নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহমান সংশয়

রহমান সংশয়

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছিলাম বিরান প্রান্তরে সেখান থেকে চারাগাছ জন্মেছে; কিছু বিষন্ন চারাগাছ

রহমান সংশয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবারও শ্রাবন্তী

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১

*

বাইরে থেকে গরমে ঘেমে টেমে এসে রুমে ঢু

। ফ্যান টা ছেড়ে দিয়ে আরাম

করে বিছানার উপর বসে বাতাস গিলছি ।

এমন সময়

শ্রাবন্তী এসে দরজা ধরে ধারালো ।

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস

করলাম

-"কি হয়েছে ?"

-"একটু আসবি ভাইয়া ?"

-"কোথায় ?"

-"আমার রুমে "

-"কেন ?"

-"আয় না আগে ! তারপর বলছি "

প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঠে দাড়ালাম ।

শ্রাবন্তীর পেছন পেছন ওর

রুমে আসলাম । ওর রিডিং টেবিলের

পাশের চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়লাম ।

শ্রাবন্তী খাতা কলম আমার

হাতে ধরিয়ে দিয়ে অংক বই খুলে বসল ।

বানরের তেলমাখা বাঁশের উপর

ওঠা নিয়ে একটা অংক । বানর একটু

করে বাঁশের উপর ওঠে আর

পিছলে পড়ে যায় । শ্রাবন্তী বললো

"অংকটা একটু করে দে না ভাইয়া !

কালকে পরীক্ষা আছে !"

আমি বিপদে পড়লাম । মহাবিপদের চেয়েও

বড় বিপদ । সারাজীবন অংক

জিনিসটাকে যমের মতো দেখে এসেছি ।

তার উপর আবার এই অংক ! আমার

বাপ দাদাও পারবে কিনা একটু সন্দেহ

আছে । হতাশ চোখে শ্রাবন্তীর

দিকে তাকিয়ে দেখি মুচকি মুচকি হাসছে ।

এ অবস্থায় তো ওকে বলাও যায়

না যে অংকটা আমি পারি না !

কি করা যায় ভাবছি । হঠাত্

করে দরজার দিকে তাকিয়ে চিত্কার

করে উঠলাম

"লাবণ্য , তোমাকে কতবার নিষেধ

করেছি আসতে ? আবার এসেছ ?

কি পেয়েছ তুমি আমার কাছে , হ্যাঁ ?

আমি কি খেলার পুতুল নাকি ? কি ?

কি বললে ?"

এমন ভাব করলাম যেন দরজায়

সত্যি সত্যি লাবণ্য নামে কেউ

আছে যে আমাকে জ্বালাতে এসেছে ।

শেষের দিকের কথা গুলো কানের

পেছনে হাত নিয়ে শোনার

ভঙ্গি করে বললাম । যেন

সত্যি সত্যি দরজার ওখানকার কেউ

কিছু বলছে আর আমি শুনছি ।

শ্রাবন্তী মুখ পাংশুবর্ন ।

কি হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা । এক

বার প্রশ্ন করতে ধরেছিল আমি হাত

তুলে থামিয়ে দিয়েছি । আবার শুরু

করলাম নাটক

"কি বললে ? কি করেছ ? তোমার এত্ত

বড় সাহস ? দাড়াও আজ তোমার একদিন

কি আমার একদিন !"

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম । ব্যস্ত

ভঙ্গিতে শ্রাবন্তী কে বললাম

"কি খারাপ দেখেছিস ? যাই হোক টেনশন

করিস না ! আমি আছি তো ! ও

হ্যাঁ অংকটা খুব সহজ । একটু মনোযোগ

দিয়ে চেষ্টা কর । সময় লাগবে কিন্তু

হয়ে যাবে ।"

শ্রাবন্তীকে চূড়ান্ত অবাক

করে দিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গীতে ওর রুম

থেকে বের হয়ে আসলাম । নিজের

রুমে ঢুকে বিছানায়

বসে লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লাম ।

তারপর আবার সিলিং এর

দিকে তাকিয়ে বাতাস গিলতে শুরু করলাম





পরদিনঃ

মাথা খারাপ অবস্থা । সামনেই

সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা । টেক্সটাইল

ড্রয়িং পুরা ৪টা বাকী আছে । হিডেন

লাইন সমৃদ্ধ দুটা আর সার্কেল স্কেল

দিয়ে করতে হবে দুটা । মাথার

ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা । মাথার

উপরে ফ্যানটা কমিয়ে দিয়ে টেবিলে আর্ট

বিছিয়ে বসলাম । স্কচ টেপ দিয়ে আর্ট

পেপারে চার

মাথা টেবিলে আটকে নিয়ে টি স্কেল আর

টুবি পেন্সিল হাতে নিয়ে প্রস্তুত হলাম

ড্রয়িং করার জন্য । বর্ডার লাইন

টানার জন্য টি স্কেল সেট করলাম ।

এবার পেন্সিল বসিয়ে টান দিতেই

টি স্কেল সরে গেল । সরলরেখার

বদলে একটা বক্ররেখা তৈরী হলো ।

মেজাজের টেম্পারেচার তার সর্বোচ্চ

লিমিটে পৌঁছে গেছে । বিস্ফোরিত হওয়ার

আগেই সামলে নিলাম । একা একা এই

ড্রয়িং কোনক্রমে সম্ভব না ।

শ্রাবন্তীকে ডাক দিলাম গলা ফাটিয়ে ।

মিনিট তিনেক সময় লাগল শ্রাবন্তীর

আসতে । এই তিন মিনিটে ডায়ালগ

প্রস্তুত করে নিলাম । শ্রাবন্তী আসল

। হাতে আচারের বাটি । খুব সম্ভবত

বরই এর আচার । আমি ধীর গলায়

বললাম -"আপুনি একটু হেল্প করবি ?"

শ্রাবন্তী চোখ বড় বড় করে তাকাল ।

তারপর আমার কাচুমাচু

করে থাকা চেহারার

দিকে তাকিয়ে হাতে লেগে থাকা আচার

খেতে খেতে বললো -"কি হেল্প ?"

-"ইয়ে মানে সামনে আমার

পরীক্ষা জানিস তো.... !

৪টা ড্রয়িং এখনো বাকী আছে ....!

একা একা করতে পারছি না !

একটু ...মানে ...সামান্য একটু হেল্প

করবি ?" যতটুকু অসহায়ত্ব চেহারায়

ফোটানো সম্ভব সবটুকুই ফুটিয়ে তোলার

চেষ্টা করলাম ।

-"এঁকে দিতে পারবো না । অন্য কোন

হেল্প লাগলে বলতে পারো ।"

-"না না আপুনি তোকে আকঁতে হবে না ।

আমি আঁকব তুই শুধু টি স্কেলটা একটু

সোজা করে ধরে রাখবি ।" কিছুক্ষন

কি যেন চিন্তা করে সম্মতি জানাল

শ্রাবন্তী । আমি আটাশপাটি দাঁত বের

করে হাসি দিয়ে আঁকতে শুরু করলাম । কেবলমাত্র টি স্কেলটা বসিয়ে পেন্সিল

দিয়ে দাগ টানা শুরু

করেছি ওমনি শ্রাবন্তী টি স্কেল

থেকে হাত সরিয়ে নিলো । আবার

সরলরেখার বদল বক্ররেখা তৈরী হলো ।

রাগে , ক্রোধে শ্রাবন্তীর

দিকে তাকালাম । দেখি ও দরজার

দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।

ধীরে ধীরে ওর চেহারায় রাগ স্পষ্ট

হতে দেখলাম । আমি বিস্ফোরিত হওয়ার

আগেই শ্রাবন্তী বিস্ফোরিত হলো ।

দরজার দিকে তাকিয়ে চিত্কার

করে উঠল -"অমিত ! তুই আবার আমার

আমার পুতুলে হাত দিয়েছিস ?"

আমি দরজার দিকে পরিষ্কার

নজরে তাকিয়েও কাউকে দেখতে পেলাম

না । আর তখনি বুঝতে পারলাম

এটা প্রতিশোধ । হা হয়ে গেলাম । আমার

হা হওয়া মুখের

দিকে তাকিয়ে শ্রাবন্তী বললো ,

-"দেখেছিস ভাইয়া ? আমার পুতুলে হাত

দিয়েছে । কত্ত বড় সাহস ! আজ

অমিতের একদিন কি আমার একদিন ।

যাই হোক , তুমি একটু শক্ত

করে টি স্কেলটা ধরো তাহলেই আর

নড়বে না । এটা খুবই সহজ কাজ ।

আমি জানি তোমার প্রতিভা আছে ।

তুমি একাই পারবে !"

শ্রাবন্তী চলে যাচ্ছে ।

আমি হা করে চেয়ে আছি ! আমি নির্বাক

। আমি নিষ্ঠুর প্রতিশোধের শিকার !!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.