![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছয় মাস আগের কথা । তখন আমার গুলশানে একটা টিউশনি ছিল। প্রতিদিন প্রেসক্লাব থেকে মধুমতি বাসে করে যেতাম।মধুমতির কাউন্টার ম্যান রোগা-পাতলা ধরনের । বয়স ৩০/৩৫ এর মত হবে।চেহেরায় দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রতিদিনই একটা চেক হাফ হাতা শার্ট পরে আসতো যার নিচের অংশ অনেকটা কুচকে উপরের দিকে উঠে গেছে। ঘামের ছোট ছোট দাগ (তিতি) সারা শার্টে ভর্তি।মুখের শুকনো হাসির ভিতরের অন্র্তজ্বালাটা একটু খেয়াল করলেই ধরা যেত।
কয়েকদিন যাবার পর একদিন আমাকে জিঙ্গেস করল,
মামা, আপনাকে দেখি প্রতিদিনই একই টাইমে আসেন, কই যান? কি করেন?
আমি বললাম "জি মামা, আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, আমাকে সপ্তাহে চারদিন গুলশান যেতে হয় টিউশনিতে।আমিও তো এই সময়ে আপনাকেই দেখি....."
"জ্বি মামা, আমি দুপুর বারটার দিকে আসি এবং শেষ পর্য়ন্ত থাকি", তিনি বললেন।
ও আচ্ছা। আপনার নাম কি মামা?
"রনি, আমার বাসা মিরপুরে........" লোকটি কথা বলার সময় মাঝে মাঝেই রাস্তা বরাবর পল্টন অভিমূখে তাকাচ্ছিল।
এবার কথা শেষ না করেই উচ্চস্বরে ডাকতে লাগল.
এ.........ই....গুলশান...মহা.....খালি......নাবিস্কো...নাবিস্কো.....
সেইদিন আর কথা হলোনা, আমি টিকিট নিয়ে উঠে গেলাম বাসে।
একদিন পর কাউন্টারে যেতেই লোকটি শুকনো মুখে একগাল হাসি দিয়ে আমার কুশলাদি জিঙ্গেস করল। আমিও প্রতিত্তুরে একটা মুচকি হাসি দিলাম। বাস আসতে আজ একটু বেশি সময় নিল। সেই ফাকে জেনে নিলাম অনেক কিছু।
লোকটি থাকে মিরপুরে, তিন ছেলেমেয়ে, বৃদ্বা মা সহ ফ্যামিলিতে এরা ছয় জন। বাবা নেই, মারা গেছে দশ বছর হল। দুই বোন ছিল ওর বড়, বাবাই ওদের বিয়ে দিয়ে গেছেন। বোঝা গেল এখন পাঁচজনের এই পরিবারটিতে উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি একমাত্র সেইই।
বাস চলে আসল, টিকিট কাটার জন্য ষোল টাকা হাতে নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম । আমার হাতে টিকেট ধরিয়ে দিয়ে আমাকে বলল-
" মামা টিকিট টা রেখে দিয়েন, পরবর্তী দিন টিকটটা আমাকে দিয়েন"
আমি অবাক হলাম। এমন কথাতো কোনদিন শুনেনি! ছেড়া টিকিট দিয়ে লোকটা করবে কী?
"ছেড়া টিকিট দিয়ে আপনি কি করবেন"? আমি জিঙ্গেস করলাম,
সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল-
"নিয়ে আইসেন তারপর বলব"
বাস চলে যাবে কথা বাড়ানোর সময় নেই, আর কোন কথা না বলে বাসে উঠে গেলাম।
আমার মনের ভিতর বারবার ব্যাপারটা ঘোরপাক খেতে লাগল, কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না এ ছেড়া টিকিট দিয়ে ব্যাটা কি করবে। টিকিটটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম। অন্যদিনের টিকিটের সাথে এর যেয়ে অমিলটা পেলাম তা হল এটাতে কোন তারিখ লেখা নেই। কিছুটা আঁচ করতে পারলাম লোকটি কি করতে চাইছে। টিকিটটা রেখে দিলাম আমার মানি ব্যাগে।
তৃতীয়দিন যেতেই আবার একগাল শুকনো হাসি দিয়ে আমার কুশলাদি জিঙ্গেস করল। তারপর বেশ কিছুক্ষন আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার অনেক কৌতুহল, ভয় ও নেগেটিভ ধারনা গুলো বলল।বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের তিনি ভয় পান, মেয়ে ছেলেদের অবাধ মেলামেশা তিনি পছন্দ করেননা.......ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপর আমাকে জিঙ্গেস করল আমি টিকটটা এনেছি কীনা।
আমি বললাম-
"না মামা, আমি টিকিটটা হারিয়ে ফেলেছি,
আচ্ছা ঠিক আছে আমি আজকের টিকিটটা রেখে দিব কিন্তু আপনি পুরাতন টিকিট দিয়ে করবেনটা কি?।" (আমি ইচ্ছা করেই একাজটি করেছি, সিন্দান্ত নিয়েছিলাম আগে ওর উদ্যেশ্যটা জানব)
তখন লোকটি বলল-
"মামা মালিক আমাকে মাসে ২৫০০ টাকা দেয় যা দিয়ে বর্তমানে ঢাকার শহরে আমার একার পক্ষেই চলা কঠিন। কীভাবে এই টাকা দিয়ে আমি আমার পুরো ফ্যামেলি চালাবো ? আমার ছেলে-মেয়ে গুলো কে কিইবা খাওয়াবো? আমার বড় ছেলেটি স্কুলে যায়, ওর তো বই খাতা স্কুল বেতন লাগে কোথা থেকে ম্যানেজ করব? তাই নিরূপায় হয়ে আপনার মত যারা নিয়মিত যাত্রী তাদের কাছ থেকে পুরাতন টিকিট রেখে দেই, পরবর্তীতে এগুলো অন্য যাত্রীদের দেই। হেলপার সাথে কথা বলা থাকে। এভাবে যে কয় টাকা আসে তা আমরা ভাগ করে নেই।"
লোকটি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলল-
"মামা ! মালিকদের অনেক টাকা, কিন্তু ওরা আমাদের দিকে খেয়াল করেনা, আমাদের যদি আর কিছু টাকা বাড়িয়ে দিত হয়ত আমাদের অনেক উপকার হত, ওদের খুব বেশী ক্ষতি হতনা। কিন্তু ওরা তা করবেনা। গরিবকে শোসন করতেই যেন ওরা বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।আর দেখেন যত ঝড়ঝাপটা, পাবলিকের গালিগালাজ,চড় থাপ্পর আমাদের সইতে হয়, কি করুম কন? আমরা গরিব, আমরা অসহায়। কিন্তু আমাদের বেঁচেও থাকতে হয়।
লোকটির চেহেরার মধ্যে অসহায়ত্বের ছাপটা আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
আমি কিছু বললাম না। টিকিটটা নিয়ে চলে গেলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলামনা। যদি ছেড়া টিকিটটা ওকে দেই একটা অনৈতিক কাজ হবে, একটা অপরাধ করা হবে, একজন মালিককে ঠকানো হবে আবার এতে একটি বাচ্চার মুখে হাসিও ফুটবে। বৃদ্বা মা দুবেলা একটু ভাল করে খেতে পারবে। লোকটির মুখের এই শুকনো হাসিটা কিছুটা হলেও হয়ত দুর হবে।
কিছু বুঝতে না পারলেও আমি ছেড়া টিকিটটা প্রতিদিন লোকটিকে দিতাম, এবং যতদিন গুলশান গিয়েছি ততদিন টিকিট সংরক্ষন করেছি এবং লোকটিকে দিয়েছি। কেন জানি ইচ্ছে হয়নি ন্যায় অন্যায় বিশ্লেষণ করতে। ....
ইদানিং প্রায়ই আমাকে এধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে সন্ধার পরে, যখন টিকেট কাটতে কাউন্টারে যাই তখন প্রায়ই হেলপার এসে বলে, "মামা টিকেট লাগবেনা, উঠে পড়েন"।
আমি পড়ি উভয় সংকটে, কি করব বুঝতে পারিনা। কখনও না কেটেই উঠে পড়ি কখনও জোর করেই টিকেট কেটে নেই।.........
২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:০৯
সপ্নচোরা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য.....
২| ২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:০৭
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত বলেছেন: প্লাস আপনাকে|
প্লাস রাজকে|
রাজ মো, আশরাফুল হক বারামদী বলেছেন:
এইসব ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের চেয়ে হৃদয় কি বলে তা শুনে চলাই উত্তম।
===========
আপনার মত ও রাজের মত লোকের স;খ্যা যত বেশী হবে, সমাজে ততই ম;গল|
নিজের পেট চালানো কোন ব্যাপার না|
যখন শুনলাম দুটো সন্তান এব; বৃদ্বা মা....!!! তখন আর কথা নাই|
২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:০৯
সপ্নচোরা বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:১৪
তানিয়া কবির লিজা বলেছেন: প্লাস। আপনি ঠিক করেছেন।
২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:১৬
সপ্নচোরা বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:৩১
ক্যামেরাম্যান বলেছেন: এসব ক্ষেত্রে ডিসিশন নেয়া আসলেই খূব কঠিন।
৫| ২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:৩৪
ওসমানজি২ বলেছেন: সহমত ১
৬| ৩০ শে জুন, ২০০৯ রাত ১২:২০
লুথা বলেছেন:
গরীবকে না হয় একটু হেলপ করলেন...দোষের কিছু দেখি না
৩০ শে জুন, ২০০৯ রাত ১২:৩৪
সপ্নচোরা বলেছেন: ধন্যবাদ...আপনার মন্তব্যের জন্য.....
৭| ৩০ শে জুন, ২০০৯ রাত ১২:২৪
শান্তির দেবদূত বলেছেন: কিছুই বলার নাই ...... আমি নিজেও কনফিউজড হয়ে গেছি এই পোষ্ট পড়ে ......
৮| ৩০ শে জুন, ২০০৯ সকাল ১০:০৯
আতিক একটেল বলেছেন: অভাবে লোকটার স্বভাব নস্ট হয়েছে আর অভাব এসেছে শোষন থেকে। এই চেইন রিয়েকশন টিকিয়ে রেখেছে পুজিঁবাদ। ঠিক বললাম কি?
৯| ৩০ শে জুন, ২০০৯ সকাল ১০:২১
সপ্নচোরা বলেছেন: আসলে পুজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ......আরও কি কি বাদ আছে......এইগুলা সম্পর্কে আমার খুব ভাল ধারনা নেই........ তাই আমি তেমন কোন মন্তব্য করতে পারছিনা বলে দুঃখিত । ভাল থাকবেন.............
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:০২
রাজ মো, আশরাফুল হক বারামদী বলেছেন: এইসব ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের চেয়ে হৃদয় কি বলে তা শুনে চলাই উত্তম।