![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনাদেনা,বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে-
(৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে)
আমার বাবা প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টার। কিন্তু স্কুলটি বেসরকারী থাকায় বেতন ভাতানিতান্তই কম। তবে পেশাটা অনেক সম্মানজনক। টাকা পয়সা তেমন রোজগার না করলে কি হবে,বাবার পরিচয়ের কারনে আমার মুখটা উজ্জ্বল হত অনেকসময়। কোথাও গেলেই লোকে বলে- এই, এইটা স্যারের ছেলে! আবার আব্বুকে নিয়েও আমার একটু হিংসা হত, কারন উনি হচ্ছেন পুলিশঅফিসারের ছেলে। (যদিও সেই পুলিশ অফিসার আমাকে দেখা না দিয়েই আমার জন্মের আগে বিদায় নিয়েছেন)। পিতামহের পেশার সুবাদে গ্রামে মুরুব্বি টাইপের অনেকেই আমাকে এখনো দারোগাবলে ডাকেন!
মাঝেমধ্যেভাবতাম, ইশ, আমার বাবাও যদি পুলিশ হত, তাইলে পকেটে কত টাকাইনা থাকতো! কিন্তুএখনকার পুলিশদের শুধু টাকা আর ক্ষমতাটাই বেশি দেখা যায়, সম্মানটা তেমন একটা দেখিনা কিন্তু আমি শুনেছি আমার দাদা নাকি খুব সৎ পুলিশ অফিসার ছিলেন
তবে বাবাশিক্ষক, এইটাতেই আমি যথেষ্ট খুশি। অনেক যায়গায় পরিচয় দেবার সময় দেখেছি, লোকে যেইশুনেছে শিক্ষকের ছেলে, একটা ভালো মনোভাব পোষণ করেছে। কতজনতো মুখের উপর বলেই দিছে-মাস্টারের ছেলে, ভালো ছেলে !
যাইহোক,বাবাকে দিয়েই প্রথম মানুষ গড়ার কারিগরের সাথে আমার পরিচয়। তারপর থেকে এখনো একে একেনিত্য নতুন কারীগরদের সাথে দেখা হতেই আছে।
আব্বুরস্কুলেই আমার প্রথম পড়াশুনা। তারপর গেলাম হাই স্কুলে। বরাবরের মত সেখানেই গিয়েওক্লাসে প্রথম হতে থাকলাম, পেলাম নতুন স্যারদের।
উপরেরক্লাসগুলোতে উঠতে উঠতেই বিভিন্ন যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে থাকি এই মানুষ গড়ারকারিগরদের নিয়ে ! বুঝতে শিখি ক্লাস নয়, প্রাইভেট পড়িয়ে বাড়তি কিছুটা টাকা আয় ইযেনো তাদের প্রধান লক্ষ্য। এর জন্য কি আসলে তাদের নৈতিকতার অভাব দায়ী, নাকি বেতনবৈষম্য- ঠিক জানিনা। এই প্রশ্নের উত্তর খুব জটিল। অনেকে অবশ্য বলেন যে ক্লাসের ঐঅল্প সময়টুকুতে নাকি তেমন কিছুই পড়ানো যায়না! (কিন্তু আমিতো এখন বুঝি, ওইগুলোশুধুই অজুহাত)।
সবথেকেঅদ্ভুত কিছু বিষয় খেয়াল করেছি, তাহলো কিছু শিক্ষক ছাত্রদের নিজের প্রতিযোগী ভেবেবসেন! তবেসবার প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল।
আরস্কুল লাইফে পরম মমতার সাথে কিছু স্যার যে বিদ্যা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, এখনো সেইগুলোইপুজি করে চলি। পিতৃশ্রদ্ধা আর ভালোবাসা তাদের জন্য সবসময়।
কলেজলাইফটা আমাকে তেমন কিছু না দিলেও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স,মফস্বলে ওই একটিই কলেজ হবার কারণে আর প্রতিটি বিষয়ের একজন করে স্যার থাকার কারণেপ্রাইভেট পড়া নিয়ে দারুণ ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। সে এক তিক্ত অভিজ্ঞতা
অতঃপর গেলাম পলিটেকনিকে, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। সেইখানেই প্রথম দেখলামকারিগরদের, মানে প্রকৌশলীদের- যারা মানুষ/প্রকৌশলী গড়ার কারিগর হিসেবে এসেছেনওখানে।
সেঅনেক স্মৃতি, অনেক অনেক ভালোবাসায় কিছু স্যারদের মনে রাখবো আজীবন।
কিন্তুএকটা মজার ব্যাপার হচ্ছেকি, আমি কখনোই ভাবিনি যে আমি নিজেই এই পেশায় আসবো একদিন !চাকরীতে নিয়োগের কিছুদিন আগেও আমার কল্পনায় ছিলোনা যে আমি এই পেশায় আসবো। খুলনাপলিটেকনিক থেকে লাস্ট এক্সামটা দেওয়ার পরদিনই জয়েন করলাম ওখানেই একটা প্রাইভেটপলিটেকনিকে- ম্যানগ্রোভ ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী। যদিও ইন্টারভিউ আগেইহয়েছিলো। প্রথম দিন অফিস করার ঘটনাটা আমি কোনোদিনো ভুলবোনা। চমৎকার একটা স্মৃতি। অবশ্য চাকরী জীবনের প্রতিটা ক্লাসই নেওয়াই আমাকে আনন্দ দিয়েছে সবথেকে আনন্দদায়ক যে জিনিষ টা আমি পেয়েছি স্টুডেন্টদেরথেকে, তা হল ভালোবাসা। ওরা আমাকে এতোটাই ভালোজানতো যে আমার চলে যাবার নিউজ শুনেক্লাসের সবাই মিলে বললো- স্যার, আপনি হয়তো কম বেতনের জন্য আমাদের ছেড়ে চলেযাচ্ছেন, কিন্তু যাবেননা, প্লিজ...স্যার।। আপনি থাকবেন, শুধু থাকবেন, তাই আমরাপ্রত্যেক মাসে নিজেরা চাঁদা তুলে আলাদা ১০হাজার টাকা দিবো।
এইভালোবাসায় চোখে পানি আসবে আসবে ভাব, কিন্তু আরো পড়াশুনার জন্য ঢাকা যে আমাকে আসতেইহবে, তাই চলে এলাম।
এখনএই পেশাটাকে খুবই ভালোবাসি, আর সৌভাগ্যতাবশত ঢাকায় এসেও আরেকটা কলেজে চাকরী জুটেগেলো। আবারো পেলাম স্টুডেন্টদের ভালোবাসা। আমার পড়ানো দেখে খুবই প্লিজড তারা, এমনকি আরেকটু ভালো করার জন্য দল বেঁধে প্রাইভেট পড়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সেসবপ্রস্তাবে রাজী না হয়ে ক্লাসেই খুব আন্তরিকতার সাথে পড়িয়ে ওদের সন্তুষ্টটা অর্জনকরতে পারি। ইঞ্জিনিয়ারিং এর দুইটা কঠিন সাবজেক্ট হাইড্রোলিক্স এবং এপ্লাইডমেকানিক্স পড়িয়েছি, কিন্তু কই, খুব সুন্দর করেইতো বুঝাতে পেরেছি, কাউকেতো বলিনিআলাদা প্রাইভেট পড়তে হবে, ক্লাসের এই অল্প সময়ে সম্ভবনা!
তাইলেকেনো সাধারণ স্কুল কলেজের স্যাররা এমন করেন ???
তাদেরকাছে আমার একটাই রিকোয়েস্ট- আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর, দয়া করে এই পেশাটার আরসম্মানহানি করবেননা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২৮
বেকার যুবক বলেছেন: তাদেরকাছে আমার একটাই রিকোয়েস্ট- আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর, দয়া করে এই পেশাটার আরসম্মানহানি করবেননা
ঠিক আছে। কিন্তু শিক্ষক আর মসজিদের হুজুরদের বেতন বাড়ানো উচিত। যাতে মানুষ বেশি করে এই পেশায় আসার আগ্রহ পোষণ করে।
স্কুল শিক্ষকরাই আগামির দেশ গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, আর সুশিক্ষিত সচেতন হুজুররা জাতিকে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম।
কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই তাদেরকে অনেকটা মানবেতর কিংবা অবহেলার জীবন যাপন করতে হয়।
জীবনের মূল ভিত্তি রচিত হয় স্কুলে, একটা স্কুল থেকে অসংখ্য ছাত্র বেরিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম। একজন ইঞ্জিনিয়ার, কেবল একজন ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু একজন শিক্ষক এমন অসংখ্য ইঞ্জিনিয়ারের পথ প্রদর্শক।
শুকনো কথায় বেশি কাজ হয়না।
জাতির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষক এবং মসজিদের হুজুরদের সম্মানি একটি সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। নতুবা শিক্ষার প্রকৃত সুফল পাওয়া অনেকাংশেই অবাস্তবায়িত থেকে যাবে।