নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভোরের শরীরে এখনও লেগে আছে রাত্রির দগদগে ক্ষত

শ. ম. দীদার

কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী।

শ. ম. দীদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সত্যিই, ব্লগারদের ধরে ধরে জেলে ভরা উচিৎ

১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৪৪

রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে খুব সত্যি হচ্ছে, রাষ্ট্র এমন একটি সাংগঠনিক সত্ত্বা যা অত্যন্ত দূর্বল এবং একই সাথে তার কৃত অপরাধ অস্বীকারকারি। এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য রাষ্ট্রের আচরণ কিন্তু প্রকাশিত হয় ক্ষমতাশীলদের আচরণের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রের আচরণ তখনই উগ্র হয়ে উঠে যখন এই শাষকগোষ্ঠি তাদের ক্ষমতার স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে মরিয়া হয়ে উঠে। তখন শত্রুর সাথে আপোষ, দুষ্টের পালন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষা ইত্যাদি অনৈতিক কাজগুলো নির্দিধায় জায়েজ করে ফেলে। রাষ্ট্রে যে অংশে পচন ধরেছে সে বিষয়ে যারা আঙ্গুল উছিয়ে কথা বলে তাদের দমন করেন খুব পোক্ত হাতে। কেননা রাষ্ট্র এদের হুমকি মনে করে তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার প্রশ্নে। ব্লগাররা এই কাজটিই করেন। আর এজন্যই জেলে পুরেন। সহজ হিশাব।

বেফাস মন্তব্য করার কারণে যদি কাউকে শাস্তি পেতে হয় তবে নিশ্চিত বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অনেক নীতি-নির্ধারককে আগে জেলে ভরা উচিৎ। ব্লগারদের নই। ব্লগাররা যেটা করেন, সম্মানিত রাষ্ট্র, আপনাকেই ভালোবেসেই করেন। আপনার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যেই করেন। এক্ষেত্রে ব্লগার বলতে জেনারালাইজ না করার অনুরোধ থাকল। যখন জাতীয় পতাকা সগর্বে ফতফত করে উড়ে, তখন এরা ডান হাত বুকের বা পাশে রেখে চীৎকার দিয়ে বলে উঠে- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। আর ঠিক তখনই কোন এক নীতি-নির্ধারক বিদেশি কোন ফিল্মের নায়কের অনুষ্ঠানে গিয়ে মাটিতে লেপ্টে বসেন। আর একদল আল্লাহু আকবর বলে আল্লাহর নাম অপবিত্র করে মানুষ হত্যায় মেতে উঠেন। যখন স্বাধীনতা বিরোধী মন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় শকটে জাতীয় পতাকা অনিচ্ছুক উড়ে ফতফত করে, তখন বুকের ভেতর গহীনে কেঁদে উঠে সদা জাগ্রত সত্ত্বাটা। তখন সাধারণ্যে এদের পাগল ঠাওরায়। সেলুকাস। ওরা যখন আল্লাহু আকবর বলে ঈশ্বরের নাম নিয়ে মানুষ হত্যা করে আর ব্লগাররা জয় বাংলা বলে মানুষকে রক্ষা করে। মানুষ মানে ঈশ্বরের ঘর। মানুষ মানে যার ভেতর ঈশ্বর বসত করেন। তারা আল্লাহর নাম নিয়ে ভেঙ্গে খান খান করে সখীনার সোনার সংসার, আগুন দেয় পবিত্র গ্রন্থে, পুড়িয়ে ছাই করে দেয় হরি কাকুর বসত-ভিটা আর ব্লগাররা জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে তাড়িয়ে বেড়ায় শুয়রের পাল, ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো করে দেয় শত্রুর আস্তানা, রক্ষা করে কোরান-পুরান-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল, মন্দির-মসজিদ-গীর্জা, বেহুলার সিঁদুর। সুতরাং ঈশ্বরের নামের সমান পবিত্র জয় বাংলা শব্দ। ঈশ্বরের অস্তিত্বের সমান সত্য এই জয় বাংলা। জয় বাংলা কোন বিশেষ দলের, বিশেষ শ্রেণির স্লোগান নই। এটা আপামর বাঙালি জাতির প্রাণের স্পন্দন, শত্রু তাড়ানোর অস্ত্র, সময়ের প্রয়োজনে জ্বলে উঠার আহ্বান, একীভূত বাঙালি সত্তার নাড়ির টান। আমাদের জপমাল্য।

রাষ্ট্র, আপনিই ভেবে দেখুন কার পক্ষ নিবেন। যারা জয় বাঙলা রক্ষার যুদ্ধে শামিল তাদের না যারা ধর্মের দোহায় দিয়ে মানুষ হত্যা করে, যথেচ্ছ নখরাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে সংবিধান তাদের?

রাষ্ট্রের মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার প্রবণতা আছে। রাষ্ট্র তখনই মিথ্যের আশ্রয় নেয় এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে এনে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রায়ই জনবিচ্ছিন্ন এমনকী উগ্রবাদীও এমন একদল বিচ্ছিন্ন মতাবলম্বীদের সাথেও আপোষ করেন যখন একেবারে নড়বড়ে ক্ষমতার স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে মরিয়া হয়ে উঠে। তখন শাষক হয়ে ওঠে আদর্শহীন। কার্যত এর পরিণাম হয়ে যায় বুমেরাং। ফ্রাঙ্কেইনস্টাইনের দানবের মত।

একটি রাষ্ট্র হোক সেটি আদর্শিক অথবা আদর্শহীন তাঁর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের সেখানে অন্তর্ভুক্ত চোর-বাটপার, ভদ্রলোক, ধার্মিক, নাস্তিক, বদমাশ-সভ্য সবার দায়িত্ব নেয়া। সেখানে প্রত্যেকে যার যা প্রাপ্য রাষ্ট্র তা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দেবেন। যাকে শাস্তি দেবার তাকে শাস্তি দেবেন। যাকে পুরষ্কৃত করার তা করবেন। একটি রাষ্ট্রের মধ্যে নানা শ্রেণীর নানা পেশার নানান বিশ্বাসের নাগরিক থাকবেন এবং তারা নিজস্ব বিশ্বাস নির্ভয়ে লালন করার সমান সুযোগ পাবেন। যদি রাষ্ট্রের স্বীকৃত ধর্মের সমালোচনা কেউ করেন তাকে জেলে ভরাটা এক ধরণের বোকামি। উগ্রবাদিতা। রাষ্ট্রের দিক থেকে এটি নাগরিকের সাথে উগ্র ও উদ্যত আচরণেরই শামিল। এখানে রাষ্ট্র দুটি অপরাধ করছেন। এক- রাষ্ট্র কর্তৃক যদি তাঁর সংখ্যাগরিষ্ট নাগরিকের ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিশেবে ঘোষণ করে এতে পক্ষান্তরে অন্যান্য সংখ্যালগিষ্ট নাগরিকের ধর্ম চর্চার অধিকারকে প্রচ্ছন্নভাবে হুমকী দিলেন। দুই- জেলে ভরে এবং পূর্বোক্ত অসাম্যতায় মানবাধিকার ও লঙ্গন করল। যদি ধর্মের সমালোচনার অপরাধে কাউকে জেলে ভরতে হয়, শাস্তি দিতে হয় তাহলে এর জন্য প্রথমেই জেলে ভরা দরকার ধর্মবেত্তাদের। কেননা প্রত্যেক ধর্মের ধর্মবেত্তাদের একথা সমানভাবে সত্য যে তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন জোর দাবি নিয়ে। অন্য ধর্মকে আক্রমণ করে। হুমকী দিয়ে। এতে সমাজে নাগরিকদের মধ্যে একধরণের অসন্তোষ, উগ্রতা, ক্ষোভ জিইয়ে উঠে। সুতরাং ব্লগার যারা রাষ্ট্রের কথামতে ধর্মের জন্য হুমকিস্বরূপ, তাদের জেলে ভরার আগে ধর্মবেত্তাদের জেলে ভরেন যারা সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যেকার ঐক্যে ফাটল ধরায়, বিবাদ সৃষ্টি করে। রাষ্ট্র কর্তৃক তাঁর নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় ধর্মের ঘোষণা বিষয়টা কতটা যৌক্তিক সময় এসেছে এ বিষয়টা ভেবে দেখার। রাষ্ট্রের প্রধান ধর্ম হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা, স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা। আর রাষ্ট্রের জন্য প্রধান ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের জনগণ কর্তৃক রচিত সংবিধান।

যদি ঈশ্বরে অবিশ্বাসের কারণে রাষ্ট্র কোন নাগরিককে জেলে ভরে, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা চলে, অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিকে আগে জেলে পুরতে হবে। কেননা বৌদ্ধদের মধ্যে একদল ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। কিন্তু সত্য হচ্ছে, তারা ঈশ্বরে অবিশ্বাস করলেও ধার্মিক, আদর্শিক এবং শান্তিপ্রিয়ও। পৃথিবীতে এমন অনেক ধর্ম আছে যেখানে ঈশ্বর নেই (রিলিজিয়ন উইথয়াউট গড)। সুতরাং সত্যিই ব্লগারদের জেলে ভরা উচিৎ তা না হলে দুষ্টের পালন সম্ভব নই।



রাষ্ট্র, আপনি জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়ে, জুজুর ভয় দেখিয়ে কতদিন আদর্শকে দাবায়ে রাখবেন?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.