নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহমান সংশয়

রহমান সংশয়

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসেছিলাম বিরান প্রান্তরে সেখান থেকে চারাগাছ জন্মেছে; কিছু বিষন্ন চারাগাছ

রহমান সংশয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোনতা শ্রদ্ধা

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩২

কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সংশয় । তাও আবার একদম স্টার টাওয়ারের সামনে । কি বিব্রতকর পরিস্থিতি চিন্তা করা যায় ? তার উপর বড়ভাই, আপুরা পাশ দিয়ে যাবার সময় আড়চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে আর মুখ টিপে হাসছে । হালকা শীতের দিনেও দরদর করে ঘামছে সংশয় । চশমা থাকার পরও একটু পরপর চোখের সামনের সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে । একহাতে কান ছেড়ে দিয়ে চোখদুটো একটু কচলে নেয়া যায় কিন্তু এটাতে ঝুঁকি একটু বেশী হয়ে যায় । সৈকত ভাইয়ের নজরে পড়লে কান ধরে থাকার সময়কাল বেড়ে যেতে পারে ।



সৈকত ভাই অদূরে কালু মামার দোকানে বসে আরাম করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর একটু পরপর সংশয়ের দিকে তাকাচ্ছে আগুন গরম চোখে । সৈকত ভাই যদি সৈকত ভাই না হয়ে মুনি দুর্বাসা হতো তবে তার ক্রোধের আগুনে সংশয় পুড়ে একদম গ্রিল হয়ে যেত । কে জানে হয়তো পাশের স্টার কাবাবেই সেটা বিক্রি হতো ফুল ৫০০টাকা, হাফ, ৩০০ টাকা এবং কোয়ার্টার ২০০ টাকা দরে । সুপ্ত ভাই হয়ত সেই গ্রিল আরাম করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে !



সাকিব ভাইকে দেখা যাচ্ছে । গলায় নীল আইডি ঝুলিয়ে দীর্ঘ দেহটাকে কি সাবলীল ভঙ্গিতে এগিয়ে নিয়ে আসছেন । সাকিব ভাই, সৈকত ভাইয়ের বন্ধু । ক্লোজ বন্ধু , কাছের বন্ধু , আপন বন্ধু । সাকিব ভাইকে দেখে সংশয়ের মনে আশার সঞ্চার হলো । সাকিব ভাই নিশ্চয়ই তাকে রেহাই দেবেন এই অসহায়, বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে । সাকিব ভাই পুরোপুরি সংশয়ের কাছে আসার আগেই সংশয় এক বিস্তৃত হাসি মুখে ফুটিয়ে কান ছেড়ে দেয় । সাদর অভ্যর্থনা জানানোর আগেই ঠাস করে একটা চড় পড়ে যায় সংশয়ের ডান গালে । সাথে সাথে ডান কানে রেডিওর সেন্টার বাজতে শুরু করে । "কান ছাড়লি ক্যান ?" বাম কানে অস্পষ্ট শুনতে পায় সংশয় । ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে । মুখ ফুটে কথা বের হয় না একটাও । হঠাত্‍ কোথা থেকে যেন তাওহীদ ভাই উদয় হয় । তাওহীদ ভাই সংশয়ের সিনিয়র কিন্তু সাকিব ভাইয়ের জুনিয়র । খপ করে সাকিব ভাইয়ের দুইহাত চেপে ধরে তাওহীদ ভাই



"ছোটভাই ভুল কইরা ফেলছে ভাই ! এবার ছাইড়া দ্যান । এরপর আমি পিডাইয়া ছাল তুইলা ফালামু । মাফ কইরা দ্যান ভাই !"



সাকিব ভাই বড় করে শ্বাস টেনে নিজেকে কন্ট্রোল করে । রাগে গজগজ করতে করতে টং দোকানের দিকে পা বাড়ায় । শ্রবণসীমা অতিক্রম করতেই তাওহীদ ভাই সংশয়কে বলে



"বেশী লাগে নাই তো ?"



লাল হয়ে যাওয়া ডান গালে ডান হাত বুলাতে বুলাতে না সূচক মাথা নাড়ে সংশয় । তাওহীদ ভাই সমবেদনাসূচক কথা খুঁজে পায় না ।



*********

মাস তিনেক পর



আজ সাকিব ভাই , সৈকত ভাইদের র্য্যাগ ডে । দীর্ঘ চার বছরের ইউনিভার্সিটি জীবনের শেষদিন আজ । আজকের পর সবাই প্রাক্তন ছাত্র বলে বিবেচিত হবে । এই চিরচেনা সবুজ ক্যাম্পাস , দুষ্টু দুষ্টু ছোটভাই বোন , বন্ধুর চেয়েও আপন স্যার সবার থেকে কেমন যেন একপ্রকার বিদায় নিতে হবে । ভাবতেই মন খারাপ হয়ে আসে । ব্যাচের সবাই এক কোণায় বসে স্মৃতিচারণ করছে । কেউ কেউ অযথাই একটু পরপর ওয়াশরুমে ঢুকছে আর বের হচ্ছে । গোপনে অশ্রু বিসর্জনের জন্য এরচেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না ।



তাওহীদ ভাই স্টেজ সাজাচ্ছিলো । সংশয় টুকটাক হেল্প করছিলো। মনে মনে ভাবছিলো সাকিব ভাই , সৈকত ভাইদের সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা । ভোর বেলার ক্লাস শেষে এক সাথে চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার কথা । উচ্চমার্গীয় রসিকতায় হো হো করে হেসে ওঠার কথা । বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে । সুখের দিনগুলো বড় দ্রুত শেষ হয়ে যায় ।



"ওই সংশয় !"



সংশয় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় । সাকিব ভাই আঙুল তুলে ডাকছে । ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সংশয় । দীর্ঘ সাকিব ভাইয়ের সামনে দাঁড়াতেই সাকিব ভাই খপ করে সংশয়ের থুতনি ধরে ফেলে । বাম গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে



"খুব লেগেছিলো না ?"



সংশয়ের একমুহুর্ত লাগে বুঝতে । তারপর হা হা করে হেসে দিয়ে বলে



"সাকিব ভাই আপনি ডান গালে মেরেছিলেন ।"



সাকিব ভাই একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় । থুতনি ঘুরি ডান গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলেন



"এখনো ব্যাথা করে নাকি ?"



সংশয়ের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে । বড় ঝামেলা হয়েছে আজ । একটু পরপর একটুতেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে । পাওয়ার বাড়ানো দরকার ।



"না সাকিব ভাই , ব্যাথা করে না । যদি ব্যাথা করতো তবে খুব খুশী হতাম । ব্যাথাটা সব সময় আপনার কথা মনে করিয়ে দিতো ।"



সাকিব ভাই জড়িয়ে ধরে সংশয়কে । চোখ ভিজে আসে সংশয়ের । নাহ চশমার পাওয়ার বাড়ানোটা খুব জরুরি ।



ডান হাতে টান অনুভব করে সংশয় । মুখ ঘুরিয়ে দেখে সৈকত ভাই । সাকিব ভাইকে সোজা হয়ে দাড়ানোর আগেই সৈকত ভাই টানতে টানতে ভার্সিটির বাইরে নিয়ে আসে । তারপর সোজা স্টার কাবাব বেকারীর ভেতর । একটা চিকেন বার্গার আর একটা স্লাইস অর্ডার করেন । সংশয় চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে । "নে শুরু কর !" চমকে ওঠে সংশয় । সৈকত ভাই বার্গারের প্লেটটা ধরিয়ে দেয় সংশয়ের হাতে । সংশয় বার্গারে একটা কামড় বসাতে যাবে মাত্র তখনই সৈকত ভাই বলে ওঠে



"তোর কানের দৈর্ঘ্য মনে হয় একটু বেড়ে গেছে তাই না ?"



সংশয় কানে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে মিছেমিছি ।



"না ভাই , ছোট হয়ে গেছে বরং । আরেকবার যদি কান ধরাতেন তাহলে একদম ঠিক সাইজ হয়ে যেত ।"



সৈকত ভাই হেসে ওঠেন । সংশয় বার্গারে দাঁত বসায় । ছোট্ট বার্গারটা খেতে সেদিন অনেক সময় নেয় সংশয় । টেস্টি চিকেন বার্গারটা শেষের দিকে একটু বেশী নোনতা নোনতা লাগে ।



***********************************************

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২২

মামুন রশিদ বলেছেন: ক্যাম্পাস থেকে বিদায়ের সময়টা সত্যিই খুব কষ্টের ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৪৬

রহমান সংশয় বলেছেন:
কিছুটা অনুভব করতে পারি মামুন রশিদ ভাই । অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.