নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শোভন এর ব্লগ এ স্বাগতম

শোভনসাস্ট

শোভনসাস্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চ রক্তচাপ এর খুঁটিনাটি

২৯ শে মে, ২০১১ রাত ১০:৪৬

ব্লাড প্রেসার নামে অতিপরিচিত রোগটিই আসলে হাইপারটেনশন। হাইপারটেনশন রোগটি সকলের না থাকলেও সুস্থ্য অসুস্থ প্রতিটি মানুষেরই ব্লাড প্রেসার থাকে, আসলে হৃদপিন্ড রক্তকে ধাক্কা দিয়ে ধমনীতে পাঠালে ধমণীর গায়ে যে প্রেসার বা চাপ সৃষ্টি হয় তাই হলো ব্লাড প্রেসার। এই চাপ এর একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে আর যখন তা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনি তাকে বলা হয় হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ।সুতরাং শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিমি মার্কারী। বয়সভেদে এই রক্তচাপ বাড়তে পারে বা কমতে পারে। কারো রক্তচাপ সব সময়ের জন্য যদি বেশি মাত্রায় থাকে (যেমন-১৩০/৯০ বা ১৪০/৯০ বা তারও বেশি) যা তার দৈনন্দিন কাজ বা স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে, তখনই এই অবস্থাটিকে আমরা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলি।

ধরে নেয়া হয় পূর্ণ বিশ্রামে থাকা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেসার হবে ১২০/৮০ মিলি মিটার পারদ চাপ। এক্ষেত্রে ১ম সংখাটি (১২০) দ্বারা হার্ট এর সংকোচনের সময় ধমণীর ব্লাড প্রেসার এবং ২য় সংখাটি দ্বারা হার্ট এর প্রসারণের সময়ে ধমণীর ব্লাড প্রেসার কে নির্দেশ করা হয়। এই ১ম প্রেসার সংখাটি যা সিস্টোলিক প্রেসার নামে ডাকা হয় সবসময়ই ২য় টি থেকে বেশি এবং এর স্বাভাবিক মাত্রা ১৪০ মি.মি এর নীচে এবং ৯০ মি.মি এর উর্ধে । অন্য দিকে ২য় প্রেসার সংখাটি কে ডায়াস্টোলিক প্রেসার ডাকা হয় এবং এর স্বাভাবিক মাত্রা ৯০ মি.মি এর নীচে এবং ৬০ মি.মি এর উর্ধ্বে। তাই যখন উপড়ের প্রেসার টি ১৪০ বা তার উর্ধ্বে অথবা নীচের প্রেসার টি ৯০ বা তার উর্ধ্বে পাওয়া যায় তখন ধরে নিতে হবে রোগীর ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক এর উর্ধ্বে অর্থাৎ তিনি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগে ভূগছেন। তবে বয়সের উপর ভিত্তি করে এই মাত্রার কিছুটা তারতম্য হতে পারে।

বয়স এবং লিঙ্গভেদে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হলে তাকে উচ্চরক্তচাপ এবং কম হলে তাকে নিম্নরক্তচাপ বলে। তবে হঠাৎ করে সাধারণ নিয়মের অতিরিক্ত রক্তচাপ বাড়লেই তাকে উচ্চরক্তচাপ হিসেবে ধরা যাবে না। রাতে ভালো ও পরিমিত ঘুমের পর যদি ভোরে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পরপর তিন দিন রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি পাওয়া যায় তখন তাকে উচ্চরক্তচাপ বলা যাবে। কারণ অতিরিক্ত চিন্তা, পরিশ্রম, মানসিক অশান্তিতে বা উত্তেজনার কারণে ক্ষণিকের জন্য সিস্টোলিক রক্তচাপ বাড়তে পারে। কিন্তু ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার অতিরিক্ত হওয়া মানেই রোগীর উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। উচ্চরক্তচাপ কোনো রোগ নয়; বরং এটি অন্য কিছু রোগের উপসর্গ মাত্র।

কোনো কারণে রক্তচাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তবে এটি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষত হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য। উচ্চ রক্তচাপ হলে হৃদপিণ্ড সেই রক্তচাপের বিপক্ষে রক্ত বেশি জোরে সংকোচন বা পাম্প করতে হয়। এতে হৃদপিণ্ড পরিশ্রম বেড়ে যায়। অর্থাত্ হৃদপিণ্ড নিজেরই বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনমতো অক্সিজেন সরবরাহ না পেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপে রক্তবাহী ধমনিগুলো শক্ত হয়ে যায়। ফলে স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, চোখের সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি সমস্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর প্রভাব শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতি হতে পারে। তবে মস্তিস্ক, হার্ট ও কিডনি বেশি ক্ষতিগ্র- হয়। রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি সাতগুণ বেড়ে যায়, হার্ট ফেইলরের ঝুঁকি ছয়গুণ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তিনগুণ বাড়ে।

এদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে অকেজো হয়ে যায়। তবে সঠিক চিকিত্সা করলে প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ রোগীর কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এর চিকিত্সা খুবই ব্যয়বহুল। তাই যেকোনো উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।



উচ্চরক্তচাপের প্রকারভেদঃ

উচ্চরক্তচাপ চার প্রকারঃ

১) সিস্টোলিক রক্তচাপঃ-সীমা -১০০-১৪০মিমিপারদ, গড় -১২০মিমিপারদ

২) ডায়াস্টোলিক রক্তচাপঃ- সীমা-৬০-৯০মিমিপারদ, গড়-৮০মিমিপারদ

৩) পালস রক্তচাপঃ- সীমা-৩০-৪০মিমিপারদ

৪) গড় রক্তচাপঃ- সীমা-৭৮-৯৮মিমিপারদ

কারণগত প্রকারভেদঃ

১) প্রাইমারী উচ্চরক্তচাপঃ যে কোন রোগের অনুপস্থিতিতে এ ধরনের রক্তচাপ দেখা যায়। ৯০-৯৫ শতাংশ উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। একে প্রাইমারি উচ্চরক্তচাপ বলে। এই প্রাইমারি উচ্চরক্তচাপের জন্য কিছু নিয়ামকের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এগুলো হলোঃ জেনেটিক কারণ অথবা পারিবারিক উচ্চরক্তচাপের ইতিহাস, স্থূল ও মেদবহুল শরীর, ধূমপান, বেশি লবণ খাওয়া, বেশি অ্যালকোহল সেবন প্রভৃতি ।

২) সেকেন্ডারী উচ্চ রক্তচাপঃ রোগের উপস্থিতির কারণে এই রক্তচাপ হয়ে থাকে। যেমন ¬ কিডনিজনিত রোগ, হরমোনগ্রন্থিজনিত রোগ, রক্তনালীর জন্মগত ত্রুটি, গর্ভধারণজনিত জটিলতা এবং দীর্ঘ দিন বিশেষ কোনো ওষুধ সেবন যেমন¬ জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, স্টেরয়েড, লবণযুক্ত কোনো ওষুধ, অ্যালকোহল, গর্ভাবস্থা, বৃক্ক সম্পর্কিত রোগ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি জনিত রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি।

কেন হয়?

হাইপারটেনশন রোগের শতকরা ৯৫ ভাগ কারনই বলতে গেলে এখনো সঠিকভাবে জানা হয়ে উঠেনি এবং একে বলা হয় এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন, বাকী ৫% হলো সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন এর মধ্যে কিছু আছে কিডনির রোগ, কিছু হরমোনের সমস্যা জনিত রোগ তাছাড়া ধমনীর রোগ, অসুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং গর্ভাবস্থা ও এর জন্য দায়ী হতে পারে।

প্রাপ্ত বয়স্কদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ নির্ণয় করা যায় না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনের ফলে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হরমোন ও কিডনির ফাংশনজনিত জটিলতায় উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। অনিয়মিত লাইফ স্টাইল, অনিয়ন্ত্রিত ওজন, ধূমপান, এলকোহল, ফাস্টফুড খাবার গ্রহণ, রক্তে কোলেস্টেরল-এর আধিক্য এইসব কারণগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ছোটদের ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। জেনেটিক কারণে, ফ্যামিলিয়ার হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে (মানে বাবা-মায়ের আছে বাচ্চারও হতে পারে), কিডনির অসুখে, হ্নৎপিন্ডের মহাধমনীর কোন একটি জায়গা সংকুচিত থাকলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। কিডনির ওপরে এডরেনালগ্রন্থি ঠিকমত কাজ না করলেও উচ্চ রক্তচাপ হয়।

নিঃশব্দ ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ

ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগের উদ্যোগে ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস বা ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে পালিত হয়ে আসছে। এর লক্ষ্য হলো উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন লোক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত! অর্থাত্ প্রতি চারজনে একজন প্রাপ্তবয়স্কের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এটি হূদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) ও কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ৫০ শতাংশ হূদরোগের কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। সারা বিশ্বে ৭ দশমিক ১ মিলিয়ন লোক মারা যায় উচ্চ রক্তচাপের জন্য। উচ্চ রক্তচাপ একটি লক্ষণবিহীন রোগ। ফলে অনেকে নিজের অজান্তেই এ রোগ নিয়ে বেঁচে আছেন। শুধু দিবস পালনই নয়, সব সময়ের সচেতনতা এই নীরব ঘাতক থেকে আমাদের রক্ষা করবে। কীভাবে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় করা যায়; কীভাবে এর চিকিত্সা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা যায়-সে বিষয়ে জানাটা জরুরি। বাড়িতে বসে আপনার রক্তচাপ জানার মাধ্যমে জীবনধারার পরিবর্তন, উপযুক্ত চিকিত্সা ও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে কীভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। সচেতন হোন, নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে পারলে হূদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, কিডনির সমস্যাও অনেকটাই প্রতিরোধ করা যাবে।

উচ্চরক্তচাপ এক নিঃশব্দ ঘাতক। উচ্চরক্তচাপ সম্পর্কে আমাদের সবারই কমবেশি ধারণা আছে। এটি যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তাও আমরা অনেকেই জানি। উচ্চ রক্তচাপ মানুষকে নিঃশব্দে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রায় শতকরা ১০ ভাগ পুরুষ এবং ১৫ ভাগ নারী উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকে। ৬০ বছরের বেশি শতকরা ৬৫ জনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ বেশি।

অন্যান্য রোগের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের পার্থক্য এটাই যে উচ্চ রক্তচাপের সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। এ জন্য যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তারা উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত অনুভব করেন না। প্রকৃতপক্ষে যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের এক-তৃতীয়াংশ জানেনই না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সাধারণত রক্তচাপ পরীক্ষা করার সময় এটি ধরা পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের আসল কারণ অনেক সময় জানা যায় না। কতগুলো কারণ এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত, যেমন পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, কম কায়িক পরিশ্রম, অতিরিক্ত লবণ বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, ধূমপান, বয়স, উদ্বেগ, উত্তেজনা ইত্যাদি। সমপ্রতি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আর্সেনিকের বিষক্রিয়া রক্তচাপ বাড়ায়। যাদের রক্তে আর্সেনিকের পরিমাণ যত বেশি, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা তা জানার একমাত্র উপায় রক্তচাপ পরীক্ষা করা। একবার মেপে রক্তচাপ বেশি পাওয়া গেলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বলা ঠিক হবে না। দিনের একই সময়ে পরপর কয়েক দিন রক্তচাপ মেপে যদি বেশি দেখা যায়, তবে উচ্চ রক্তচাপ বলা যেতে পারে। আপনার ডাক্তার আপনাকে এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে।

এক ভদ্রমহিলার কথা বলি, তিনি ওষুধ কোম্পানির একজন জিএম-এর স্ত্রী। তিনি যতবারই বাড়ির বাইরে বেরুতেন ততবারই মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন যাবত্ উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখে ঝাপসা দেখতেন এবং একটু তাড়াহুড়ার কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে পড়তেন। মাত্র কয়েক মাসের হলিস্টিক চিকিত্সায় এখন তিনি অন্য দশজন সুস্থ ব্যক্তির মতোই জীবন উপভোগ করছেন। কোনো সমস্যা নেই। আমি যেসব উদাহরণ দিলাম তাদের প্রত্যেকেরই কেসস্টাডি আমরা আমাদের হলিস্টিক সেন্টারে সংরক্ষণ করছি। তাই যে কোনো অনুসন্ধানকারীই সেসব সরেজমিনে দেখে প্রকৃত সত্য অনুধাবন করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা রোগীর সঙ্গে সরাসরি কথা বললেও তিনি বুঝবেন, আমরা সত্যি বলছি কিনা । আপনার সুন্দর, সুস্থ, কার্যকর ও আনন্দময় জীবনের জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি তারা অন্তত বছরে একবার নিজে রক্তচাপ পরীক্ষা করুন।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণঃ

লক্ষনঃ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় অনেক সময়ই রোগীর কোনো অভিযোগ থাকেনা। তবে কিছু রোগী মাথার পিছনের দিকে ব্যাথা, বেশী প্রসাব হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ ঘেমে যাওয়া, বুক ধড়ফর করা ইত্যাদি উপসর্গ অনুভব করতে পারে। ব্লাড প্রেসার খুব বেশী হলে উপসর্গ ও বৃদ্ধি পেতে পারে। দীর্ঘ দিন ব্লাড প্রেসার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তা বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ অংগের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং সেই জাতীয় সমস্যা নিয়েও রোগী অসুস্থ্য হতে পারেন।

-সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা।

-ঘাড় ব্যথা।

-চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া বা চোখে ঝাপসা দেখা।

-রাতে ঘুমাতে না পারা।

-সব সময় খিটখিটে মেজাজ থাকা।



রোগ নির্ণয়ঃ ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দিয়ে মাপলে কারো প্রেসার যদি বেশি পাওয়া যায় সেটাই হাইপারটেনশন নির্ণয় করার জন্য যথেস্ট। তবে দীর্ঘ দিন অনিয়ন্ত্রিত হাইপারটেনশন বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ অংগের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকলে

সেসকল অংগের কার্যকারীতা দেখার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।

উচ্চরক্তচাপ জনিত জটিলতাঃ

অনিয়ন্ত্রিত হাইপারটেনশন মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, এনকেফালোপ্যাথি, চোখের রেটিনার প্রভুত ক্ষতি সাধন ও অন্ধত্ব, হৃদপিন্ডের দেয়ালের পুরুত্ব বাড়ানো, হার্ট এটাক ও হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলুর সহ বিভিন্ন জটিল জটিল রোগের কারণ হতে পারে।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাঃ স্ট্রোক, হাইপারটেনসিভ এনসেফালোপ্যাথি, প্যারালাইসিস,

মস্তিষ্কে জটিলতা:স্ট্রোক, মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরণ প্রভৃতি।

হৃৎযন্ত্রের জটিলতাঃ হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক ও ফেইলিউর, করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি।

রেচনতন্ত্রের জটিলতাঃ বৃক্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়া, রেনাল ফেইলর প্রভৃতি।

চোখের রেটিনায় জটিলতাঃ হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত, প্যাপিলিওডিমা ইত্যাদি।

উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসাঃ

উচ্চ রক্তচাপ এর চিকিৎসা দুইভাবে করা যায়। একটি ওষুধ ছাড়া অন্যটি ওষুধ দিয়ে।

ওষুধ ছাড়াঃ

যাদের হাইপারটেনশনের মাত্রা খুব বেশি নয় কিংবা অল্প কিছুদিন হয় সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়।

পরিমাণ মতো খাওয়াঃ খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত লবণ বা লবণ জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। ফাস্টফুড বা ফ্রোজেন ফুড-এ লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। প্রাণীজ প্রোটিন ত্যাগ করে শাক-সবজি, সালাদের দিকে ঝোঁকা ভাল। আতিরিক্ত শর্করা বা চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া, ধুমপান বা এলকোহলের অভ্যাস থাকলে তা সম্পুর্ণ রুপে ত্যাগ করা।

শরীরের বাড়তি ওজন কমানো: শরীরের ওজন অতিরিক্ত হলে ধীরে ধীরে তা কমানো উচিত। এজন্য উচিত নিয়মিত হাঁটা এবং পরিশ্রম করা। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য তাড়াহুড়ো করেন এটা কিছুতেই ঠিক নয়।

ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রন করা, উপাসনা বা প্রার্থনা করা,দুশ্চিন্তা পরিহার করা, অতিরিক্ত চিন্তা পরিহার করে সহজ-সরল স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে, সকাল অথবা বিকেলে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে ইত্যাদি।

প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে উপরের নিয়ম মানলে অনেকের রক্তচাপ ৩-৬ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসে।

এর পরেও যদি নিয়ন্ত্রন করা না যায় সেক্ষেত্রে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী অসুধ খাওয়া লাগতে পারে।

ওষুধ এর মাধ্যমেঃ

কার্ডিওলজিস্টগণ সাধারনত ডায়েরুটিক্স, বিটা ব্লকার, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, এসিই ইনহিবিটর, এআরবি ব্লকার, আলফা ব্লকার বা মস্তিস্কের কেন্দ্রে কাজ করে প্রেসার কমানোর এমন অসুধ গুলো বিভিন্ন মাত্রায় রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যবহার করে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন করেন।যেমনঃ

১) এসিই ইনহিবিটরঃ – ক্যাপটোপ্রিল,অ্যানালেপ্রিল, লিসিনোপ্রিল

২) এনজিওটেন্সিন রিসেপ্টর ব্লকার

৩) আলফা ব্লকারঃ প্রাজোসিন

৪) বিটা ব্লকারঃ প্রোপ্রানোলল, অ্যাটেনোলল

৫) ডাইইউরেটিকসঃ থায়াজাইড্‌, ফ্রুসেমাইড্‌, অ্যামিলোরাইড

৬) ক্যালসিয়া চ্যানেল ব্লকারঃ নিফেডিপিন, অ্যামলোডিপিন, ভেরাপামিল সাধারণত ডাইইউরেটিকস উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে এসিই ইনহবিটর ব্যবহার করা হয়। এজন্য চিকিসকের পরামর্শ ব্যতিত মেডিসিন সেবন করা যাবেনা।

সতর্কতাঃ

-চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে প্রত্যেকেরই উচিত নির্দিষ্ট সময় পর পর রক্তচাপ পরীক্ষা করা।

-হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ রাখা বা অনিয়মিতভাবে ওষুধ গ্রহণ না করা।

-ওষুধ গ্রহণ অবস্থায়ও অন্তত প্রতিমাসে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করা।

-একজন বিশেষজ্ঞের অধীনে থাকা এবং পরামর্শ অনুযায়ী চলা।

-আলগা লবণ, ফাস্টফুড, ফ্রোজেন ফুড খাওয়ায় সতর্ক থাকা।

-যেহেতু এ রোগে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয় কাজেই বছরে অন্তত একবার কিডনি এবং হার্টের পরীক্ষা অথবা শারীরিক সকল পরীক্ষা চেকআপ করানো উচিত।

বাড়িতে কেন রক্তচাপ পরিমাপ করবেন?

বাড়িতে রক্তচাপ মাপার ফলে আপনি নিজে এবং আপনার চিকিৎসক আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত প্রতিদিনের একটি চিত্র পাবেন। এর ফলে জীবন-যাপনের পরিবর্তন এবং ওষুধ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কতখানি ভূমিকা রাখছে সেটা বোঝা যাবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পূর্বের এক সপ্তাহে প্রতিদিন দুই বার করে রক্তচাপ মাপা এবং রেকর্ড রাখা ভালো। আপনার প্রাত্যহিক জীবনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে এই রেকর্ড বিশেষ ভূমিকা রাখবে।আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা সেটা জানার একমাত্র উপায় রক্তচাপ পরিমাপ করা। এজন্য বাসায় রক্তচাপ মাপুন।

রক্তচাপ পরিমাপের বেশিরভাগ আধুনিক যন্ত্রসমূহ স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) অথবা আধা স্বয়ংক্রিয় (সেমি অটোমেটিক) হয়ে থাকে। নিজের রক্তচাপ নিজে মাপা সহজ এবং নিরাপদ। তবে যে সব মানুষ বেশি উদ্বিগ্ন এবং যাদের শারীরিক অক্ষমতা আছে, তাদের রক্তচাপ মাপতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এ সকল ক্ষেত্রে আপনি চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নিতে পারেন।

রক্তচাপ পরিমাপের জন্য কি ধরনের যন্ত্র (মেশিন) ক্রয় করবেন?

রক্তচাপ পরিমাপের জন্য অনেক ধরনের মেশিন বের হয়েছে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার জন্য উপযুক্ত রক্তচাপ মাপার মেশিন এবং বাহুবন্ধনীর সাইজ নির্বাচন করুন।

০ ব্রান্ড কোম্পানীর লোগো দেখে সঠিক মেশিন কিনুন। যে সমস্ত মেশিনে ভাল ব্রান্ড এর লোগো আছে, সেগুলি কেনার চেষ্টা করুন।

০ অটোমেটিক মেশিন ব্যবহার করা সহজ, কিন্তু সেমি অটোমেটিক মেশিনের তুলনায় এই মেশিনের দাম বেশি।

০ রক্তচাপ মাপার বিভিন্ন সাইজের বাহুবন্ধনী পাওয়া যায়। বাহুতে যাতে বাহুবন্ধনী সঠিকভাবে লাগানো যায়, সেই দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাহুবন্ধনীর সাইজ সঠিক না হলে রক্তচাপের রিডিং যথার্থ হয় না। বাহুবন্ধনীর সঠিক সাইজ নির্বাচনের জন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা দোকানদারের সাহায্য নিন।

রক্তচাপ কিভাবে পরিমাপ করবেন?

০ রক্তচাপ পরিমাপের পূর্বে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিন এবং প্রশান্ত (রিলাক্স) থাকুন। এ সময় মনোযোগ সহকারে কোন কিছুতে নিবিষ্ট থাকবেন না (যেমন টিভি দেখা)।

০ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করলে, ঠান্ডা লাগলে, রাগাম্বিত হলে, কোন কিছুর চাপ বা টেনশনে থাকলে কিংবা ব্যথা অনুভূত হলে সেই সময় রক্তচাপ পরিমাপ করবেন না।

০ ভরপেট খাওয়ার পর অন্ততঃপক্ষে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করুন এবং কফি বা ধূমপান করার পর আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন।

০ প্রস্রাব এবং পায়খানার বেগ থাকলে রক্তচাপ মাপার পূর্বে তা সেরে ফেলুন।

০ অনাবৃত বাহুতে বাহুবন্ধনী জড়ান।

০ এমন চেয়ারে বসুন, যাতে আপনি হেলান দিয়ে বসতে পারেন এবং বাহু রাখার জন্য সাইড টেবিল ব্যবহার করুন।

০ বাহুর নিচে তোয়ালে অথবা বালিশ রাখুন যাতে বাহুটা হার্টের বা হৃদপিন্ডের লেভেলে থাকে।

০ পায়ের পাতা মেঝের সমান্তরালে রাখুন, পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসবেন না।

০ সাতদিন যাবৎ বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার রক্তচাপ পরিমাপের মাত্রাকে বাড়ির রক্তচাপের রেকর্ড হিসাবে গণ্য করা উচিত।

০ সঠিক নিয়মে রক্তচাপ পরিমাপের পর পরই তা লিপিবদ্ধ করুন।

০ বাড়িতে একদিন অথবা প্রথম দিন রক্তচাপ মাপার মাত্রাকে সঠিক ধরা উচিত নয়।

স্বাভাবিক রক্তচাপ কি?

০ দিনে রক্তচাপ অবশ্যই গড়ে ১৩৫/৮৫ মি•মি• অব মার্কারী এর নিচে থাকতে হবে।

০ বাড়িতে মেপে যদি দেখা যায় রক্তচাপ সব সময় ১৩৫/৮৫ মি•মি• অব মার্কারী এর বেশি আছে, তাহলে চিকিৎসা নিতে হবে।

০ ডায়াবেটিস অথবা কিডনী রোগীদের রক্তচাপ ১৩৫/৮৫ মি• মি• অব মার্কারী এর কম হতে হবে।

রক্তচাপের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে কি করবেন?

০ আতংকিত হবেন না।

০ আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন এবং তার পরামর্শ মেনে চলুন।

০ নিজে নিজে কোন ওষুধ খাবেন না কিংবা ওষুধের মাত্রা কম-বেশি করবেন না।

রক্তচাপ পরিমাপের সময় করণীয়

• কথা বলবেন না

• হেলান দিয়ে বসুন

• কাফ বাহুর মধ্যবর্তী জায়গায় জড়ান

• যাতে বাহুটি হার্টের লেভেলে থাকে

• বসে থাকুন।

• বাহুটি অবশ্যই কোন কিছুর উপরে রাখুন

• পা ছড়িয়ে বসুন।

উচ্চ রক্তচাপ বর্তমান বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। সারা বিশ্বে এখন প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। শরীরের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরত্বপূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। সকলকে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা, এ ব্যাপারে সচেতন করা, প্রতিরোধমূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং এর জটিলতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করাই বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের উদ্দেশ্য। তাই প্রতি বছর ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।বাংলাদেশে পূর্ণবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের উপরের জনসংখ্যার ১৫-২০% উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বিশ্বে এ হার ২৫-৩০%। বিশ্বের প্রায় ১•১ বিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এবং এদের মধ্যে প্রায় ৭•১ মিলিয়ন প্রতিবছর উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন জটিলতায় মারা যাচ্ছে। কাজেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে সতর্ক হোন, উচ্চ রক্তচাপকে ‘না’ বলুন।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে যেকোনো মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে। সর্বশেষ একমাত্র সচেতনতাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং প্রতিরোধ করা যায়। তাই সবাই সচেতন হোন এ ব্যাপারে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.