নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাচ্ছেতাই....নয় !!!

মানুষ কিছু জানত না বলে সে জানার আগ্রহে ছিল ভরপুর,এখন মানুষ কিছু জানে বলেই সে অজানাকে পাঠিয়েছে বহুদূর

আশিক সীমান্ত

বলার কিছু নাই,শুধু লেখার আছ গল্প বলতে ভয় পাই,যদি লোকে সমালোচনা করে পাছে তাই বলে কেউ কপি করবেন না লেখা,এটা একান্তই লেখকের আপত্তিকর হলে পোষ্ট বাতিলের ক্ষমতা আছে কর্তৃপক্ষের

আশিক সীমান্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবাক জলপান (আধুনিক যুগে)

১৩ ই জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৫

[কিছু কথাঃ সুকুমার রায়ের "অবাক জলপান" নাটকটি আমরা কম বেশি সবাই পড়েছি।এখানে পানি পাবার যে বিভ্রান্তিকর জটিলতাকে তুলে ধরা হয়েছে তখনকার যুগে সেটা অসম্ভব কিছু নয়।কিন্তু বর্তমান যুগে পানি খুজতে গিয়ে একজন পথিক কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে তা নিয়েই এই নাটক।একটি কোচিং এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এটি অভিনয় করা হয়।সকলের আইডিয়া নিয়ে লেখা এই নাটকের মূল খসড়ার সংলাপ লিখেছিলাম আমি।কিন্তু চূড়ান্ত নাটকে সকলের মেধা ও শ্রমের সমাবেশ ঘটেছে।আমি এই নাটকে "কবি" চরিত্রে অভিনয় করি।এখানে যতটুকু সম্ভব চুড়ান্ত নাটকটি তুলে ধরা হল।দয়া করে ধৈর্য ধরে পড়বেন]





(বৈজ্ঞানিকের কক্ষ, অস্থির বৈজ্ঞানিক উদভ্রান্তের মত পায়চারি করছে, তাকে অনুসরন করছে তার সহকারী)

বৈজ্ঞানিকঃ আমি জানতাম, এবার সফল হবই, নোবেল পাওয়া থেকে আমাকে এখন আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না...(সহকারীর দিকে ফিরে)... কারন আমি আবিষ্কার করেছি এমন জিনিস যা কোন বিজ্ঞানী আজ পর্যন্ত বানাতে পারেনি...টাইম মেশিন...যা দিয়ে আমি ভবিষ্যতকে জয় করব... কিন্তু কে সেই ভাগ্যবান? কার উপর ভরসা করে আমি পরীক্ষা করব যন্ত্রটি?...(থেমে সহকারীর দিকে তাকিয়ে) তুমি, তুমিই হবে এ মহামূল্য যন্ত্রটি পরখ করার একমাত্র কস্টিপাথর...

সহকারীঃ(ভয়ে ভয়ে) না হুজুর না, গতবারের ভাঙ্গা পা এখনও সারে নি, আর সেবার রকেটের পরীক্ষা করার সময়...নেহাত বাপ মায়ের দোয়া সাথে ছিল বলে প্রানে বেঁচে গিয়েছি, তাই বলছিলাম কী হুজুর, এবার যদি কোন ভুল হয়...

বৈজ্ঞানিকঃকী? আমার উপর বিশ্বাস নেই তোমার?(আবার পায়চারি, সহকারীর অনুসরন)...ভুল করেই তো মানুষ শেখে, বলে না (দাড়িয়ে) failure is the pillar of success...এবার আসা করি কোন ভুল হবে না...'gamma constant' এর মানটা নিয়ে অবশ্য সমস্যা ছিল...নাহ পরীক্ষা না করলে তো ভুলটা বের হবে না, নাও চটপট ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে নাও, তোমাকে ভবিষ্যতে পাঠানোর ব্যাবস্থা করি...

সহকারীঃ হুজুর, আমাকে একটু সময় দিন, দেখি এ জগতে আমার চেয়ে উৎসাহী কাউকে পাই কিনা...

(সহকারী বাইরে চলে যাবে, ধরে আনবে পথিককে)

পথিকঃ আরে ভাই করছেন কি? আমাকে এখানে ধরে আনা হয়েছে কেন? আপনারা কারা?

বৈজ্ঞানিকঃ তুমি? তুমি আবার কে?

সহকারীঃ হুজুর, এ ভদ্রলোকটি ভবিষ্যতে যেতে চায়, তাই একে ধরে নিয়ে এলুম...

পথিকঃ ভবিষ্যত? আমি তো দিদির বাড়ি যাচ্ছিলুম...

বৈজ্ঞানিকঃ ওখানে পরে যেও...

(অবাক পথিককে টাইম মেশিনে নিক্ষেপ)

..

(টাইম মেশিনে নিক্ষিপ্ত পথিকের হঠাৎ মঞ্চে আগমন ঘটবে,তাকে বেশ ক্লান্ত দেখাবে,মুখ ভর্তি ঘাম,জামার উপরের দুটি বোতাম খোলা,পিঠ ভেজা)

পথিকঃএ আমি কোথায় এসে পরলাম? জায়গাটা এতো অচেনা কেন?তেষ্টায় দেখি ঘিলু শুকিয়ে এল,পানি চাই কার কাছে?গেরস্তের বাড়ি ভর দুপুরে দরজা এটে ঘুম দিচ্ছে,ডাকলে সারা দেয় না,চেচালে হয়ত লোক নিয়ে তেরে আসবে।দোকান পাট ও সব বন্ধ যে কিছু কিনে খাব...ওই তো একজন লোক এদিকেই আসছে...

(ঝুরি মাথায় এক ব্যাক্তির প্রবেশ,গায়ের ধুতি পাঞ্জাবি পড়া)

পথিকঃভাই,একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন?

ঝুরিওয়ালাঃজলপাই?জল পাই এখন পাবেন কোথায়,এখন তো জল পাই এর সময় নয়,কাঁচা আম চাইলে দিতে পারি...

পথিকঃনা,না...আমি তা বলছি না

ঝুরিওয়ালাঃনা,কাঁচা আম আপনি চাননি কিন্তু জল পাই চাচ্ছিলেন কিনা,তাতো এখন পাবেন না,তাই বলছিলাম...

পথিকঃনা হে,আমি জল পাই চাচ্ছিনে...

ঝুরিওয়ালাঃচাচ্ছেন না?তাহলে "কোথায় পাব,কোথায় পাব"করছেন কেন?খামাকা এরকম করবার মানে কি?

পথিকঃনা মানে আমি একটু জল মানে পানি চাচ্ছিলাম...

ঝুরিওয়ালাঃতাই বললেই পারতেন,পানি আর জল পাই কি এক,আলু আর আলু ব্বোখারা কি এক? বরকে কি আপনি বরকন্দায বল্বেন,মাছকে কি মাছরাঙ্গা বলেন?চাল কিনতে গেলে কি আপনি চালতা বলবেন?

পথিকঃঅনেক হয়েছে ভাই,আপনার সাথে কথা বলাই ভুল হয়েছে...

ঝুরিওয়ালাঃভুল হয়েছেই তো,অন্যায় তো হয়েছেই,দেখছেন না ঝুরি নিয়ে যাচ্ছি,জল-ই বা চাচ্ছেন কেন?ঝুরিতে কি কেউ জল নিয়ে ঘরে,এরপর থেকে লোকের সাথে কথা বলতে গেলে আগে একটু বিবেচনা করে নিবেন।

পথিকঃআজব ত,কি কথায় কি বানিয়ে ফেললো,ওইত...কে যেন আসছে,ওর কাছেই জিজ্ঞাস করি





( গান গেতে গেতে এক লোক পথিকের পাস দিয়ে যেতে থাকবে,গান শুনে বোঝা যাবে নোয়াখালি বাড়ি,কথায় থাকবে কড়া নোয়াখালি ভাষার টান)

পথিকঃএই যে ভাই শুনছেন?

নোয়াখালিঃ(বিরক্ত হয়ে তাকাবে)

পথিকঃ ভাই একটু পানি পাই কোথায় বলতে পারেন?

নোয়াখাইল্লাঃএ মা,আই হানি তলাস কইচ্চেন,ইয়া হন বেপার হইলনি,উইইই যে দোহান কান দেখবার পারচুন না,হেয়ান গিয়া জিগান মুর হানি দইরহার ,হেথারা দিবনে...

পথিকঃ(খানিক হেসে)না না ভাই আপনি ভুল শুনেছেন,আমি হানি চাই না, আমি একটু পানি চাই,খুব তেষ্টা পেয়েছে।

নোয়াখাইল্লাঃ(সেও খানিক হেসে)যে,আমিও বুঝবাম পারছি,আফনের হানি দুরকারতোওওও... দোকানত জিগান,হেরা হানি দিবোনে...

পথিকঃ(বিরক্ত হয়ে)আপনি কি পানি মানে বুঝেন না? কোন কিছু খাওয়ার পর আপনি কি হানি খান? নাকি পানি খান?

নোয়াখাইল্লাঃযে ভাই আই ত খাওনের পর হানি খাই,আফনে কি খান না খান হেইডা আফনের বেপার, এহন আফনের হানি দরহার,উইইই দোকানত জিগান,হেতারা দিবনে...

পথিকঃআরে ভাই,যানতো আপনি,কি খালি হানি হানি করছেন...মধু দিয়ে আমি করবটা কি?

(রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে পথিক সামনের দিকে হাটা দিবেন,তার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকবেন নোয়াখালির মানুষটি...পকেট থেকে পানির বোতল বের করে কি যেন বিড়বিড় করবে)

নোয়াখাইল্লাঃবেডা ফাগল নাকি,হানিরে মধু কয়,হা হা ,water রে কি কইব ?আইও ক্লশ ফাইভ তন পাস কইচ্চি...হেরে মনে অয় ইংলিশ এ জিগান লাগতো" water need you"

হেতার লগে কতা কইতে কইতে আইরি গলা হুকাই গেছে, একটু হানি খাই লই...(বিরবির করতে করতেই পেছন দিকে হাটা দিবে সে)





(কিছুদূর যেতেই পথিক দেখতে পাবেন এক ব্যাক্তির পিছন পিছন আরেকজন লোক দৌউরাচ্ছে...হাতে একটা বাক্স...কথপোকথন শুনে বোঝা যাবে সে একজন সেলসম্যান)

ব্যাক্তিঃআরে ভাই বললাম তো লাগবে না...আপনি বারবার নিয়ে যান নিয়ে যান করছেন কেন...?

সেলস্‌ম্যানঃএকবার আমার কথাটাতো শুনবেন...আপনার জন্য মাত্র ৩০০০ টাকা একদাম...

ব্যাক্তিঃরাখেন তো আপনার ৩০০০ টাকা...আমি বলছি আমার দরকার নেই...শুধু শুধু কেন জ্বালাতন করছেন?যানতো সামনে থেকে...লাগবে না আমার

(সেলস্‌ম্যানকে ঝারা দিয়ে সরিয়ে চলে যাবে ব্যাক্তি)

সেলস্‌ম্যানঃধুর...আজকে একটা কাষ্টমার পাচ্ছি...কেউ বুঝতেই চাচ্ছে না...পুরা দিনটাই মাটি জাবে...(পথিকের দিকে চোখ পরবে)

সেলস্‌ম্যানঃএই যে ভাই,এই যে এদিকে...শোনেন

পথিকঃজ্বী ভাই,আমাকে ডাকছেন?

সেলস্‌ম্যানঃএই যে দেখুন আমাদের নতুন আবিষ্কার "৪২০ ওয়াটার পিউরিফায়ার"।পানি ঢালবেন তো পাবেন।এই যে এদিক দিয়ে যে ধরনেরি পানি ঢালুন না কেন,পরিষ্কার হয়ে বের হয়ে আসবে, একদম জীবানুমুক্ত।পানিতে পোকা থাকুক বা মরা লাশ থাকুক গন্ধ থাকুক বা সুবাস থাকুক, পানি কাল হোক বা ধলা হোক,চেহারা দেখা যাক বা না দেখা যাক,এই যন্ত্র সব কিছুই আপনার পছন্দের পানি দিবে। আর হ্যা, এই চাবি দিয়ে গরম পানি আর পাশের চাবি দিয়ে ঠান্ডা পানি পাবেন,যদিও আপাতত একি পানি বের হয়, তবুও দুইদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে...

(পানির আশাই চোখ চকচক করে উঠবে পথিকের...)

পথিকঃসত্যি বলছেন ভাই?ভাই,বলছিলাম কি,অনেক্ষন ধরে হাটতে হাটতে বড় তেস্তা পেয়েছে,কোথাও কোনো দোকানও খোলা নেই...

সেলস্‌ম্যানঃতবে আর বলছি কি...এই দেখুন না,আমরা মধ্য আয়ের লোক,ঘরে বাইরে,অফিস পাড়ায়, স্কুল কলেজে কত জায়গায় না জীবানুযুক্ত পানি পান করছি,কিন্তু দেখুন,যত দুষিতই হোক না কেন,আমাদের এই "৪২০"পুরো পানিই বিশুদ্ধ করে দিবে...

পথিকঃতাহলে ভাই আমাকে এক গ্লাস পানি খাইয়ে দেখান না,তেষ্টাই মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,এই উছিলায় যন্ত্রটাও পরীক্ষা করা হয়ে যাবে...

সেলস্‌ম্যানঃ(কলার ঠিক করতে করতে)জ্বী মানে বলছিলাম কি,নতুন বের হয়েছে তো,এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি,কেই বা আবার ব্যবহার করে দেখতে যায় বলুন।তাই বলছিলাম এখন অর্ডার দিলে ১০-১২ দিনের মধ্যেই আসলটা পেয়ে যাবেন।মাত্র ৬ হাজার টাকা,কাজ না করলে পরের দিনেই ফেরত। বুঝতেই পারবেন না কখন কি হয়ে যাবে।লইয়া যান,একেবারে ইন্টেক মাল,না নিলে পরে কইলাম পস্তাইবেন...যান আপনার জন্য মাত্র ৫০০০ টাকা।

পথিকঃ(রাগত স্বরে)মিয়া ফাইযলামি পাইছ?মানুষরে বোকা বানিয়ে বেড়াতে লজ্জা লাগে না?এই ১০-১২ দিনে যে দেশে ১০০-১২০ জন লোক বিশুদ্ধ পানির অভাবে মারা যাবে,তাদের দায়িত্ত্ব কে নিবে?আপনি?

সেলস্‌ম্যানঃআরেহ ভাই রাগতাছেন ক্যান...কথাটাতো পুরাটা শোনেন...বলছিলাম যে...





(পেছন থেকে এক লোক বোতল হাতে সেলস্‌ম্যান এর দিকে তেড়ে আসবে...সেলস্‌ম্যান কথা শেষ না করেই দৌড় দিবে... পোশাক এবং নেমট্যাগ দেখে ওয়াসার লোক বলে মনে হবে)

ওয়াসাঃহারামজাদা,কত্তবার কইছি এখানে আইবি না,সাহস বাইরা গেছে তোগো না!!! এরপর দেখলে আছার মাইরা ভরতা বানিয়ে ফেলব...

পথিকঃ(হাতের বোতলের দিকে তাকিয়ে)ভাই বলছিলাম কি,অনেক্ষন ধরে হাটছি কিন্তু কোথাও পানি...

ওয়াসাঃ(পথিক কে থামিয়ে) আর বলবেন না,দেশের যে অবস্থা,আগে তো দুবেলা খাবার পাওয়া যেত না,আর এখন দুবেলা পানিও পাওয়া যায় না।লোকে বলে পানিতে নাকি দুরগন্ধ,পোকামাকড় নাকি ঘুরে বেরায়।এই আপনিই বলুন তোরা তো পানি খেতে চাস,পোকামাকড় তো আর না...তাছারা দু-একটা পোকা ভেশে বেরালে কি আর হবে,বড় জোর পেট খারাপ...

পথিকঃ(বোতলের দিকে তাকিয়ে)জ্বী তাতো ঠিকি বলছেন,বাঙ্গালি তো,একটু বকর বকর না করলে শান্তি পায় না...

ওয়াসাঃএইতো আপনি বুদ্ধিমান লোক(আবার পানিতে চুমুক দিবেন)পানি পেলেও দোষ না পেলেও দোষ...তারা তো এটা জানে না যে সব কিছুই ওপরের নির্দেশে হয়।কখন কারা পানি পাবে তা উনারাই ঠিক করে দ্যান,কেউ মরলে দোষ হয় আমাদের...যত্তসব পাগলের দেশ...

পথিকঃ(তখনও পানির দিকে তাকিয়ে)তাতো ঠিকি...

ওয়াসাঃ(এক চুমুকে বাকি পানিটুকু শেষ করে)ঠিক ঠিক যে করছেন,পানি না পেলে তো এই আপ্নারাই তাদের সাথে সুর মেলাবেন।বলি,একদিন পানি না খেলে কি হবে,মরবেন ত আর না!! সে কথা যাকগে,বলেন তো দেখি আপনি কি নিয়ে নালিশ করতে এসেছেন?

পথিকঃ(রেগে গিয়ে মাথার ক্যাপ খুলে ফেল্বে)আপনার এখন টাইম হইছে কথা শোনার?তখন থেকেই বলছি পিপাসা পেয়েছে...ব্যাটা তুমি বোঝ না,ন্যাকা সাজো।এটা আপনাদের কপাল যে আমরা বাঙ্গালি বলেই আপনারা এখন পর্যন্ত টিকে আছেন,তা না হলে এতদিন মরা পোকামাকড়ের সাথে আপনারাও ভেসে থাকতেন





(ওয়াসাকে হতভম্ব করে চলে যাবে পথিক...কিছুদূর পর দেখবে এক কবি ধরনের লোক এদিকেই আসছে)

পথিকঃনেহায়েত যেহেতু সামনে এসে পরেছে,ডেকে একবার জিজ্ঞাস করলে মন্দ হয় না...ভাই আপনি কি বলতে পারবেন এখানে জল মিলবে কোথায়?

কবিঃকি বললেন?আপনার জল মিলছে না?দাড়ান আমি এখনি মিলিয়ে দিচ্ছি.।।জল,চল,তল,বল,কল,ফল্‌.।কাজল,সজল,উজ্জল,জলজল।চঞ্চল চলচল,আখি জল ছলছল,নদীজল কলকল,আকানল বাকানল,আগল,ছাগল,পাগল।এইতো কত মিল।

পথিকঃনা ভাই আমি তা বলছি না।আমি জল মানে পানি মিলবে কোথায় সেটা জানতে..

কবিঃকি বললেন,পানি মিলছে না,খুব মিলবে,একশবার মিলবে।দাড়ান এখনি মিলিয়ে দিচ্ছি-পানি, হানি,মানি,ঘানি,বানি...মিলের অভাব কোথায়...দুটি মনে মানামানি কথা নিয়ে কানাকানি,কোথায় চলেছে আজি আমার এই জীবন খানি,গুনগুন গানে পাখির কলতানে,এই বুঝি হয়ে গেল দুটি প্রেম জানাজানি,বিরহের টানাটানি,যাযাবর প্রেমিক ঘটিয়ে চলেছে প্রেম গল্পের খুনাখুনি,এ মন যে বাচিবার নয়,ব্যার্থ সেথায় টানিতে জীবনের ঘানি......এইত কত মিল!!!!

পথিকঃভাল বিপদেই পড়া গেল দেখছি (জোড়ে)আমি আর চাইনা,শুধু একটু পানি খেতে চাই...

কবিঃবুঝেছি,শুধু-একটু-পানি-খেতে-চাই,এখনি মিলিয়ে দিচ্ছি...শুধু একটু পানি খেতে চাই,তেষ্টায় প্রান আই ঢাই।চাই কিন্তু কোথা গেলে পাই,বল শীগ্রি বল নারে ভাই।কি,ঠিক মিলছে তো?

পথিকঃ জ়্ব্বী হ্যা খুব মিলেছে খাসা মিলেছে,ধন্যবাদ...বোকে বোকে মাথা গরম করে দিল...উহঃ......(কবিকে পেছনে ফেলে হাটা দিবে পথিক,কিছুক্ষন বিড়বিড় করে কবিও হাটা দিবে)





(রাস্তার পাশে ছায়ায় বসবে পথিক,চোখ বুজে থাকবে, তার দিকে এগিয়ে আসবে দুইজন ঠকবাজ...।আসলে তারাই সেই বিজ্ঞানী.।সময়ের ঘুরপাকে তারা এখন ঠকবাজ।পথিকের পাশে এসে বসবে এবং নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকবে)

১মঃদোস্ত,এর কাছে মনে হয় টাকা পয়সা পাওয়া যাইব...পকেট ফুলা মনে হইতাছে...

২য়ঃআমারো মনে হইতাছে,ডাক তো হালারে,দেহি কি পাওয়া যায়...

১মঃঅই ব্যাডা অই...ঘুমের ভান ধইরা পইরা রইছছ,ভাব মারতাসস না,আমাগো লগে ভাব মারস...অঠ

পথিকঃ(লাফিয়ে উঠবে)জ্বি ভাই আমাকে বলছেন?আপনাদের তো চিনলাম না?আপনারা কারা?

আরে আপ্নারা সেই বিজ্ঞানী না যারা আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন?

১মঃআমরা কারা এটা জাইনা তোর কোন লাভ নাই?যা কমু চুপচাপ শুনবি...দেখসস এটা কি?(পেটের কাছে কি যেন একটা ধরে দেখাবে...পথিকের কাছে মনে হবে অস্ত্র...ভয়ে কুকড়ে যাবে)কোন আওয়াজ করবি না...

২য়ঃ শোন,তোরে দেইখা সহজ সরল মনে হইতাছে,আমার খুব মায়া লাগছে।তরে মাইরা আমাগো কোন লাভ হইব না,হইব?শুধু শুধু দেশ থেকে একটা জনসংখা কমানোর কি দরকার।বুযছস আমি কি কইতাছি?

(পথিক মাথা চুলকাবে,ভাব ধরবে সে বুঝে নাই)

১মঃ দোস্ত,শুধু শুধু কথা প্যাচাইস না তো...চোখে মলম লাগা,সব বুইঝা যাইব...

২য়ঃ তুই থামতো।(পথিকের দিকে ফিরে)দেখছস তো রাস্তায় কত গরম,রাস্তায় আমার পলাপাইন দারাইয়া আছে,পানি খাইব...খুব বেশি না,১০০০ টাকা দিলেই চলব...

পথিকঃ(২য় জনের আপাদমস্তক দেখবে এবং কষ্ট করে হাসি থামাবে)ভাই আপনার পোলাপাইন আসলো কিভাবে?আপনাকে দেখে তো মনে হয় না আপনি বিয়ে করেছেন?

১মঃ অই তুই ফাইজলামি করতাছস,আমাগো লগে ফাইজলামি করতাছস...(মারার জন্য হাত উদ্দত করবে,তাকে থামাবে ২য় জন)

২য়ঃ শোন,ও একটু উচ্চ তাপের পোলা,আমি আবার ওর মতন না,একটু দিল দরিয়া।পানিরে তাপ দিলে যেমন আস্তে আস্তে বাষ্প হয়,আমারে রাগাইলে কিন্তু তাই হইব...তাই,বেশি কথা কইস না,মানিব্যাগ দে...নইলে মারমু উপরে রিএ্যাকশন দেখা দিব নিচে।



২য়ঃ(মানিব্যাগ ফেরত দিয়ে)দ্যাখ,আমার দিল একটু নরম,কাউরে কষ্ট দিলে আমার কষ্ট লাগে।আমার মত ভাল মানুষ(পাশ থেকে ১ম জন গুতা দিবে)মানে আমাদের মত ভাল মানুষ খুব কম পাবি...তাই বড় ভাইদের সাথে আর ফাইজলামি করবি না...(এই বলে হাটা দিবে তারা)

পথিকঃ ঠিক আছে ভাই মনে রাখব...কিন্তু তেষ্টায় আমার গলা কাঠ হয়ে গেছে,একটু পানি পাই কোথায় বলতে পারেন?

(পথিকের কথার জবাব না দিয়ে তারা চলে যাবে...হতাশ হয়ে সামনে হাটা দিবে পথিক)

পথিকঃওইতো,ছাত্র ছাত্রীদের আনাগোনা...হয়ত কোন কোচিং খোলা আছে...দেখি তো গিয়ে...

(পথিক **** নামের একটি কোচিং এর সামনে এসে দাঁড়াবে...ওই সময় ভিতর থেকে বের হবে হিপ্পি মার্কা একটা ছেলে...পরনে ঢোলা প্যান্ট,গায়ে হাটু সমান গেঞ্জি,হাতে মালা জরানো,কানে হেড ফনে,বিড়বিড় করতে থাকবে)

পথিকঃএই যে ভাই,শুনছেন...বলছিলাম কি...

র্যা পারঃ(বিরক্ত হয়ে র্যা পার স্টাইলে)hey man,this is..../দারাইয়া আছি rickshaw ডাকবো যাবো পল্টন/কে তুমি এসেছ করতে জ্বালাতন/মার দিয়ে দাত ভাংবো আচ্ছা মতন

পথিকঃএ তো দেখি আরেক মুসিব্বত,গানে গানে কথা বলে...না ভাই, আমি এখানে জ্বালাতে আসি নাই...একটা কথা জানতে চাই শুধু...

র্যা পারঃ(গানের তালে)ভাই তুমি বোঝ না এতো অভিনয়/ ভাল নয় লুকিয়ে রাখা অভিমানটা যত/না তোমার মনের কথা বল তুমি আমায় খুলে/রোদ অনেক চড়া তাই বসে শুনবো ভিতর ঘরে...

পথিকঃতাতো বুঝলাম...আগে কথাটা শুনেন তারপর ভিতরে যাই...আমি,মানে বলছিলাম কি,সেই সকাল থেকে পথ হাটছি...তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে...দেখুন ঘামে ভিজে কি অবস্থা আমার...

র্যা পারঃ(পথিকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে)দ্যাখ দ্যাখ ছেলেটা খাবার পানির জন্য ঘুরছে/গলাটাতো ভাংছে, ঠোটটাতো ফাটছে/গা ভরা গন্ধ,মাথা ভরা ভিজা চুল/ভাবখানা তিন দিন অভুক্ত নির্ভুল/জিন্সের সাথে আছে হাতা বটা শর্ট শার্ট/দুই খানা খোলা বোতাম,হেটে হেটে উইক হার্ট/গলাটাতো শুকনা,হাতে পায়ে বালি/ স্মার্টনেস পিপাসায় হল ফালি ফালি...

পথিকঃজ্বী ভাই...বুঝতেই যেহেতু পারছেন,তাই আপনি কি বলতে পারেন পানি কোথায় পেতে পারি... কোথাও কোন দোকান খোলা নেই যে পানি কিনে খাব...ভাবলাম কোচিং এর ভিতরে হয়তো পানি পাবো...আপনাকে কোচিং এর ছাত্র বলে মনে হচ্ছে...তাই আপনার কাছে জানতে চাওয়া...

র্যা পারঃ(কিছুটা সহানুভূতির স্বরে গানের তালে)ভাই শোন তোমায় বলি পানি পাবে কোথায়/ আমি দেখতে চাই না তুমি ঘোরো হেথায় সেথায়/আসো তুমি আমার সাথে ওই বিল্ডিং এর নীচে/পানি পাবে কোথায় আমি দেই দেখিয়ে...

পথিকঃঅনেক ধন্যবাদ আপনাকে,অনেক ধন্যবাদ...চলুন তবে ভিতরে যাই...



(ভিতরে এসে পথিকের সাথে এক কর্মচারির দেখা হবে।কর্মচারী কাজে ব্যাস্ত থাকা অবস্থায় জানতে চাইবে কি হয়েছে)

পথিকঃভাই,সেই সকাল থেকে ঘুরছি একটু পানির আশায়।খাওয়ার পানি জাতীয় কিছু থাকলে দয়া করে দিবেন?

কর্মচারীঃক্লাশ সিক্স তো? দাড়ান,এখনি এনে দিচ্ছি

(কর্মচারী চলে যাবে আর পথিক এদিক ওদিক দেখতে থাকবে,একটু পর কর্মচারী একটি কাগজ এনে পথিকের হাতে দিবে)

পথিকঃভাই এটা কি দিলেন?এতো দেখি ক্লাশ সিক্স এর সমাজের অধ্যায় চার এর পানির উপর লেকচার শীট!!!আমি তো এই পানির কথা বলিনি

কর্মচারীঃধুর ভাই,আগে বলবেন না।ওই ওনার সাথে গিয়ে কথা বলেন।দেখতাছেন আমি কাজ করতাছি

ব্যাক্তিঃভাই,আপনার কি লাগবে আমাকে বলুন।আপনি এসেছেন কোথা থেকে?আপ্নার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনার বাড়ি রাজশাহী,রংপুর,বগুরা বা সিলেটের কোথাও হবে।

পথিক: না,আমার বাড়ি বরিশাল বাবুরহাটে।

ব্যাক্তিঃআচ্ছা,দাড়ান দাড়ান,আপনার বাড়িতে একটা মন্দির আছে না,আর আপনার পাশের গ্রামে একটা মসজিদ আছে,মসজিদের সামনেই একটা পুকুর আছে আর পুকুরের পাড়েই আছে ইয়া বড় একটা নারকেল গাছ

পথিকঃআরে ভাই আপনি কি করে জানলেন?আপনার বাড়িও কি সেখানে নাকি?

ব্যাক্তিঃআচ্ছা,মসজিদের পাশে একটা কল ছিল না যেখানে রোজ এক বৃদ্ধা মতন মহিলা পানি নিতে আস্তেন?তাকে চিনেন তো?সে আমার বড় কাকী

পথিকঃহ্যা চিনেছি চিনেছি।আপনি তো দেখি আমার গ্রামের মানুষ।যাক ভাই আপনাকে পেয়ে ভালই হল।দয়া করে বলুন না খাওয়ার পানি কোথায় পাবো?

ব্যাক্তিঃআরে আগে বলবেন তো,ওই যে ওদিকে পানি রাখা আছে।আপ্নি গিয়ে খেয়ে নেন

পথিকঃ ধন্যবাদ ভাই,বাচালেন আমাকে।গ্রামে গিয়ে আপনার বড় কাকীকে আপনার কথা অবশ্যি বল্ব।(পথিকের প্রস্থান)

(ওদিকে ওই কর্মচারীর কানে সব কথা যাবে,সে ওই ব্যাক্তির নিকট এগিয়ে আসবে)

কর্মচারীঃ (মাথা চুলকিয়ে)আচ্ছা মামা,আপ্নার বাড়ি না ময়মসিংহ?তাহলে লোকটাকে বরিশাল বললেন কেন?তাছাড়া আপনি এতো কিছু জানলেন কি করে?

ব্যাক্তিঃআরে ব্যাটা বুঝস না,তারে আমি সম্ভাব্য সব জাযগার নাম বলছি,একটা না একটা তো হবেই।তাছারা সে হিন্দু তাই তার এলাকায় একটা মন্দির থাকবেই,তাই বলেছি পাশের গ্রামে একটা মসজিদ আছে,যেখানে মসজিদ আছে সেখানে ওজু করার জন্য পুকুর থাকবে।আর গ্রামে কল ও নারকেল গাছ থাকবে নাতো আর কোথায় থাকবে?এবং সেই কলে কোন না কোন মহিলা পানি নিতে আসবেই।বুঝছশ এবার?

কর্মচারীঃ হ মামা বুঝছি।

(বিঃদ্রঃ নাটকে লেখা র্যােপ গুলা দেশি এমসি আর ব্ল্যাজিন এ্যানেক্সের দুটি গানের সুর অবলম্বনে লেখা।আর ঝুরিওয়ালা চরিত্রটি মূল নাটক থেকে নেয়া হয়েছে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.