![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিব্বির আহমদ ওসমানী: ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন এটি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে যে ক’টি দিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ, তার মধ্যে ১৭ এপ্রিল দিনটি অন্যতম। ১৯৭১ সালের এই দিনে তদানীন্তন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মাহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। তখন মেহেরপুর মুক্ত এলাকা ছিল। ইতিপূর্বে ১০ এপ্রিল এমএনএ ও এমপিদের কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়া অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও পাক হানাদার বাহিনীকে আমাদের স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের জন্য এই অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এইচএম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের ও অস্থায়ী সরকারের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। এই সময় পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও নবগঠিত সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতি ভাষণ দেন। এমনিভাবেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জনগণকর্তৃক নির্বাচিত সংসদের নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক সরকারের আত্মপ্রকাশ করে। এই সরকার দীর্ঘ ন’মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। যার ফলে আমরা আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করেছি। একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে এ দেশের মানুষদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করার জন্য অনন্য ভূমিকা রেখেছিলো যেসব ঘটনা, তার অন্যতম হচ্ছে এই মুজিব নগর সরকার গঠন। আর তাই প্রতিবছর ১৭ এপ্রিলকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে নয় মাসের সশস্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৭ এপ্রিল জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস উদযাপন করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।
তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্যদিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। প্রথম অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে চুয়াডাঙ্গাকে নির্ধারণ করা হলেও তা এক নেতার মুখ থেকে সংবাদ মাধ্যমে পৌঁছে গেলে প্রচার হয়ে পড়ে। ফলে হানাদার বাহিনী একের পর এক হামলায় তছনছ করে দেয় চুয়াডাঙ্গাকে। ফলে চুয়াডাঙ্গায় আর সে কার্যক্রম বেশিদূর এগোয়নি। পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপশ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরের দিন দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে যে খবরটি ছাপা হয় তাহলো ‘১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ হলো বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে যে সরকারের জন্ম হয়েছিল, সেটাই হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সূচনা। বাঙালিদের স্বাধীনতা অর্জনের অদম্য স্পৃহাকে দমাতে পারেনি শত্রুরা। বরং প্রবাসে আগরতলা থেকে এই মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় একটি নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুজিবনগর সরকার একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রবাসে থেকে নিজের দেশের একটা যুদ্ধ যথাযথভাবে পরিচালনা একটা নজির বিহীন ঘটনা।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ১৭ এপ্রিলও গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মকে মুজিব নগর সরকারসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যান্য ঘটনাবলী অবিকৃতভাবে অবহিত করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারসহ সকল মহল এ ব্যাপারে এগিয়ে আসলে, এইসব সত্যকে রাজনীতি কাঁদা ছোড়াছুড়ির বাইরে রাখবেন- আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে এটি আমরা প্রত্যাশা করি।
লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
E-mail: [email protected]
©somewhere in net ltd.