নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী।
চান্নি পসর রাইতে, পুবাল হাওয়ায়, ছারা ভিটার বাঁশঝাড় থেকে শম শম শব্দ শুনলেই বয়েসি ডাহুক ডেকে উঠে। তখন ধরলার বুকে শরদিন্দুর ফকফইক্কা চাঁন্দের আলো খেলা করে। আর ধরলার বুকে নৌকার গলুইয়ে বসে পৃথিবীর সবচে’ নিঃসঙ্গ মাঝি গেয়ে উঠে। মনে হয় ধ্যানমগ্ন কিটারো জলমঞ্চে তাঁর রুপোলি ধাতুর লম্বা বাঁশিটায় সুর তুলছেন আর বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে নদী, ঢেউ, নৌকার গলুই আর শরদিন্দুর চাঁদ।
আচমকা গহণ মেঘে ঢাকা পড়ে দীর্ঘ বয়েসি চাঁদটা। মনে হয় খুব ক্লান্ত। খুব পরিশ্রান্ত।
হু হু করে বইছে হাওয়ারা। সমস্ত নীরবতা ভেঙে হঠাৎ ছারা ভিটার বাঁশঝাড়ে ডেকে উঠে নিশুতি রাতের কুডাক পাখি।
এমনি করে যেদিন কুডাক পাখি ডাকতেন, খুব দরাজ গলায়, হাহাকার করে দাদা গেয়ে উঠতেন-
‘আইচ্ছা ফাগল মন লে, দিন গিলে তুই বসি বসি খাঁদিবি
চাইর ভায়ে চাইর কুলতি ধরি, লয় যাবইগয় কাঁধত গরি
যাইতি যাইতি রাকিবদে মছইতর ছারমে
আইচ্ছা ফাগল মন লে...’
আর যখন এমনি করে বুড়ো গেয়ে উঠতেন, আমার ভেতরেরটা খুব হাহাকার করে উঠত। আমি তাঁর গানের কোন মানে তখন বুঝতাম না। শুধু সেই গানে যে আর্তি, সেই সুর, সেই হাহাকারে আমি আচ্ছন্ন হয়ে যেতাম। যখন বড় হয়েছি, তখন বুড়োকে আমার যরথূস্ত্র মনে হতো। যখন সোফি’স ওয়ার্ল্ড পড়ি তখন আমি এই উপন্যাসের চরিত্র আলবার্তো নক্সকে সাক্ষাত দ্যাখতে পেতাম।
অনেক দিনের আধোয়া, শক্ত বিছানা আর তেল চিটচিটে বালিশে মুখ গুঁজে বুড়োর দীর্ঘ বারটা বছর কেটে গেলো। নীরবে। নিভৃতে। অভিযোগহীন। যখন উত্তুরে হাওয়ারা শরীরে কাঁপন ধরাত, ফকফইক্কা চাঁন্দের আলো যখন মাঠ-ঘাট থৈ থৈ করত, বুড়োর মনে পড়ত, এক কালে তাঁরও প্রেম ছিল, প্রণয় ছিল, জামার আস্তিনে লোকানো ছিল যৌবন।
আজকাল রাত আর দিনের ভিন্ন কোন মানে বোঝে না বুড়ো। ময়লা, আধোয়া শীর্ণ পাঞ্জাবির বোতামে সাঁটা থাকে একাকীত্ব, দীর্ঘ নিঃসঙ্গতার তীব্র বেদনা।
অনেক দিন ধরে আমার সেই যরথূস্ত্রকে দেখি না। পরাণডা কেমন হু হু করে উঠেছে। চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে ভীষণ। আমার ভেতরে রক্ত ক্ষরণ হয়।
চান্নি পসর রাইত। সুনসান নীরবতা ভেঙে কুডাক পাখির ডাক ভেসে আসছে। অন্ধকার ঘরে ঠোঁটের ফাঁকে আগুন জ্বেলে চাঁদর মুড়ে আছে যরথূস্ত্রের উত্তরসূরি।
সকালে ছোট ভাই ফোন করল। বদ স্বভাবের কারণে ফোন ধরা হয়নি। একটা ম্যাসেজ আসল। ম্যাসেজটা পড়ে আমি বিটিপাকে (আপুকে) একটা ম্যাসেজ দিলাম-
‘দ্যা শিপ ইজ স্টিল সেইলিং অন বাট দ্যা ওল্ড সেইলর ইজ নো মোর উইথ আস . . . এ্যান্ড আ ইয়াংম্যান ইজ মিসিং দ্যাট সেইলর ফর লং এ্যান্ড ওয়েইটিং ফর নেক্সট মিটিং’।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০২
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার +++++
ভালো থাকবেন ভ্রাতা