নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাম্পালা থেকে বাসে - কিগালি -১

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৫২



জুবা থেকে বিমানে এন্টেবি, ৫০ মিনিট ফ্লাইট টাইম ।এখান কার আবহাওয়া চমৎকার। গত মাসের তুলনায় এখন একটু ঠাণ্ডা ।এবার কাম্পালাতে থাকব। আগেই হোটেল বুক করা হয়েছে, ইন্টারনেটে বেশ সুন্দর ব্যবস্থা আছে বুকিং দেয়ার। ট্যাক্সিতে করে রওয়ানা হলাম। এন্টেবি থেকে কাম্পালা আগেই দেখা হয়েছে। এবার আরও ভালভাবে দেখতে দেখতে চললাম। তিনটা বাজে এখন, যেতে একঘণ্টা লাগবে। এসময় ট্রাফিক জ্যাম একটু কম হয়।

নীল আকাশ, পেঁজা তুলোর মত অল্প মেঘ, সূর্যের তীব্র আলো, হালকা ঠাণ্ডা বাতাস, গাড়িতে এসি লাগে না এখানে। ধুলা বালিও তেমন নেই। শহরের বাইরে বাতাস এখনো দূষিত হয়নি। এখানকার রাস্তাগুলো ঢেউ খেলানো। কখনও চড়াই আবার উতরাই । রোলিং কান্ট্রিসাইড । জীবন চলছে এখানে আপন গতিতে। রাস্তা দিয়ে ভি আই পি গাড়ির সাইরেন শোনা গেলে সব গাড়ি রাস্তার পাশে থেমে যায়, তারপর আবার পথচলা।

এবারের গন্তব্য রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালি। রুয়ান্ডা প্রজাতন্ত্র মধ্য পূর্ব আফ্রিকার একটি ছোট রাষ্ট্র। এত দেশ থাকতে কেন কিগালি যাচ্ছি অনেকেই প্রশ্ন করে। এই দেশটা একসময় গৃহ যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়েছিল, নির্মম গণহত্যা হয়েছিল এদেশে। আজ তারা ঘুরে দাড়িয়ে দেশটাকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এত ঘৃণা , এত মৃত্যু তারপরও এভাবে এগিয়ে চলার প্রেরনা তারা কিভাবে পেল এবং কাজে লাগাল তাই দেখতে যাচ্ছি সেদেশে। রুয়ান্ডার অনেক মানুষ জুবাতে আছে। তারা তাদের দেশে যাব শুনলে খুব খুশি হয়, কোন সাহায্য লাগবে কিনা জানতে চায়। তাদের কাছেই জানতে পেলাম শহরটা বিদেশীদের জন্য নিরাপদ। মনে আনন্দ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়।

প্রায় ৮০ লাখ লোকের বাস এদেশে। আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে রুয়ান্ডাতেই জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। রুয়ান্ডার চারিদিকের দেশগুলো হলো উগান্ডা, বুরুন্ডি, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, এবং তানজানিয়া। এদেশের উর্বর ও পাহাড়ী ভূমির কারণে এই দেশকে হাজার পাহাড়ের দেশ বলে। এই দেশটি ১৯৯৪ সালে হুটু ও টুটসি উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘটিত ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গা ও গৃহযুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের নজরে আসে।

কাম্পালা যাওয়ার পথে লেক ভিক্টোরিয়ার পাশ দিয়ে যাবার সময় লেকে কিছু মানুষ মাছ ধরছে দেখলাম, পাড়ের রাস্তা দিয়ে মানুষ চলছে , সাঁতারও কাটছে দু’চার জন । মানুষ কম হলে যা হয়, গেঞ্জাম কম।এবার আরও ভাল লাগলো দুপাশের দৃশ্য দেখে । পথে বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে বেশ কয়েকটা, এছাড়া ছোট ছোট বাজার এবং দোকানপাট আছেই।

রাস্তা থেকে একটু দূরে পাহাড়ের ঢালে একতালা দোতালা টালির ঘরবাড়ী গুলো ভালভাবে দেখলাম আজকে। এখনো সব রাস্তা পাকা হয়নি তবে কাজ চলছে।এই দেশটা কিঞ্চিৎ পাহাড়ি তবে পাহাড়ের সন্নিবেশ এখানে একটু কম বলে ফাঁকা এবং সমতল জায়গা কিছু দেখা জায়।পথে যেতে জনপদগুলো আবারও দেখলাম। কাম্পালা শহরে ঢুকে প্রথমে কিগালির বাসের টিকেট কিনতে গেলাম। জাগুয়ার বাস সার্ভিস নামকরা এবং এক্সিকিউটিভ বাসগুলো বেশ ভাল। কিগালি যাওয়ার আলাদা বাস স্ট্যান্ড আছে।



কাম্পালা থেকে আশেপাশের দেশগুলোতে যাওয়া যায়। আলাদা আলাদা বাস স্ট্যান্ড আছে সব দেশের জন্য। টেলিফোনে বুকিং দেয়া যায়, কাউন্টার থেকেও টিকেট কেনা যায় । অনেক যাত্রী এই পথে যাতায়াত করে তাই আগে থেকে টিকেট নেয়া দরকার। বিশ ডলারের মধ্যে টিকেট হয়ে গেল। পরদিন সকাল নয় টায় বাস ছাড়বে, রিপোটিং টাইম সকাল আটটায়। টিকেট করে হোটেলের পথে।





মার্কেট ষ্ট্রীটে আমাদের হোটেল। বেশ ব্যস্ত এলাকা। অনেক ভিড় ও ট্রাফিক জ্যাম। ঘুরে আসতে হল। সময় লাগলো একটু বেশি। চেক ইন করে রুমে ব্যাগ রেখে ঘুরতে বের হলাম। হোটেলের সামনেই বিশাল বাজার। ফুতপাতও দোকানীদের দখলে, তবে হাঁটা যায়। নানা রকম ফলের দোকান। মালটা, বিশাল সাইজের আনারস, মজার কলা সব মিলিয়ে এলাহি কারবার। ফল কিনে খাওয়া শুরু করলাম।



একটু হেঁটে সামনে গেলে শপ রাইট ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বেশ বড় স্টোর। কিছু কেনাকাটা করলাম। তারপর ট্যাক্সি নিয়ে নকুমার্ট ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেলাম। বেশ বড় কমপ্লেক্স, অনেক সুন্দর ও ব্রান্ডের জিনিষপত্র এখানে পাওয়া যায়। ঘুরে ফিরে দেখলাম কিছুক্ষণ। এই কমপ্লেক্সের কাছেই বিশাল এক কাসিনো। সামনে পার্কিং এর ব্য বস্থা আছে। ঢুকতে বেশ চেকিং হল। রাস্তা নিচের দিকে নেমে গেছে। নীচে বাঁশ ঝাড় তার মধ্যে কয়েকটা গরিলার মূর্তি । একটু অন্ধকারে মনে হয় গরিলা বসে আছে। কাসিনোতে যাইনি, কয়েকটা দোকান ঘুরে বাইরে চলে এলাম।



সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ট্যাক্সি নিয়ে আবার হোটেলে ফিরে এলাম। দেশে কথা বললাম সবার সাথে। হোটেলে ওয়াই ফাই আছে, মেইল ও চেক করলাম। রাতে ফ্রেশ হয়ে নিচের ডাইনিঙে চিকেন বিরানী দিয়ে ডিনার করলাম। উগান্ডায় আরও একটা দিন কেটে গেলো।

সকাল আট টার সময় আমরা বাস স্ট্যান্ডে ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসলাম। অনেক যাত্রী। সবাই কিগালি যাবে।যাত্রীদের পাসপোর্ট ও টিকেট চেক শেষে বাসে বসার অনুমতি দিল। এখানে খাবারের ভাল ব্যবস্থা আছে। আমরা পানি নিলাম সাথে। সময় মত বাস ছেড়ে দিল। কাম্পালা শহরের মধ্যে দিয়ে কিছুক্ষণ চলার পর বাস রুয়ান্ডা সীমান্তের দিকে চলা শুরু করল। রাস্তা বেশ ভাল। শহরের বাইরে কয়েক কিলো রাস্তা একটু খারাপ, তারপর দারুন রাস্তা।বাস থেকে ছবি তুলতে তুলতে চলছি। উগান্ডার বুক চিরে নয় ঘণ্টা জার্নি করতে হবে। মোটামুটি উগান্ডা দেশটা ভাল করে দেখা হয়ে যাবে এবার।



শহরের বাইরে সাধারন মানুষের বাড়িঘর, জনবসতি আছে তবে ঘন বসতি নয়। রাস্তার পাশের ঢাল শেষ হলে কিছুটা সমতল তারপর আবার পাহাড়। সেসব পাহাড়ে ও মাঝে মাঝে বাড়িঘর আছে। অনেক ফাঁকা জায়গা আছে, খুব অল্প চাষ হয় এসব জমি। অনেক মাইল ধরে বেত গাছের বন, সিন্দর বেত ফুল ফুটে আছে আর বাতাসে তা দুলছে। মাঝে মাঝে ঝোপ গাছ এবং স্তেপ ভূমি। এই জায়গাগুলো পশু চারণভূমি হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।



পাহাড়ি পথ ঢেউয়ের মত এগিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে রাস্তার দুপাশে দোকানপাট ও কিছু দেখা যায়। নানা মোড় আর বাঁক পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। বাসে কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ বা জেগে আশেপাশের দৃশ্য গুলো দেখছে।



পথ চলছি কিন্তু একটুও বিরক্ত লাগছে না, মাঝে মাঝেই ছোট জনপদ এবং মানুষ দেখা যাচ্ছে। পাহাড় গুলোর ঢালে এবং উপত্যকায় কিছু কিছু চাষাবাদ হচ্ছে। অনেক জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। মাঝে মাঝে সুন্দর ফুলের বাগান দেখা যায়।





তারপর দূরে পাহাড়ের গায়ে সুন্দর ছোট ছোট বাড়ি ঘর রাস্তা দেখে দেখে আমরা এগিয়ে চলছি। রাস্তার মোড় গুলোতে গিয়ে গাড়িগুলো নিজ গন্তব্যের দিকে চলে যাচ্ছে।





চলার পথের জনপদ দেখতে বেশ ময়া লাগছে। মনে পড়ছে , এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলত.........

টানা চার ঘণ্টা চলার পর বিরতি। যাত্রীরা তাদের সাথে খাবার ও পানি নিয়ে এসেছে।একটা পেট্রোল পাম্পে বাস থামল। এখানকার মানুষজন দুপুরে খাবার তেমন খায় না। সবার কাছে কামেরা, মোবাইল ইত্যাদি আছে। আমরা রুটি ডিম খেয়ে নিলাম । ফ্রেশ হলাম একটু হাঁটা হাঁটি করলাম আশেপাশে। এই শহরের নাম মাবারারা। সাধারন মানের শহর, রাস্তা ঘাত ভাল ও পরিস্কার। মানুষজন তেমন বেশি নেই। ফেরী ওয়ালারা ফেরী করে ফল, নাস্তা, জুস ও নানা ধরনের খাবার বিক্রি করছে।





মাবারারা শহরতলী



বাস আবার চলতে শুরু করল। আর চার ঘণ্টার পথ। প্রথনম দিকে রাস্তা বেশ ভাল। এখানের দৃশ্য একটু বদলে গেছে এখন। বসত বাড়ি এবং মানুষজন এখানে অনেক কম। একটু একটু জঙ্গলও দেখা যায়।







চলার পথের জনপদ



এক ঘণ্টা চলার পর রাস্তার মেরামতের কাজ চলছে দেখলাম। সেখানে বেশ ধুলা এবং মাঝে মাঝে রাস্তা বেশ খারাপ। আস্তে আস্তে একটু ক্লান্তি লাগা শুরু হয়েছে। সকাল থেকে পথচলা, এখন তিনটা বাজে। অনেক যাত্রী ঘুমিয়ে গেছে বাসে বসেই। বাসে মিউজিক ভিডিও চলছে, কখনো আফ্রিকান কখনো ইংরেজি গান। ভালই লাগছে পথচলা।



বিকেল পাঁচটার দিকে আমরা উগান্ডার সীমান্ত শহর কাতুনাতে এসে পৌছালাম । খুব সাধারন এলাকা। কাস্টম ও ইমিগ্রেশনের অফিস আছে। বাস থেকে নেমে ফর্ম পুরন করে কাউন্টারে জমা দিলাম। আঙ্গুলের ছাপ নিল, তারপর সিল মেরে দিল পাসপোর্টে। কিছুদূর হেঁটে একটা ব্রিজ পার হয়ে রুয়ান্ডার কাতুনা শহর, এখানে লিখা গাতুনা, এক সময় এটা ফ্রেঞ্চ কলোনি ছিল।





কাতুনা বর্ডার- রুয়ান্ডা থেকে



এই সময় বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টি আসার আর সময় পেল না। বড় বড় ফোঁটার ঝম ঝম বৃষ্টি। দৌড় দিলাম একটা। সবাই লাইনে দাড়িয়ে ভিসা নিচ্ছে আস্তে আস্তে কাউন্টারের সামনে এসে গেলাম। পাসপোর্টে সিল দিয়ে দিল। এরিমাঝে আমাদের বাস ও এসে গেল বর্ডারের এপারে। মালামাল চেক হল এখানে, তারপর আবার বাসে উঠে বসলাম।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এখানে ঠাণ্ডা একটু বেশি। জায়গাটা এবং দেশটা পাহাড়ি, অনেক পাহাড় এবং বেশ কাছাকাছি , উগান্ডাতে পাহাড় ছিল তবে এত বেশি না। আরও দু ঘণ্টা পর আমরা কিগালিতে পৌঁছে যাব। অন্ধকার হয়ে এসেছে, বাস চলছে আপন গতিতে, নতুন দেশ, এতক্ষন বাস রাস্তার বাম পাশ দিয়ে চলছিল এখন চলছে ডান পাশ দিয়ে। নতুন দেশের পথে চলছি নতুন করে।

দিনের আলো একটু আছে, এখানে পাহাড় ও সমতলে অনেক চা বাগান। মানুষ তেমন বেশি না। এখানে এতদুরে বিদ্যুৎ তেমন নেই মনে হল। ঘরবাড়ি সাধারন তবে মানুষদের দেখে সুখি মনে হল। নতুন দেশের নতুন আবেশ নিয়ে চললাম রাজধানীর পথে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:০৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: চমৎকার লাগলো ভাই। মনে হলো নিজেই যেন ঘুরছি।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:




সুন্দর বর্ণনা +++

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫০

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: দারুন ভ্রমণ হয়ে গেলো......

৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৬

শোভন শামস বলেছেন: অনুপ্রেরনার জন্য ধন্যবাদ।

ভাল থাকুন, সাথে থাকবেন

ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.