নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহমান সংশয়

রহমান সংশয়

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছিলাম বিরান প্রান্তরে সেখান থেকে চারাগাছ জন্মেছে; কিছু বিষন্ন চারাগাছ

রহমান সংশয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাধ্যম

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৫৬

ছোটচাচা এনএসআই তে ছিলেন । ঘুষের প্রভাব বেশী বলে এখন সব ছেড়েছুড়ে বেকার । বাসায় গেস্টরুম সহ দুইটা রুম ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও ছাদের চিলেকোঠায় সংসার পেতেছেন । আসবাবপত্র বলতে শুধু একটা চৌকি আর তিনদিকের দেয়ালের সাথে লেগে থাকা তিনটা বিশাল বইয়ের তাক । চৌকিতে একটা তোষকও নেই আর বইয়ের তাকে অজস্র বই । গতকালও সেখানে নতুন ঠাঁই পেয়েছে "পদ্মা নদীর মাঝি" যেটা আমার পাঠ্যবই ছিলো ।



বেকার ছোটচাচার একমাত্র কাজ বই পড়া । সারাদিন চোখের সামনে একটা বই ঝুলিয়ে রাখেন । শুধু খাবার সময় নিচে নেমে টুপ করে খেয়ে আবার চিলেকোঠায় ফিরে যান । তার খাবার সময়েরও কোন ঠিক ঠিকানা নেই । ক্ষুধা লাগলেই শুধুমাত্র খেতে আসেন । এজন্য বাসার ডায়নিং টেবিলে সবসময় কিছু খাবার রেখে দেন মা ।



প্রয়োজন ছাড়া ছোটচাচার দরজায় দাড়ানো নিষেধ । আমি এখন দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছি । কি প্রয়োজনে এসেছি সেটা ভাবছি । ভাবা শেষ হলেই দরজায় নক করবো । ছোটচাচার দরজা সবসময় ভিজিয়ে দেয়া থাকে । ইচ্ছে করলে ঠেলে ঢুকে পড়া যায় কিন্তু সেটা ঠিক হবে না । ছোটচাচা রেগে যেতে পারেন । আমি খুব ধীরে দুটা টোকা দিলাম দরজায় । ভেতর থেকে গম্ভীর আওয়াজ এলো

"চলে আয় । খোলা আছে ।"

দরজা ধাক্কা দিতেই একরাশ ধোঁয়া বের হয়ে এলো । যদিও কিছুদিন যাবত আমি চুপিচুপি সিগ্রেট খাওয়া ধরেছি তারপরও এখনো ঠিক অভ্যস্ত হতে পারিনি । হঠাত্‍ ধোঁয়া এসে পড়ায় হালকা কাশি বের হয়ে এলো । কাশি অগ্রাহ্য করে ঘরে ঢুকলাম । সারা ঘর অন্ধকার হয়ে আছে । চোখ সয়ে নিতে একটু সময় লাগলো । দেখলাম ছোটচাচা চৌকিতে চিত হয়ে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে সিগ্রেট টানছেন । এশট্রে ভর্তি হয়ে আছে ফিল্টারে । মনে হচ্ছে টেনশনে আছেন ।

"কেমন আছিস তানভীর ?"

আমি চমকে উঠলাম । এ পর্যন্ত যতবার ছোটচাচার ঘরে এসেছি ততবারই তিনি খেঁকিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করেছেন "কি দরকার ?" মানসিকভাবে একরকম প্রস্তুতি নিয়েই ছোটচাচার ঘরে ঢুকতাম । আজকের ব্যতিক্রমে একটু থতমত খেয়ে গেলাম । সাজানো উত্তর গুলো এলোমেলো হয়ে গেলো । প্রশ্ন বুঝে যখন উত্তর দিতে যাব ততক্ষনে উত্তর দেয়ার সময়টা পার হয়ে গেছে । বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম । ছোটচাচা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া সিগ্রেট টা গুঁজে দিলেন এশট্রে তে । তারপর উঠে বসলেন একদম আমার মুখোমুখি । আবছা অন্ধকারে আমি ছোটচাচার মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না ভালোমতো । ধরা পড়ে যাওয়ার আগমুহুর্তে চোরের ভেতর যে ভয়টা কাজ করে সে রকম একটা ভয় ভর করলো আমার ঘাড়ে । হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো । ছোটচাচা একটু ঝুঁকে এলেন আমার দিকে । বললেন ,

"একটা সত্যি কথা বলবি তানভীর ?"

আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো । গতকাল মা দুই হাজার টাকা দিয়েছিলো । ছোটচাচার হাত খরচ বাবদ । সে টাকা থেকে একহাজার টাকা আমি মেরে দিয়েছি । আসলে মেরে দেই নি । বলতে গেলে ধার নিয়েছি । পাশের বাসার মিলি আপুর খুব দরকার ছিলো টাকাটার । সাত দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার কথা । ফেরত দিলেই ছোটচাচাকে দিয়ে দিতাম । কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যাব ভাবিনি । মাথা ঘুরাচ্ছে । চোখের সামনে সব কিছু ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে । আমি বুক ভরে একবার শ্বাস নিয়ে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাঠিয়ে দিলাম । এখন কোনভাবেই অজ্ঞান হওয়া চলবে না । মুখ তুলে চাইলাম ছোটচাচার দিকে । ছোটচাচা গলাটা আরেকটু বাড়িয়ে বললেন , -"তোর বাবার ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে তাই না ?" ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না । যদিও এ মাসে বাবার মেজাজ মর্জি অনেক ভালো ! আমাকে অটবির একটা রিডিং টেবিলও কিনে দিয়েছেন । সেদিক দিয়ে হিসেব করলে বাবার ব্যবসা ভালোই যাচ্ছে বলা যায় । কিন্তু আপাতত ছোটচাচার সাথে একমত হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে । আমি চোখ ছলছল করার চেষ্টা করলাম । তারপর মাথা নিচু করে পায়ের নখ খুঁটতে লাগলাম । ছোটচাচা কাঁধে একটা হাত রাখলেন । তারপর বললেন ,

-"তুই একদম টেনশন করিস না । দেখি আমি একটা চাকরি জোগার করতে পারি কিনা । কতদিন আর বসে বসে খাবো । দাদাও মনে হয় আমার ওপর রেগে আছে । একটা ব্যাংকে এপ্লাই করেছি । দেখি যদি হয়ে যায় তাহলে তোকে একটা ক্যাভন সাইকেল কিনে দেব । এখন যা । তোর মাকে বল আমার ঘরের সমস্ত জঞ্জাল সরিয়ে ফেলতে ।"

ছোটচাচা বালিশের নিচ থেকে সিগ্রেট বের করে জ্বালালেন । আমি বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে । একবার মিলি আপুদের বাসায় যাওয়া দরকার ।



**



মিলি আপুদের বাসার কলিংবেল চাপলে হিন্দী গানের সুর বাজে । খুব সুন্দর লাগে শুনতে । এজন্য মাঝে মাঝে প্রয়োজন ছাড়াও আমি মিলি আপুদের বাসায় আসি । আজকে কলিং বেল চাপ দিতেই ভারী গলায় কেউ কুরআন তেলাওয়াত করতে শুরু করে দিলেন । আমি ভয় পেয়ে দু ধাপ পিছিয়ে এলাম । এটা কলিংবেলের আওয়াজ কিনা বোঝার জন্য আরেকবার চাপ দিতে যাবো তার আগেই খুঁট করে দরজা খুলে গেলো । মিলি আপুর সুন্দর গোলগাল মুখটা বের হয়ে এলো । আমি একটা হাসি দেবার চেষ্টা করলাম । মিলি আপু সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করলো না । কাঁধে একটা ঝোলার মতো ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো । ব্যস্ত ভঙ্গিতে দরজা আটকাতে আটকাতে বললো "কেন এসেছিস ঝটপট বলে ফ্যাল । আমার ক্লাস আছে । এক মিনিটও দেরী করতে পারবো না ।" তাড়াহুড়া দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম । গুলিয়ে ফেললাম যা কিছু বলতে এসেছি । চুপ করে দাড়িয়ে থাকলাম । আপু কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর "গর্দভ একটা" বলে হনহন করে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো । হঠাত্‍ করে যেন আমার হুঁশ ফিরে এলো ! আমি চিত্‍কার করে বললাম " আপুউউ ! ছোটচাচা আবার চাকরী করবেন ।" মিলি আপু থমকে দাঁড়ালো । অবাক হয়ে আবার কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে । তারপর ইশারায় কাছে ডাকলো । আমি হাসি হাসি মুখ করে কাছে এগিয়ে যেতেই খপ করে আমার কান ধরে ফেললো । তারপর মাথা নামিয়ে প্রায় ফিস ফিস করে বললো "কতবার বলেছি আমাকে আর আপু ডাকবি না । ছোটচাচী ডাকবি না পারলে আন্টি ডাকবি । কোন কথা কানে যায় না তোর ?" আমি ব্যাথায় কোঁকানোর ভান করে বললাম "ঠিক আছে ছোটচাচী ।"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩

মামুন রশিদ বলেছেন: হাহাহা, দারুণ মজা পেলাম গল্প পড়ে ।


চমৎকার! গল্প লেখা চলতে থাকুক ।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭

রহমান সংশয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.