![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছিলাম বিরান প্রান্তরে সেখান থেকে চারাগাছ জন্মেছে; কিছু বিষন্ন চারাগাছ
*
বাইরে থেকে গরমে ঘেমে টেমে এসে রুমে ঢু
। ফ্যান টা ছেড়ে দিয়ে আরাম
করে বিছানার উপর বসে বাতাস গিলছি ।
এমন সময়
শ্রাবন্তী এসে দরজা ধরে ধারালো ।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস
করলাম
-"কি হয়েছে ?"
-"একটু আসবি ভাইয়া ?"
-"কোথায় ?"
-"আমার রুমে "
-"কেন ?"
-"আয় না আগে ! তারপর বলছি "
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঠে দাড়ালাম ।
শ্রাবন্তীর পেছন পেছন ওর
রুমে আসলাম । ওর রিডিং টেবিলের
পাশের চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়লাম ।
শ্রাবন্তী খাতা কলম আমার
হাতে ধরিয়ে দিয়ে অংক বই খুলে বসল ।
বানরের তেলমাখা বাঁশের উপর
ওঠা নিয়ে একটা অংক । বানর একটু
করে বাঁশের উপর ওঠে আর
পিছলে পড়ে যায় । শ্রাবন্তী বললো
"অংকটা একটু করে দে না ভাইয়া !
কালকে পরীক্ষা আছে !"
আমি বিপদে পড়লাম । মহাবিপদের চেয়েও
বড় বিপদ । সারাজীবন অংক
জিনিসটাকে যমের মতো দেখে এসেছি ।
তার উপর আবার এই অংক ! আমার
বাপ দাদাও পারবে কিনা একটু সন্দেহ
আছে । হতাশ চোখে শ্রাবন্তীর
দিকে তাকিয়ে দেখি মুচকি মুচকি হাসছে ।
এ অবস্থায় তো ওকে বলাও যায়
না যে অংকটা আমি পারি না !
কি করা যায় ভাবছি । হঠাত্
করে দরজার দিকে তাকিয়ে চিত্কার
করে উঠলাম
"লাবণ্য , তোমাকে কতবার নিষেধ
করেছি আসতে ? আবার এসেছ ?
কি পেয়েছ তুমি আমার কাছে , হ্যাঁ ?
আমি কি খেলার পুতুল নাকি ? কি ?
কি বললে ?"
এমন ভাব করলাম যেন দরজায়
সত্যি সত্যি লাবণ্য নামে কেউ
আছে যে আমাকে জ্বালাতে এসেছে ।
শেষের দিকের কথা গুলো কানের
পেছনে হাত নিয়ে শোনার
ভঙ্গি করে বললাম । যেন
সত্যি সত্যি দরজার ওখানকার কেউ
কিছু বলছে আর আমি শুনছি ।
শ্রাবন্তী মুখ পাংশুবর্ন ।
কি হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা । এক
বার প্রশ্ন করতে ধরেছিল আমি হাত
তুলে থামিয়ে দিয়েছি । আবার শুরু
করলাম নাটক
"কি বললে ? কি করেছ ? তোমার এত্ত
বড় সাহস ? দাড়াও আজ তোমার একদিন
কি আমার একদিন !"
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম । ব্যস্ত
ভঙ্গিতে শ্রাবন্তী কে বললাম
"কি খারাপ দেখেছিস ? যাই হোক টেনশন
করিস না ! আমি আছি তো ! ও
হ্যাঁ অংকটা খুব সহজ । একটু মনোযোগ
দিয়ে চেষ্টা কর । সময় লাগবে কিন্তু
হয়ে যাবে ।"
শ্রাবন্তীকে চূড়ান্ত অবাক
করে দিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গীতে ওর রুম
থেকে বের হয়ে আসলাম । নিজের
রুমে ঢুকে বিছানায়
বসে লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লাম ।
তারপর আবার সিলিং এর
দিকে তাকিয়ে বাতাস গিলতে শুরু করলাম
।
পরদিনঃ
মাথা খারাপ অবস্থা । সামনেই
সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা । টেক্সটাইল
ড্রয়িং পুরা ৪টা বাকী আছে । হিডেন
লাইন সমৃদ্ধ দুটা আর সার্কেল স্কেল
দিয়ে করতে হবে দুটা । মাথার
ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা । মাথার
উপরে ফ্যানটা কমিয়ে দিয়ে টেবিলে আর্ট
বিছিয়ে বসলাম । স্কচ টেপ দিয়ে আর্ট
পেপারে চার
মাথা টেবিলে আটকে নিয়ে টি স্কেল আর
টুবি পেন্সিল হাতে নিয়ে প্রস্তুত হলাম
ড্রয়িং করার জন্য । বর্ডার লাইন
টানার জন্য টি স্কেল সেট করলাম ।
এবার পেন্সিল বসিয়ে টান দিতেই
টি স্কেল সরে গেল । সরলরেখার
বদলে একটা বক্ররেখা তৈরী হলো ।
মেজাজের টেম্পারেচার তার সর্বোচ্চ
লিমিটে পৌঁছে গেছে । বিস্ফোরিত হওয়ার
আগেই সামলে নিলাম । একা একা এই
ড্রয়িং কোনক্রমে সম্ভব না ।
শ্রাবন্তীকে ডাক দিলাম গলা ফাটিয়ে ।
মিনিট তিনেক সময় লাগল শ্রাবন্তীর
আসতে । এই তিন মিনিটে ডায়ালগ
প্রস্তুত করে নিলাম । শ্রাবন্তী আসল
। হাতে আচারের বাটি । খুব সম্ভবত
বরই এর আচার । আমি ধীর গলায়
বললাম -"আপুনি একটু হেল্প করবি ?"
শ্রাবন্তী চোখ বড় বড় করে তাকাল ।
তারপর আমার কাচুমাচু
করে থাকা চেহারার
দিকে তাকিয়ে হাতে লেগে থাকা আচার
খেতে খেতে বললো -"কি হেল্প ?"
-"ইয়ে মানে সামনে আমার
পরীক্ষা জানিস তো.... !
৪টা ড্রয়িং এখনো বাকী আছে ....!
একা একা করতে পারছি না !
একটু ...মানে ...সামান্য একটু হেল্প
করবি ?" যতটুকু অসহায়ত্ব চেহারায়
ফোটানো সম্ভব সবটুকুই ফুটিয়ে তোলার
চেষ্টা করলাম ।
-"এঁকে দিতে পারবো না । অন্য কোন
হেল্প লাগলে বলতে পারো ।"
-"না না আপুনি তোকে আকঁতে হবে না ।
আমি আঁকব তুই শুধু টি স্কেলটা একটু
সোজা করে ধরে রাখবি ।" কিছুক্ষন
কি যেন চিন্তা করে সম্মতি জানাল
শ্রাবন্তী । আমি আটাশপাটি দাঁত বের
করে হাসি দিয়ে আঁকতে শুরু করলাম । কেবলমাত্র টি স্কেলটা বসিয়ে পেন্সিল
দিয়ে দাগ টানা শুরু
করেছি ওমনি শ্রাবন্তী টি স্কেল
থেকে হাত সরিয়ে নিলো । আবার
সরলরেখার বদল বক্ররেখা তৈরী হলো ।
রাগে , ক্রোধে শ্রাবন্তীর
দিকে তাকালাম । দেখি ও দরজার
দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।
ধীরে ধীরে ওর চেহারায় রাগ স্পষ্ট
হতে দেখলাম । আমি বিস্ফোরিত হওয়ার
আগেই শ্রাবন্তী বিস্ফোরিত হলো ।
দরজার দিকে তাকিয়ে চিত্কার
করে উঠল -"অমিত ! তুই আবার আমার
আমার পুতুলে হাত দিয়েছিস ?"
আমি দরজার দিকে পরিষ্কার
নজরে তাকিয়েও কাউকে দেখতে পেলাম
না । আর তখনি বুঝতে পারলাম
এটা প্রতিশোধ । হা হয়ে গেলাম । আমার
হা হওয়া মুখের
দিকে তাকিয়ে শ্রাবন্তী বললো ,
-"দেখেছিস ভাইয়া ? আমার পুতুলে হাত
দিয়েছে । কত্ত বড় সাহস ! আজ
অমিতের একদিন কি আমার একদিন ।
যাই হোক , তুমি একটু শক্ত
করে টি স্কেলটা ধরো তাহলেই আর
নড়বে না । এটা খুবই সহজ কাজ ।
আমি জানি তোমার প্রতিভা আছে ।
তুমি একাই পারবে !"
শ্রাবন্তী চলে যাচ্ছে ।
আমি হা করে চেয়ে আছি ! আমি নির্বাক
। আমি নিষ্ঠুর প্রতিশোধের শিকার !!
©somewhere in net ltd.