নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভোরের শরীরে এখনও লেগে আছে রাত্রির দগদগে ক্ষত

শ. ম. দীদার

কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী।

শ. ম. দীদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নুরুদ্দীন মাস্টারের বাড়ির দেয়াল ঘড়ি

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২৬



ভগবানযশোমন্তপুরের নুরুদ্দীন মাস্টারের বাড়ির দেয়াল ঘড়িটা অতীব আজব কিসিমের ঘড়ি। নুরুদ্দীন মাস্টার যখন ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে ঘড়ির দিকে তাকান, দেখেন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা বাজে। এমনও হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঘুমিয়েছিলেন। ঘুম ভেঙে গেলে, ঘড়ির দিকে তাকালেন, আর অমনি সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল। কোন কোনদিন দুপুরের ভাত ঘুম শেষে ঘড়ির দিকে তাকালেন, নুরুদ্দীন মাস্টার দেখেন সাড়ে পাঁচটা বাজে। প্রথম দিকে মাস্টার সাহেবের সমস্যা হলেও পরবর্তীতে সব আশ্চর্য রকম ভাবে ঠিকঠাক চলতে লাগল। এ নিয়ে আর মাস্টার সাহেব কোন রূপ অভিযোগ করেন না।

নুরুদ্দীন মাস্টার যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত সভাপতি জনাব শেখ মাসুদুল হাসান, যিনি নুরুদ্দীন মাস্টারেরই ছাত্র ছিলেন। প্রত্যহ মাস্টার সাহেবের কাছে এসে নানান অভিযোগ তুলেন। এই যেমন, মাছের ঘেরের এতো এতো কামাই, কিন্তু পয়সা জমে না। ধানী জমির লাগতি ফসল ঘরে আসে। বাজারের ইজারা জমে। কিন্তু পয়সা জমে না। এমন ছিল এক সময়, ছোট বেলার কথা। বৈজয়ন্তির মেলায় পাঁচ টাকা নিয়ে গিয়ে সারা দিন ঘুরে টুরে দুই টাকা ফেরতসহ এক পুটলা বাতাসা নিয়ে বাসায় ফিরেছে। এখন এক ডেক্সি মাছ হলে এক ডেক্সি টাকা হয়, কিন্তু পয়সা জমে না। বিদ্যালয়ে আয় বেড়েছে। কিন্তু ফান্ডে পয়সা জমে না। জনাব শেখ মাসুদুল হাসান নানান কথা শেষে এমনকী বিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনার বিশাল ফিরিস্তি শেষে যা বলেন, তা হলো পয়সা জমে না।

মাস্টার সাহেব এইসব শুনেটুনে মোটা কাঁচের উপনেত্র ছেদ করে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলেন আর ভাবেন- ডায়রিয়ায় ছেলেটা মারা গিয়েছিল। শেখ মাসুদুল হাসানের মা মারা গিয়েছিল জন্ডিসে। আশে-পাশে ডাক্তার বলতে ছিল কম্পাউন্ডারের জামাই।

আজকাল সবই আছে। সবই মেলে। মাস্টারের ছাত্র, যে সেই মাস্টার যেখানে পড়ান, সে বিদ্যালয়ের সভাপতি, তাঁদের সবই মেলে। তারা হাপিত্যেশ করেন- পয়সা জমে না। পয়সা কেন জমে না, এই ব্যাখ্যা নুরুদ্দীন মাস্টার আর শেখ মাসুদুল হাসান, এই দুজনের কারো কাছেই নাই!

রেল গাড়ির শব্দে সহসা সচকিত হয়ে উঠে নুরুদ্দীন মাস্টার। ভগবানযশোমন্তপুরের নুরুদ্দীন মাস্টারের বাড়ির দেয়াল ঘড়িটায় তখন সাড়ে পাঁচটা বাজে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.