নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপাবলিক অব ইয়েমেন - পর্ব ২

০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৯:২৩


ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ চলছে
দক্ষিণে এই সময় ক্রমাগত হতাশা চলতে থাকে। দুই ইয়েমেন এক হওয়ার ফলে উন্নয়নের বদলে অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্নীতির ফলে অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালে দক্ষিণে বিছিন্নতা বাদী রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটে, এই দল ২০১১ সালের ইয়েমেনের বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে। সেই সময় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরব স্প্রিং এর ঢেউ চলছিল। সেই আবহে ইয়েমেনের জনগণ সোচ্চার হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। তারা সীমাহীন দুর্নীতি, দুর্বল অর্থনীতি এবং বেকারত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। প্রেসিডেন্ট সালেহ বিদ্রোহ থামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতা ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির হাতে সমর্পণ করে দেশ ত্যাগ করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি গণতান্ত্রিক ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালান। দুই বছর ধরে নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হলে ও তা ব্যর্থ হয়। হুতিরা তাঁদের অধিকার আদায় করতে না পেরে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

হুথি বিদ্রোহীদের সমাবেশ
হুতিরা এসময় স্থানীয় জনগণ এবং প্রেসিডেন্ট সালেহ এর অনুগত সেনাবাহিনীর বিচ্ছিন্ন অংশের সাথে যোগ দিয়ে ক্ষমতা পুনরায় দখল করার জন্য সংগঠিত হয় ও রাজধানী সানা দখল করে নেয়। এই সময় প্রেসিডেন্ট হাদি প্রথমে এডেনে পালিয়ে যায় পরে সেখান থেকে সৌদি আরবে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে। গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল বা জি সি সি এই ক্ষমতা দখলের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এবং এঁকে ক্যু হিসেবে আখ্যায়িত করে।
এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরব হুথিদেরকে সাহায্য করার জন্য ইরানকে দায়ী করে। সৌদি আরব বিশ্বের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহ পথ বাব আল মান্দেব ইয়েমেনি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা মেনে নিতে পারেনি। সৌদি আরব নয়টি সুন্নি প্রধান দেশের সমর্থনে একটি আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গঠন করে প্রেসিডেন্ট হাদিকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর প্রচেষ্টা চালায়। আমেরিকা এই কোয়ালিশনকে লজিস্টিক এবং গোয়েন্দা সমর্থন দিতে থাকে। এই কোয়ালিশন ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুলোতে বোমা বর্ষণ শুরু করে এবং জাতিসংঘ বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে।

তায়েজ শহরের দৃশ্য
জুলাই ২০১৫ সালে এই কোয়ালিশন বাহিনী এডেন দখল করে এবং প্রেসিডেন্ট হাদি সেখানে দায়িত্ব গ্রহন করে। কোয়ালিশন তায়েজ শহরের দিকে তাঁদের আক্রমন পরিচালনা করে। কোয়ালিশনের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকলেও তাঁদের অন অভিজ্ঞতার কারনে যুদ্ধে তাঁদের পরাজয় হতে থাকে। এই কোয়ালিশনের অগ্রযাত্রা থেমে গেলে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ বাড়তে থাকে। এই বোমা বর্ষণে সাধারন জনগণের মৃত্যু হতে থাকে। অক্টোবর ২০১৫ সালে এই কোয়ালিশন বাহিনী হেডেন হাসপাতালে বোমা বর্ষণ করা হয়। জাতিসংঘ এই বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করে এবং শান্তি চুক্তি করতে বলে যা সফলতার মুখ দেখেনি। বোমা বর্ষণের পাশাপাশি কোয়ালিশন হুতি নিয়ন্ত্রণাধীন বিমান বন্দর এবং সমুদ্র বন্দরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এ সময় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাত্র আটটি শিপমেন্টের অনুমোদন দেয়া হয়, তবে এই সাহায্য দিয়ে মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে ইয়েমেনে দুই মিলিয়ন মানুষ আভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তু চ্যুত হয়। ২০১৬ সালের শেষ দিকে ইয়েমেনে কলেরা মহামারী শুরু হয়, এই মহামারীতে এক মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয় এবং ২২০০ মানুষ মৃত্যু বরন করে। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে সাত মিলিয়ন ইয়েমেনি মানবিক বিপর্যয় এবং অনাহারে আছে।

প্রেসিডেন্ট সালেহ কে হত্যার পর হুথিদের সমাবেশ
সানাতে সালেহ হুতিদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে ও সৌদি আরবের সাথে যোগ দিতে চেষ্টা করে এর ফলশ্রুতিতে কিছুদিন পর হুতিরা তাঁকে হত্যা করে। এডেনে হাদি জনগণকে একত্রিত করতে ব্যর্থ হয়। দক্ষিণের আন্দোলন শুরু হয় এবং তারা ট্রাডিশনাল কাউন্সিল গঠন করে। এই কাউন্সিল এডেন এর নিয়ন্ত্রন নেয় এবং প্রেসিডেন্টশিয়াল প্যালেস দখল করে। এই দল ইউ এ ইর সমর্থন পায়। ইউ এ ই কোয়ালিশনের সাথে না থেকে ট্রাঞ্জিশনাল কাউন্সিল কে সমর্থন দিয়ে যায়। ইউ এ ই আল কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ও ইয়েমেনের সাকোত্রা দ্বীপে তাঁদের প্রাধান্য বিস্তার করে। কোয়ালিশন বিমান আক্রমনের পাশাপাশি মিসাইল আক্রমন চালিয়ে যায়। হাদির সমর্থক গুষ্টি হোদেইদা বন্দর হুতিদের থেকে দখল করে নেয়। দক্ষিণের ট্র্যাডিশনাল কাউন্সিল সৌদি আরবের কোয়ালিশন কে সরিয়ে সাকোত্রা দ্বীপের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়।
আল কায়েদা ইন এরাবিয়ান পেনিনসুলা এই সময় তাঁদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অনেক জায়গা দখল করে নেয়। এর পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট এ তাঁদের কার্যক্রম শুরু করে। এত সব দলের কার্যক্রমের ভিত্তিতে পুরো ইয়েমেন দেশটা বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইয়েমেনের চলমান এই যুদ্ধে ১০,০০০ এর বেশী মানুষ মারা যায় এবং এখন ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। জাতিসংঘের মতে ইয়েমেনে অবরোধের ফলে পৃথিবীর একটা ভয়ংকরতম মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ছবি নেট থেকে.........

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৯:৩০

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: জাতিসংঘের মতে ইয়েমেনে অবরোধের ফলে পৃথিবীর একটা
ভয়ংকরতম মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

..................................................................................................
আমেরিকায় এখন যা ঘটছে তা কি মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা নয় ?
জাতিসংঘের এব্যপারে কোন বিবৃতি নাই কেন ?

০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৯:৩৪

শোভন শামস বলেছেন: বিপর্যয়ের পর বিপর্যয়ে এখন পৃথিবী, কে কাকে বলবে, এখন বোঝা যায় শান্তি কেন দরকার, সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।

২| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: জাতিসংঘ শুধু নামে। কামে না।

০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৪

শোভন শামস বলেছেন: ক্ষমতা এখন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি? তারপর ও বলা যায় কেউ তো আছে, সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।

৩| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ১০:৩০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এই সমস্যার সমাধানের পথে প্রধান বাঁধা বাহিরের শক্তি,যারা সমস্যা জিইয়ে রেখে অস্ত্র বিক্রি করছে।মধ্যপ্রাচ্যে যতবেশি সমস্যা থাকবে অস্ত্র বিক্রেতাদের ততবেশী লাভ।আর মাথামোটা মুসলমানরা এই সাধারন কথাটাই বুঝতে পারে না।

০১ লা জুন, ২০২০ রাত ১০:৩২

শোভন শামস বলেছেন: ভাল ব্যবসা, অর্থনীতি চাঙ্গা থাকে, কারো সর্বনাশ, সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।

৪| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ১১:১১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সৌদি আরব মধ্যপাচ্য বড় শয়তান ।

০৩ রা জুন, ২০২০ সকাল ৭:৫৬

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।

৫| ০২ রা জুন, ২০২০ রাত ১২:৪৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: প্রথম পর্ব পড়েছিলাম।এটাও পড়লাম।

০৩ রা জুন, ২০২০ সকাল ৭:৫৬

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.