নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহমান সংশয়

রহমান সংশয়

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছিলাম বিরান প্রান্তরে সেখান থেকে চারাগাছ জন্মেছে; কিছু বিষন্ন চারাগাছ

রহমান সংশয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসমাপ্ত এবং অব্যাক্ত..........

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৫৩





ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে বাঁধানো আমগাছটার নিচে বসে পড়ল ফয়সাল । পুরোপুরি বিধ্বস্ত অবস্থা । ঘাম ঝড়ছে কপাল বেয়ে , চেহারা পাকা টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে । একটু আগে প্রফেসর তাকে ঝারি মেরে বের করে দিয়েছে ক্লাসরুম থেকে । তার অপরাধ তেমন বড় কিছু না ! রাতে ঘুম হয়নি বলে ক্লাসে লেকচারের সময় মাথাটা নুয়ে এসেছিল । প্রসেফর দেখে ফেলে এবং তার সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয় ! ব্যস প্রফেসর রেগে গেলো আর তার পরিনতি এই আমগাছতলায় একলা একলা বসে থাকা । অবশ্য একলা বসে না থেকে উপায় নেই । কারো সাথে মেশা বা কেউ মিশতে আসলে তার সাথে সহজভাবে কথা বলে বন্ধুত্ব করা কোনটাই তাকে দিয়ে হয়না । এজন্য বন্ধু বলতে যা বুঝায় তা এখনো তার কপারে জোটেনি । এর প্রধান এবং একমাত্র কারণ হিসেবে তার আর্থিক অবস্থান কেই দেখে ফয়সাল । হতদরিদ্র বলতে যা বুঝায় তার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সে । হলে সিট পাওয়ায় এবং ভাগ্যক্রমে একটা টিউশনি জুটে যাওয়ায় কোন রকমে দিন চলে যাচ্ছে । পাশের টংয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু ছেলে চা খাচ্ছে দেখে চায়ের তৃষ্ণা পেয়ে গেল । পকেট ঝেড়েঝুরে ১৭ টাকা বের হলো । এই টাকা দিয়েই দুপুরের খাবার সারতে হবে । চা খাওয়ার মতো বিলাসিতা তাকে মানায় না । উঠে দাড়িয়ে হলের দিকে হাঁটা শুরু করল ফয়সাল ।



২...

কয়েলের ধোঁয়ায় চোখ জ্বলছে ফয়সালের । চোখ খুলে রাখতে পারছেনা একদম । আবার চোখ খুলে রাখাটাও জরুরি । কালকে সেমিস্টার ফাইনাল । শেষ মুহুর্তে কিছু পড়ে না গেলে একদম কিচ্ছু লিখতে পারবে না । আর লিখতে না পারলে গতবারের মতো আবার নিশীর চেয়ে পিছিয়ে পড়বে যেটা ফয়সাল একদমই চায় না । নিশী মেয়েটাই একটা আজব ! ক্যাম্পাসে সারাদিন আড্ডাবাজি , ঘোরাঘুরি চলছে তো চলছেই । একমুহুর্ত একা থাকতে দেখা যায়না । যদিওবা কিছুক্ষন একা থাকে তখন হাতে থাকে মোবাইল , আঙ্গুলগুলো কিপ্যাডে , আর নজর স্ক্রীনে । কি যে করে আল্লাহ মালুম । তবুও কেমন করে জানি প্রতিবার এই মেয়ে টপ করে । কিভাবে সম্ভব বুঝেই পায় না ফয়সাল । এই নিশীকেই ফয়সাল অনেক পছন্দ করে । এই পছন্দকে ভালোবাসা বলে কিনা ফয়সাল জানে না । শুধু জানে তাকে ভালো লাগে । সবার সাথে আড্ডা দিতে দেখতে ভালো লাগে , মোবাইলে স্ক্রীনে নজর থাকা অবস্থায় ব্যস্ত আঙ্গুলের নড়াচড়া দেখতে ভালো থাকে , দূর থেকে তার দামী গাড়ীতে চড়ে আগমন কিংবা প্রস্থান দেখতে ভালো লাগে ।



৩...



নিশাত রহমান । ডাকনাম নিশী । বাবা মায়ের অতি আদরের একমাত্র মেয়ে । ধনীর দুলালী বলতে যা বুঝায় সেরকম । বাবা বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রির মালিক হওয়ায় প্রায়ই দেশের বাইরে যেতে হয় । টাকা পয়সার কোন কমতি নেই । বরং যে পরিমান অর্থ তারা অবহেলার চোখে দেখে সেই পরিমান অর্থ হলে কোন মধ্যবিত্ত পরিবার রাজারহালে দুই তিন বছর কাটিয়ে দিতে পারবে । মা সোশাল ওয়ার্কার । সারাদিন ব্যস্ত থাকেন তার ওয়ার্ক সম্পর্কিত কাজে । পারতপক্ষে কোন কিছুর কমতি দেখা না গেলেও একটা বড় এবং প্রয়োজনীয় কিছুর বড় অভাব নিশীর পরিবারে । আর তা হলো ভালোবাসা । নিশীর প্রতি সেটা একদম ঠিক আছে । শুধু ঠিক না ঠিকের উপরে আরো কয়েক ডিগ্রী ঠিক আছে । ঠিক নেই শুধু তার বাবা মায়ের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা । নিশী যখন খুব ছোট তখন এত কিছু বুঝত না । কিন্তু বড় হওয়ার পর তার চোখে ধরা পড়ে ব্যাপারটা এবং নিজের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে নিশী । একটা আলাদা জগত্‍ তৈরী করে নেয়ার চেষ্টায় থাকে সবসময় । যেখানে কিছু না থাকলেও ভালোবাসা থাকবে সবসময় !

প্রথমে বইপত্রে নিজেকে ব্যস্ত রাখা শুরু করছিল , কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এখন তার গন্ডি অনেক বড় । ভার্সিটিতে যাওয়া , সেখানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা , গল্প , খুনসুটিতেই নিজের মানসিক পরিস্থিতি ঢাকার চেষ্টা করে । আর খুঁজতে থাকে ভালোবাসা ।



৪...



পরদিন পরীক্ষা শেষ করে আবার আমগাছটার নিচে এসে বসল ফয়সাল । টংয়ের দোকানের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এক কাপ চা খাওয়া যেতেই পারে । কালকেই টিউশনির টাকা পেয়েছে । একটুখানি বিলাসিতায় কিছু হবেনা । এমনটা নয় যে সে চা খায় না । খায় তবে হিসেব করে । প্রয়োজনের বাইরে এক কাপও নয় । উঠে গিয়ে এককাপ চা নিল ফয়সাল । ফিরে তাকাতেই দেখল নিশী বসে আছে ওর ছেড়ে যাওয়া জায়গাটায় । হাত কেঁপে সামান্য চা পড়ে গেল । কি করবে বুঝতে পারতেছে না । গিয়ে কি পাশে বসবে ? সেটা কি শোভন হবে ? আবার বসলেই বা ক্ষতি কি ? ক্লাসমেট তো । বসতেই পারে । সুন্দরী মেয়ের পাশে বসার বিলাসিতায় তো আর টাকা খরচ হয় না । সুতরাং বসা যেতেই পারে ।চোখে পড়ে এমন দুরত্ব রেখে বসে পড়ল ফয়সাল । চোখের কোনা দিয়ে দেখল নিশী তাকিয়ে আছে তার দিকে । হাই , হ্যালো , কেমন আছো বলা উচিত ! কিন্তু মুখেই আসছে না । নিরুপায় হয়ে চায়ে চুমুক দিতে গেল ফয়সাল এবং তখনই নিশীর গলায় "এটা কি রকম ভদ্রতা ?" শুনে হাত থেকে পুরো চায়ের কাপ টাই পড়ে গেল !

- "কি...কিছু বললেন ?"

-"হ্যাঁ । বললাম এটা কি ধরনের ভদ্রতা ?? একা একা দেখিয়ে দেখিয়ে চা খাচ্ছো কেন ??"

- "না মানে ....ইয়ে ...."

-"মানে মানে করতে হবে না ! যাও দু কাপ চা নিয়ে আসো । তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার ।"



মন্ত্রমুগ্ধের মতো উঠে চা আনতে গেল ফয়সাল । এখনো ভালো করে বিশ্বাস করতে পারছেনা নিশী এসেছে এবং তার পাশেই এতক্ষন বসে ছিল । বারবার পেছন ফিরে দেখছে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ।

-"কি যেন বলবে বলছিলে ??"

চা নিয়ে এসে ওর হাতে দিতে দিতে বলল ফয়সাল ।

-"হ্যাঁ যা বলছিলাম । ( চায়ের কাপে ছোট্ট চুমুক দিয়ে ) শুরু থেকে খেয়াল করছি তুমি একটু অন্যরকম । একা একা থাকো , কারো সাথেই বলতে গেলে কথা বলো না । ব্যাপারটা কি ?"

-"ব্যাপার কিছু না ! এমনিতেই । একা একা থাকতে বেশী ভালো লাগে । আর আমার কোম্পানি কারো পছন্দ হবে বলে মনে হয় না ।"

-"হুম । পয়েন্ট আছে । তো সারাজীবন কি একা থাকার প্ল্যান নাকি ?"

-"মানে ?"

-"বলতে চাচ্ছি যে সারাজীবন একা থাকবা ? কাউকে তো দরকার হবে জীবনটাকে সাজাতে ! সুখ , দুঃখ ভাগাভাগি করতে !"

-"সেটা সময় হলেই হবে ।" (ভেতরের দীর্ঘশ্বাসটুকু চেপে রেখেই বলল ফয়সাল !)

-"আর কবে সময় হবে ? বুড়া হবার পর ?? এই যেমন ধরো আমি । আগে ছিলাম তোমার মতোই ! একা একা থাকতাম । লোকজন ভালো লাগতো না । কিন্তু এখন ? এখন আমি চেন্জড । অনিককে চেনো ? হি ইজ দ্য ওয়ান । অনিক আমার জীবনে আসার পর জীবনের অর্থটাই পাল্টে গেছে আমার কাছে ....."

-"এক সেকেন্ড ! আমি আসলে বুঝতে পারি নি । অনিক আর তুমি মানে ইউ গাইজ আর কাপল আই মিন এনগেজড ?" ( প্রচন্ড বিস্ময় লুকিয়ে জিজ্ঞেস করল ফয়সাল ।)

-"হ্যাঁ ! অবাক হচ্ছো কেন ?"

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ফয়সালের । এত বিশাল ভার সহ্য করতে না পেরে মাথা ঘোরা শুরু হয়ে যায় ।

- "না ...অবাক হচ্ছিনা । অবাক হবো কেন ? ইটস ওকে ....আ...আমার একটু কাজ আছে । আমি আসি ...."

-"ও হ্যাঁ ! পরে কথা হবে...."

-"হয়তো..." (হেয়ালি করে উত্তর দেয় ফয়সাল ।)



পরিশিষ্টঃ গল্পটার একটা ভালো এন্ডিং দেয়া যেত । কিন্তু দিতে ইচ্ছে করলো না । কিছুটা বাস্তবতা রাখতে ইচ্ছে করলো । বাস্তবে এভাবে প্রতিনিয়ত অনেক গল্পের মৃত্যু হয় । অনেক ভালোবাসা চুপ থেকে যায় । তাই ভাবলাম এভাবেই ছেড়ে দেই । কোন কিছুই অসমাপ্ত থাকেনা । কেউ না কেউ সমাপ্ত করে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:৩৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: বাস্তবে কিন্তু আপনার গল্পের মতোই হয়।
ভালো লিখেছেন।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

রহমান সংশয় বলেছেন:
বাস্তবতাই তুলে ধরতে চেয়েছি । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.