নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘুমাইতে গেলে যারা খালি এপাশ ওপাশ কাইত চিত হয় তারাই ব্যাচেলর।

ডাক্তার তো জানেনা যে তুমিই আমার হৃদরোগের কারন!

আমিই সোহেল

জীবনের মানেই খুঁজে পেলাম না।।

আমিই সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুমিল্লায় গ্রেপ্তার হয়েছিল ১৫২৬ রাজাকার

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭

মামলা হয়েছিল ৩৯৪, সাজা হয় ৩৪ জনের, রেকর্ড নেই ১৭০ মামলার
৪৪ বছর পর পাওয়া তথ্য


মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগে কুমিল্লায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৫ শ ২৬ জনকে। বিপুল সংখ্যক গ্রেপ্তারকৃত দালালের মধ্যে সাজা দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৩৪ জনকে। কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইনে হয়েছিল ৩শ’ ৯৪ টি মামলা। এসব মামলার মধ্যে ১৭০টি মামলার কোন ফলাফল কোন রেকর্ডপত্রে পাওয়া যায় নি। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯৯ টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ সব মামলার প্রায় সবগুলোই হত্যা মামলা। কিন্তু এ সব মামলায় অভিযুক্ত পাকিস্তানী সেনাদের ১৯৭৩ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে যাচাই বাছাইয়ের জন্য গঠিত জেলা স্ক্রূটিনি কমিটি তদন্তের পর ৮ শ’ ৮ জনের মধ্যে ৬ শ’ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং চার্জসীট প্রদান করে বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। আর ঐ বছরই গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ১৭৭ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল কমিটি। কিন্তু ১৯৭২ সালের ২০ ডিসেম্বর যে সব রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ নেই তাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হলে ( মেমো নং ২০২৩-এসবি তাং ২০.১২.১০৭২) দালালির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়ার হিরিক পড়ে যায়। সেই সাথে ‘সামান্য রাজাকার’ হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার হতে শুরু করে। কুমিল্লায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তত্ত্বানুসন্ধানকালে ৪৪ বছর পর পাওয়া গেছে এ সব তথ্য। তত্ত্বানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, বরুড়া, মুরাদনগর, দাউদকান্দি, দেবীদ্বার, হোমনা, বুড়িচং ও চান্দিনা থানা এলাকা থেকে দালালি ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অন্তত ১৫২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বা মুক্তিযোদ্ধারা আটক করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে সোপর্দ করে। এদের বিরুদ্ধে শান্তি কমিটিতে সক্রিয় থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করা, মুক্তিযুদ্ধের সময় লুটপাট, নারী নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ ছিল। এই গ্রেপ্তারকৃতদের যাচাই বাছাই করে বিচারের জন্য জারি করা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২ আইনে মামলা দায়েরের জন্য গঠিত হয়েছিল জেলা স্ক্রূটিনি কমিটি। ১৯৭২ সালে কুমিল্লার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে ৩ শ ৯৪টি মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া যায়। আর এ সব মামলার বেশির ভাগ হয় থানা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কর্তৃক তদন্ত পূর্বক প্রাপ্ত প্রতিবেদন কুমিল্লা জেলা স্ক্রূটিনি কমিটি বা জেলা বাছাই কমিটিতে পর্যালোচনার পর সভার সিদ্ধান্তের আলোকে। তবে শতাধিক মামলা হয় ১৯৭২ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে।

জানা গেছে, কুমিল্লা জেলা বাছাই কমিটি বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল) আদেশ ১৯৭২ এর বিধান মতে বিচারের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের যাচাই বাছাই করার জন্য প্রথম সভা করে ১৯৭২ সালের ৩০ মার্চ বিকাল তিনটায়। সভাটি হয় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম নিযুক্ত জেলা প্রশাসক কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ তাতে সভাপতিত্ব করেন। তিনি ছিলেন জেলা স্ক্রূটিনি কমিটির আহবায়ক। প্রথম ঐ সভাতে দুই জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো: ইসমাইল হোসেন এবং অধ্যাপক খোরশেদ আলম এমসিএ । জেলা স্ক্রূটিনি কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, জেলা স্ক্রূটিনি কমিটি থানা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টের আলোকে ১৯৭২ সালের নবেম্বর পর্যন্ত ৬৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও চার্জসীট দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। সেই আলোকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঐ কমিটি অন্তত ১৭৭ জনের বিরুদ্ধে করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর তাদেরকে মুক্তি দেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত দেয়। জেলা স্ক্রূটিনি কমিটি কোতয়ালী থানার ফ্যাক্ট ফান্ডিং কমিটির রিপোর্টের পর প্রথম ১৯৭২ সালের ১৭ জুলাই ডুলিপাড়ার পাচু খানের ছেলে কচি খান, ধনপুরের আকমত আলীর ছেলে ওমর আলী, কৃষ্ণপুরের আবদুর রহিমের ছেলে মমতাজ উদ্দিন, বারাপাড়ার বদরুদ্দিনের ছেলে টিটু মিয়া, কালিকাপুরের জুলফিকার আলীর ছেলে কাজী আবুল বাসার( জেলা শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক), বারপাড়ার আনু মিয়ার ছেলে সোনা মিয়া, বারাপাড়ার জুনাব আলীর ছেলে আলী মিয়ার বিরুদ্ধে বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা অপরাধ এবং দালালিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এ গতি বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭২ সালের ২০ ডিসেম্বর সরকারি এক প্রজ্ঞাপন জারির পর। ঐ প্রজ্ঞাপনে ‘গ্রেপ্তারকৃত রাজাকারদের বিরুদ্ধে কোন সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তাদের মুক্তি দানের কথা বলা হয়’ উল্লেখ করে জেলা স্ক্রূটিনি কমিটি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে গ্রেপ্তারকৃত অনেক রাজাকারকে মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু ইতমধ্যেই কুমিল্লার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে ৩ শ ৯৪ টি মামলার বিচার কাজ চলছিল বলে প্রমান পাওয়া যায়। এ সব মামলায় বিচার হচ্ছিল ১ হাজার ৫ শ ২৬ জনের। এর মধ্যে ৩৪ জনের সাজাও হয়। ১৯৭৩ সালের ২৯ জানুয়ারি কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থা থিরা পুকুর পাড়ের মৃত আ: কাদির খলিফার ছেলে মানিক মিয়াকে দন্ডবিধির ৪৫৪/৩৮০/৪১১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের সাজা ও এক হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের জেল দেওয়া হয়। এটি কুমিল্লার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় বলে ধারনা করা হয়। কুমিল্লার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে দালাল আইনে সবচেয়ে বেশি করাদন্ড দেওয়া হয় কুমিল্লার দেবীদ্বারের জাফরগঞ্জ গ্রামের দালাল আবদুল হাফিজকে। হত্যা লুট ও দালালির মামলায় তাকে ৪১ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে। দালাল আইনে রাষ্ট্র বাদি হয়ে ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় দায়ের করা ৭৪ নম্বর মামলায় প্রথম খালাস পান কুমিল্লার সদরের সাতরার হাজী ফজর আলীর ছেলে নুরুল হক ওরফে সানু। ১৯৭২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে খালাস দেন কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তত্ত্বানুসন্ধানে দেখা গেছে, কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাজা পাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে কোতয়ালী থানা এলাকার ৫ জন, লাকসামের ৮ জন, চৌদ্দগ্রামের ৪ জন, বরুড়ার ২ জন, মুরাদনগরের ১ জন, দাউদকান্দির ১ জন, দেবীদ্বারের ১০ জন, হোমনার ৩ জন দালাল রয়েছেন। কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ৯৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কোতয়ালী থানায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন বেকারীর বিরুদ্ধে তিনটি, মেজর আবদুল করিম, মেজর ধর, ক্যাপ্টেন সারওয়ার, মেজর নুসা, ক্যাপ্টেন জিয়া, হাবিলদার বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২টি, মেজর খালেদ, মেজর আজাদ, সুবেদার আশরাফ, ব্রিগেডিয়ার ইকোবার সফি, মেজর মোস্তফা, ক্যাপ্টেন ইফতেখার খান, বিরুদ্ধে ১টি, চৌদ্দগ্রামের ক্যাপ্টেন গোদরাজি, সুবেদার মেজর আকরাম খান, ৩৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন গোনদেজের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো হত্যা মামলা। অপর পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের রাখা হয়েছে অজ্ঞাতনামা হিসেবে। কোন কোন মামলায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে শান্তি কমিটির নেতাদের এবং সে সময়ের শান্তি কমিটির নেতাদেরও আসামী করা হয়। এসব মামলার বেশির ভাগই ১৯৭৩ সালের আগষ্ট-সেপ্টেস্বর মাসে আসামীদের অব্যাহতি দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত কুমিল্লা জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি শহরের গাংচরের হামিদ আলীর ছেলে এমএনএ আজিজুর রহমান এডভোকেট, জেলা শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লার কালিকাপুরের জুলফিকার আলী কাজীর ছেলে কাজী আবুল বাশার, কুমিল্লা সদর (দ.) শান্তি কমিটির ক্যাশিয়ার আবদুর রাজ্জাক, লাকসাম শান্তি কমিটির সভাপতি মৌলভী ওয়াহিদুর রহমান, সেক্রেটারি হাজী আবদুল আজিজ, কুমিল্লার জহিরুল হক লিল মিয়া মিনিষ্টার, কুমিল্লা টাউনে প্রাক্তণ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তাদের অব্যাহিত দেওয়া হয় ১৯৭৪ সালের ২২ মার্চ। এছাড়া কুমিল্লা শহরের অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয় দালাল আইনে। তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় মামলা। তাদের সবাই ঐ সব মামলা থেকে অব্যাহতি পান শুধু রাজাকারভূক্ত কিন্তু কোন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়ার সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির সুযোগে। তত্ত্বানুসন্ধানের সময় জেলা স্ক্রূটিনি কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সর্বশেষ এ কমিটির সভা হয় ১৯৭৫ সালের ১১ নবেম্বর। এতে আমন্ত্রণ জানালেও উপস্থিত হন নি প্রাক্তণ এমপি কাজী জহিরুল কাইয়ূম, প্রাক্তণ এমপি অলি আহম্মদ। ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করা হলে কুমিল্লাতেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। মুক্তি পেয়ে যান কারাগারে থাকা দালালরাও।

প্রকাশনা :আবুল কাশেম হৃদয়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.