পর্ব চেয়েছিলেন পড়বেন বলে অপেক্ষা কছেন বলেছিলেন। এখন বলছেন আগে পড়েছিলেন কি না?? প্রথম পর্ব পড়েছিলেন নিশ্চিত- তাই দাশ বাবুকে চেনা চেনা লাগছে
১২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪২
জুন বলেছেন: অর্ধেকটা পড়লাম শেরজা, তার কার্যক্রম পড়ে মনে হলো বৌদ্ধ ধর্মের উপর জ্ঞান অর্জন নয়, সে বৃটিশ সরকারের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করতেই তিব্বত গিয়েছিল। সে যদি ভুগোলবিদ হতো তবে তার জ্ঞান কে সে একটি দেশ আক্রমণের হাতিয়ার হতে দিতো না।
যাই হোক বাকিটা পড়ে আবার আসছি। তার থাইল্যান্ড এর রাজার উপহার পর্যন্ত পড়েছি। কোন রাজা জানলে ভালো হতো
লেখায় প্লাস দিয়ে গেলাম।
+
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:১৩
শেরজা তপন বলেছেন: আমার তা মনে হয় না। পুরোটা পড়ে আসেন তারপরে সুযোগ হলে আলোচনা করছি।
তবুও একটু বলি; চীনারা যেভাবে সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে তিব্বতকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তাতে দাশের বৃটিশ নাগরিক হিসেবে মনে করা স্বাভাবিক যে বৃটিশের স্বার্থে, আদি বৌদ্ধ ধর্ম টিকিয়ে রাখার জন্য তিব্বতের ভালর জন্য সেখান থেকে চীনাদের উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।
তিন্য বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলেন ও তিব্বতকে ভীষণ ভালবাসতেন। শেষ বয়সে বৃটিশদের বিরুদ্ধে আদালতে পর্যন্ত গিয়েছেলেন।
১৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫১
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সেদিন শেষ করতে পারিনি প্রিয় তপন ভাই। অসাধারণ একটি পোস্ট লিখেছেন। ঊনবিংশ শতকের ব্রিটিশের চর হিসেবে একাধিকবার লাসায় গেছেন শরৎচন্দ্র বাবু। কিন্তু নিজেকে আড়াল করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেকে বৌদ্ধ ধর্মের একজন প্রতারকে পরিণত হন।অগাধ পান্ডিত্য ও জ্ঞানপিপাসু ওনাকে একজন কাশ্মীরি লামাতে পরিণত করেছে। তবে তিব্বতীদের বাঙালি ও কাশ্মীরিদের মধ্যে পার্থক্য বোধ না থাকায় শরৎ বাবুকে কাশ্মীরি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলে আমার অনুমান।
ইংরেজরা কতোটা ষড়যন্ত্র পটু গোটা অপারেশন চালাতে নিখুঁত ভাবে খুঁটি সাজিয়েছে। একদিকে ওনার বেতন তিনশ'টাকায় পৌঁছে দেওয়া,স্ত্রীকে ১০০ টাকা পেনসনের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।তবে রক্ষে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা তিব্বত দখল করতে পারেনি।
একটা বিসদৃশ্য চোখে পড়লো।১৯০৩ সালে বড়লাট প্রেরিত মিশনের নাম ইয়ং হাজবেন্ড মিশন।
যাইহোক পোস্টে+++
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৩
শেরজা তপন বলেছেন: সে মিশনের নেতৃত্বে ছিলেন জনাব ইয়াং হাসবেন্ড নামের এক সেনা নায়ক
তবে লাসায় বৌদ্ধদের উপরে চৈনিকদের অত্যাচারের খবর চারিদিকে যেভাবে রটেছিল যেজন্য বৃটিশোদের সাহায্য করে তিনি খুব একটা খারাপ করেননি। চৈনিকেরা সেই কাজটিই বেশ কিছু বছর বাদে করেছে। চতুর্দশ দালাই লামাকে দেশ ছাড়া করে বহু সহস্র লামাকে নিঃশ্বংসভাবে হত্যা করে হাজার হাজার বৌদ্ধ মঠ আর পাঠাগার ধ্বংস করে দিয়েছে।
দাশ বাবু সত্যকারে লাসা কে ভাল্বেসেছিল। তিনি প্রচন্ডভাবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ও তাঁর ছোট ভাই বৌদ্ধ ধর্মের জন্য নিবেদিত ছিলেন।
দারুণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:১৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: আলমপুর, পটিয়া, চট্টগ্রাম এর কৃ্তি সন্তান শরৎ চন্দ্র দাশ এর জীবন কাহিনীর দ্বিতীয় পর্বটি পড়ে আবারও মুগ্ধ হলাম।
ইতিহাস হিসেবে মোটেই প্রাচীন নয়; মাত্র দেড় শতক আগের এ কিংবদন্তী পুরুষের কথা আমার একেবারেই অজানা ছিল। চট্টগ্রামের একজন বাঙালি তিব্বতীয়-ইংরেজী অভিধান লিখে গেছেন, যা আজ অবধি তিব্বতীয় এবং ইংরেজ, উভয়ের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে, এ কথা ভেবেই অনেক গর্ব বোধ করছি।
ইয়ং হাজবেন্ড - কথাটা পড়ে পদাতিক চৌধুরির মত আমিও খানিক থমকে গিয়েছিলামি!
পোস্টে নবম প্লাস। + +
১৪ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০১
শেরজা তপন বলেছেন: যাপিত জীবন নিয়ে একটু ব্যস্ত আছেন সম্ভবত ব্লগে ইদানিং আপনাকে কম দেখা যাচ্ছে।
বিশেষ করে মন্তব্যে আর সেই আগের মত আপনাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
যাইহোক আপনার মন্তব্য সবসময় নতুন করে দেখার অনুপ্রেরণা যোগায়। এত চমৎকার করে গুছিয়ে মন্তব্য করেন মনে হয় যে কি না কি যেন লিখে ফেলেছি
আপনি ভালো থাকুন সুন্দর থাকুন সুস্থ থাকুন নিয়মিত ব্লগের এবং ব্লগারদের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: আমি উনার সম্পর্কে জানি। যতটুকু জানি তার চেয়ে হাজার গুণ বেশী আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
এই সাহসী বাঙ্গালীর কথা সকলের জানা উচিৎ। উনি তিব্বত গিয়েছেন। ফিরে এসে অভিধান লিখেছেন।