নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহমান সংশয়

রহমান সংশয়

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছিলাম বিরান প্রান্তরে সেখান থেকে চারাগাছ জন্মেছে; কিছু বিষন্ন চারাগাছ

রহমান সংশয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেঞ্জ অফ টেস্ট

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৩

"কি বলছিস ? কিভাবে ? কবে থেকে ?"



আমার হাত থেকে পপকর্ণের প্যাকেট টা পড়ে গেলো । প্রচন্ড ভাবে চমকালে ঠিক যেমন করে হিন্দী মুভিতে বা সিরিয়ালে মা কিংবা শ্বাশুড়ির হাত থেকে বরণডালা পড়ে যায় । আমি অপলক তাকিয়ে থাকলাম সোহেলের দিকে । সোহেল চট করে আমার হাতটা ধরে ফেললো । আমি আরো চমকে গেলাম । বাল্যবন্ধু যখন আকুল হয়ে হাত ধরে ফেলে তখন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার সমস্যা নিজের কাঁধে তুলে নেয়াই নিয়ম । কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার ভয় করতে লাগলো । সিনেমা হলের ভেতরের গাঢ় অন্ধকারে প্রচন্ড ভয় । যদিও আমি জলজ্যান্ত এবং শক্তসামর্থ্য পুরুষ তারপরও সতীত্ব হারানোর আগমুহুর্তে একজন নারী যেরকম ভয়ের সম্মুখীন হয় ঠিক সেরকম ভয় লাগতে লাগলো । এত ভয়ের মাঝেও বুঝে ফেললাম কেন সেদিন সোহেলের জিএফ ফোন করে আমাকে এক রামায়ণসম ঝাড়ি মেরেছিলো ।



ভয়ের কারণ বুঝতে হলে একটু সাদাকালোতে যেতে হবে । মানে ফ্ল্যাশব্যাক আর কি !



পূর্বকাহিনীঃ

নিজের রুমে নিজের বেডে শুয়ে শুয়ে বোর হচ্ছিলাম । ল্যাপিতে চার্জ নেই আর চার্জারটাও নষ্ট হয়ে গেছে । কিনব কিনব করে কেনাও হচ্ছে না । ঠিক তখন আমার ফোনটা ভাইব্রেট করা শুরু করলো । সোহেলের জিএফ ফোন করেছে । ফোন ধরার আগেই মিষ্টি গলার গতবাঁধা সব গদগদ ডায়লগ কানে বাজতে লাগলো । মেয়েটা যখনি ফোন করে কিছুক্ষন মিষ্টি গলায় ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকার পর সোহেলের নামে একশো একটা অভিযোগ দেয়া শুরু করে । আমি বরাবরই ভালো শ্রোতা । চুপচাপ শুনে যাই । তারপর "ঠিক আছে , আমি দেখছি " বলে আশ্বাস দিয়ে ফোন রেখে দেই । আজও তেমনটা হবে ভেবে ঠোঁটের কোনে একটা হাসি চলে আসলো । কিন্তু ফোন রিসিভ করার পর সে হাসি মিলিয়ে যেতে একদমই সময় লাগলো না । মেয়ের কথার তীব্রতায় ফোন কানে রাখা কষ্টকর হয়ে গেলো । কান থেকে ফোন নামিয়ে বিছানার এক পাশে রেখে দিলাম । যতটুকু মাথায় ঢুকেছে তাতে বুঝলাম আজকে সোহেলের বিরুদ্ধে নয় সমস্ত অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে । হতাশ হয়ে পড়ে রইলাম বিছানায় । সোহেল রুমে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত কানে বাজতে থাকলো "আপনি আমাকে আগে কেন জানান নি ?"



খানিকপর রুমে সোহেলের প্রবেশ ঘটলো । এদিক ওদিক অস্থির পায়চারী করতে লাগলো । আমি চুপচাপ তাকিয়ে থাকলাম । এক সময় পায়চারী থামিয়ে আমার পাশে এসে বসলো । বললো ,



"দোস্ত ! তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে । অনেকদিন থেকে বলবো ভাবছি । "



আমি গলা খাদে নামিয়ে আনলাম ।



"তাই ?"

"হ্যাঁ তাই !"

"তাহলে বলে ফেল"

"এখানে না । চল বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি ।"



আমি বুঝলাম না জরুরি কথা বলতে বাইরে কেন যেতে হবে । নিস্তব্ধ রুমটা কি নিরাপদ নয় ? প্যাচালাম না । এমনিতেই ছেলের চেহারা দেখে মায়া লাগছে । তাই কথা না বাড়িয়ে বাইরে বের হয়ে এলাম । "কোথায় যাবি ?" জিজ্ঞেস করাতে সোহেল কপাল কুঁচকে ভাবতে শুরু করলো । আমি বললাম "চল মুভি দেখে আসি । আয়রন ম্যান থ্রী - থ্রীডি ।" সোহেল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো । আমরা সিনেপ্লেক্সে পৌঁছে গেলাম । ইতিমধ্যে সোহেল অনেকবার তার জরুরি কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি থামিয়ে দিয়েছি । বলেছি মুভি দেখতে দেখতে শোনা যাবে । পপকর্ণ খেতে বিচ্ছিরি লাগলেও পপকর্ণ ছাড়া মুভি জমেনা । দুই প্যাকেট পপকর্ণ নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম । অন্ধকার এককোনে বসিয়ে দেয়া হলো । মুভি শুরু হলো । পপকর্ণও শুরু হলো । পর্দার দিকে নজর রেখে সোহেলকে বললাম



"শুরু কর"

"আরে শুরু তো হয়ে গেছে ।"



বিরক্তদৃষ্টিতে ওর দিকে একঝলক তাকিয়ে আবার পর্দার দিকে তাকালাম ।



"মুভির কথা বলিনি । তোর জরুরি কথা শুরু কর"



"ও আচ্ছা" বলে একটু নড়ে চড়ে বসলো সোহেল । তারপর গলা নামিয়ে বললো



"দোস্ত আমার তো টেস্ট চেঞ্জ হয়ে গেছে !"

"ও আচ্ছা ! কিন্তু পপকর্ণের ফ্লেভার বিভিন্ন রকম হয় কিনা জানিনা । তুই গিয়ে দেখে আয় যা ।"

"আরে এই টেস্ট না ।"

"তাইলে আবার কোন টেস্ট ??"



বলেই চমকে গেলাম । সোহেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায়ত্ব দেখতে পেলেও চোখ দুটোতে একটু চকচকে কি যেন দেখলাম । তারপর ভয় মিশ্রিত গলায় হঠাত্‍ চিত্‍কার করে উঠলাম ।



"কি বলছিস ? কিভাবে ? কবে থেকে ?"



আমার হাত থেকে পপকর্ণের প্যাকেট টা পড়ে গেলো । প্রচন্ড ভাবে চমকালে ঠিক যেমন করে হিন্দী মুভিতে বা সিরিয়ালে মা কিংবা শ্বাশুড়ির হাত থেকে বরণডালা পড়ে যায় ...........



সাদাকালো থেকে এবার রঙীনে ফিরে আসি ।



সেদিন কিভাবে কিভাবে যেন সিনেপ্লেক্স থেকে বের হয়ে ফিরে আসি রুমে । রুমের দরজা লাগিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচি । সোহেল এসে বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কালেও খুলিনি । চিত্‍কার করে বলেছি , "ভাইরে ! আমার টেস্ট একদম ঠিক আছে । মাফ কর আমারে ! "



এরপরের কাহিনী খুবই সংক্ষিপ্ত । নিউমার্কেট থেকে ল্যাপির চার্জার কিনে এনে নেট থেকে খুঁজে খুঁজে একটা ভালো ক্লাব বের করি । টেস্ট বদলে যাওয়া মানুষদের ক্লাব । সোহেলের হাতে ঠিকানা ধরি দেই । শুনেছি বেশ ভালোই আছে এখন । আগে একটিভ পার্টনার ছিলো এখন নাকি স্লিপিং পার্টনার । কষ্ট কম সুখ বেশী ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.