নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভোরের শরীরে এখনও লেগে আছে রাত্রির দগদগে ক্ষত

শ. ম. দীদার

কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী।

শ. ম. দীদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝলসে যায় টক শো আর স্টার জলসায়

০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

যখন আমার বাসায় টিভি ছিল না, তখন আমার প্রায়ই মনে হত, ইস্‌, কত কী না জানি প্রত্যহ মিস করে যাচ্ছি। খুব জরুরি, ভীষণ দরকারি আর নিশ্চয় নির্মল বিনোদনের সমস্ত উপাদান আমার জীবন থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।

কিছুদিন পর। কিছুদিন বলতে তিন মাস পর।

মনে হলো। না। কিছুই তো নেই। বরং অফিস থেকে ফিরে যে সিনেমায় বুঁদ হয়ে থাকা, সেই ঢের ভালো ছিলো। কিন্তু মন বলত, না। অপেক্ষায় থেকো। খুব ভালো কিছু, যা দেখে টিভি’র পেছনে লগ্নির সমস্ত অর্থ, সময় ও শ্রম সবই দ্বিগুণ হারে উশুল হবে, তাই আসছে। টিভিতে। শীঘ্রই।

কিছুদিন পর। আবার। মানে ছয় মাস পর।

আমি বুঝে ফেল্লাম। আমি ঢের বুঝলাম। আমার অপেক্ষা গডো’র জন্য।

দিন শেষে কর্মব্যস্ত মানুষজন ঘরে ফিরে বিনোদন চায়। এই বিনোদনের ধারাটা, স্বাদটা মাটির সোঁদা গন্ধমাখা। সেই বিনোদনই চায়। পারিবারিক আবহযুক্ত বিনোদন। নইলে মানুষজন অফিস শেষে বাঁদুড়ঝোলা হয়ে বাসায় ফেরার অনাকাঙ্ক্ষিত যন্ত্রণার বদলে কোন হোটেলেই রাত কাটাতে চাইত। বড়লোক অফিসওয়ালারা জ্যাম ট্যামের গ্লানি সয়বার বদলে কোন পাঁচ তারকা হোটেলেই রাত কাটাত।

কিন্তু মানুষ স্বভাবতই পারিবারিক জীব।

বাসায় ফিরে এসে টিভি অন করলেই হয় টক শো নই খবরে বীভৎস মৃত্যুর চীৎকার অথবা পৈশাচিক ধ্বংসযজ্ঞের বুনো উল্লাসই শুনতে পায়। টক শো এত বেশি যে সেটা টক শো’ই হয়ে উঠেছে। মানে টক। খাটা। চুকা। অম্লস্বাদ।

ঘরে ঝি বৌয়েরা বাধ্য হয়েই স্টার জলসায় চোখ সেঁটে রাখে। রাজা রাজ্য চালালেও রাজাকে রাণীই চালায়। ফলে গৃহকর্তাও বাধ্য হয়ে স্টার জলসায় আঁটকে যায়।

ডিসকভারি আর নেটজিও বেশিদিন হজম হতে চায় না। স্বয়ং ইসরাইলীরাই মান্না সালোয়ায় বিতৃষ্ণা প্রকাশ করেছিলো। প্রতিদিন একই খাবার, যদিও তা বেহেশতি, তবুও মানুষ অনিশ্চুক হয়ে উঠে তাতে।

অবাক লাগে যখন দেখি টিভি চ্যানেলের নিজেরই বিজ্ঞাপন দেওয়া লাগে। টিভি চ্যানেল নিজেই বিজ্ঞাপন দেন। এমনকী সেটা তাদের নানান প্রোগ্রামের ও। আমার ভয় হয়, চ্যানেলগুলো আর ক’দিন পরে বিজ্ঞাপনেরই বিজ্ঞাপন প্রচার করতে শুরু করবে। গ্রামে যে ভাইসব, ভাইসব বলে মাইকিং করা হয় তার আর টিভি চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের মধ্যে খুব কোন তফাৎ দেখি না।

এই দেশে যেটা একবার শুরু হয়, তার সামগ্রীক পঁচন না ধরা পর্যন্ত থামে না। আবার আকাল যখন আসে, তখন মড়ক নিয়েই আসে।

আমার এত গা জ্বলার কারণঃ

বাংলাদেশের ৪৫* শতাংশ মানুষ নিয়মিত টিভি দেখে আর এই ৪৫ শতাংশ মানুষ বিনোদনের প্রধান মাধ্য হিশেবে টিভিকেই বেছে নেয়।

যদি আমরা টিভি দর্শককে ভোক্তা হিশেবে গণ্য করি, আর টিভি চ্যানেলগুলোকে যদি পণ্য হিশেবে মনে করি, তাহলে একটা বিষয় ভোক্তার অধিকার হিশেবে থাকা জরুরি যে পণ্যের মোড়কে লিখা থাকবে এই পণ্যের মেয়াদকাল, পণ্য তৈরির কাঁচামাল বা উপাদানের নাম ইত্যাদি। অর্থাৎ টিভি চ্যানেলগুলোর বলে দেয়া উচিৎ তারা কোন প্রোগ্রামে ঠিক কোন সময় কতক্ষণ ধরে বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন। এটা জানার অধিকার একজন ভোক্তার আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে সেটা নেই।



সুতরাং দেশীয় টিভি চ্যানেলে মাটির গন্ধমাখা বিনোদনের অভাবে সকলে স্টার জলসায় ঝলসে যায় আর এই টক শো এবং স্টার জলসা দেশটারে খাইল।

তবুও আমরা অপেক্ষা করি। আমাদের অপেক্ষা গডো’র জন্য।



*BACKGROUND PAPER FOR THE WORLD DEVELOPMENT REPORT 2013



নারুলী কৃষি ফার্ম, বগুড়া। ০৬০৫২০১৫। ২১১১১০।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভোক্তার অধিকার হিশেবে টিভি চ্যানেলগুলোর বলে দেয়া উচিৎ তারা কোন প্রোগ্রামে ঠিক কোন সময় কতক্ষণ ধরে বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন। এটা জানার অধিকার একজন ভোক্তার আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে সেটা নেই।

সুতরাং দেশীয় টিভি চ্যানেলে মাটির গন্ধমাখা বিনোদনের অভাবে সকলে স্টার জলসায় ঝলসে যায় আর এই টক শো এবং স্টার জলসা দেশটারে খাইল।
তবুও আমরা অপেক্ষা করি--------------

+++++++++++++++

০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭

শ. ম. দীদার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। কৃতার্থ হলাম।

২| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

ঢাকাবাসী বলেছেন: পৃথিবীতে এটাই একমাত্র দেশ যেখানে ওসব অধিকার ফদিকারের বালাই নেই। আপনাকে সব খেয়ে যেতে হবে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.