নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...
সপরিবারে কবি জীবনানন্দ দাস !~ ছবির বায়ে প্রথমে দাড়িয়ে আছেন কবি জীবনানন্দ পত্নী লাবন্য দাস।
অকাল প্রয়াত এই কবি জীবিতকালে তার যোগ্যতা অনুসারে যতটা জনপ্রিয়তা পাবার কথা ছিল কিংবা সফলতা পাবার কথা ছিল তার সিকি পরিমান পাননি বলে আফসোস করা হয়! এমন কি পুরো জীবন তিনি অসুখী ও নিরানন্দ জীবন যাপন করেছেন বলে বিভিন্ন আলোচনায় উঠে আসে। আর এর পেছনে মুলত; তার সহধর্মীনীকে দায়ী করা হয়। এমনকি শতবর্ষের ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ট্রামচাপায় নিহত এই কবির সেই দুর্ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে কেউ কেউ ইঙ্গিত করে। আর সেই দায়ভারও লাবন্য দাসকেই নিতে হয়।
এই বিশ্বে লক্ষ কোটি জুটি আছে কিন্তু সফল জুটি কয়খানা? এটা একেবারে খেটে খাওয়া মুজুর থেকে শুরু করে সমাজের সর্বোচ্চ স্তরে সবখানের কথাই যদি ধরি তবে?
অধুনা বিল গেটস কিংবা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কথাই ধরুন; বিচ্ছেদের ক'মাস আগে আমরা ক'জানাই ভেবেছিলাম, তারা আদপে অসফল একটা জুটি আর কদিন বাদে চিরতরে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে?
পৃথিবীর ক'জন বিখ্যাত কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী দার্শনিক তাদের মনের মত জুটি পেয়েছেন? এ বিশ্বে ক'টা পিয়েরে কুরি মাদাম কুরির মত জুটি এসেছে? মনের মত জুটি হয়নি বলে কারো প্রতিভাকে আটকে রাখা গেছে?
আর কবিতা সাহিত্য দিয়ে কে পেট ভরে? সংসারে কত চাওয়া কত পাওয়া- খুট মুট ঝুট ঝামেলা থাকবেই। আমাদের মত মধ্যবিত্তের কার সংসারে মান অভিমান ঝগড়া বিবাদ হয়না? বউ রাগ করে বাপের বাড়ি যায়না?
মাঝে মঝে মনে হয়না; এই সংসারের নিকুচি করি, শালার সব ছেড়ে বিবাগী হয়ে যাই?
অনেকেরই ইচ্ছে করে দেয়ালে মাথা ঠুকি, আড়কাঠে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ি কিংবা বালিশ চাপা দিয়ে ওকে মেরে ফেলি।
~কিন্তু সেই সংসারেই ফের ভালবাসার তুফান বয়। একটুখানি অসুস্থতায় সব কাজ ফেলে ছুটে আসি, সারারাত জেগে বারান্দায় পায়চারি করি। নিজের হাতে তুলে তাকে যত্ন করে খাইয়ে দিই। হাত পুড়িয়ে রাধব তবু তাকে রান্না ঘরে যেতে দিই না।
এভাবে সুখ দুঃখ ঝগড়া বিবাদ মান অভিমান আনন্দ হাসি কান্না বহুবার ছেড়ে যাওয়া ফিরে আসা, বহু চাওয়া পাওয়া না পাওয়া হতাশা দুঃখ বেদনা শেষে একদিন বার্ধক্য আসে...
পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার...
-তখন শুধু ভয় হয়- হারানোর ভয় কিংবা ছেড়ে যাবার ভয়। ভালোবাসা ঠিক তখুনি বাসা বাঁধে। প্রেম তো তাকেই বলে- সেটাই দাম্পত্য প্রেমের সবচেয়ে বড় পাওনা।
এটা খুব কম মানুষে বোঝে- তারা শুধু বাহ্যিক দিকটাই দেখে। কার বউ কতটা সুন্দর- কতটা স্মার্ট। তাদের কেমন প্রেম- কতটা আদুরে, কতটা আহ্লাদ, কি গদ গদ ভাব। স্মার্ট নাকি? দুজনের লেবেলে গেল কি না? এই সব।
এটা হয় কেমনে? দুই সংসারে, দুই পরিবেশের, দুই লিঙ্গের দুজন মানুষ একই রকম কিভাবে হয়?
হতে পারে লটারির মতন। লাখে কিংবা কোটিতে একজন।
***
জীবনানন্দ দাস মারা যাবার পরে লাবন্য দাস যখন 'মানুষ জীবনানন্দ' লিখলেন তখন এটা নিয়ে বেশ উপহাস হয়েছিল। অনেকেই বলেছিল ন্যাকা কান্না। বইটি পড়ে আমার তেমন মনে হয়নি। বরাবরের মত অযথাই বাঙ্গালী যা করে থাকে, কারো ব্যার্থতার জন্য আর কাউকে না পেলে ঘরের বউকে দায়ী করে। এখানেও তেমনটাই ঘটেছে। (ব্লগারদের ভাল লাগলে দ্বিতীয় পর্বে যাবার ইচ্ছে রইল)
মানুষ জীবনানন্দ থেকে নেয়াঃ (একেবারে শেষ থেকে শুরু করছি)
অল্প কথায় অনেক গল্প
আমার বিয়ের দশ বারোদিন পরে ঢাকায় আমার জেঠামশাই-এর কাছে যাওয়া ঠিক হল। আমি মনের আনন্দে বাক্স গুছোতে বসলাম। অল্প ক’দিনের জন্য যাচ্ছি বলে শাশুড়ী একটা ছোট বাক্সে সামান্য কিছু জামা কাপড় নিতে বললেন। কিন্তু নেবার সময় আমি কোনটাই বাদ দিতে পারছিলাম না। অথচ বাক্সেও আঁটে না। দুবার, তিনবার চেষ্টা করার পরেও যখন কিছুতেই পারা গেল না, তখন রাগ করে বাক্সটাকে উল্টে ফেলে দিয়ে উঠে গেলাম।
কবি কাছে বসে সবই দেখছিলেন। আস্তে আস্তে আমার কাছে গিয়ে বসলেন, ‘তুমি তো গোড়াতেই একটা ভুল করে বসে আছ। অল্পদিন থাকলে ঐ ছোট বাক্সে কুলিয়ে যেত। তুমি না হয় বেশীদিনই থাকলে৷ থাকার ইচ্ছেটা তো তোমার। সেটা অন্যের কথায় কি করে হবে?’ তখন আমার মুখে হাসি ফুটল। আমি বড় একটা বাক্স নিয়ে কাপড় গুছোতে বসলাম।
কিন্তু কোথায় গেল সে সব দিন? পর্দার বুকে ছায়াছবির মতই একের পর এক মিলিয়ে গেল। যা কিছু দেবার ভগবান আমাকে তো দরাজ হাতেই দিয়েছিলেন। কিন্তু সব হারিয়ে আজ আমি রিক্ত, শূন্য হয়েই বসে আছি।
সাদাসিধে শান্ত অথচ ভীষন জেদি
লোকে জানে, কবি ছিলেন শান্ত, নিরীহ প্রকৃতির। অর্থাৎ এক কথায় যাকে বলে ভালোমানুষ। তাঁকে চালানো খুবই সোজা। কিন্তু ছাইচাপা আগুনের মত সেই নিরীহ ভাবের নীচেই চাপা থাকত তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তবে অকারণ চিৎকারে সে ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করাটা তিনি কোনদিনই পছন্দ করতেন না। শান্তভাবে, অল্প কথার ভিতরেই ছিল তাঁর অভিব্যক্তি। তাঁর এ পরিচয় আমি বহুবার বহুভাবে পেয়েছি।
তিনি মিলের মোটা ধুতি ছাড়া পরতেন না, এবং একটু উঁচু করেই পরতেন। আমি একদিন একখানা ভাল ধুতি কিনে কবিকে বললাম,— ‘কী যে তুমি মোটা মোটা ধুতি হাঁটুর উপরে পরে রাস্তা দিয়ে হাঁট। লোকে হাসে না?’ কথাটা বলেই ধুতিখানা তাঁর দিকে এগিয়ে দিতে যাচ্ছিলাম।
তিনি তখন কি একটা লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ধুতিখানা ধরেও দেখলেন না। তাঁর মুখে সামান্য একটু বিরক্তির ভাবও প্রকাশ পেল না। শুধু লেখাটা থামিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, ‘দেখ, তুমি যে ভাবে খুশি সাজ-পোশাক কর, তোমার সে ইচ্ছেয় আমি কোনদিনই বাধা দেব না। কিন্তু আমাকে এ বিষয়ে তোমার ইচ্ছামত চালাতে বৃথা চেষ্টা কোরো না!’
তিনি রাগলেনও না, বকাবকিও করলেন না। কিন্তু আমার মনে হল কে যেন আমার শরীরের সমস্ত শক্তি টেনে নিয়েছে। আমি কোনও মতে নিজেকে টানতে টানতে সেখান থেকে সরে এলাম।
যতদিন তিনি পৃথিবীতে ছিলেন, আমার মুখ থেকে এ রকম কথা আর কোনদিনই বের হয়নি। যেদিন তিনি চিরদিনের মতই যাত্রা করলেন, সেই ধুতিখানাই পরিয়ে দিলাম। সেখানা বছরের পর বছর আমার বাক্সেই রাখা ছিল।
গুপ্তদাসের 'গুপ্ত' গোপনেই রাখলেন সারাজীবন
আমরা কতখানেই কতবার না শুনেছি কবি ‘দাস’ বা নিন্মবর্ণের হিন্দু ছিলেন বলে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত। তিনি রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের সেরা কবি হবার পরেও তাকে সেভাবে মুল্যায়ন করা হয়নি বা তার কবিত্ব প্রতিভাকে পাদ প্রদীপের আলোয় আসতে দেয়া হয়নি মুলত নিন্মবর্ণের হিন্দু হবার জন্য। আসলে কি তাই;
তিনি ‘দাসগুপ্ত’ না লিখে শুধু ‘দাশ’ লেখাতে তফসিলী সম্প্রদায়ের বহু ছাত্র এসে তাঁকে বলত, ‘স্যার, আমাদের সমাজে আপনার মত
এইরকম একজন প্রতিভাশালী লেখক ও সহৃদয় অধ্যাপক পেয়ে আমাদের সম্প্রদায়ের প্রতিটি নরনারী ধন্য হয়ে গিয়েছে।’
কবি কোনও উত্তর না দিয়ে মৃদু মৃদু হাসতেন। আমি রাগ করলে বলতেন, ‘দেখ, আমাকে সমগোত্রীয় ভেবে কেউ যদি ভুল করেও মনে আনন্দ পায়, তবে সে ভুল ভাঙ্গবার দরকার কি? কারো জন্যে কিছুই তো করতে পারি না। তারা নিজে থেকে যদি একটু আনন্দ পায় তো পাক না।’
তৎকালীন ছাত্রসমাজে কবির জনপ্রিয়তা
১৯৪৬ সনের শেষদিকে তিনি স্বরাজ পত্রিকায় ছিলেন। সেই সময়কার একটি ঘটনা বলছি।
একদিন দুপুরের দিকে তিনি ক্রীক রো দিয়ে ফিরছেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন রাস্তার লোকেরা দৌড়ে যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে, এবং প্রতিটি বাড়ির জানালা দরজা দুমদাম শব্দে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন-একটা মিলিটারী ট্রাক ছুটে আসছে। ট্রাকটা এসে তাঁর সামনেই থেমে পড়ল । একজন অফিসার নীচে নেমে বন্দুকের নলটা কবির বুকের সামনে ধরেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আর য়্যু এ হিন্দু?’
কবি উত্তর দিলেন, ‘ইয়েস।’
অফিসারটি বন্দুক ধরে থাকা অবস্থাতেই বললেন, ‘আই থিংক য়্যু আর দ্য রিংলীডার অফ দিস এরিয়া। যাস্ট গেট অন্।’
কবি চিরদিনই ধীর স্থির প্রকৃতির সুতরাং তিনি আর একটি কথাও না বলে ট্রাকে উঠে দেখলেন তাঁর মত আরও কয়েকজন হিন্দু ভদ্রলোককে আগেই ধরে আনা হয়েছে। তাঁরাও চুপচাপ বসে আছেন। কবিকে উঠিয়ে নিয়ে ট্রাকটি বহু জায়গা ঘুরে একটি থানায় এসে থামল। সেখানে পৌছে একখানি বেঞ্চে সকলকে বসিয়ে রাখা হল।
‘কতক্ষণ এখানে বসে থাকতে হবে’ একজন ভদ্রলোক একথা জিজ্ঞাসা করাতে কয়েকজন কনস্টেবল অভদ্র ভাষায় উত্তর দিল, ‘যতক্ষণ ও-সি না আসেন, চুপ করে বসে থাক।’
সন্ধ্যের দিকে হঠাৎ সমস্ত পুলিস শশব্যস্তে উঠে দাঁড়াল এবং অন্যান্য সকলকেও উঠে দাঁড়াতে বাধ্য করল। কবি তাকিয়ে দেখলেন একটি অল্পবয়সী মুসলমান ছেলে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। ছেলেটি যতই সামনের দিকে এগোচ্ছে ততই ঘন ঘন অবাক হয়ে কবির দিকে তাকাচ্ছে। যখন প্রায় কাছে এসে পড়েছে, তখন এক ছুটে এসে কবির
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, ‘এ কী! স্যার আপনি এখানে এ অবস্থায় কেন?’
কবি একটু চুপ করে থেকে উত্তর দিলেন, ‘আমি তো তোমাকে ঠিক চিনতে পারছি না।’ তখন ছেলেটি দারুণ অভিমানভরে বলল, ‘আমি আপনার বি এম (বরিশাল) কলেজের ছাত্র, আর আপনি আমাকে চিনতেই পারলেন না?’
কবি তখন অপ্রস্তুত হয়ে সস্নেহে তার গায়ে হাত রেখে বললেন, ‘সত্যি আমার পক্ষে তো এটা অন্যায়ই । তা, তুমি এখন কি করছ?’
‘আমি এখানকার ও-সি।’ কবি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই সে লজ্জিত মুখে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘স্যার, আপনি এখানে কেন, সে কথার উত্তর তো আমি পেলাম না।’
কবি তখন অফিসার এবং কনস্টেবলদের সব কথাই বললেন। সমস্ত শুনে ছেলেটি তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘যে যেমন অবস্থায় আছ, বসে থাক। আমি এসে তোমাদের ব্যবস্থা করছি।’ তারপর কবির দিকে ফিরে বলল, ‘আসুন স্যার আমার সঙ্গে।’ এই কথা বলেই সযত্নে এবং সম্ভ্রমের সঙ্গে হাত ধরে তাঁকে নিয়ে চলল। নানা রাস্তা ঘুরে অবশেষে নিরাপদ স্থানে এসে তাঁকে ট্রামে তুলে দিয়ে আবার ভক্তিভরে প্রণাম করে বলল, ‘স্যার, আপনার অসম্মান করে ওরা যে আজ কতবড় অপরাধ করেছে সেটা বুঝবার মত শক্তি হয়তো ওদের কোনদিনই হবে না। কিন্তু আমি আজ ওদের সকলের হয়ে বারবার আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। সব দোষ ত্রুটি আমার জন্যই হয়েছে ধরে নিয়েই আপনি আমাকে ক্ষমা করতে চেষ্টা করবেন।
যদি তার আবার কোনও বিপদ ঘটে সেজন্য কবি তাকে ট্রামের সামনে আসতে বারবার বারণ করেছিলেন। কিন্তু সে হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিল, ‘আপনার আশীর্বাদে কোন বিপদই আমার ধারে কাছে আসতে পারবে না। কিন্তু আজ যদি আপনি ঠিকভাবে বাড়ি পৌঁছতে না পারেন তাহলে নিজেকে আমি কোনদিনই ক্ষমা করতে পারব না।’
রাত্রে কবি যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল তাঁর মনটা যেন সেই ছেলেটির কাছেই চলে গিয়েছে। ছাত্রের এই মহানুভবতার কথা কবি কোনদিনই ভোলেননি, ভুলতে পারেননি। সে রাতে তিনি নীরবে যে তার সুখ, শান্তি এবং দীর্ঘজীবন কামনা করে বারবার তাকে আশীর্বাদ জানাচ্ছিলেন, সেটা শুধু বুঝেছিলাম আমি।
তাঁর এক লাইন কবিতা পাবার আশায় আমাদের ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে প্রতিদিন দলে দলে ছাত্রছাত্রীকে আসতে দেখেছি। সকলে কিন্তু হাসিমুখেই ফিরে যেত । কিছু বললেই উত্তর দিতেন, ‘এরাই তো আমাদের ভবিষ্যতের আশা ভরসা। এদের ভিতর দিয়েই তো আমি বেঁচে থাকব। এদের কি ফেরাতে পারি?’
এই আন্তরিকতা এবং স্নেহের বিনিময়ে ছাত্র এবং ছাত্রসম অন্যান্য কিশোর এবং যুবকদের অন্তরতম প্রদেশে তাঁর আসন দৃঢ়ভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
একবার কোনও এক জায়গায় কবির স্বরচিত কবিতা আবৃত্তির কথা ছিল। তাঁর সেদিন শরীরটা খুবই খারাপ ছিল। তিনি সজনীবাবুকে (সজনীকান্ত দাস) অনুরোধ জানালেন যে তাঁকে যেন আবৃত্তির কাজটা প্রথম দিকেই সেরে নিতে দেওয়া হয়। সজনীবাবু চটে গিয়ে বললেন, ‘আপনি তো বেশ লোক মশাই। আপনাকে প্রথমদিকে আবৃত্তি করতে দিয়ে শেষে আমি চেয়ার বেঞ্চ নিয়ে বসে থাকি।’ শেষে হাসতে হাসতে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না জীবনানন্দ বাবু, আমি জানি যে আপনার কবিতা শোনার পরে ছাত্রদলকে কিছুতেই আর আটকে রাখা যাবে না। সুতরাং আপনাকে আজ একটু কষ্ট করতেই হবে।’
~ জীবনানন্দ দসগুপ্তের লাশ
শেষ সময়ে ভালবাসাঃ
'যেই ঘুম ভাঙে নাকো কোনোদিন ঘুমাতে ঘুমাতে
সবচেয়ে সুখ আর সবচেয়ে শান্তি আছে তাতে!
আমরা সে সব জানি; - তবুও দুচোখ মেলে জেগে
আমরা চলিতে আছি আমাদের আকাঙ্খার পিছে...'
আহত অবস্থায় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে শয্যা নেবার পরে দেখেছি তাঁর সেবা করবার জন্য তরুণ বয়সী ছেলেদের সে কি আগ্রহ। তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার হোস্টেলেও থাকতেন। কিন্তু সেখানকার নিয়মকানুন, উপরওয়ালাদের রক্তচক্ষু, পাঁচিলের উচ্চতা-কোন কিছুই তাদের আটকাতে পারেনি। তারা ঠিক সময়েই ছুটতে ছুটতে কবির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
আজ তাঁর আত্মা যেখানেই থাকুন না কেন, এই সব ছেলেদের আশীর্বাদ তিনি করছেন বৈকি, নিশ্চয়ই করছেন।
তাঁর সঙ্গে পরিচিত হয়ে এবং তাঁর সান্নিধ্যে এসে সকলে কতটা আনন্দ পেতেন তাঁর প্রমাণও যথেষ্ট পেয়েছি। তাঁর সেবারতা সিস্টার শান্তিদেবীর কথা আমার আজও মনে আছে- এবং চিরদিনই থাকবে। জীবিকার্জনের জন্য টাকা তাঁকে নিতে হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাঁর সেবার মধ্যে যে দরদ, যে আন্তরিকতা আমি দেখেছি, তা শুধু টাকার বিনিময়ে কোনদিনই পাওয়া যায় না। কত সময় তিনি আমাকে বলেছেন, ‘বউদি, এই রকম দাদার সেবা করার সৌভাগ্য যে আমার কখনও হবে, সে কথা আমি কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি।’ কবির মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যাবার পরে শান্তিদেবীও চোখের জল ফেলতে ফেলতে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন। অন্তরের অনেকখানি টান থাকলে তবেই এ কাজ সম্ভবপর হয়।
কবির বাল্য ও কৈশোরের স্মৃতিঘেরা বরিশাল। সেখানে দেখেছেন তিনি হিন্দু-মুসলমানের অপূর্ব ভ্রাতৃরূপ। দুঃখে, বিপদে, একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে-স্নেহ, ভালবাসায় হয়ে উঠেছে অতি আপনজন। এমনিই ছিলো তাদের একাত্মবোধ।
কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পূর্ব মুহূর্তে একই মায়ের কোলে ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি, তাদের সে রক্তের হোলিখেলা, বেদনায় মূক করে তুলেছিল কবি-চিত্তকে, বিকল করেছিল তাঁর প্রাণ। অন্তরের সে ব্যথা, সে বেদনাকে মুখে প্রকাশ করার ভাষা তিনি খুঁজে পাননি। তাই লেখনীর বাহুডোরে বেঁধে রেখে গেলেন ভাবীকালের সন্তানদের পথ দেখাবার জন্যে—
(কবির এই কবিতায় শুধু সেদিনের হিন্দু মুসলিমের লড়াইয়ের গল্প নয় সেটা আজকের পৃথিবীর ধর্মের নামে লড়াই, জাতি, বর্ণের ছদ্মাবরনে একই ভিন্ন রূপে ভিন্ন পরিবেশে লড়াই- যেখানে মুষ্টিমেয় মানুষের ক্ষমতার দ্বন্দে শুধু অসহায় উপেক্ষিত মানুষের আত্মসমর্পন। যেখানে আমরা শুধু সংখ্যা গুনি আর ওই ধর্ম বর্ণ আর জাতির নামে এক এক পক্ষ নেই কোনরূপ বন্ধন ছাড়াই)
“প্রকৃতির পাহাড়ে পাথরে সমুচ্ছল
ঝর্ণার জল দেখে তারপর হৃদয়ে তাকিয়ে
দেখেছি প্রথম জল নিহত প্রাণীর রক্তে লাল
হ’য়ে আছে ব’লে বাঘ হরিণের পিছু আজো ধায়;
মানুষ মেরেছি আমি— তার রক্তে আমার শরীর
ভ’রে গেছে; পৃথিবীর পথে এই নিহত ভ্রাতার
ভাই আমি; আমাকে সে কনিষ্ঠের মতো জেনে তবু
হৃদয়ে কঠিন হ’য়ে বধ ক’রে গেল, আমি রক্তাক্ত নদীর
কল্লোলের কাছে শুয়ে অগ্রজপ্রতিম বিমূঢ়কে
বধ ক’রে ঘুমাতেছি— তাহার অপরিসর বুকের ভিতরে
মুখ রেখে মনে হয় জীবনের স্নেহশীল ব্রতী
সকলকে আলো দেবে মনে ক’রে অগ্রসর হ’য়ে
তবুও কোথাও কোনো আলো নেই ব’লে ঘুমাতেছে।
ঘুমাতেছে।
যদি ডাকি রক্তের নদীর থেকে কল্লোলিত হ’য়ে
ব’লে যাবে কাছে এসে, ‘ইয়াসিন আমি,
হানিফ মহম্মদ মকবুল করিম আজিজ—
আর তুমি?’ আমার বুকের ’পরে হাত রেখে মৃত মুখ থেকে
চোখ তুলে সুধাবে সে— রক্তনদী উদ্বেলিত হ’য়ে
বলে যাবে, ‘গগন, বিপিন, শশী, পাথুরেঘাটার;
মানিকতলার, শ্যামবাজারের, গ্যালিফ স্ট্রিটের, এন্টালীর—’
কোথাকার কেবা জানে; জীবনের ইতর শ্রেণীর
মানুষ তো এরা সব; ছেঁড়া জুতো পায়ে
বাজারের পোকাকাটা জিনিসের কেনাকাটা করে;
সৃষ্টির অপরিক্লান্ত চারণার বেগে
এইসব প্রাণকণা জেগেছিলো— বিকেলের সূর্যের রশ্মিতে
সহসা সুন্দর ব’লে মনে হয়েছিলো কোনো উজ্জ্বল চোখের
মনীষী লোকের কাছে এইসব অনুর মতন
উদ্ভাসিত পৃথিবীর উপেক্ষিত জীবনগুলোকে।
****
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৫
শেরজা তপন বলেছেন: এমনিতেই মনে চাইল। লেখাটা অনেকদিন ধরে ড্রাফটে রেখেছিলাম। ঘুমোতে যাবার আগে তেমন কিছু না ভেবেই দিলাম- যারা রাত জাগবে তারা সময় নিয়ে পড়ুক।
২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৯
বিজন রয় বলেছেন: পোস্টি প্রিয়তে রেখে দিলাম। একদিন আমার কাজে লাগবে।
আর দ্বিতীয় পর্ব বা পরবর্তী পর্বগুলো যদি থাকে অবশ্যই পোস্ট করবেন।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১২
শেরজা তপন বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা!
আরো অনেক কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল- এখনো নিশ্চিত নই কবে বাকিটুকু লিখতে পারব, তবে সবার আগ্রহ থাকলে অবশ্যই শিঘ্রী নিয়ে আসব পরের পর্ব। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩১
কামাল১৮ বলেছেন: ব্যাক্তি জীবনানন্দ নিয়ে চর্চা না করে তার সাহিত্য নিয়ে চর্চা করা ভালো।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৫
শেরজা তপন বলেছেন: প্রত্যেক বিখ্যাত সাহিত্যিকের বা ব্যাক্তিত্বের ইচ্ছে অনিচ্ছেয় হোক না কেন ব্যক্তি জীবনটা সামনে চলে আসে। তার সাফল্য ব্যার্থতার সাথে ব্যাক্তি জীবনের সবকিছু একপাল্লায় রেখে মুল্যায়ন করা হয়।
যদিও এটা আমি নিজেই সমর্থন করি না তবুও জীবনানন্দের স্ত্রীকে নিয়ে এত বেশী নেগেটিভ আলোচনা হয়েছে; পুরোটা জানার পরে আমার মনে হয়েছে ভদ্রমহিলার উপরে ভীষনভাবে অবিচার করা হয়েছে। তাইতো তার সপক্ষে যুক্তি দাড় করিয়ে কিছু বলার চেষ্টা।
৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪৩
শায়মা বলেছেন: লাবন্য দাস কবির উপরে অনেকখানি বিরক্ত ছিলেন এমনই মনে হচ্ছে ছবি দেখে তবে কবিকে শ্রদ্ধা করতেন বুঝা গেলো লেখা পড়ে। তবে কবি যেই ধুতি পরলেন না সেই ধুতি পরালেন মারা যাবার পরে। মানে জেদ ঠিকই বজায় রাখলেন। এটা কি ঠিক হলো? কবি বেঁচে থাকতে যে ধুতি পরলেন না মরে যাবার পরে সেই ধুতি পরিয়েই ছাড়লেন যখন তার বাঁধা দেবার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৯
শেরজা তপন বলেছেন: এমন ভাবুক উদাসীন জেদী প্রায় মৌন কবিদের স্ত্রীদের তাদের উপরে বিরুক্ত না হবার কোন কারন নেই। সংসারের অর্থ সম্পদ অনেক বড় একটা ব্যাপার - যে ব্যাপারে উদাসীনতা প্রায় কোন নারীই মেনে নিতে পারে না। তবুও লাবন্য দাস অনেক সহ্য করেছেন। মানুষ কবির জীবনে ব্যার্থতার জন্য বার বার তাকে ভিলেন হিসেবে দাড় করায়।
৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:০২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জীবনানন্দের আত্মজীবনী মনে হয় নাই। ওনার স্ত্রীর লেখা থেকে অনেক কিছু জানা যাবে। আশা করি পরের পর্বে আরও জানা যাবে। জীবনানন্দ হাতে ডাব নিয়ে ট্রামের নীচে পড়লেন। একটা ধোঁয়াশা থেকে গেল উনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এই ব্যাপারে ওনার স্ত্রী কিছু বলেছেন কি?
ধানসিঁড়ি নদী আমাদের গ্রামের কাছাকাছি। আমাদের ইউনিয়নের নাম ধানসিঁড়ি। সম্ভবত এখানে এসে উনি ওনার সেই বিখ্যাত 'আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়' কবিতাটা লিখেছিলেন।
আকবর আলী খান তার বইয়ে লিখেছেন যে বনলতা সেন নাকি নাটোরের একজন গনিকা ছিলেন। ওনার অনুমান ছিল এটা। পরে অবশ্য কথা ঘুরাতে চেয়েছেন অন্য আরেক লেখায়।
আমার এক ফুফু আর ফুফা আজীবন সুখী দম্পতি। বাইরে থেকে নয় বরং আসলেই তারা মেইড ফর ইচ আদার। হাজারে বা লাখে এই ধরণের সুখী দম্পতি পাওয়া যায়। বিয়ের মাধ্যমে রোমান্টিক প্রেমের অবসান কেন হয় এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত।
বরিশালের তপন রায় চৌধুরীর 'বাঙ্গালনামা' বইটা পড়তে হবে। ওনার এই বইয়ে সম্ভবত জীবনানন্দের বরিশালের জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৬
শেরজা তপন বলেছেন: তার ট্রামের নীচে পড়ার আগে পরে অনেক গল্প আছে যার অধিকাংশই মানুষের মনগড়া। অর্থাভাব সংসারী মানুষকে অসুখী করবেই- এই নিয়ে মন কষাকষি তর্ক বিবাদ মান অভিমান হতেই পারে। তাছাড়া ঐ সময়ে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ফলশ্রুতিতে অনেক রোগ এসে শরিরে বাসা বাঁধে। অর্থাভাব ও অসুস্থতা দুটো মিলেই তিনি বেশ অসুখী জীবন যাপন করছিলেন।
ভাল লাগল জেনে যে আপনি বিখ্যাত ধানসিড়ি নদীর কাছের মানুষ।
আকবর আলী বাজে কথা বলেছেন। বনলতা সেন আমার ধারনা একটা ফ্যান্টাসি।
বাঙ্গালনামার কথা শুনিনি। রকমারিতে পাওয়া গেলে জানাবেন।
বিয়ের মাধ্যমে রোমান্টিক প্রেমের অবসান কেন হয় এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। ~ বিস্তর গবেষনা হয়েছে। গবেষণা করতে করতেই গবেষকেরা সব অক্কা পেয়েছেন কিন্তু কামের কাম হয় নাই
৬| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৩৩
সামরিন হক বলেছেন: ভালো লাগলো।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৭
শেরজা তপন বলেছেন: লেখা পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন
৭| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৩৮
মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ বলেছেন: @লেখকঃ
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৭
শেরজা তপন বলেছেন: সময় করে কয়েক পর্বে লেখার চেষ্টা করব। সাথে থাকবেন ভ্রাতা।
৮| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:০১
শ্রাবণধারা বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো আপনার এই লেখাটি।
প্রথমে পড়ার সময় ভাবছিলাম আপনিও হয়তো জীবনানন্দের অসুখী জীবনের জন্য লাবন্য দাশকে দায়ী করবেন! আনন্দিত হলাম যে আপনি তা করেন নি।
আমার ধারণা লাবন্য দাশ অত্যন্ত সংসারী, সাধারণ একজন নারী। যে নারী অভাবের সংসারে, অত্যন্ত বেখায়ালী একজন কবির সাথে আর সব সাধারণ মানুষের মতই জীবন যাপন করে গেছেন। তিনি জীবনানন্দের অসামান্য প্রতিভাকে হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি, কিন্ত সেটাতো বুদ্ধদেব বসু ছাড়া আর তেমন কেউও ভালো করে বুঝে উঠতে পারেন নি সেই সময়ের প্রক্ষিতে।
জীবনানন্দের দাম্পত্যজীবনকে বোঝার জন্য তার লেখা ছোটগল্প গুলো খুব ভালো উৎস হতে পারে। আপনি সেগুলো পড়েছেন কি না জানা নেই। অনেকক্ষণ চেষ্টা করলাম তার লেখা ছোটগল্প "সঙ্গ, নিঃসঙ্গ" অনলাইনে খুঁজে বের করে এটার লিংক আপনাকে দিতে। কিন্তু পেলাম না।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৭
শেরজা তপন বলেছেন: গতানুগতিক ধারার একটু বাইরে লেখার চেষ্টা করলাম। লাবন্য দাসকে ইচ্ছে অনিচ্ছায় উনেক বিখ্যাত কিংবা প্রখ্যাত ব্যক্তি ভিলেন হিসেবে কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছেন। কিন্তু খবর নিয়ে দেখেন তাদের সংসারেই এমন টুকটাক ঝামেলা লেগে আছে কিন্তু অন্যেরটাই নজরে আসছে বেশী। অযথাই একটা মহিলাকে শুধু কবির স্ত্রী হবার জন্য হাজারো কটু কথা আর অপমান মুখ বুজে সয়ে যেতে হয়েছে।
আমার ধারণা লাবন্য দাশ অত্যন্ত সংসারী, সাধারণ একজন নারী। যে নারী অভাবের সংসারে, অত্যন্ত বেখায়ালী একজন কবির সাথে আর সব সাধারণ মানুষের মতই জীবন যাপন করে গেছেন। তিনি জীবনানন্দের অসামান্য প্রতিভাকে হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি, কিন্ত সেটাতো বুদ্ধদেব বসু ছাড়া আর তেমন কেউও ভালো করে বুঝে উঠতে পারেন নি সেই সময়ের প্রক্ষিতে।
জীবনানন্দ খুব অনাড়ম্বরপূর্ন ঘরকুনো মুখচোরা একজন মানুষ ছিলেন। তার স্ত্রী শুধু ঘরের নয় বাইরের অনেক দিক ও সামলেছেন। একবার বাড়িতে পুলিশ আসলে বাড়িতে জীবনানন্দ ও তার বাবা উপস্থিত থাকা সত্বেও লাবন্য দাস পুলিশের ফেস করতে বাধ্য হন। তিনি সেই সময়ের বেশ উচ্চশিক্ষিত একজন মহিলা ছিলেন- তবে তার পড়াশূনার ব্যাপারে জীবনানন্দ খুব সহযোগীতা করেছেন। জীবনানন্দ এত বেশী অন্তর্মুখী ও আত্মকেন্দ্রিক মানুষ ছিলেন যে, সংসারের সব ঝুট ঝামেলা তিনি এড়িয়ে গিয়ে শান্তিতে নিরিবিলি থাকতে চাইতেন। সবকিছু একহাতে সামলাতেন লাবন্য দাস। তবে তিনি কখনো তার দায়িত্ব এড়িয়ে যান নি।
৯| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪১
রানার ব্লগ বলেছেন: কবিদের উপর রমনীরা খুশি থাকে ঘরের বউরা না ।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮
শেরজা তপন বলেছেন: এটা কবিরা ছাড়া আর কে জানে বেশী
কবিদের ফ্যান্টাসিতেও নিজের ঘরের বউ ছাড়া কতই রমণী না দিনরাত বাস করে।
১০| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১১
প্রামানিক বলেছেন: কবিদের প্রতি কবির বউদের কিছু না কিছু অভিযোগ থাকে তার কারণ কবিরা কবিতা লেখায় মগ্ন থাকায় বউদের সময় কম দিয়ে থাকে এবং বউদের অনেক অভাব অভিযোগ পুরণ করতে পারে না।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪১
শেরজা তপন বলেছেন: এজন্যই কবিদের বিয়ে করা উচিৎ নয়। তবে সবাই কি হেলাল হাফিজ হতে পারে!!!
তবে তার মত হলে অমন প্রতিভা নিয়ে যে সময়ে যুগশ্রেষ্ট কবি হওয়া সম্ভব।
১১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৫
বাকপ্রবাস বলেছেন: কবিদের বিশ্বাস নাই, ওদের সংসার ভাল হবার কথা না, বউ ঝিকেও ওরা কবিতা মনে করবে, কবিতার তো সাধ্য নাই কবিকে লাইনে রাখার, কবির ইচ্ছাতে কবিতা চলে
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪৮
শেরজা তপন বলেছেন: এ ব্যাপারে কবিরাই ভাল জানে। তবে এমন দুনিয়াভর্তি রোমান্স নিয়ে কোন কবির স্থায়ী বন্ধনে জড়ানো উচিৎ নয়।
সংসারী হলে সংসারের ক্যাচালতো সামলাতে হবেই।
বেশীরভাগ কবিরাই আমার ধারনা বিবাহিত জীবনে ভীষন অসুখী হয়- শুধু সমঝোতা আর সেক্রিফাইসের জন্য বোঝা যায় না বাইরে থেকে।
১২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: জীবনানন্দ আমার ভীষন প্রিয় কবি।
জীবনানন্দকে বেশ কয়েকটা উপন্যাস লিখেছেন বিভিন্ন সাহিত্যিকগন। 'কাঞ্চনফুলের কবি' নামে একটা উপন্যাস সম্প্রতি লেখা হয়েছে। শুনেছি উপন্যাসটা খুব ভালো হয়েছে। বাংলাদেশের লেখক লিখেছেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাস প্রকাশের আগে আনন্দবাজার থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৪
শেরজা তপন বলেছেন: কাব্যিক মন যে বাঙ্গালীর আছে সে জীবনানন্দের কবিতা উপেক্ষা করতে পারবে না।
তার রূপসী বাংলার মত এমন করে কেউ বাংলাকে আদৌ লেখেনি- কারো চোখে এভাবে বাংলার রূপ ধরা দেয়নি।
আমি শুনেছি তিনি অনেক গল্প উপন্যাস লিখলেও কোন প্রকাশকেরাই সেগুলো ছাপার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাননি। তিনি বহুবার দেশ পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস পাঠিয়ে ফেরত পেয়েছেন। অনেক সমালোচক বলেন তার কবিতা যতটা উঁচুদরের সে তুলনায় গদ্য সাহিত্যে তিনি ভীষন সাধারন ছিলেন। সে কারনেই হয়তো কবি তার অনেক গদ্য লেখা ভক্তদের চোখার আড়ালে রেখেছিলেন।
তার বেঈশ্রভাগ গদ্য লেখা সম্ভবত মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়- কিছু এখনো আড়ালেই রয়ে গেছে।
১৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৯
মিরোরডডল বলেছেন:
এই বিশ্বে লক্ষ কোটি জুটি আছে কিন্তু সফল জুটি কয়খানা?
লক্ষ টাকা দামের প্রশ্ন।
অধুনা বিল গেটস কিংবা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কথাই ধরুন; বিচ্ছেদের ক'মাস আগে আমরা ক'জানাই ভেবেছিলাম, তারা আদপে অসফল একটা জুটি আর কদিন বাদে চিরতরে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে?
সুখেরই পৃথিবী
সুখেরই অভিনয়
যত আড়াল রাখো
আসলে কেউ সুখী নয়
মাঝে মঝে মনে হয়না; এই সংসারের নিকুচি করি, শালার সব ছেড়ে বিবাগী হয়ে যাই?
বিবাগী হলে এদিকটায় চলে আসবে
বিবাগী এ মন নিয়ে জন্ম আমার
যায়না বাঁধা আমাকে কোন পিছুটানের মায়ায়
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪৫
শেরজা তপন বলেছেন: বিবাগী হলে এদিকটায় চলে আসবে
~ঠিকানাটা দিয়ে রাইখেন
পুরুষদের মন আসলে;
মন কি যে চায় বল
যারে দেখি লাগে ভাল
মন সে তো বাধা মানে না
কি জানি কেন জানি না ~ মেয়েদেরও কি এমন হয় না?
আপনি একা আছেন ভাল আছেন- শুধু ওই চুল কাটা ভুতের উপদ্রব না হইলেই হয়
১৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বাঙ্গালনামা রকমারিতে পাওয়া যায়। আবার ফ্রি ডাউনলোড করাও যায়। আমার কাছে ডাউনলোড করা আছে। ৪৮১ পাতা। পড়া শুরু করবো ভাবছি।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৭
শেরজা তপন বলেছেন: ঠিক আছে তাহলে না ডাউনলোড করেই নিব সহজ কাম- পড়াও সহজ
১৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৪
মিরোরডডল বলেছেন:
জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার!
জীবনানন্দের তুলনা শুধু জীবনানন্দই।
কবিরা কেনো যে বিয়ে করে, এটাই বুঝলাম না!
কবিরা করবে প্রেম, বিয়ে করার দরকার কি???
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০১
শেরজা তপন বলেছেন: সাথে নচিকেতা যোগ করেছিল;
মুখোমুখি বসে আমি আর যৌবন
...।মাঝখানে ব্যাবধান কুড়ি পচিশ অথবা চল্লিশ ...
আসলেই তো কবি বিয়ে করবে কেন? ~ওই যে বলে না 'গাছেরও খাবে নীচেরও কুড়াবে'
১৬| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৮
মিরোরডডল বলেছেন:
মেয়েদেরও কি এমন হয় না?
কেনো হবে না?
এই পোষ্টের ৪১ নং কমেন্ট পড়েনি???
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০৩
শেরজা তপন বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ
ওইটার উত্তর কি দেব তাই নিয়া ব্যাপক পেরেশানিতে আছি!!!
কেন?
অশান্ত মন আমার শান্ত হয়েছে তাকে দেখে, দিনটাও ভালো গেছে ~ অনেক গভীর থেকে উঠে আসা ভীষন গোপন কথা যে!!
১৭| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বহুদিন বাদে ব্লগে এলাম। আপনার পোস্টটা একনিশ্বাসেই পড়লাম, বলতে পারেন। অসাধারণ একটা পোস্ট। আমি ভুল করে লিখতাম 'জীবনানন্দ দাস' এবং প্রথম লাইনে 'জীবনানন্দ দাস' পড়ে আমিও ভাবছিলাম যে, আপনিও ভুল করেছেন। পোস্ট পড়ে ক্লিয়ার হলাম, তিনি মূলত দাসগুপ্ত ছিলেন (তবে এ বংশ-পদবিগুলো সম্পর্কে আমার ধারণা ক্ষীণ)। তা বদলে লিখলেন জীবনানন্দ দাশ।
পোস্টের পর যে কমেন্ট দুটি আমার সবচাইতে ভালো লাগলো তা হলো ৯ এবং ১০ নাম্বার কমেন্ট। একেবারে আমার কথাই যেন এবং একেবারে বাস্তব কথা।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:১৬
শেরজা তপন বলেছেন: দাশ, দাস ও দাসগুপ্ত তিনটে পদবীই বেশ কনফিউজিং। দাস পদবী থাকলেই সবাই ভাবে সে নিন্মবর্ণের - তবে নিজের উচ্চ বংশীয় গুপ্ত'কে গোপন করে কবি দারুণ উঁচু মনের পরিচয় দিয়েছেন। শুধু দাস লেখার জন্য তাকে পদে পদে অপদস্থ ও হেয় হতে হয়েছে। অনেক পত্র পত্রিকা তার দুর্দান্ত কিছু কবিতা শুধু এই দাস পদবীর জন্য সম্ভবত ছাপায় নি।
আপনার কথা কালকে মনে করছিলাম; কবি আর ঘর সংসার এই দুটো আপনার কাছে কেমন সাংঘর্ষিক মনে হয়।
কবিতা নিয়ে ভাবির সাথে কি আপনার মন কষাকষি হয়েছে?
১৮| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৬
মিরোরডডল বলেছেন:
~কিন্তু সেই সংসারেই ফের ভালবাসার তুফান বয়। একটুখানি অসুস্থতায় সব কাজ ফেলে ছুটে আসি, সারারাত জেগে বারান্দায় পায়চারি করি। নিজের হাতে তুলে তাকে যত্ন করে খাইয়ে দিই। হাত পুড়িয়ে রাধব তবু তাকে রান্না ঘরে যেতে দিই না।
বাহ! অনেক সুইট!!!
ভালোবাসা ঠিক তখুনি বাসেন বাঁধে।
বাসেন বাঁধে না, বাসা বাঁধে হবে।
কার বউ কতটা সুন্দর- কতটা স্মার্ট। তাদের কেমন প্রেম- কতটা আদুরে, কতটা আহ্লাদ, কি গদ গদ ভাব। স্মার্ট নাকি? দুজনের লেবেলে গেল কি না? এই সব।
এ সবকিছুই তুচ্ছ।
হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যে কানেকশন, বোঝাপড়া, যে টান, ওটাই আসল।
বাকি সবকিছুই ক্ষণিকের মোহ মাত্র, সময়ের সাথে বদলায়।
কিন্তু হৃদয়ের টান, মায়া, সময়ের সাথে বেড়ে যায়।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৮
শেরজা তপন বলেছেন: আবেগের সব কথাই ব্যক্তিগত হিসেবে মনে না করাই উত্তম
'বাসা বাঁধে' ঠিক করে দিয়েছি। এ ধরনের লেখায় একটু সাবধানী হবার পরেও ছোট-খাট ভুল থেকে যায়
জেনেটিক্যালি এই তাড়াহুড়োয় অনেক ভুল হয়। আমার ছেলের ও একই অবস্থা!
হৃদয়ের টান মায়া এসব এমনি এমনি বাড়ে কি না জানি না - তবে সন্তান একটা বিশাল ফ্যাক্টর! সংসার বেঁধে রাখায় তাদের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৯| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার লেখালেখি, গান গাওয়াগাওয়ি, ইত্যাদি নিয়া আজও পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয় নাই। সংসার যখন ছোটো ছিল, স্ত্রীর অবসর ছিল, তখন গল্প-কবিতা লিখেই তাকে পড়তে দিতাম। সে পড়ে অল্প কথায় 'ভালো' বা 'মন্দ' বলতো। ছেলেমেয়েরা বড়ো হওয়ার সাথে সাথে ব্যস্ততা বাড়লো, আমার লেখালেখি পড়ার সময় তার হইল না তবে, অন্যদের কাছে 'কবি' 'লেখক' 'গায়ক' ইত্যাদি বলে খোটা দিতে শুনতাম মাঝে মাঝে
সংসারের খুঁটিনাটি নিয়া ঝগড়া করতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি স্ত্রীর কোনো কথা শুনি না বললেই চলে ঝগড়ার মূল কারণ এটা আমার একরোখা আর ঘাড়তেড়া স্বভাবের কারণে সে খুব অতীষ্ঠ, কিন্তু আমি জানি আমার এমন কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য আছে, যা আমার সব নেগেটিভ গুণকে ঢেকে ফেলে, যার কারণে স্ত্রী গোসা করলে বা রাগ করলে তাকেই পরাজয় মেনে নিয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে হয়
সব মিলিয়ে আমাদের সংসারটা এখনো রোমান্সে ভরপুর।
ভালোবাসা, প্রেম, রাগ, ক্রোধ, অভিমান - সবই হলো আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আবার, আবেগ হলো ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণকালের মধ্যেই অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যা ট্রুডো বা বিল গেটস এবং অগুনতি নাম-না-জানা মানুষের জীবনে ঘটে গেছে/যাচ্ছে। কাজেই, আজ আমি রোমান্সে ডুবে আছি, আগামীকালে কঠিন ক্রোধোন্মত্ত মুহূর্তে আমার কপালেও কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না, তা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৩
শেরজা তপন বলেছেন: আপনি যে, সুখী মানুষ এটা আমি আগে থেকেই জানি। প্রথমে আপনার লেখা থেকে আর দ্বিতীয়ত আপনার লেখালেখির বিছানার ছবি থেকে।
ভাবী যে দুর্দান্ত রূপসী সেটাও জেনেছি কোন এক লেখায়!
যা হোক আপনি ত্যাড়ামি করে সফল - এমন খুব কম পুরুষেই পারে।
এমন রোমান্সে ভরপুর সংসারের জন্য ওন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভ কামনা।
ভাল থাকুন নিরন্তর।
২০| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৩
মিরোরডডল বলেছেন:
ব্লগে চারজন পুরুষকে মনে হয় সংসার জীবনে সুখী, ফ্যামিলি ম্যান, এরা হচ্ছে নতুন, ধুলো, সাচু, শেরজা।
আরও অনেকে আছে নিশ্চয়ই কিন্তু এই চারজন কে মনে হয়, বিয়ের এতো বছর পর এখনো রোম্যান্টিক।
নতুন বয়স কম বাচ্চা ছোট, বাকিদের ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে তাও বউয়ের সাথে প্রেমটা চালিয়ে যাচ্ছে।
মেয়েরা অন্য সবকিছু ক্ষমা করে দেয় রোমান্স ঠিকঠাক থাকলে
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৩
শেরজা তপন বলেছেন: আপনি দেখি ভালই ডেটা রেখেছেন
কে জানে কে আসলে সুখী। কিছু সময় মনে হয় সুখেই তো আছি- কখনো বা ভাবি আমার থেকে দুঃখী মানুষ দুনিয়াতে নাই। সুখের ব্যাপারটা হল সয়ে যাওয়া আর মেনে নেয়া। এরপরেও অনেক কিছু আছে অর্থ সুস্থতা দুজনের মিথস্ক্রিয়া, পারিবারিক বন্ধন, সন্তান সর্বোপরি কোন কিছু নিয়ে আফসোস না করে যা আছে সেটাই সেরা ভেবে পাগলের মত মনে মনে সুখ নেয়া
২১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৮
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: @ মিরর - আমি আমার স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে অনেক ভালো আছি। কিন্তু সমস্যা হল জীবনের আর্থিক অনিশ্চয়তা। আর্থিকভাবে আর একটু ভালো অবস্থানে থাকলে ভালো হত। সামনের দিন নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। আমার স্ত্রী বাই ডিফল্ট খুশি এবং সুখী মানুষ। তবে তার একটা সমস্যা আছে। সেটা হল আমি দূরে থাকলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই রোগ যাচ্ছে না তার।
২২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০২
ডার্ক ম্যান বলেছেন: মেয়েরা অন্য সবকিছু ক্ষমা করে দেয় রোমান্স ঠিকঠাক থাকলে মিরর বলেছেন।
মেয়েরা এখন সবকিছু ক্ষমা করে দেয় যদি ব্যাংক ব্যালেন্স ঠিকঠাক। তাদের যুক্তি ব্যাংকে ব্যালেন্স থাকলে রোমান্স অন্য জায়গা থেকে কিনবে।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৫
শেরজা তপন বলেছেন: রোমান্স আর ব্যাংক ব্যালেন্স দুটোইতো মনে হয় দরকার না কি
২৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:১৫
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: তপন রায় চৌধুরীর আরেকটা ভালো বই আছে। সেটার নাম 'ইয়োরোপ পুনরদর্শন'। নেটে পাওয়া যায়। আমিও পড়ি নাই এখনও। পড়বো শীঘ্রই। মূল বইটা ইংরেজিতে লেখা। সেটার বাংলা অনুবাদ এটা।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৬
শেরজা তপন বলেছেন: এই লেখকের কোন বই তো পড়া হয়নি - রেফারেন্স এর জন্য ধন্যবাদ তবে প্রথম বইটা আগে পড়ে নেই।
২৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পরবর্তী পর্ব লিখবেন আশা করি। লাবণ্য দাশের জবানিতে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কিছু পড়ার সুযোগ হয়নি এখনও। এখানে পড়ে অনেক কিছু জানলাম।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২০
শেরজা তপন বলেছেন: তাকে নিয়ে লেখা তো অনেক কিছুই আছে। অনেক পড়াশোনা করতে হয় সময় সুযোগ পেলে অবশ্যই আরো পর্ব দিবো- সাথে থাকবেন।
২৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৩
ঢাবিয়ান বলেছেন: আপনার লেখা মানেই অজানা সব তথ্যে ভরপুর। ++++
তবে কালজয়ী কবি সাহিত্যিকদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাহেচরা সবকালেই হয়ে থাকে তবে আমার মনে হয় এটা না করলেই ভাল হত। এত কালজয়ী সব বই যারা লিখেছেন তারা দিন দুনিয়া ছেড়েই লিখেছেন। তানাহলে তারা আমাদের মতই ছা পোষা সাধারন মানুষ হত।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২২
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার দিলখুশ করা মন্তব্যে দারুন ভাবে অনুপ্রাণিত হলাম!
শেষের কথাগুলোর সাথে সহমত না হয়ে উপায় নেই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
২৬| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২৮
মিরোরডডল বলেছেন:
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার স্ত্রী বাই ডিফল্ট খুশি এবং সুখী মানুষ।
এটাতো অনেক ভালো, এরকম সঙ্গী পাওয়া আশীর্বাদ।
সাচু নিজেও অনেকটা তাই।
তবে তার একটা সমস্যা আছে। সেটা হল আমি দূরে থাকলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই রোগ যাচ্ছে না তার।
এটা কঠিন সমস্যা না। সাচুই পারে এটা থেকে বের করে আনতে।
খুব বেশি নির্ভরতা থেকে এমন হয়। যে যে কারণে সাচুর ওপর সম্পূর্ণ বা বেশি নির্ভর করে, সেইগুলো প্রেশার না দিয়ে এনকারেজ করে একটু একটু করে তাকে শেখাতে হবে, অনেক বেশি উৎসাহ দিবে।
একটা সময় সে নিজেই যখন অভ্যস্ত হয়ে যাবে তখন ইনসিকিউরিটি কেটে যাবে। তবে মানসিকভাবে সবসময় তার পাশেই থাকবে, যেনো সে কখনোই মনে না করে, তার সেলফ-ডিপেন্ডেন্সির জন্য সাচু দূরে সরে যাচ্ছে, তখন হিতে বিপরীত হবে কিন্তু।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৭
শেরজা তপন বলেছেন: বাই ডিফল্ট সুখি বউ পাওয়া তোর বিরাট বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার।
তিনি কি মানবী না জ্বিন?
২৭| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:০০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: @ মিরোরডডল - আমি চেষ্টা করছি আমার বউয়ের এই সমস্যা দূর করতে। কিছুটা সফলও হয়েছি। যেমন তাকে ব্যাংকে পাঠিয়ে তার দরকারি কাগজ উঠাতে সাহায্য করেছি ফোনে কথা বলে। দুই একবার ব্যাংকে নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে পারে। গাড়ি চালানো শেখাতে তাকে উৎসাহ দেই। যদিও সে এখনও সাহস পাচ্ছে না। মজার ব্যাপার হল তার ড্রাইভিং লাইসেন্স করা আছে। কিন্তু চর্চা এবং সাহসের কারণে চালাচ্ছে না। আশা করি কয়েক মাসের মধ্যে রাস্তায় চালানোর উপযোগী তাকে করতে পারবো। ধীরে ধীরে চালানোর মান বাড়ছে। আমি দূরে থাকলেও তার চলাফেরা, যাতায়াত, কেনাকাটা, বাচ্চাদের লেখাপড়া সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে রেখেছি যেন তার সমস্যা না হয়। শুধু একটু সাহসের দরকার। আমি তাকে কখনও বলি না তুমি এটা পারবে না। বিয়ের পরে তাকে আমি লেখাপড়ায় সাহায্য করেছি। অনেক সময় পড়িয়েছি, তার কলেজে নিয়ে গিয়েছি পরীক্ষার সময়ে।
আমি আসলে কখনই কোন মানুষকে বলি না আপনি এটা পারবেন না। চেষ্টা করলে, আগ্রহ থাকলে আর সহযোগিতার হাত বাড়ালে অনেককে দিয়েই অনেক কিছু করানো সম্ভব। আমার বড় ছেলের বয়স যখন ৮ বছর তখন সে সাইকেল চালিয়ে কাছের বাজার থেকে ডিম কিনে নিয়ে আসতো। ডিম সাইকেলের হ্যান্ডেলবারে ঝুলিয়ে নিয়ে আসতো।
২৮| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: দারুণ লেখা।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৪
শেরজা তপন বলেছেন: মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না
ফাঁক ফুক দিয়ে কোন দিক দিয়ে আসেন কোন দিক দিয়ে যান বুঝি না।
২৯| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২৮
মিরোরডডল বলেছেন:
@সাচুর কাছ থেকে শোনা যতটুকু জেনেছি বা বুঝেছি as a life partner you're wonderful.
Both of you are lucky for each other. God bless you & your family.
৩০| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪৮
মিরোরডডল বলেছেন:
ডার্ক ম্যান বলেছেন: মেয়েরা অন্য সবকিছু ক্ষমা করে দেয় রোমান্স ঠিকঠাক থাকলে মিরর বলেছেন।
মেয়েরা এখন সবকিছু ক্ষমা করে দেয় যদি ব্যাংক ব্যালেন্স ঠিকঠাক। তাদের যুক্তি ব্যাংকে ব্যালেন্স থাকলে রোমান্স অন্য জায়গা থেকে কিনবে।
এটা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। কিছু মানুষ (নারী অথবা পুরুষ) তারা অর্থ দিয়ে সবকিছু মূল্যায়ন করে বা বলা যায় কিছুটা অর্থলিপ্সু। তাই তাদেরকে বাদ দিয়ে, জেনারেলি যেটা দেখা যায়, একজন পুরুষ দিন শেষে বাড়ি ফিরে পরিবারের মাঝে শান্তি খোঁজে, নির্ভরতা চায়। কেয়ার চায় তার পার্টনারের কাছ থেকে, এটা খুব স্বাভাবিক।
একইভাবে মেয়েরাও সংসারের প্রতি তাদের সকল দায় দায়িত্ব পালন, ব্যস্ততা শেষে পার্টনারের কাছ থেকে একটু কেয়ার একটু আদর এটাই চায়, মনে হয়না এর বেশি কিছু দরকার হয়। হ্যাপিনেসের জন্য অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়না। অর্থ অবশ্যই প্রয়োজন জীবনের বেসিক নিডের জন্য যা না হলেই না কিন্তু শেয়ারিং কেয়ারিং লাভ স্নেহ এগুলো মাস্ট।
এগুলোর অভাবে জীবন আর জীবন থাকে না। প্রাণহীন রোবট হয়ে যায়।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৯
শেরজা তপন বলেছেন: মেয়েদেরই চাওয়া পাওয়া আর সন্তুষ্ট হওয়ার ব্যাপারটা বুঝা কঠিন বৈকি! যেগুলো আছে সেগুলো বাদে বাদবাকি সব কিছুই চায় তারা। যা নেই তার অনেক কিছু না হলেও চলে কিন্তু তারপরেও তারা সারা জীবন তাই নিয়ে আফসোস করে মরে!
৩১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৯
মিরোরডডল বলেছেন:
এমন হলেতো খুবই সমস্যা। অতৃপ্ত আত্মা
সবাই এমন না। পাওয়ার চেয়ে দেয়ার মাঝে আনন্দ অনেক বেশি।
এটা যে বুঝবে, তার কাছে জীবনের অর্থ হবে অন্যরকম।
বৈষয়িক কোনকিছুর ওপর যে হ্যাপিনেস নির্ভর করেনা, মনের প্রশান্তি হচ্ছে আনসিন অনুভুতির লেনাদেনায়।
থাক, এই প্রসঙ্গে আর না যাই, কঠিন হয়ে যাবে এক্সপ্লেইন করা।
৩২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:০৭
ডার্ক ম্যান বলেছেন: একেকজনের কাছে জীবনের মানে একেকরকম। কেউ বস্তুতে সুখ খোঁজে আর কেউ ব্যক্তিত্বে।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৩
শেরজা তপন বলেছেন: খুব ভাল বলেছেন। আবার কেউ দুটোতেই সুখ খোঁজেন। মানুষের আসলে যেইটা থাকে সেগুলো বাদে আর সবকিছুতেই সুখ খোঁজে
৩৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
লাবন্য দাস জীবন বাবুর উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনিও অবেহেলা করেছেন কবিকে তার টাকা কড়ি না থাকায়। অবশ্য স্ত্রী হিসেবে তিনি তার কর্তব্য অনেকটাই পালন করেছেন। তাই পুরোপুরি তাকে দোষ দেয়া উচিৎ নয়।
ধন্যবাদ সুন্দর বিষয়ে পোস্ট দেয়ার জন্য।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৬
শেরজা তপন বলেছেন: অভাবের সংসারে একটু লাঞ্চনা গঞ্জনা থাকেই। মেয়েরা সাধারনত বৈষয়িক ও বাস্তববাদী হয়- স্বামীর অবর্তমানে সন্তানদের নিয়ে এই ভয়ানক পৃথিবীতে কেমনে টিকে থাকবে তাই নিয়ে তাদের চিন্তার অন্ত নেই (মুলত বাঙ্গালী গৃহিনী নারীদের)
লাবন্য দাস ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কবিতা দিয়ে ৫ জনের সংসারে তো পেট ভরত না।
৩৪| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: সমৃদ্ধ লেখা।
নারীদের সব দোষ আর স্বামী স্ত্রীর ভিতরের সব খবর চারপাশের মানুষ সব চেয়ে বেশি জানে।
যা নয় তারচেয়ে বেশি রটে সব কিছু।
লাবণ্য দাসের সময়টা তো আরো কঠিন ছিল।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৭
শেরজা তপন বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন। মেয়েদের দোষ দেয়াটা একসময় বেশ সহজ ছিল- কোন প্রতিবাদ আসত না।
প্রতিভাবান কেউ তেমন সাফল্য না পেলে তার খানিকটা দোষ নারীদের ঘাড়ে গিয়ে পড়ত।
৩৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:২৭
বিজন রয় বলেছেন: এটার দ্বিতীয় পর্ব পোস্ট দিচ্ছেন না কেন?
আজাইরা পোস্ট বাদ দেেয়ে এটার ২য় পর্ব পোস্ট করুন।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:১৫
শেরজা তপন বলেছেন: দাদা এসব লেখায় একটু ভাব আসতে হয় তো, অনেক পড়াশুনা করতে হয়। গুনী, বিজ্ঞ ঋদ্ধ মানুষ তিনি তাকে নিয়ে তো এলেবেলে ভাবে কিছু একটা লিখে ছেড়ে দেয়া যায় না। মাথায় আছে আমার। আপনার কথায় আরেকটু সিরিয়াস হলাম। দুদিন আগে বললে এই ছুটিতেই লিখে ফেলতাম। সময় পেলেই আরেকটু পড়াশুনা করে লিখে ফেলব। ধন্যবাদ মনে রাখার জন্য।
৩৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৫
বিজন রয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। অপেক্ষায় থাকলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৯
বিজন রয় বলেছেন: হঠাৎ!!!!!