![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছেলে বিদেশে থাকে এটাই বড় যোগ্যতা। ফলে বিয়ের সময় আর কিছু দেখার প্রয়োজন মনে করেননি পরিবারের সদস্যরা। এইচএসসি পড়া অবস্থায় বিয়ে করতে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী অসুস্থ থাকে। এর মধ্যেই সন্তানের জন্ম। তবে মন থেকে খুঁতখুঁতি যায় না। একটু পড়াশোনা জানা থাকার সুবাদে লুকিয়েই চিকিত্সকের কাগজপত্র ঘেঁটে একদিন জানা গেল স্বামীর অসুস্থ থাকার কাহিনি। স্বামী এইডসের রোগী। তত দিনে তাঁর নিজের শরীরে এ রোগটি বাসা বেঁধেছে। তবে সন্তানটি এ থেকে বেঁচে গেছে।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্বামী খুব কান্নাকাটি করে, ক্ষমাও চায়। কান্নাকাটি করে স্বামী বলতে থাকে, ‘আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।’ কান্নাকাটি শেষে ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির কাছেই সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যান। এটি হয়তো সড়ক দুর্ঘটনা ছিল না, ছিল আত্মহত্যা। তারপর শ্বশুরবাড়িতে মা ও এই সন্তানের ওপর চলতে থাকে নির্যাতন। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁকে বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি আশ্রয় নিতে হয়। তবে জীবন তো আর থেমে থাকে না।
শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার এই নারী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমার এক দেবর আমার ও সন্তানের পাশে এসে দাঁড়ায়। তার দেওয়া আর্থিক সহায়তায় ছেলে এবার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। এর মধ্যে ঢাকায় এসে এইচআইভি এইডস নিয়ে কর্মরত একটি সংগঠনে চাকরি ও চিকিত্সা চলতে থাকে। আর এইডসের বিষয়টি জানার পরও এক ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। বিয়ে করেন। এখন আমি আবার মা হতে চলেছি।’
শুধু এই নারী নন, এইচআইভি এইডসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন অনেকেই। এটা সম্ভব হচ্ছে, কারণ এই সমাজেরই কেউ না কেউ এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আরেকজনের কাহিনি জানা গেল। বাসাবাড়িতে ভালো চাকরির কথা শুনে বিদেশে পাড়ি জমান। তবে বাসাবাড়ির চাকরির বদলে তাঁকে সেখানে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এভাবে চলে বেশ কয়েক বছর। এই নারী দেশে স্বামী ও এক ছেলে এবং এক মেয়েকে রেখে গিয়েছিলেন। যৌন ব্যবসার টাকা তিনি দেশে পাঠাতেন, তা দিয়েই পরিবারটি চলত। তবে এক সময় এই নারীর দেহে এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়লে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সব শুনে স্বামী এই নারীকে দুই সন্তানসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। বাবার বাড়িতে আশ্রয় মেলে। তবে সে আর কত দিন। তারপর এই নারী এইচআইভি/এইডস নিয়ে কর্মরত এক সংগঠনে কাজ নেন। চলতে থাকে চিকিত্সা। আর চলতে থাকে দুই সন্তানের পড়াশোনা।
চাকরির পাশাপাশি এই নারী টুকটাক ব্যবসা শুরু করেন। আস্তে আস্তে দিন ফিরতে শুরু করে। ছেলেকে বিদেশ পাঠান। ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর আগে বিয়ে দেন। নিজে ছেলের বউয়ের সঙ্গে ছেলের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ওঠেন। তবে সেখানে এইডসের বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সেখান থেকেও এই নারীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে দমে যাননি এই নারী। নগরের এক বস্তিতে ঘর ভাড়া নেন। যে সংগঠনের কাজ করতেন, সেই সংগঠনের সহায়তায় একটি ছোট দোকান দেন। দোকানে বসে সকালের নাশতা বানানো শুরু করেন। প্রথম দিকে তাঁর বানানো রুটি কেউ খেতে চাইত না। কিন্তু এখন বিষয়টি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আর সংগঠনের যত অনুষ্ঠান, কর্মশালা তার খাবারের পুরো অর্ডারই পান এই নারী।
এইচআইভি/এইডস নিয়ে কর্মরত কনফিডেন্সিয়াল অ্যাপ্রোচ টু এইডস প্রিভেনশনের (ক্যাপ) নির্বাহী পরিচালক হালিদা এইচ খন্দকার বলেন, এই মানুষগুলো প্রয়োজন শুধু একটু সহায়তা। চিকিত্সার আওতায় এলে তাঁরা আস্তে আস্তে সব কাজই করতে পারেন। আন্তর্জাতিক সংগঠন বা যারা এইডস নিয়ে কাজ করছে, সেই সংগঠনগুলো এই মানুষগুলোকে চাকরি দিলেও সমাজের অন্যরা চাকরি দিচ্ছে না। অথচ এইডস আক্রান্তদের অনেকেই পড়াশোনা জানা। এইডসের খবর শুনলে বরং চাকরি থেকে বিতাড়িত করে। অথচ এঁরা যত নিজেদের লুকিয়ে রাখবেন, সমাজের জন্য ততই ঝুঁকি বাড়বে। কেননা তাঁরা লুকিয়ে থাকলেও এই সমাজ থেকেই চিকিত্সাসহ তাঁরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। তাই নিজদের ঝুঁকি কমানোর জন্যই এঁদের সমাজে ঠাঁই দিতে হবে।
পরিচিত একজনকে বাঁচানোর জন্য রক্ত দিতে গিয়ে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার খবরটি পান এক ব্যক্তি। টেলিফোনে এই ব্যক্তি তাঁর জীবনের ইতিহাস শোনালেন। ২০১০ সালে এই ব্যক্তির স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের পর প্রায় ১৭ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল। তখনই হয়তো রোগটির সূত্রপাত। স্ত্রীর মাধ্যমে তিনি এইডসে আক্রান্ত হন।
এই ব্যক্তি জানালেন, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। যে হাসপাতালে রক্ত দিতে যান, সেখান থেকেই এইডসের বিষয়টি কারখানায় জানিয়ে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আধা ঘণ্টার নোটিশে কারখানায় সাড়ে ১১ বছরের কাজের ইতি ঘটে। কারখানার কাছেই যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, খবরটি সেখান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
এই দম্পতি বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেখতে পান অনেক মানুষ তাঁদের দেখতে এসেছে। তবে সেই মানুষগুলো কাছে আসে না। অনেকেই জানায়, এই দম্পতিকে কেউ হাত দিয়ে ধরলে তাদেরও এইডস হবে। ততক্ষণে বাড়িওয়ালার কানে গেছে খবরটি। ফলে তত্ক্ষণাত্ বাসা ছেড়ে দিতে হয়। এভাবেই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন এই দম্পতি। তাঁদের চিকিত্সা শুরু হয় নগরীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত আশার আলো সোসাইটিতে। স্বামী বর্তমানে এখানেই কাজ করছেন। স্ত্রী বর্তমানে গর্ভবতী। অনাগত সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় আছে এই দম্পতি।
চিকিত্সকরা বলছেন, গর্ভবতী নারী এবং জন্মের পর নবজাতককে প্রতিষেধক হিসেবে এন্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ দিলে তা সংক্রমণের হার অর্ধেক কমাতে পারে। সৃষ্টিকর্তা ও চিকিত্সাবিজ্ঞানের ওপর ভরসা করে আর সমাজের কিছু মানুষের সহায়তায় এই মানুষগুলো নতুন স্বপ্ন দেখছেন। নতুন জীবনের জন্ম দিচ্ছেন। সেখানে আশঙ্কাও প্রচুর। তার পরও...
সংগৃহিত .................................
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট টি পড়ে মন খারাপ হলো।