নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাবুলিওয়ালার কথা

মনের খোলা জানালয় কত আলো কত রঙ, খেলা করে চুপি সারে, আসে যায় কড়া নাড়ে ... ...

সবুজ

ইনিজনিযারিং পডা প্রায় শেষ। ভাবছি এই যন্ত্রণাময় শহর ছেড়ে, আইন কানুন বিধি ধর্ম ফেলে কোথাও পালানো যায় কিনা। স্বভাবে খুব অলস । বিশ্বাস করি উবুড় হয়ে শুয়ে থাকার নীতি। কিন্তু তবুও গল্প-কথা-কল্পনা-গাঁথার বাইরের বাস্তবতাকে এড়াতে পারি না।এড়াতে পারি না বেঁচে থাকার এই গতানুগতিক দিন গুনা। জব করছি সকাল সন্ধা। তবু ভাবি এই কি বেঁচে থাকা? কিন্তু এভাবে কত দিন? সাগর আর পাহাড় আর সবুজ জংলা যেখানে এক হয়েছে ... ... ... একদিন সেখানে ঠিকই পালাব আমি ।।

সবুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেলে আসা পাহাড়-নদী-সাগর

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ছোড় ছোড় ঢেউ তুলি পানি,

ছোড় ছোড় ঢেউ তুলি পানি,

লুসাই পাহার অত্তুন লামি আই

যারগই হন্নফুলী;



ছোট ছোট ঢেউ তুলে পানি, লুসাই পাহাড় থেকে নেমে এসে

যচ্ছে চলে কর্ণফুলী...



চাটগাঁইয়া দের খুব প্রিয় গান। ছোট বেলা থেকে অনেক অনেক বার শুনেছি। কখনো এর ভেতরের মর্মার্থ খুজিনি। কখনো এইগান শুনে মনে হয় নি একবার ছুটে যাই কর্ণফুলীর মোহনার কাছে। শেষ বিকেলের সূর্য যখন রক্তিম অগ্নিগোলক হয়ে সমগ্র পশ্চিমাকাশ আর জলরাশিকে বিষন্ন করে দিয়ে সাগর সঙ্গমে মিশে যেতে থাকে, মনে পড়ে না তখন কি ভেবেছি। হয়ত বা দু-একবার ফিরে চেয়েছি, হয়ত বা না।



আজ মনের সুদূর গভীরে, হটাৎ কি-এক সূক্ষ ব্যথায় মাঝরাতে জেগে উঠি ঘুম ভেঙ্গে। মনে হয় কত দিন মা'কে দেখিনা। দেখিনা দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠের শেষ প্রান্তে হেটে যাওয়া লাঙল কাধে কৃষক। মনে পড়ে কর্ণফুলিতে নৌকা ভ্রমন। মাঝরাতে মিড়ফোর্টের পিছে বুড়িগঙ্গায় গিটারের তালে তালে গান। কিত্তনখোলায় চাদের আলোর মাতাল সুধা। রাঙামাটির শুভলংয়ের পথে সোনলী সূর্যের নরম বিকেল, রূপালী জোছনা। সুনামগঞ্জের হাওড়ে মত্ত ঢেউএর মাঝে ডেঙ্গির উম্মাদ দুলুনী।



বন্ধুরা বলে, অনলাইনেও দেখি, ঢাকা-চট্টগ্রাম অঝোর বর্ষণে টলমল করছে। এসময় অক্লান্ত রোদের পর কুসুম গরম আরাম দায়ক মজাদার বৃষ্টি, ভার্সিটি বা অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে হুড় ফেলে দেয়ে কত ভিজেছি!

আর সাগরের উম্মত্ত ঢেউ যখন পাগলা ষাড়ের মত উদ্দাম বেগে ছুটে এসে পতেঙ্গার পাথুরে শৈকতে আছড়ে পড়ে সারা গা ভিজিয়ে দিত, সিগারেটে আগুন দিতাম।



বছরের এসময় মাতামুহুরীর উজানে প্রবল বর্ষণে নদীতে বাণ ডাকে। ঘোলা পানি দু-কুল ছাপিয়ে লামা-আলিকদমের পাহাডি গাছের বড় বড় অংশ টেনে নিয়ে চলে দূর্বার বেগে। আর কিশোর কিশোরিরা দুকুল থেকে ঝাপিয়ে পড়ে উল্কার বেগে ছুটে চলে, জাপটে ধরে টেনে আনে। আমি প্যান্ট হাটু পর্যন্ত গুটিয়ে তাই দেখেছি কত।



দেখেছিলাম দূর-সস্পর্কের এক কাজিন, ১৪/১৫ বছরের গ্রাম্য কিশোরি। টকটকে লাল সিলওয়ার-কামিজ, ভিজে লপ্টে আছে সারা গায়। সবুজ ওড়না দিয়ে কষে বেধে রেখেছে তার দেহের ভাজ। রোদে পোড়া তার ফর্শা রং উজ্জল তামাটে, মুখে বৃষ্টির ফোটা, যেন হিরের টুকরো। আকাশ ঢাকা মেঘের চেয়ে কাল তার চুল, টান টান করে বাধা, বৃষ্টির ফোটা ছুয়ে ছু্য়ে পড়ছে। চোখে তার শিকারির দৃষ্টি, ভেসে আসা কোন গাছের গুড়িতে চোখ হয়তবা! দাড়িয়ে আছে পাড়ে,এক হাতে বাঁশ ধরে, নদীতে ঝুকে থাকা বাঁশ ঝাড়ের গোড়ায়। ঝাপদিতে প্রস্তুৎ সর্বাঙ্গে। যেন টান টান ধনুকের ছিলায় ছুটতে প্রস্তুৎ একটা তীর, যেন গ্রাণাইট পাথরের নিখুত ভাষ্কর্য। ঠিক যেন জাফর ইকবালের বকুলাপ্পু। নদীর পাড় ডুবে আছে, আমি তার ক-হাত পিছে, হাটু পানিতে দাড়ানো। সেদিনের সেই মুহুর্ত আমার স্মৃতিতে পাকা ছাপ রেখে গেছে।



কতদিন ভেবেছিলাম মাতামুহুরীর উজানে যাব, নৌকা নিয়ে। পাহাড়ের মাঝদিয়ে বয়ে চলা আপাত শান্ত এই নদীর বর্ষার ভয়ংকর রূদ্র রুপ, না দেখে কি কেউ ভাবতে পারে? ২/৩ মাস ছাড়া সারা বছর শান্ত, ঝিরঝির বয়ে চলা টলমলে জলের নিচে ঝকঝকে বালু দেখা যায়।



কতবার কত পরিকল্পনা ভেস্তে গেল! স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, অফিসে কাজের চাপ... যাওয়া হয়নি। আর আজ? বুকের ভেতর পাথুরে আফগান প্রান্তরের নি:সীম হাহাকার।



দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,

ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া,

একটি ধানের শিষের উপর,

একটি শিশির বিন্দু ...



ইশ। দীর্ঘশ্বাস শুধু বাজে।

এবার দেশে গেলে সব দেখব, সব।



------



মাতামুহুরীর ছবি পোষ্ট করেছিলাম কিছু, অনেক দিন আগে।

দেখুন: Click This Link

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৫/-১

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫০

প্রচেত্য বলেছেন: সুপাঠ্য

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯

সবুজ বলেছেন: অনেক ধণ্যবাদ।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ রাত ৯:০১

নোক্সেনডার বলেছেন: রুবির কথা দেইখা মন্তব্য করতে আসলাম ;)
এইটা তো বহুত পুরান ঘটনা। তখন আমরা মনে হয় এস.এস.সি দিছি / ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে নয়া নয়া :D

০৫ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৩:৪১

সবুজ বলেছেন: তোর স্মৃতিশক্তি ভাল, আমি জানি দোস্ত।

সেদিনের সেই মুহুর্ত আমার স্মৃতিতে পাকা ছাপ রেখে গেছে।
আমি অনেকবার অনেককেই এই কথা বলছি।
আমরা তখন ১৭, বড়জোর ১৮।

০১ লা মার্চ, ২০০৯ রাত ২:১৬

সবুজ বলেছেন: ১৬ মনে হয়, স্কুলে

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ২:৪১

রোকন বলেছেন: হুম.. নস্টালজিক লেখা। রুবি জীবনের প্রথম ছ্যাকা দোস্ত???

০৫ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৩:৪০

সবুজ বলেছেন:
হাহাহাহা, না বন্ধু, সে অবসর ছিল না।

কলেজ লাইফের শুরুতে চোখে যে তীব্র আলোর ছটা লেগেছিল! অন্ধ ছিলাম আনেক বছর।
শেষ বিকেলের সূর্য আলো দেখিয়ে চলে গেল, আমি রাত ভর তারই ব্যর্থ আশায় ছিলাম। রাত শেষ হয়নি।

কোন সূর্য উঠেনি আর!

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১১:৪০

প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বলেছেন: পোস্ট টা সত্যি অনেক সুন্দর হৈছে...
লিখে যাও...

ভাল থাকো..

০৫ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:০৫

সবুজ বলেছেন: আপনারে আশা করতেছিলাম বস।
ধন্যবাদ।


আর চিকনা জেডা কই???

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:১২

প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বলেছেন: চিকনা মনে লয় আরো শুকাইয়া কাহলি হৈয়া বিছানা থিক্কা উঠতে পার্তাছে না :(

০৫ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৫:০১

সবুজ বলেছেন: ভালৈছে। ভালৈছে। চিকনা চিকনাইছে!!!

৬| ১৫ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৩:০৬

বিজ্ঞ পোকা বলেছেন: তোর লিখা পড়ে, আমারও কিছু কথা মনে পড়ে গেলো। সবারই কিছু কিছু আপন আপন কথা মনে পড়া দরকার!!

বন্ধু, আমার তখন বয়স কত ছিলো??

২০ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৩৮

সবুজ বলেছেন:
শালা ... কি কইবার চাস???

থাক তুই-ত ভালা পুলা!!!

বউবাচ্চা লইয়া সংসারী হ ... সুখে থাক ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.