নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহমান সংশয়

রহমান সংশয়

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছিলাম বিরান প্রান্তরে সেখান থেকে চারাগাছ জন্মেছে; কিছু বিষন্ন চারাগাছ

রহমান সংশয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারপর মেয়েটা আবার সাজতে শুরু করলো....

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫১

সকাল বেলা থেকেই মেয়েটার বাড়ীতে অনেক ভীড় । অনেক লোক , অনেক কাজ । আজ মেয়েটার বিয়ে । গতকাল গায়ে হলুদ হয়ে গিয়েছে । একদম ঘরোয়া ভাবে । এলাকার কয়েকজন মুরুব্বি আর একান্ত আপনজনেরা ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলো না ।



আঙিনার মাঝখানে একটা ইজি চেয়ারে বসে আছে মেয়েটার বাবা । হঠাত্‍ করে দেখলে মনে হবে তদারকি করছেন বুঝি । আসলে তা না । উনি চুপচাপ বসে আছেন । চেহারায় বিষন্নতা । আজকের পর থেকে তিনি চূড়ান্ত একা হয়ে যাবেন এই ভেবে হয়তো ।



"ডেকোরেশন কই ?"

"মরিচবাতি গুলো এখনো লাগানো হয়নি ক্যানো ?"

"ওই গুল্লু গান বাজাচ্ছিস না ক্যানো ? এটা বিয়ে বাড়ি নাকি অন্য কিছু ?"

যিনি একটু পরপর চিত্‍কার করছেন তিনি মেয়েটার ছোটফুপি । যদিও মেয়েটার ফুপি একজনই তবুও কেন তাকে ছোটফুপি বলে ডাকা হয় সেটা বোধগম্য নয় ।হাঁপানির টান সইতে না পেরে যেদিন মেয়েটার মা মারা গেলো সেদিন থেকে এ সংসারের পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ছোটফুপি । ছোটফুপিকে আগে সবাই "আইলসা" বলে ডাকতো । কিন্তু একইসাথে দুটো সংসার সুন্দরভাবে আগলে রাখার দক্ষতা দিয়ে ছোটফুপি প্রমাণ করে দিলেন যে তিনি মোটেও "আইলসা" নন । এই মুহুর্তে ছোটফুপি অনেক ব্যস্ত । পুরো একটা বিয়ে সামলানোর দায়িত্ব তার কাঁধে ।



মেয়েটা তার ঘরে সাজছে । একা একা । সচরাচর বিয়ের কনেদের সাজিয়ে দেয়ার জন্য তার চারপাশে বান্ধবীদের একটা বিশাল বহর দেখা যায় । এক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা । মেয়েটা সাজছে আর বান্ধবীরা মুখ গোমড়া করে বসে বসে দেখছে । অনেকেরই হয়তো আশা ছিলো বিয়ের কনে সাজিয়ে দেয়ার । কিন্তু মেয়েটার কথা হচ্ছে "নিজের বিয়ে তো একবারই হবে তাই নিজের পছন্দ মতো নিজেই সাজবো ।" বান্ধবীরা আপত্তি করে নি । মেয়েটার পাগলামীর সাথে তারা অনেকদিনের পরিচিত কিনা !



ঘরে থাকা একমাত্র টেলিফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো হঠাত্‍ । ছোটফুপি রিসিভার উঠালেন । কিছুক্ষন পর আবার রেখে দিলেন । থমথমে মুখ । চোখের দিকে তাঁকালে হৃদয় ভেঙে আসে ।



তারও কিছুক্ষনপর মেয়েটিকে দেখা গেল শরীরে জুড়ে থাকা সমস্ত অলংকার খুলে ফেলতে । ছেলেপক্ষের মাইক্রোবাস নাকি এক্সিডেন্ট করেছে !!



বিয়েবাড়ি থমথমে । মেয়েটার বাবা যেখানে যেভাবে ছিলেন তেমনই আছেন । ছোটফুপি সিঁড়িতে বসে আছেন । কপালে চিন্তার ভাঁজ । গুল্লু গান বাজাবে কিনা ঠিক বুঝতে পারছে না ! আর মেয়েটা ? মেয়েটা এখনো আয়নার সামনেই বসে আছে । হাতে মেহেদীর কাঁচা রঙ ।



নিঃশব্দতা ভেঙে আবার একমাত্র টেলিফোনটা বেজে উঠলো । ছোটফুপি কপালে ভাঁজ নিয়েই উঠে গেলেন । রিসিভার উঠালেন । কিছুক্ষন কানে চেপে রাখলেন । তারপর রিসিভার নামিয়ে রেখে গুল্লুর দিকে তাকালেন । চোখে আগুন । "গান বাজাচ্ছিস ক্যানোরে গুল্লু ? মরার বাড়ি পেয়েছিস নাকি ?"



মেয়েটার ঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছে ছোটফুপি । মেয়েটা কাঁদছে , ছোটফুপিও কাঁদছে । ছেলেপক্ষ আসছে । আর ঘন্টাদুয়েকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে । এক্সিডেন্ট গুরুতর ছিলো না । দু একজনের দু এক জায়গায় একটু ছড়ে গিয়েছিলো শুধু । নতুন মাইক্রোবাস নিয়ে আসছে ওরা ।



বিয়েবাড়ি আবার শোরগোলে পূর্ণ । বিকট শব্দে পুরনো হিন্দী গান বাজাচ্ছে গুল্লু । মেয়েটার বাবা এখনো আগের জায়গাতে আগের মতোই আছেন । শুধু তার চোখে একটু আর্দ্রতা লক্ষ্য করা গেলো । ছোটফুপি ভীষণ ব্যস্ত । সব তো তাকেই করতে হবে । আর মেয়েটা ?



তারপর মেয়েটা আবার সাজতে শুরু করলো.....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.