![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মজিদ সাহেব। আমাদের স্থানীয় তাবলীগ জামাতের মুরুব্বি। দ্বীনদার সৎ লোক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি স্থানীয় একটি সরকারী দপ্তরে কর্মরত।
একদা একখানা কর্ম সম্পাদন করিতে তাহার নিকট গমন করিয়াছিলাম। আমাকে দেখিয়া খুশি হইলেন। কুশল বিনিময়ের পর কাজের কথা বলিলাম। বলিলেন, যোহরের নামাযের সময় প্রায় কাছাকাছি। চলেন আগে নামায আদায় করিয়া আসি।তারপর কাজের কথা আলোচনা করা যাইবে। অগত্যা কথা না বাড়াইয়া মসজিদের দিকে রওনা করিলাম। অফিসে আসিয়া আমার কর্মখানা সম্পাদন করিয়া দিয়া বলিলেন “যাইবার সময় আমার সহকারির সহিত দেখা করিয়া যাইবেন।
সহকারীর সহিত দেখা করিতে তিনি আমার নিকট পাঁচশত টাকা দাবি করিলেন। আমাদিগের ভূমে ইহা কোন আশ্চর্যের বিষয় নহে। কিন্তু মজিদ সাহেবকে দেখিয়া ভাবিয়াছিলাম তিনি হয়তো এই অর্থ গ্রহণ করিবেননা। দীর্ঘ দিন যাবৎ আমি তাহাকে চিনিয়া থাকি। সৎ, দ্বীনদার, নামাযী লোক। সর্বদা আমাদিগকে দ্বীনের দাওয়াত প্রদান করিয়া থাকেন। তিনি ঘুষ দাবি করিতেছেন ইহা ভাবিয়া আমার মস্তিষ্কের ভেতরটা শূণ্য হইয়া যাইতে থাকিলো। একটু আগে যিনি সালাত আদায় করিয়া আসিয়াছেন, তিনিই এখন ঘুষ দাবি করিতেছেন। দ্বীন ইসলাম কবে ঘুষের বৈধতা প্রদান করিয়াছে তাহা কোন মতেই স্মরণ করিতে পারিলাম না। বাকশক্তিও লোপ পাইলো। অগত্যা উক্ত অর্থ প্রদান পুর্বক প্রস্থান করিলাম।
দিন কয়েক পর বিকেলে বন্ধুর সহিত বিচরণ করিতেছিলাম। পথিমধ্যে মজিদ সাহেবের তাবলীগ দলের সহিত দেখা হইয়া গেল। তিনি আমাদিগকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে লাগিলেন। তবে আজ তার কথা আর জান্নাতের স্বপ্ন দেখাইতে পারিলো না। বলিলাম আজ একটু ব্যস্ত, আরেকদিন যাইবো। কিন্তু তিনি কোন মতেই ছাড়িতে চাইলেননা। বলিলেন আগে দ্বীনের কাজ তারপর দুনিয়াবি কাজ। দ্বীনের কাজের জন্য যে সময় ব্যয়িত হয়- উপরওয়ালা তাহা বহুগুণে বাড়াইয়া দিয়া থাকেন। এইবার বুঝিলাম, ব্যয়িত সময়ের ফজিলত হিসাবেই তিনি ঐ সকল পাঁচশত টাকা লাভ করিয়া থাকেন। বলিলাম আগে দুনিয়ার রাস্তা পরিষ্কার হওয়া দরকার। দ্বীনি রাস্তায় প্রবেশের পূর্বে আত্মার পবিত্রতা আবশ্যক। উহাদিগের মধ্যে আমার অপর এক বন্ধু বিদ্যমান ছিল। এইবার সে আগাইয়া আসিয়া বহুবিধ জোরাজুরি শুরু করিলে আমরা নানাবিধ ওজুর দেখাইতে লাগিলাম। অবশেষে তাহারা বিরক্ত হইয়া আমাদিগকে পরিত্যাগ করিলো।
রাতে বন্ধুটির সহিত পুনরায় দেখা হইয়া গেল। সে পুনরায় বয়ান শুরু করিলো। বলিলো- মুরুব্বিগণ তোমাদিগের উপর রুষ্ট হইয়াছেন। বলিয়াছেন- তোমাদিগের উপর শয়তানের ওয়াছ ওয়াছা পড়িয়াছে।তোমাদিগকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তোমরা যাও নাই। ইহাতে আমি কষ্ট লাভ করিয়াছি। বন্ধুর মনের অবস্থা বুঝিয়া তাহাকে মজিদ সাহেবের অফিসের অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করিলাম। বলিলাম- নিজে সৎ না হইয়া অন্যকে সৎপথে আহ্বান করা বৃথা। আমরা সকলেই অন্যকে উপদেশ দিয়া থাকি, কিন্তু নিজের বেলা উহা প্রয়োগ করি না।
আমার বন্ধুটি বুদ্ধিমান। তাই সে আর এই বিষয়ে বাগাড়ম্বর পাকাইলো না। বলিলো- চলো পুকুর পাড়ে গিয়া বসি। এই জায়গাটি বেশ নির্জন। আমরা বন্ধুরা পায়ঃশই ইহাতে সময় অতিবাহিত করিয়া থাকি। কথা বলার আগ্রহ কমিয়া যাইতে মোবাইল ফোনে একখানা গান চালু করিলাম। বন্ধুটি কহিলো- তোমার গানখানি অনেক পুরাতন। ইহা বন্ধ করো। আমার নিকট নতুন কালেকশন রহিয়াছে। উহা চালু করিতেছি। নতুন গান গুলি শুনিতে ভালোই লাগিলো। বলিলাম- তোমার মোবাইল খানি দেও, গান গুলো ব্লু টুথ করি।
তাহার ফোনের মিউজিক ফোল্ডার ওপেন করিতে দেখিলাম উহাতে দুইখানা ফোল্ডার রহিয়াছে। একখান “ মিউজিক “ অপর খানা “ কোরআন “ । “কোরআন “ দেখিয়া আমার আগ্রহ বাড়িয়া গেল। ভাবিলাম ইহা আবার কোন প্রকারের মিউজিক। ফোল্ডার খানা ওপেন করিতে দেখিলাম ইহার ভেতর পবিত্র কোরআনের একশত চৌদ্দখানা সুরা তরজমা সহকারে রহিয়াছে। পবিত্র কোরআনের সূরা সমূহ কিভাবে মিউজিকে রূপান্তর হইয়াছে তাহা ভাবিয়া কিনারা করিতে পারিলাম না। ফোনের মিউজিক প্লেয়ার ওপেন করিলাম। দেখিলাম প্রেমের গান, শ্যামের গানের মাঝে পবিত্র কোরআনের সূরা সমূহ অসহায়ের মত বিচরণ করিতেছে। ভাবিলাম প্রযুক্তির করাল গ্রাস হিইতে ইহারাও রেহাই পাইলো না।
বন্ধুটিকে জিজ্ঞাসিলাম- বলো তো কোরআন, বাইবেল, গীতা ইত্যাদি ধর্ম গ্রন্থ সমূহ একত্রে এক জায়গায় রাখা ঠিক হইবে কি ? সে বলিলো ইহা হারাম হইবে। কারণ কোরআন পবিত্র আর অন্যগুলো অপবিত্র। কোন অপবিত্র জিনিসের সংস্পর্শে পবিত্র কোরআন রাখা যাবে না। আবার জিজ্ঞাসিলাম- একখানা হারমোনিয়াম বা গীটারের সাথে কোরআন রাখা কি ঠিক হইবে ? বলিলো- ইহা অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ হইবে। ইহা হারাম। জিজ্ঞাসিলাম যদি কেহ ইহারূপ করিয়া থাকে তাহা হইলে কি করা উচিৎ। বলিলো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া আবশ্যক। যাতে ভবিষ্যতে কেহ ইহারূপ করিতে সাহস না পায়। এইবার আসল কথা পাড়িলাম- বলিলাম, বন্ধু- তোমার মোবাইলে শ্যাম সংগীত, প্রেম সংগীতের মাঝে কোরআনের সূরা সমূহ হাবুডুবু খাইতেছে। ইহাতে কি কোরআনের পবিত্রতা নষ্ট হইতেছে না। ইহা কি হারাম হইবে না ?
বন্ধুটি কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলো। অতঃপর বলিলো সকলেই ইহারূপ করিয়া থাকে। আমি বলিমাম অন্যকেউ ভুল করিতেই পারে। তুমি কেন করিবে? বলিলাম তোমার মোবাইল খানা দেও- গান সমূহ ডিলিট করিয়া দেই। সে রাজি হইলো না। বলিলো র্দীঘদিন যাবৎ এই সমস্ত সংগ্রহ করিয়াছি। তাছাড়া মাঝে মাঝে গান শুনিতে ভাল লাগে। বলিলাম- তাহা হইলে সুরা সমূহ ডিলিট করিয়া দাও। ইহাতে সে সম্মত হইয়া সূরা সমূহ ডিলিট করিতে উদ্যত হইলো। বলিলাম- তোমার নিকট কোন জিনিস বেশি দামী কোরআন নাকি সংগীত ?সে কহিল- অবশ্যই কোরআন। বলিলাম তাহা হইলে সংগীত ছাড়িয়া সূরা সমূহ ডিলিট করিতে উদ্যত হইলা কেন ?ইহাতে সে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ হইলো। বলিলো পরে ডিলিট করিবো।
দিন চারেক পর তাহার সহিত পুনরায় দেখা হইলো। তবে আজ সে চলনশীল যন্ত্রখানা আমার হইতে দূরে রাখিলো। আমিও উহা হস্তগত করিতে নানা কসরৎ শুরু করিলাম। অবশেষে উহা হস্তগত হইতে দেখিলাম পবিত্র কোরআনের সূরা সমূহ উহা হইতে গায়েব হইয়া গেছে। বুঝিতে পারিলাম শ্যাম-প্রেম সংগীতের চাপে অতিষ্ট হইয়া রূহ ত্যাগ করিয়া উহারা স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করিয়াছে।
অবশ্য এই ঘটনার জন্য আমার বন্ধুটিকে দায়ি করা যায় না। বর্তমান সমাজে ইহাই স্বাভাবিক। পূর্বতন একখানা ঘটনা বর্ণণা করিলে সকলেরই বুঝিতে সহজ হইবে।
একদা একখানা মিউজিকের সিডি সঙ্গে লইয়া মসজিদে প্রবেশ করিয়া ছিলাম। ইহা দেখিয়া ইমাম সাহেব রুদ্র মূর্তি ধারণ করিলেন। বলিলাম হুজুর ইহা একখানা অডিও সিডি মাত্র। আপনার পেছনে যাহারা সালাত আদায় কয়িাছে উহাদের অনেকের মোবাইল ফোনে নানা ধরণের ভিডিও রহিয়াছে। তাহাদিগকে তো কিছু বলিলেন না। তিনি বলিলেন- ঐ সমস্ত দৃশ্যমান নহে। বলিলাম সিডির ভেতরের বস্তু সমূহও অদৃশ্য। তাহা হইলে ইহাতে কিরূপ দোষ হইলো। তিনি ক্রদ্ধ হইলেন। তার বাকরূদ্ধ হইলো। মনে মনে বহু শাপ শাপান্ত করিতে থাকিলেন। শেষে আমার বাবা হুজুরের কাছে নালিশ করিয়া বলিলেন- “আপনার পুত্রটি বেয়াদব হইয়া গেছে”। হইাতে দিবস তিনেকের জন্য আমার অন্ন বন্ধ হইলো। বুঝিতে পারিলাম এই সকল অডিও ভিডিও হারাম নয়। যাহা হারাম তাহা হইলো সিডি। তাই একখানা মাল্টিমিডিয়া ফোন কিনিয়া সমস্ত সিডি হইতে অডিও ভিডিও সমূহ উহাতে কপি করিলাম এবং সিডি সমূহ অগ্নিতে আহুতি দান করিয়া পাপ মুক্ত হইলাম।
অতঃপর একদিন ইমাম হুজুরকে পাইয়া নতুন ফোনখানা দেখাইলাম। তিনি খুশি হইয়া বলিলেন “অনেক সুন্দর হইছে”। বুঝিতে পারিলাম আমর সমূদয় পাপ মোচন হইয়াছে। অডিও ভিডিও সমূহ পকেটে লিইয়া মসজিদে যাইতে আর কোন বাধা থাকিলো না।
যাই হোক, আমার বন্ধুটি বুদ্ধিমান। বর্তমান সমাজ সভ্যতার কথা স্মরণ করে সে যাহা করিয়াছে বোধ করি তাহাই উত্তম হইয়াছে। তাহা না হইলে পবিত্র কোরআনের সূরা সমূহের সহিত আরও কত কিছুর বসবাস হইতো তাহা বলাই বাহুল্য।
ইহার পরবর্তী কয়েকদিন বন্ধুটির সহিত দেখা হইলো না। একদিন সকালে কিছু টাকা জমা দেয়ার নিমিত্তে ব্যাংকে গমণ করিলাম- দেখিলাম আমার বন্ধুটিতাহার এক তাবলিগি ভাইয়ের সহিত ব্যাংকে আগমন করিয়াছে। কুশন বিনিময়ের পর ব্যাংকে আগমনের কারণ জিজ্ঞাসিতে জানিলাম, তাহার ভাইটির একখানা ডিপোজিট একাউন্ট রহিয়াছে। উহাতে মাসিক কিস্তির অর্থ জমা করিবার উদ্দেশ্যে তাহারা আগমন করিয়াছে। ইহা শুনিয়া মনে হইলো কেহ আমাকে এগার হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইনে ঝুলাইয়া দিয়াছে। হা ঈশ্বর! ইহা আমি কি শুনিলাম!
ইহার এই ভাইটি পেশায় ডাক্তার। তাবলীগি সমাজের এলাইট সদস্য হিসাবে তাহার সুনাম রহিয়াছে। সে প্রায়শই আমাদিগকে হালাল হারাম বিষয়ে উপদেশ প্রদান করিয়া থাকে। এই ব্যক্তি সুদের অর্থ আস্বাদনের নিমিত্তে ডিপোজিট স্কীম করিয়াছে তাহা বিশ্বাস করিতে কষ্ট হইলো। ভাবিলাম আমার ধর্ম জ্ঞান সীমিত। হয়তো ইহার জন্যও কোন ব্যবস্থাপত্র রহিয়াছে। একদা এক ব্যক্তি বলিয়াছিলেন- সুদ আর রিবা এক জিনিস নহে। ইসলাম রিবা হারাম করিয়াছে সুদ নয়। ইহা স্মরণ করিয়া নিজেকে প্রবোধ দিতে থাকিলাম।
বন্ধুটি জানাইলো বিদেশ হইতে জামাত আসিয়াছে। বাদ আসর বয়ান হইবে। তুমি অবশ্যই আসিবে, বলিলাম- চেষ্টা করিবো।আমার অনাগ্রহ দেখিয়া তাহার তাবলীগি ভাই সহ অজগর সাপের মত পেচাইয়া আমাকে মোচরাইতে থাকিলো। অগত্যা বয়ানে উপস্থিত থাকিবার প্রতিশ্রুতি দিয়া প্রস্থান করিলাম।
আসরের সময় মসজিদে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম জামাতের লোক ছাড়াও স্থানীয় অনেক লোক উপস্থিত হইয়াছে। বুঝিতে পারিলাম ইহারা চেঙ্গিস খানের বাহিনীর মত চোখের সামনে যাহাকে পাইয়াছে তাহাকেই ধরিয়া আনিয়াছে।
নামায শেষে বয়ান শুরু হইলো। প্রথমে বিদেশী অতিথিরা সংক্ষেপে তাহাদের বক্তব্য প্রদান করিলেন। অতঃপর মূল বয়ান শুরু হইলো।
মজিদ সাহেব আজ বয়ান করিবেন। শুরুতে তিনি পরম করুণাময়ের দরবারে শুকরিয়া আদায় করিলেন। অতঃপর ঈমান, আমল, পাপ পূণ্য ইত্যাদি বিষয়ে বয়ান প্রদান করিতে থাকিলেন। মাঝে মাঝে তাহার বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিস এবং রাসূল(সাঃ) ও তার সাহাবীদের বিভিন্ন ঘটনা বণর্ণা করিতে থাকিলেন।
বক্তা হিসেবে মজিদ সাহেবকে দেখিয়া বয়ান শুনার আগ্রহ কমিয়া গেল। তাহার অফিসের ঘটনা বার বার মনে পড়িতে থাকিলো। একবার ভাবিলাম বাহির হইয়া যাই। তবে হইলাম না পাছে লোকজন আবার বেয়াদব উপাধি দেয়। গরু যেমন নিরস ভাবে খড়ের বিচালি চাবাইতে থাকে তেমনি আমিও তাহার বয়ান শুনিতে থাকিলাম।
তবে এইরূপ অবস্থা দীর্ঘক্ষণ থাকিলো না। সহসা আমার আগ্রহ বহুগুণ বাড়িয়া গেল। আশ্চর্য হইয়া তাহার বয়ান শুনিতে থাকিলাম। ঈমান আমলের একটা সংখ্যাগত রূপ রহিয়াছে তাহা এই প্রথম অবগত হইলাম। কোন আমল করিলে কত নেকী হয় তাহা দলিলপত্র সহকারে তিনি বর্ণনা করিতে থাকিলেন। বিভিন্ন প্রকার পাপ কার্যের নিমিত্তে গুনাহের সংখ্যাও তিনি বর্ণনা করিলেন। যেমন সালাত আদায় করিলে কত নেকী না করিলে কত গুনাহ বা কাযা করিলে নেকীর সংখ্যা কত কম ইত্যাদি। কি করিলে জান্নাত লাভ হয় আর কি করিলে জাহান্নাম লাভ হয় তাহাও তিনি ব্যাখ্যা করিলেন। বুঝিতে পারিলাম ইহাই সবচাইতে সহজতর দ্বীনি ব্যবস্থা। জান্নাত লাভের উপায়।
বয়ান শেষে বন্ধুটিকে জিজ্ঞাসিলাম, এই সমস্ত তথ্য কোথা হইতে পাওয়া যাইবে? উত্তর স্বরূপ সে আমাকে একখানা বই ধরাইয়া দিলো।ইহার নাম “ফাজায়েলে আমল”। নাম দেখিয়াই অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর মিলিয়া গেলো। দেখিলাম ইহা নানান প্রকার ফাজায়েলে পরিপূর্ন ।ধীরে ধীরে চোখের সামনে সমস্ত কিছুই পরিষ্কার হইতে থাকিলো। বুঝিতে পারিলাম ইহারা কেন সুদ ঘুষ ইত্যাদি হারাম কার্য হইতে বিরত থাকিতেছে না। যেহেতু ইহারা সকল প্রকার ফাজায়েল সম্পর্কে অবগত। যেহেতু সকল ভাল-মন্দ কর্মের সংখ্যাগতমান রহিয়াছে, সেহেতু একখানা হিসাব বইয়ের একপাশে নেকীর সংখ্যা অপর পাশে গুনাহের সংখ্যা লিপিবদ্ধ করিয়া যদি নেকীর সংখ্যা বেশী হয় তাহা হইলেই সব সমস্যার সমাধান।অর্থ্যাৎ জান্নাত লাভ নিশ্চিত।
বুঝিতে পারিলাম অযথা হালাল হারাম লইয়া চিন্তা করিয়া মাথার ব্রেইন নষ্ট করা মূর্খের কর্ম। আধুনিককালে মানব সম্প্রদায়ের হস্তে সময় খুবই সীমিত। আবার চাহিদাও দিন দিন বাড়িয়া চলিয়াছে। এমতাবস্থায় ইহারূপ ব্যবস্থাপত্রই উত্তম বলিয়া মনে হইতে থাকিলো। বুঝিতে পারিলাম যুগের সাথে সাথে দ্বীনি ব্যবস্থাও আপডেট হইয়াছে। নিজের মনগড়ামত ধর্ম পালনে আর কোন বাধা নাই।
আম বয়ান-১ পরিপূরক-
আমার কতিপয় বন্ধু রহিয়াছে যাহারা তাবলীগ জামাতে নিয়মিত। কিন্তু আশ্চর্য হইয়া দেখিলাম, ভালবাসা দিবসে তাহারা প্রেমিকাকে সঙ্গে লইয়া ডেটিং-এ বাহির হইয়াছে। আবার ডেটিং শেষে মসজিদে যাইয়া জামাতের সহিত সালাত আদায় করিয়াছে। তাহা হইলে প্রশ্ন হইলো- তাবলীগে যাইয়া তাহাদের ঈমাণ, আমলের কি উন্নতি হইয়াছে ? যদি তাবলীগে যাইয়া আমরা হালাল হারামের পার্থক্য না বুঝিতে পারি, যদি সুদ, ঘুষ, জিনাহ ইত্যাদি কবিরা গুনাহ সমূহ না চিনিতে পারি- তাহা হইলে আর তাবলীগে যাওয়ার প্রয়োজন কি ?
উল্লেখ্য, এই লিখাটি তাবলীগ জামাতের উদ্দেশ্যে রচিত নহে। যাহারা তাবলীগ জামাতের অন্তর্ভূক্ত হইয়াও নিজেদের ঈমান ও আমলের কোন উন্নতি করিতে পারে নাই, ইহা তাহাদের উদ্দেশ্যে রচিত।
©somewhere in net ltd.