![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে স্পিরিচুয়াল বা আধ্যাত্নিক চেতনার সঙ্ঘাত নতুন কিছু নয়। যুগে যুগে নানান রূপে যারা ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা এবং রাজনৈতিক ব্যবহার কে নিজেদের স্বার্থের হাতিয়ার করেছে তাদের সঙ্গে এই আধ্যাত্নিক চেতনার অনুসারিদের সঙ্ঘাত হয়েছে। ইসলাম ধর্মে সুফিবাদ ছিল সেরকম আধ্যাত্নিক একটি ধারা যা মানুষের অন্তরের রহস্যময়তাকে সৃষ্টিকর্তার রূপের নিরাকার অস্তিত্ব হিসাবে দেখেছেন। সুফিবাদে জ্ঞানকেই সৃষ্টিকর্তার স্বরূপ মনে করা হয়, মনে করা হয় সুফিবাদ হলো সেই জ্ঞান-ভিত্তিক আধ্যাত্নিকতা যার মধ্য দিয়ে ঐশ্বরিক সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অনুভব করা যায় নিজেদের আত্নশুদ্ধি, অন্তরে সৌন্দর্য্য এবং নানান গুণাবলীর মধ্য দিয়ে। একজন মানবতাবাদী মানুষের কাছে কিন্তু ধর্মের এই ধারার সঙ্গে কোন বিরোধ হবার কথা নয়।
কিন্তু ইতিহাস কী বলে? এরকম একজন সুফী, কবি মনসুর আল হালাজি কে সেই ৯২২ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ১০৯৩ বছর আগে হত্যা করেছিল ইসলামের খলিফা আল মুক্তাদির। পারস্যের এই কবি কী বলেছিলেন? বলেছিলেন,
“আমি আমার আল্লাহ কে দেখি হৃদয়ের চক্ষু দিয়ে
আমি প্রশ্ন করি, ‘তুমি কে?’
তিনি বলেন, ‘তুমি’।“
কবি মনসুর আল হালাজি আরো লিখেছিলেন, “আনা আল-হক” যার অর্থ “আমিই সত্য”। ব্যস, গোঁড়া, অশিক্ষিত, মূর্খ মুসলমানেরা মনে করলো এই ব্যাটা নিজেকে খোদা দাবি করছে। শিরক করছে। কারণ খোদার নিরানব্বইটি নামের একটি হলো “আল হক”। অথচ এই মুর্খেরা ধর্মগ্রন্থকেও ভালো করে পড়ে নি, জানে না সেখানে খোদা নিজের ছায়ায় তৈরি করেছেন মানুষ কে, শুধু তাই নয়, বলেছেন “খোদা কতোটা কাছে যে মস্তিস্কের রক্তবাহী নালীর থেকেও কাছে”।
তাহলে এই কবি যা বলেছিলেন তা-ই আসলে সত্যিকার ধর্মের কথা, মানবিকতার কথা, আধ্যাত্নিক শুদ্ধির কথা। নিজের মধ্যে সৃষ্টকর্তাকে উপলব্ধি করার কথা। কিন্তু মূর্খ ধর্মবাদীরা তাঁকে জেলে পুড়ে দিলো এগারো বছর ধরে। তারপর বাগদাদে প্রকাশ্যে তাকে হত্যা করা হয়। কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। যখন তাঁর একটা পা কেটে নেয়া হয়, তিনি বলেছিলেন, “এই পা দিয়ে আমি পৃথিবীতে হেঁটেছি, আর মাত্র এক পা বাকি বেহেস্তে যেতে, পারলে কেটে নে”, তখন তাঁর আরেকটি পা কেটে নেয়া হয়। এভাবে হাত, মাথা খন্ডিত করেই ক্ষান্ত দেয় নি। দেহাংশ আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হয়। মাথা কাটার ঠিক আগেই হাসি মুখে বলেছিলেন, “আমিই সত্য”। মনসুর আল হালাজির কথাটার গুঢ় অর্থ হলো, ‘খোদা আমাকে নিঃশ্বেষে নিংড়ে তাঁকে দিয়ে পুরণ করেছেন।‘ একজন কবির কবিতার এই উপমার অর্থও বোঝার ক্ষমতা কোন মুসলমানের ছিল না। অথচ এমন খোদা-প্রেম ঐ মাথামোটা খলিফারও ছিল না সেই সময়।
কবি, লেখক, বিজ্ঞানীদের নির্যাতিত হবার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সব ধর্মের বেলায়ই তা ঘটেছে। যেখানে প্রকৃত আধ্যাত্নিকতায় ঋদ্ধ কবিরাই ছাড়া পায় নি, সেখানে বর্তমানের প্রশ্নবিদ্ধকারী কবি লেখকেরা ছাড়া পাবেন কীভাবে? তবে একটাই আশা থাকে যে মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, অতীত থেকে শিক্ষা নেয়। বর্তমানের দিকে তাকালে মনে হয় মানুষের এই শিক্ষা নেবার গুণাবলী একেবারে অনুপস্থিত। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ব্রত নিতে পারেন কেউ কেউ, কারণ মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানোর চেয়ে বড় পরাজয় আর কিছুতেই নেই।
©somewhere in net ltd.